Friday, October 9, 2015

হযরত ইউশা বিন নুন (আ:)

আজ আলোচনা করব হযরত ইউশা বিন নুন (আ:) এর কথা,তিনি ছিলেন একজন নবি।তার রওজা মুবারকের ছবি দেয়াহল এবং সংখিপ্ত ঘটনা।
মাকাম ইউশা হলো জর্ডানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এখানে শায়িত আছেন ইউশা বিন নুন (আ.)। তিনি ছিলেন মুসা (আ.) এর ভাগ্নে এবং একজন নবী। তিনি শুধু নবুয়তের দায়িত্বই পালন করেননি বরং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকা- সমাধা করেছেন। আর এভাবে তিনি তৎকালীন মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন।



নবী ইউশার পিতার নাম নুন। তিনি নবী ইবরাহিম (আ.) এর বংশধর। তার পুরো পরিচয় হলো এই- ইউশা বিন নুন বিন ইফরাবিন ইউসুফ বিন ইয়াকুব বিন ইসহাক বিন ইবরাহিম (আ.)। কোরআনে ইউশা (আ.) এর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সূরা কাহফের দুটি স্থানে মুসা (আ.) এর সফরসঙ্গী হিসেবে এক যুবকের আলোচনা এসেছে, যখন তিনি খিজির (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যাত্রা করেছিলেন। উবাই ইবনে কাব বলেন, সেই যুবকই হলেন ইউশা (আ.)।
মুসা (আ.) যখন এক জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধানে দুই সাগরের মিলনস্থল অনুসন্ধানে বেরিয়েছিলেন তখন তিনি যুবক ইউশা (আ.) কে সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি তার সফরসঙ্গী ছিলেন। তিনি পথচলার রসদের তত্ত্বাবধান করতেন এবং সফরে সার্বিক সহযোগিতা করতেন।
মুসা (আ.) এর ওপর নাজিল কিতাবের নাম হলো তাওরাত, যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা Old Testament বলে। তাওরাতে মুসা (আ.) ও তার ভাই হারুন (আ.) এর কথাবার্তা আছে এবং তার সঙ্গে আছে ইউশা (আ.) এর কথা। ইউশা (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর সহচর, সাহাবি, সহযোগী। কোথাও কোথাও তাকে মুসা (আ.) এর সেবক বা খাদেম বলা হয়েছে। অর্থাৎ বনি ইসরাঈলের হেদায়াত ও সংস্কারের জন্য মুসা (আ.) কে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। মুসা (আ.) এর অনুরোধে হারুন (আ.) কে তার সঙ্গে দেয়া হয়েছিল। আর তার এ মিশন পালনে ইউশা (আ.) তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
মুসা (আ.) যখন বনি ইসরাঈলকে মিসরের অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের হাত থেকে মুক্ত করে নিয়ে এলেন, তখন তারা এই জর্ডানের মরু-উপত্যকায় বিচরণ করছিলেন। সেখানেই তাদের খাবার দেয়া হয় মান্না ও সালওয়া। মরু প্রান্তরে তাদের জন্য ঝরনাধারা প্রবাহিত করা হয়। এক সময় নির্দেশ দেয়া হয়, তারা যেন ফিলিস্তিনের অত্যাচারী শাসক আমালেকাদের সঙ্গে গিয়ে যুদ্ধ করে এবং সে স্থান অধিকার করে। সেটাই তাদের স্থান। তখন বনি ইসরাঈল মুসা (আ.) কে বলেছিল, তুমি আর তোমার প্রভু গিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। আমরা এখানেই অপেক্ষা করব। যখন তোমরা সেই স্থান অধিকার করবে, আমরা তখন সেখানে যাব। কারণ আমালেকারা অত্যন্ত শক্তিশালী, অত্যাচারী। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা পারব না। তাদের এ কথায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং তাদের শাস্তি দেন। সেই শাস্তিতে তাদের ধ্বংস করা হয়নি। কোনো আকাল দিয়ে কষ্ট বা শাস্তি দেয়া হয়নি, বরং তারা ৪০ বছর পর্যন্ত সেই মরু প্রান্তরে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকে। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি।
মুসা (আ.) এর সঙ্গে বনি ইসরাঈলের আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। এভাবে তার জীবন সায়াহ্নের সময় ঘনিয়ে এলো। তিনি আল্লাহরই ইঙ্গিতে ইউশা (আ.) কে বনি ইসরাঈলের হেদায়েত এবং তার জীবনের বাকি কাজগুলো করার জন্য স্থলাভিষিক্ত করেন। নবী হিসেবে তিনি যে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ইউশা (আ.) কে দায়িত্ব দিলেন।
৪০ বছর মরু প্রান্তরের ঘুরে ঘুরে বনি ইসরাইলের সেই প্রজন্ম প্রায় শেষ হয়ে গেল। এর মধ্যে নতুন প্রজন্ম যৌবনে পেঁৗছে। ইউশা (আ.) বনি ইসরাঈলের সেই নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করতে লাগলেন। তাদের তিনি সত্যের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করলেন। বললেন, বায়তুল মোকাদ্দাসে এক অত্যাচারী শাসক আছে। তাকে সরিয়ে বায়তুল মোক্কাদাস অধিকার করা তাদের পবিত্র কাজ ও দায়িত্ব। কারণ সেটাই তাদের দেশ। ইউশা (আ.) তাদের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করতে পারলেন সফলভাবে। ধীরে ধীরে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেন। এরপর এক সময় ফিলিস্তিন অভিমুখে রওনা দিলেন।
ইউশা (আ.) এর নেতৃত্বে বনি ইসরাঈলের কাফেলার কথা শুনে সেখানকার অত্যাচারী শাসক বিরাট বাহিনী নিয়ে প্রতিরোধে অগ্রসর হলো। তারা মিলিত হলো সম্মুখ সমরে। বনি ইসরাঈলের এ নতুন প্রজন্ম ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান ছিল। সঙ্গে ছিল ইউশা (আ.) এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। শত্রুপক্ষের বিরাট বাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ শুরু হলো। শত্রুবাহিনী চরম ক্ষতির সম্মুখীন হলো। তাদের অনেক লোক মারা যেতে লাগল।
যুদ্ধের শেষ অবস্থায় এসে ঘটে গেল এক বিস্ময়কর ঘটনা। সেদিন ছিল শুক্রবার। সারা দিন যুদ্ধ চলেছে। এখন বিকাল। শত্রুবাহিনী বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন। তুমুল লড়াই চলছে। এভাবে আর কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারলে হয়তো শত্রুপক্ষ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হবে। বনি ইসরাঈল দল বিজয়ী হবে।
কিন্তু যুদ্ধের এই দক্ষ ও কৌশলী সেনাপতি ইউশা (আ.) বিপদ গুনলেন। তিনি দেখলেন, দিনের আলো নিভে আসছে। সন্ধ্যা আসন্ন। বেলা ডুবি ডুবি করছে। বেলা যদি ডুবে যায় তাহলে বনি ইসরাঈলের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়। কারণ শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী বেলা ডুবলেই পরের দিবা শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ সেদিন বেলা ডুবলেই শনিবার শুরু হয়ে যাবে। আর শনিবার ছিল বনি ইসরাঈলের জন্য পবিত্র দিন। সেদিন তাদের বিশেষভাবে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করার কথা। শনিবার যুদ্ধ ও রক্তপাত নিষিদ্ধ। সারকথা, বেলা ডুবে গেলে বনি ইসরাইল আর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে না। অথচ বেদ্বীন শত্রুপক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে সারা রাত ও পরের দিন। কারণ তারা তো ধর্ম মানে না। এভাবে বনি ইসরাইল সহজেই মার খাবে এবং শত্রুপক্ষ বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাবে।
এমন অবস্থায় ইউশা (আ.) আল্লাহর কাছে হাত উঠালেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের অবস্থা জান। বেলা ডুবে গেলে তোমার নিয়ম অনুযায়ীই আমরা যুদ্ধ করতে পারব না। কাজেই শুক্রবারের এ সূর্যকে কয়েক ঘণ্টার জন্য অনুগ্রহ করে আটকে দাও না, যেন বিজয় পর্যন্ত সূর্য না ডুবে। তখন আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে সূর্যকে আটকে দিয়েছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিজয় নিশ্চিত না হলো, ততক্ষণ পর্যন্ত বেলা ডুবেনি। এ প্রসঙ্গে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, 'এই সেই ইউশা, যার কথায় আল্লাহ সূর্যকে আটকে দিয়েছিলেন, যা অন্য কখনও হয়নি।'
একটা কথা বলা হয়নি। ইউশা (আ.) শুধু মুসা (আ.) এর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন না। আল্লাহ তাকে নবুয়তও দান করেছিলেন। তিনি নবী হিসেবে বনি ইসরাঈলকে হেদায়েত করেন। সমাজ সংস্কার করেন। তাদের নেতৃত্ব দেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে বিজয়ের আসনে আসীন করেন, যা মুসা (আ.) এর সময় সম্ভব হয়নি।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

2 comments: