Saturday, October 31, 2015

রাসুল(সা:) ঘোষিত ১২তম ইমাম মাহদী(আঃ)-আল-কুরান ও হাদিছের আলোকে

যদিও আমরা সাড়ম্বরে ১৫ই শাবান শবেবরাত পালন করে থাকি, ইতিহাস বলে অন্য কথা,যা আসলে চাপা পড়েই ছিল।ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি,১৫ই শাবান,২৫৫ বা ২৫৬ হিজরীতে রাসুল(সঃ) ঘোষিত ১২তম ইমাম মাহদী(আঃ) জন্মদিন যা মওলানা মহিউদ্দিন খান তার অনুবাদ গ্রন্থ নবুয়তের প্রমানপঞ্জি (মুলঃশাওহেদুন নবুয়ত,প্রকাশকাল আগষ্ট,২০০৭,পৃঃ২৭৯) থেকে জানতে পাই।রাসুল(সঃ) বলেন, ‘ আমার পরে ১২জন ইমাম পযন্ত ইসলাম সমুন্নত থাকবে এবং তারা কুরাইশ বংশ থেকে ’(বুখারি,হাদিস নং৬৭১৬)।
মুসলিম শরিফের একটি হাদিসঃ’যে তার যামানার ইমামকে না চিনে ইন্তেকাল করলো,তার ইন্তেকাল জাহেলিয়াতের ইন্তেকাল ’।
এই হাদিসের সমথনে কোরানে বনিত হয়েছেঃ’স্মরন করো সেদিনের কথা যেদিন তোমাদেরকে তোমাদের ইমামসহ ডাকা হবে।সে দিন যাদের আমলনামা তাদের দান হাতে দেয়া হবে,খুশী মনে সে তা পাঠ করবে,কারো উপর কোন জুলুম করা হবে না’(সুরা বনি ইস্রাইলঃ৭১)।১২ ইমাম সম্পকে রাসুল(সঃ) বলেন,সালমান আল ফারসী থেকে নিভরযোগ্য সুত্রে বনিত হয়েছে (বইঃমিসবাহুস শারিয়াহ,লেখকঃইমাম জাফর সাদেক আঃ)- “আমি রাসুলের(সঃ) কাছে উপস্থিত হলাম,তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ ‘হে সালমান,আল্লাহ কোন নবী বা রাসুলকে পাঠান না যদি তার সাথে থাকে ১২ জন ’ ।‘ইয়া রাসুলুল্লাহ,আমি তা দুই কিতাবের লোকদের কাছ থেকে জেনেছি ’ ।‘হে সালমান,তুমি কি আমার ১২ জন সদারকে চেনো,যাদেরকে আল্লাহ আমার পরে ইমাম হিসেবে নিবাচন করেছেন?’
‘ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সঃ) ভাল জানেন।‘
‘ হে সালমান,আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নুর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তার আদেশ মানলাম।এরপর তিনি আলীকে (আঃ) আমার নুর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তিনি  তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো।আমার নুর ও আলীর নুর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাহকে(আঃ);তিনি  তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো।আমার,আলীর ও ফাতিমাহর(আঃ) নুর থেকে সৃষ্টি করলেন আল হাসান ও আল হোসাইনকে(আঃ)।
তিনি  তাদের ডাকলেন এবং তাঁরা তাঁর আদেশ মানলো।আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তাঁর ৫টি নাম থেকে নাম দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা হলেন আল মাহমুদ(প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ(প্রশংসার যোগ্য), আল্লাহতায়ালা হলেন আল আলী(উচ্চ) এবং এ হলো(আঃ)(যে উচ্চ ঞ্ছানীয়), আল্লাহতায়ালা হলেন ‘আল ফাতির(যিনি শুন্য থেকে সৃষ্টি করেন) এবং এ হল ফাতিমাহ(আঃ),আল্লাহতায়ালা হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান(অন্যের জন্য কল্যান) এবং এ হল হাসান,আল্লাহতায়ালা হলেন মুহাসসিন(পরম সুন্দর) এবং এ হল হুসাইন।তিনি ৯ জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হুসাইনের(আঃ) নুর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো-আল্লাহতায়ালা উঁচু আকাশ,বিস্তৃত পৃ্থিবী,বাতাস,ফেরেশ্তা ও মানুষ সৃষ্টি করার আগেই আমরা ছিলাম নুর যারা তাঁর প্রশংসা করতো,তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো।‘

‘ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ),আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসগ হোক,ঐ ব্যাক্তির জন্য কি আছে যে এ ব্যক্তিদের ,সেভাবে স্বীকৃ্তি দেয় যেভাবে তাঁদের স্বীকৃ্তি দেয়া উচিত?’
‘হে সালমান,যে-ই তাদের স্বীকৃ্তি দেয় যেভাবে দেয়া উচিত এবং তাঁদের উদাহরন  অনুসরন করে,তাঁদের সাথে বন্দ্বুত্ব রাখে এবং তাঁদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে   আল্লাহতায়ালার শপথ,সে আমাদের একজন।সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি।‘

‘ইয়া রাসুলাল্লাহ,তাঁদের নাম ও বংশধারা না জানা থাকলে কি বিশ্বাস আছে?’
‘না,সালমান।‘
‘হে আল্লাহর রাসুল,আমি তাঁদের কোথায় পাবো?’

‘তুমি ইতোমধ্যেই আল হুসাইনকে(আঃ) জানো,এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সদার আলী ইবনুল হুসাইন(যায়নুল আবেদীন)(আঃ),এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী(আঃ)-পুবের ও পরের,নবী ও রাসুলদের জ্ঞান বিদীনকারী(আল-বাক্কির);এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ,আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা(আল সাদিক);এরপর মুসা ইবনে জাফর(আঃ),যে আল্লাহর ধৈযের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে(আল কাযিম);এরপর আলী ইবনে মুসা(আঃ),যে আল্লাহতায়ালার গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে(আল রিদা);এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী(আঃ),আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির মাঝ থেকে নিবাচিত জন(আল মুখতার);এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ(আঃ),যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদশক(আল হাদী);এরপর আল হাসান ইবনে আলী(আঃ),যে নিশ্চুপ-আল্লাহতায়ালার গোপন বিষয়ের বিশ্বস্থ পাহারাদার( আল আসকারী);এরপর মিম হা দাল(মুহাম্মাদ),যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান(আঃ)-যে ঘোষক আল্লাহতায়ালার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে।‘
সালমান বলেনঃ ‘আমি কাঁদলাম,এরপরে বললামঃইয়া রাসুলাল্লাহ,আমার জীবন তাদের সময় পযন্ত দীঘায়িত হোক।‘
তিনি বললেনঃহে সালমান,এটি তেলাওয়াত করোঃ
“যখন দু’টি প্রতিশ্রুতির প্রথমটি এলো,আমি তোমাদের বিরুধ্বে পাঠালাম আমার শক্তিশালী যোধ্বা বান্দাহদের,আর তারা বাড়ির বাড়িগুলোর ভিতর পযন্ত প্রবেশ করলো এবং তা ছিলো একটি প্রতিশ্রুতি,বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য।এরপর আমরা তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্বে বিজয়ী করলাম এবং তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে একটি বড় সংখ্যার দলে পরিনত করলাম ”(সুরা বনি ইস্রাইলঃ৫-৬)।
 সালমান বললেনঃ ‘ আমি অনেক কাঁদলাম,এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো।আমি বললামঃইয়া রাসুলাল্লাহ,এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি?’
                               ‘ হ্যাঁ,তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন,এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার,আলীর,ফাতিমাহর,আল-হাসান,আল-হুসেইন এবং আল-হুসেইনের বংশ থেকে ৯ জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের  সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে।যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক,তাহলে আল্লাহতায়ালার শপথ সালমান,ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক।যার আছে সত্যিকার আবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নিযাতন এবং উত্তরাধীকারের (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে।তোমার রব কারো উপরে যুলুম করবেন না।আমাদের কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে।
“আমরা চাইলাম তাদেরকে নেয়ামত দিতে যাদেরকে পৃ্থিবীতে দুবল ভাবা হতো এবং তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে এবং তাদেরকে যমীনে ক্ষমতা দিতে এবং ফেরাউন,হামান এবং তাদের বাহিনীগুলোকে দেখাতে যা থেকে তারা ভয় পেতো ”(সুরা কাসাসঃ৫-৬)।
সালমান বলেনঃআমি আল্লাহর রাসুলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পুন ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে-কিভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে ”।
                             উপরের হাদিসটি থেকে আমরা রাসুল(সঃ) ঘোষিত ১২ ইমাম সম্পকে সুষ্পষ্ট নিদেশনা পাই।১২ ইমামের মধ্যে ১১ জন ইমামকেই উমাইয়া ও আব্বাসীয়রা শহীদ করে।সবশেষ ইমাম হিসেবে ইমাম মাহদী(আঃ) ২৫৫ বা ২৫৬ হিজরীর ১৫ই শাবান,রোজ শুক্রবার ইরাকের সামারায় জন্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতা আল হাসান ইবনে আলী(আঃ) যিনি ‘আল-আসকারী’ নামে পরিচিত,মাতার নাম উম্মে ওয়ালাদ,যার নাম ছিল ছাকীল,সোমন এবং কারো মতে নারগিস।মওলানা মহিউদ্দিন খান তার অনুবাদ গ্রন্থ শাওয়াহেদুন-নবুওতে (মুল লেখকঃআল্লামা আব্দুর রহমান জামী রঃ) ১২তম ইমামের সম্পকে বলেনঃ আবু যকীর (রাঃ) ফুফু হাকীমা বননা করেনঃএকদিন আমি হযরত আবু মোহাম্মাদ(রাঃ) এর খেদমতে উপশ্তিত হলাম।তিনি আমাকে বললেনঃহে ফুফী,আজ রাতে আমাদের এখানে অবশ্তান করুন।আজ আল্লাহতায়ালা আমাকে কিছু দান করবেন অথাত আমাদের গৃহে শিশু জন্মগ্রহন করবে?বিবি নারগিসের মধ্যে তো গভের কোন চিঞ্ছই দৃষ্টিগোচর হয় না।তিনি বললেনঃফুফী,নারগিস হযরত মুসা(আঃ)-এর জননীর অনুরুপ।তাই শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পূবে তার কোন গভ প্রকাশ পাবে না।হাকীমা বলেনঃ আমি সে রাত সেখানেই অতিবাহিত করলাম।অধরাত্রি অতিবাহিত করলাম।অধ রাত্রি অতিবাহিত হলে আমি উঠে তাহাজ্জুদ পড়লাম।বিবি নারগিসও তাহাজ্জুদ আদায় করলেন।আমি মনে মনে বললাম-সকাল প্রায় হয়ে এল,কিন্তু হজরত আবু মোহাম্মাদ(রাঃ) যা বলেছেন,তার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু হজরত আবু মোহাম্মাদ বললেন -ফুফী, তড়িঘড়ি করবেন না।অতঃপর আমি বিবি নারগিসের কক্ষে ফিরে গেলাম।পথিমধ্যে তাকে পেলাম।তার শরীরে কম্পন ছিল।আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।অতঃপর সুরা ইখলাস,সুরা কদর ও আয়াতুল কুরছি পাঠ করে ফুঁ দিলাম।তার পেট থেকে পাঠ করার আওয়াজ এল;অথাত আমি যা কিছু পড়ে ছিলাম,তার উদরের শিশুটিও তাই পড়লো।এরপর আমি দেখলাম সমগ্র গৃহ নুরে নুরে উদ্ভাসিত হয়ে গেছে এবং বিবি নারগিছের শিশু মাটিতে সেজদায় আছে।আমি শিশুটিকে কোলে তুলে নিলাম।হজরত আবু মোহাম্মাদ আমাকে আওয়াজ দিলেনঃহে ফুফী,আমার বাচ্চাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন।আমি তার কাছে নিয়ে গেলে তিনি তাকে কোলে বসালেন এবং আপন জিহবা তার মুখে প্রবেশ করিয়ে দিলেন-অতঃপর বললেনঃবৎস,আল্লাহর নিদেশে বল।শিশু বললোঃবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।এই দুনিয়ার বুকে আজ যারা অত্যাচারিত তাদেরকে নেতৃ্ত্ব এবং উত্তরাধিকার দান করা হবে।
এরপর আমি দেখলাম একঝাঁক সবুজ পাখি আমাকে ধরে ফেলেছে।হজরত আবু মোহাম্মাদ (রাঃ) একটি সবুজ পাখিকে বললেনঃএকে ধর এবং এর হেফাজত কর যে পযন্ত আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এ সম্পকে নিদেশ দেন।আমি হজরত আবু মোহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করলামঃএই অন্য পাখিগুলো কি?তিনি বললেনঃইনি জিব্রাইল(আঃ) আর অন্যরা রহমতের ফেরেশ্তা।অতঃপর বললেনঃহে ফুফী,একে তার জননীর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যান।আপনি চোখের শীতলতা হাসিল করুন।চিন্তিত হবেন না।নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালার ওয়াদা সত্য।কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।
           এরপর শিশুটিকে তার মাতার কাছে নিয়ে গেলেন।তিনি জন্ম থেকেই “মখতুন” তথা খতনাকৃ্ত ছিলেন।
হযরত হাকীমা আরো রেওয়ায়েত করেন,জন্মের সময় হযরত মোহাম্মাদ ইবনে হুসায়েন(রাঃ) দু’জানু অবস্থায় শাহাদাতের অঙ্গুলি আকাশের দিকে উত্তোলন করে রেখেছিলেন।তাঁর হাঁচি এলে তিনি ‘ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ’ বলতেন।
“ সাইয়েদাহ হাকিমাহ বিনতে আবি জাফর মুহাম্মাদ আল জাওয়াদ (আঃ) ছিলেন ইমাম হাসান আল আসকারীর ফুফু,তিনি বলেছেনঃ “ ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শাবান আমি ইমাম হাসান আসকারীর বাড়িতে ছিলাম।তিনি আমাকে তার বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেন।ফজরের ওয়াক্ত হলে আমি দেখতে পেলাম, নারজিসের প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে এবং আমি সদ্যপ্রসুত একটি পরিচ্ছন্ন শিশুও দেখলাম।ইমাম হাসান আসকারী তাকে দু’হাতে তুলে নিয়ে তার দান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিলেন।এরপর তিনি আমাকে বললেনঃফুপু!এ সদ্যপ্রসুত শিশুই হচ্ছে প্রতীক্ষিত ত্রানকতা”।( ফাসলুল খেতাব,পৃঃ৪৪৩ ও ৪৪৭,তাশখন্দ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির নাম হচ্ছে ‘লামাহ আলামুল আউলিয়া’;আহলে সুন্নাতের অন্যতম  মনীষী ভারতের মাদ্রাসায়ে দেওবন্দের বিখ্যাত আলেম মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী এ গ্রন্থের উদু অনুবাদ করেছেন)।
                             সংক্ষেপে এই হলো রাসুল (সঃ) ঘোষিত সবশেষ ইমাম মাহদী (আঃ) এর জন্ম বৃত্তান্ত। তাঁর নাম ‘ মুহাম্মাদ ‘,উপাধিঃ আল মাহদী,আল ক্কায়িম,আল হুজ্জাহ,আল গায়িব,সাহিবুজ্জামান,বাকিয়াতুল্লাহ,সাহিবুল আমর,ডাক নামঃআবুল কাসিম।তিনি এখনও অদৃশ্য অবস্থানে জীবিত রয়েছেন এবং কেয়ামতের আগে পৃ্থিবীতে আবার আবিভুত হবেন।তাঁর প্রাথমিক অদৃশ্য অবস্থান শুরু হয় ২৬০ হিজরীর ৮ই রবিউল আউয়াল। ২য় অদৃশ্য অবস্থান শুরু হয় ৩২৯ হিজরীর ১০ই শওয়াল।আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ততদিন তিনি এই অদৃশ্য অবস্থায় (গায়েব) থাকবেন।যদিও অমুসলিম কাদিয়ানীদের ন্যায় কেহ কেহ বলা শুরু করেছেন যে ইমাম মাহদী(আঃ) ইন্তেকাল করেছেন,কিন্তু তথ্যটি সঠিক নয়,মিথ্যে।
                       ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ও ইমাম মাহদী(আঃ)এর মাঝে কতিপয় ব্যাপারে চমতকার সাযুজ্য পরিলক্ষিত হয়।মহানবী (সঃ) যেমন শেষনবী তেমনি ইমাম মাহদী (আঃ)ও শেষ ইমাম।মহানবীর (সঃ) শুভাগমন সম্পকে যেমন পুববতী নবী-রাসুলগন বলে গেছেন তেমনি ইমাম মাহদীর (আঃ) আগমন সম্পকেও মহানবী(সঃ)  বানী রেখে গেছেন।
ক)-পবিত্র কোরআনে ইমাম মাহদী(আঃ) সম্পকে বলছেঃ
               পবিত্র কোরআন হচেছ ঐশী শিক্ষার দূর্লভ ঝর্ণাধারা , প্রতিষ্ঠিত হিকমত এবং মানুষের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ভাণ্ডার৷ কোরআন সত্য ও ন্যায়ে পরিপূর্ণ কিতাব যাতে পৃথিবীর অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সংবাদ দান করা হয়েছে এবং কোন কিছুই তা থেকে বাদ পড়ে নি৷ তবে এটা স্পষ্ট যে , পৃথিবীর ব্যাপক ঘটনাবলী কোরআনের ঐশী আয়াতের মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং কেবলমাত্র যারা তার গভীরে পৌঁছতে পারবে তারাই এসত্যকে উপলব্ধি করতে পারবে৷ তারাই হচেছন কোরআনের প্রকৃত কর্ণধার ও মোফাস্সের অর্থাৎ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.) গণ৷
            আল্লাহর শেষ প্রতিনিধি পৃথিবীর এক মহান সত্য যাঁর প্রতি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং ওই সকল আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বহু রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে নিম্নে তার কিছু তুলে ধরা হল:
যেমন সূরা আম্বিয়ার ১০৫ নং আয়াতে বলা হচেছ:’নিশ্চয়ই আমরা তৌরাতের পর যাবুরে উল্লেখ করেছি যে,যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর আমাদের উত্তরাধিকারী হবে ’৷ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:’ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সাহায্যকারীরা হচেছন সেই যোগ্য বান্দা যারা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবেন (তাফসীরে কুম্মী খণ্ড- ২ , পৃ.-৫২)’৷সূরা কাসাসের ৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:’এবং আমরা ইচছা করলাম যাদেরকে পৃথিবীর বুকে (বঞ্চিত) হীনবল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে এবং উত্তরাধিকারী করতে ’৷
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ’ বঞ্চিত বা হীনবল বলতে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতকে বোঝানো হয়েছে৷ অনেক প্রচেষ্টা ও কষ্টের পর আল্লাহ এই বংশের মাহদী (আ.)-কে প্রেরণ করবেন এবং তাকে উচচ মর্যাদা দান করবেন এবং শত্রুদেরকে কঠিন ভাবে লাঞ্চিত করবেন (গাইবাতে শেখ তুসী হাদীস ১৪৩ , পৃ.-১৮৪)’৷
সূরা হুদের ৮৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: ’ বাকিয়াতুল্লাহ(ইমাম মাহদী (আঃ) এর অন্য নাম) তোমাদের জন্য যথেষ্ট যদি তোমরা মু ' মিন হয়ে থাক ’৷
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ’ ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হওয়ার পর কা ' বা গৃহে হেলান দিয়ে প্রথমে উক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করবেন৷ অতঃপর বলবেন:আমিই পৃথিবীর বুকে বাকিয়াতুল্লাহ , তোমাদের প্রতি তাঁর উত্তরাধিকারী এবং হুজ্জাত৷অতঃপর যারা তাঁকে সালাম করবে তারা বলবে: ‘ আপনার প্রতি সালাম , হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর গচিছত সম্পদ (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩২ , হাদীস ১৬ , পৃষ্ঠা ৬০৩)’৷সূরা হাদীদের ১৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: ’ জেনে রাখ আল্লাহই ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ আমি নির্দশনগুলি তোমাদের জন্য বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার ’৷
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: ’ আল্লাহ তা ' আলা ইমাম মাহদী (আ.)-এর নিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে পূনর্জীবিত করবেন৷ কেননা অত্যাচারিদের অত্যাচারের মাধ্যমে পৃথিবী মৃত্যুবরণ করেছিল (গাইবাতে নোমানী পৃ.-৩২)’৷
খ)- ইমাম মাহদী(আঃ) সম্পকে ১৪ মাসুম-মাসুমিনের বর্ণনাঃ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিষয়টি এমনই একটি বিষয় , যে সম্পর্কে বহু সংখ্যক রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে৷ ইমামের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন: জন্ম , শৈশবকাল , স্বল্প ও দ্বীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকাল , আবির্ভাবের নিদর্শন , আবির্ভাবের পর এবং বিশ্বব্যাপী অনুশাসন সম্পর্কে ইমামগণ হতে পৃথক পৃথক হাদীস বর্ণিত হয়েছে৷ যেমনিভাবে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য , অদৃশ্যকালীন পরিস্থিতি , প্রতিক্ষাকারীদের পুরষ্কার সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে৷ আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচেছ এই হাদীসসমূহ শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের গ্রন্থেই বর্ণিত হয়েছে এবং ইমাম মাহ্দী সম্পর্কিত বহু হাদীসই মুতাওয়াতির৷
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আর একটি বৈশিষ্ট্য হচেছ মাসূমগণ তাঁর সম্পর্কে অতি সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন৷ যার সমষ্টি থেকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর ন্যায়নিষ্ঠ বিপ্লবের গুরুত্ব প্রকাশ পায়৷ এখানে আমরা ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কিত চৌদ্দ মাসুম (আ.) হতে বর্ণিত হাদীসসমূহকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি:
রাসূল (সা.) বলেছেন:" তার সৌভাগ্য , যে মাহ্দীকে দেখবে৷ তারও সৌভাগ্য , যে মাহদীকে ভালবাসবে এবং সেও সৌভাগ্যবান , যে তাঁর ইমামতকে গ্রহণ করবে" (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২ , পৃ.-৩০৯)৷ ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:" আবির্ভাবের প্রতিক্ষায় থেকো এবং কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে বিমুখ হয়ো না৷ এটা অতি সত্য যে , আবির্ভাবের প্রতিক্ষায় থাকা আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ইবাদত" (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২ , পৃ.-৩০৯)৷ হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (আ.)-এর কিতাবে বর্ণিত হয়েছে:”অতঃপর বিশ্ববাসীর প্রতি রহমতের জন্য আওলীগণের পর্যায়ক্রমকে ইমাম হাসান আসকারী ( আ.)-এর সন্তানের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করবে৷ যার মধ্যে হযরত মুসার পূর্ণতা , হযরত ঈসার সৌন্দর্য এবং হযরত আইয়ুবের ধৈর্য থাকবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড-১ , বাব ২৮ , হাদীস ১ , পৃ.-৫৬৯)”৷ ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) বলেছেন:”আল্লাহপাক শেষ যামানায় একজন মহাপুরুষকে প্রেরণ করবেন এবং তাঁকে ফেরেশ্তাদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন এবং তাঁর সাথীদেরকেও রক্ষা করবেন৷ তাঁকে পৃথিবীর সবকিছুর উপর প্রাধান্য দেয়া হবে৷ তিনি দুনিয়াকে এমভাবে ন্যায়নীতি ও সাম্যে পরিপূর্ণ করবেন যেমনিভাবে পৃথিবী জুলুম অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল৷ সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে , তাঁকে দেখবে এবং তাঁর নির্দেশ পালন করবে (ইহতিজাজা খণ্ড-২ , পৃ.-৭০)”৷ ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন:”আল্লাহ হযরত মাহ্দীর মাধ্যমে ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ তাঁর মাধ্যমেই সত্য দ্বীনকে সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দান করবেন যদিও মুশরিকরা তা পছন্দ করে না৷ তিনি অদৃশ্যে থাকবেন অনেকেই দ্বীনচ্যুত হবে আবার অনেকেই দ্বীনের প্রতি প্রতিষ্ঠিত থাকবে৷ যে ব্যক্তি অদৃশ্যকালীন অবস্থায় বিভিন্ন অত্যাচার ও মিথ্যাচারে ধৈর্য ধারণ করবে সে রাসূল (সা.)-এর সাথে থেকে মুশরিকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩০ , হাদীস ৩ , পৃষ্ঠা ৫৮৫)”৷ ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেন:”আমাদের কায়েমের অদৃশ্যকালীন সময়ে যারা আমাদের প্রতি বিশ্বাসে অনড় থাকবে আল্লাহ তা ' আলা তাকে বদর এবং ওহুদের যুদ্ধে শাহাদত প্রাপ্তদের মত সহস্র শহীদের পুরস্কার দান করবেন (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩১ , হাদীস পৃষ্ঠা ৫৯২)৷ ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:”মানুষের জন্য এমন সময় আসবে যখন তাদের ইমাম অদৃশ্যে থাকবে এবং সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে , ঐ সময়ে আমাদের বেলায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩২ , হাদীস-১৫ , পৃষ্ঠা ৬০২)”৷ ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:”আমাদের কায়েমের জন্য দু ' টি অদৃশ্য রয়েছে একটি স্বল্পমেয়াদী অপরটি দীর্ঘমেয়াদী ( গাইবাতে নোমানী বাব ১০ , হাদীস ৫ , পৃষ্ঠা ১৭৬)”৷
 ইমাম কাযিম (আ.) বলেছেন:”ইমাম মাহদী (আ.) দৃষ্টির অন্তরালে থাকবেন কিন্তু মু ' মিনরা তাঁকে কখনোই ভুলবেন না ( গাইবাতে নোমানী বাব ৩৪ , হাদীস ৫৬ , পৃষ্ঠা ৫৭)”৷ ইমাম মুসা রেযা (আ.) বলেছেন:”ইমাম মাহদী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন পৃথিবী তাঁর জ্যোতিতে আলোকিত হয়ে যাবে এবং তিনি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবেন৷ সুতরাং তখন কেউই কারো প্রতি অত্যাচার করবে না (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৫ , হাদীস ৫ , পৃষ্ঠা ৬০)”৷ ইমাম তাকি আল জাওয়াদ (আ.) বলেছেন:”আমাদের কায়েম তিনি যার অদৃশকালীন অবস্থায় তাঁর প্রতিক্ষায় থাকতে হবে এবং আবির্ভাবের পর তাঁর নির্দেশ পালন করতে হবে (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৬ , হাদীস ১ , পৃষ্ঠা ৭০)”৷ ইমাম হাদী আন্ নাকি (আ.) বলেছেন:
আমার পর ইমাম হচেছ আমার পুত্র হাসান এবং তার পর তার পুত্র মাহ্দী ইমাম হবে এবং তিনি দুনিয়াকে এমভাবে ন্যায়নীতি ও সাম্যে পরিপূর্ণ করবেন যেমনিভাবে পৃথিবী জুলুম অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৭ , হাদীস ১০ , পৃষ্ঠা ৭৯)”৷ ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বলেছেন:”আল্লাহর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে , তিনি আমার মৃত্যুর পূর্বেই আমাকে আমার উত্তরাধিকারী দান করেছেন৷ সে সকল দিক থেকেই রাসূল (সা.)-এর অনুরূপ (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৭ , হাদীস ৫ , পৃষ্ঠা ১৭৬)”৷
             প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী(আঃ)কে সাধারনতঃ ইমামুল আছর (নিদিষ্ট সময়ের ইমাম),সাহিবুজ্জামান(জামানার নেতা বা কতা) প্রভৃতি নামেও অভিহিত করা হয়।জন্মের পর মহানবী(সঃ)এর নামেই তাঁর নাম রাখা হয়।তিনি জন্মের পর থেকে তাঁর পিতা ইমাম হাসান আসকারী (আঃ)এর বিশেষ তত্বাবধানে ছিলেন।স্বৈরশাসকের হুমকীর কারনে ইমাম মাহদীর(আঃ) জন্মের খবর গোপন রাখা হয়েছিল।কারন আব্বাসীয় শাসকরা ইমাম বংশকে ধ্বংশ করে ফেলার জন্যে হন্যে হয়ে উঠেছিল।বাড়িবাড়ি তল্লাশি করে খুঁজে বের করার জন্যে ওরা সশস্র ঘাতক বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল।তাই স্বয়ং আল্লাহ শিশু ইমামকে শয়তানদের হাত থেকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন।

                                 ইমামত
ইমাম আসকারী (আঃ)-এর ইন্তেকালের সময় ইমাম মাহদীর(আঃ) বয়স ছিল ৫ বছর।অথ্যাত ৫ বছর বয়স থেকেই তিনি ইমামত  প্রাপ্ত হন।                  ‘গায়েবাতে সোগরার’ (স্বল্পকালিন অদৃশ্যকালে,৬৯ বছর) সময় ইমাম তাঁর ৪ জন বিস্বশ্ত সহযোগীর মাধ্যমে জনগনের জন্য নিজের বানী প্রকাশ করেন, এই বিশিষ্ট আলেমরাই শুধু তাঁর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। জনসাধারনকে ধমবানী ও উপদেশ প্রদানের জন্যে ইমাম তাঁর পিতা ও পিতামহের এক কালীন ঘনিষ্ট সহচর উসমান ইবনে সাঈদ আল আমরীকে নিজের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। তাঁর মাধ্যমেই ধমপ্রান অনুসারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব ও সমস্যার সমাধান দেয়া হতো।তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে উসমান আল-আমরী ডেপুটির দায়িত্ব পান।এভাবে পরে এ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন যথাক্রমে আবুল কাসিম আল হুসাইন ইবনে রুহ আল নওবখতি,আলী ইবনে মুহাম্মাদ আস সামুরী।৩২৯ হিজরীতে আস সামুরীর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ‘ স্বল্পকালীন অদৃশ্য ’ অবস্থান থেকে ইমাম মাহদী(আঃ) ঘোষনা করেন যে কিছু দিনের মধ্যেই আস সামুরী ইন্তেকাল করবেন এবং সেই সাথে ইমামের প্রতিনিধিত্ব স্থগিত হয়ে যাবে এবং ইমাম মাহদী(আঃ) ‘ দীঘকালীন অদৃশ্য ’ অবস্থানে চলে যাবেন ।
                    ইমাম মাহদীর(আঃ) অদৃশ্য অবস্থান দুভাগে বিভক্তঃ১)স্বল্পকালীন (সুগরা)-২৬০ হিঃ,রবিউল আউয়াল থেকে ৩২৯হিঃ,শাওয়াল মাসে অথ্যাত প্রায় ৭০ বছর।২)দীঘকালীন(কুবরা)-৩২৯ হিঃ থেকে শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত আছে,আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি একদিন কাবা শরীফ থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন।এসম্পকে একটি মোতোয়াতির হাদিছ,রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ ‘পৃ্থিবীর এদিন শেষ হবে না যতক্ষন পযন্ত না আল্লাহতায়ালা মানুষকে পাঠাবেন।তিনি হবেন আমার সম্প্রদায়ভুক্ত  এবং আমার বংশ হতে।আমার নামে হবে তাঁর নাম।তিনি পৃথিবীতে ন্যায় ও সুবিচার দ্বারা পরিপুন করবেন যেমন তাঁর আগে পৃথিবী অন্যায় আর অবিচারে পুন ছিল ’ (সহী তিরমিযী)।
এ প্রসঙ্গে আরো কিছু হাদিছ আমরা পাই যেগুলোর কিছু বর্ণনা দিচ্ছিঃরাসুল(সঃ) বলেনঃ ‘ ততদিন পযন্ত কিয়ামত হবে না যতদিন পযন্ত না আমার আহলে বাইতের মধ্য হতে একজন এই দুনিয়ার দায়িত্ব গ্রহন করবে,যার নাম হবে আমার নামের অনুরুপ ’(মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল খন্ড-১,পৃঃ৩৭৬ ও ৪৩০)।‘ যেমন আলী আমার পরে উম্মাতের ইমাম তদ্রুপ ক্কায়েম মুন্তাযার ( তাঁর সন্তানদের মধ্যে থেকে)যখন আবিভূত হয়ে জমিনকে ন্যায় ও আদশে ভরে দেবে,এই দুনিয়া যতই জুলুম ও অত্যাচারে ভরে থাকুক না কেন ।তাঁর কসম যিনি আমাকে সত্য পৌছে দেয়া ও ভয় প্রদশনের জন্য পাঠিয়েছেন। সন্দেহাতীতভাবে তারাই চিরস্থায়ী বা অমর যারা কিনা তাঁর অদৃশ্য থাকা সত্বেও তাঁর উপর ঈমান রাখে।যাবির উঠে দাড়িয়ে বললোঃইয়া রাসুলাল্লাহ(সঃ),আপনার সন্তানদের মধ্যে ক্কায়েম অদৃশ্যে থাকবে? বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহর কসম,মুমিনরা পরীক্ষিত আর কাফেররা ধ্বংস হয়ে যাবে।ওহে যাবির, এই নিদেশ আল্লাহরই একটি নিদেশ।এই রহস্যপুন বিষয়াবলীর মধ্যে একটি।যা তার বান্দাদের কাছে গোপন রেখেছেন।এটার ব্যাপারে সন্দেহ করা থেকে দূরে থাকো কেননা আল্লাহর নিদেশের ব্যাপারে সন্দেহ করা কাফেরের কাজ ’(মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল-খন্ড-১,পৃঃ৩৭৬ ও ৪৩০)।
ইমাম মাহদী(আঃ)এর আবিভাবকালীন কিছু চিত্র
                      আঞ্চলিক ও আন্তজাতিক পযায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হযরত ইমাম মাহদী(আ.)এর আবিভাবের বিপ্লব ও আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।এসব রেওয়ায়েত অনুযায়ী আন্তজাতিক পযায়ে রোমানদের (পাশ্চাত্যের)সাথে তুকী এবং তাদের সমথকদের(রুশ) বাহ্যত একটি ভয়ঙ্কর যুধ্ব হবে-যা বিশ্বযুধ্বে রুপান্তরিত হবে।
                কিন্তু আঞ্চলিক পযায়ে ইমাম মাহদীর(আঃ) সমথক দু’টি সরকার ও প্রশাসন ইরান ও ইয়েমেনে প্রতিষ্ঠিত  হবে।মাহদী(আঃ)এর ইরানী সঙ্গীসাথীরা তাঁর আবিভাবের বেশ কিছুকাল আগে নিজেদের একটি দীঘমেয়াদী যুধ্বে জড়িয়ে পড়বে।অবশেষে তারা ঐ যুধ্বে জয়ী হবে।
                ইমাম মাহদীর(আঃ) আবিভাবের কিছুকাল আগে ইরানীদের মধ্যে দু’ব্যাক্তি ( ১ জন খোরাসানী সাইয়েদ যিনি হবেন রাজনৈতিক নেতা এবং অপরজন শুয়াইব ইবনে সালিহ যিনি হবেন সামরিক নেতা) আবিভুত হবেন এবং এ দুই ব্যাক্তির নেতৃ্ত্বে ইরানী জাতি তাঁর আবিভাবের আন্দোলনে গুরুত্বপুন ভুমিকা পালন  করবে।
                 কিন্তু ইমাম মাহদীর(আঃ) আবিভাবের কয়েক মাস আগে তাঁর ইয়েমেনী সঙ্গি-সাথীদের বিপ্লব ও অভ্যুথ্যান বিজয় লাভ করবে এবং তারা বাহ্যত হেযাযে যে রাজনৈ্তিক শুন্যতার সৃষ্টি হবে তা পুরন করার জন্য তাঁকে সাহায্য করবে।
হেযাযের এই রাজনৈ্তিক শুন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারন হচ্ছে হেযাযের কোন এক বংশের এক নিবোধ ব্যাক্তি যার নাম হলো আব্দুল্লাহ,সে দেশের সবশেষ বাদশাহ হিসেবে নিহত হবে এবং তার স্থলাভিষিক্ত কে হবে-এ নিয়ে এমন এক মতবিরোধ সৃষ্টি হবে যা ইমাম মাহদী(আঃ)এর আবিভাব পযন্ত চলতে থাকবে।
          “ যখন আব্দুল্লাহর মৃত্যু হবে,তখন জনগন কোন ব্যাক্তি তার স্থলাভিষিক্ত হবে – এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌছতে পারবে না।আর এ অবস্থা ‘ যুগের অধিপতি ’ [ইমাম মাহদীর(আঃ)] আবিভাব পযন্ত চলতে থাকবে।বহু বছর রাজত্ব করার দিন শেষ হয়ে কয়েক মাস বা কয়েক দিনের রাজত্ব করার অথ্যাত ক্ষনঞ্ছায়ী শাসনের পালা চলে আসবে ”।
আবু বশীর বলেনঃ “আমি জিজ্ঞাসা করলামঃএ অবস্থা কি দীঘকাল স্থায়ী হবে?তিনি বললেনঃকখনোই না।বাদশাহর(আব্দুল্লাহ) হত্যাকান্ডের পরে এ দ্বন্দ ও সংঘাত হেযাযের গোত্রসমুহের অন্তদ্বন্দ ও কলহে পযবসিত হবে”।
এ সময়ই ইমাম মাহদীর(আঃ) আবিভাবের নিদশন হচ্ছে আসমানী আহবান বা ধ্বনী যা তাঁর নামে ২৩ রমযানে শোনা যাবে।
             সাইফ ইবনে উমারাহ বলেছেনঃ “আমি জাফর আল মনসুরের(২য় আব্বাসীয় খলিফা) নিকট ছিলাম।তিনি কোন ভুমিকা ছাড়াই বললেনঃহে সাইফ ইবনে উমাইয়া!নিঃসন্দেহে আকাশ থেকে একজন আহবানকারী আবু তালিবের বংশধরগনের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তির নাম ঘোষনা করবে।আমি বল্লামঃআমি আপনার জন্য উৎসগীকৃ্ত,হে আমিরুল মুমিনিন!আপনি কি একথা বননা করেছেন?তিনি বল্লেন,হ্যাঁ,যাঁর হাতে আমার প্রান তাঁর শপথ,এ কথা আমি আমার নিজ কানে শুনেছি।আমি বললাম,হে আমিরুল মুমিনিন,আমি এখন পযন্ত এ ধরনের হাদিছ কারো কাছ থেকে শুনিনি।তিনি বললেন,হে সাইফ ! এ কথা সত্য।যখন ঐ ঘটনা ঘটবে তখন আমরাই সবপ্রথম এ আহবানে সাড়া দেব।তবে ঐ ধ্বনি আমাদের একজন পিতৃব্যপুত্রের প্রতি নয় কি?আমি বললামঃ সে ফাতিমার বংশধর হতে হবে?তিনি বললেন,হ্যাঁ,হে সাইফ! অনন্তর যদি আমি এ রেওয়ায়েতটি আবু জাফর ইবনে আলী আল-বাকির থেকে না শুনতাম তাহলে সমগ্র জগতবাসী বললেও আমি তা মেনে নিতাম না।কিন্তু এর বননাকারী তো ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী”।

ইমাম মাহদীর(আঃ) আগমনের বছর ও দিন সম্পকে হাদিছ
আবু বাসীর নবী(সঃ)-এর বংশধর ইমাম সাদিক (আঃ) থেকে বননা করেন-“মাহদী বেজোড় বছরে ছাড়া আবিভুত হবে না,যেমন প্রথম,৩য়,৫ম,৭ম বা ৯ম বছরে”আবু বাসীর আরও বলেন ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) থেকে বননা করেন-“ক্কায়েমের নাম ঘোষনা করা হবে পবিত্র রমযান মাসের ২৩ তারিখের রাতে।ক্কায়েম আবিভুত হবেন আশুরার দিনে যেদিন ইমাম হুসাইন(আঃ) শহীদ হন।আমি যেন দেখতে পাচ্ছি ক্কায়েম  শনিবার দিন,১০ই মুহাররাম রুকন ও মাক্কামের মাঝে আবিভুত হয়েছে এবং কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে বাইয়াত,বাইয়াত।ফলে মাহদীর অনুসারীরা তার দিকে ফিরবে সব দিক থেকে এবং তার কাছে বাইয়াত হবে।মাহদীর মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে ভরে দেবেন ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়ন পুন ছিল।এরপর মাহদী তার মনোযোগ মক্কা থেকে কুফার দিকে দিবেন এবং নাজাফে যাবেন যেখান থেকে সৈনিকদের পাঠাবেন বিভিন্ন শহরের দিকে ”।



ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

Related Posts

0 comments: