এক বালক প্রতি পদক্ষেপেই পড়ছিলো – “আল্লাহুম্মা ছাল্লি’আলা মুহাম্মাদিন অলা আলে মুহাম্মাদিন”। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ এরকম ভাবে দুরুদ পড়ার কারণ কি? সে বললঃ একবার আমি আমার মায়ের সাথে হজ্জে গিয়েছিলাম। পথে আমার মা মারা যান, তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং পেট ফুলে যায়। মনে হলো সে অনেক বড় পাপ করেছে। তখন আমি আল্লাহ্র দরবারে হাত উঠিয়ে দু’আ করলাম। এই সময় হিজাজের দিক থেকে একখণ্ড মেঘ উড়ে আসলো এবং তা থেকে এক বাক্তি বের হয়ে আমার মায়ের মুখে হাত বুলালেন, আর অমনি তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল এবং পেটে হাত বুলালেন; অতপর পেটের ফুলাও চলে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনার ওয়াসীলায় আমার মায়ের বিপদ কেটে গেল, আপনি কে? তিনি উত্তর দিলেনঃ আমি তোমার নবী মুহাম্মদ (সাঃ). আমি নবী (সাঃ) এর নিকট আরজ করলামঃ আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন। নবী (সাঃ) বললেনঃ যখন কদম উঠাবে এবং রাখবে, তখনই পড়বে -“আল্লাহুম্মা ছাল্লি’আলা মুহাম্মাদিন অলা আলে মুহাম্মাদিন”।
[প্রমান দেখুন- ফাযায়েলে আমল - ফাযায়েলে দুরুদ, মূল লেখকঃ মাওঃ জাকারিয়া, পরিচ্ছেদ নং- ০৫, অধ্যায়ঃ দুরুদ শরীফ সম্পর্কিত কপিতয় ঘটনা, পৃষ্ঠা নং- ১০৭, প্রকাশনীঃ বাংলা ইসলামিক একাডেমী, কাকরাইলের মুরুব্বীদের এজাজতে লিখিত তাবলীগী নেছাব নং- ০৭ এবং ফাযায়েলে দুরুদ, পরিচ্ছেদ নং- ০৯, তাবলীগী কুতুবখানা, চকবাজার, ঢাকা কতৃক পরিবেশিত]
# অভিযোগ ১ -
আমরা জানি আল্লাহ্র রাসূল (সা:) মহান, পূত পবিত্র চারিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী ছিলেন। তিনি তার সারা জীবনে একবারো গায়ের মাহরাম মহিলাদের পেট এবং দেহ তো দুরের কথা হাতও স্পর্শ করেননি। এমনকি তিনি যখন মহিলাদের থেকে বাইয়াত বা শপথ নিতেন তখনো শুধু মৌখিকভাবেই নিতেন।
খন্ডন ১ -
কথা যখন হলো, আমরাও কিছু বলি।
১. শরীয়ত ও হালাল-হারাম কাদের জন্য? জীবিত না মৃত মানুষের জন্য।
২. কবরে প্রত্যেক মৃতকে রাসূল (সঃ) কে দেখানো হয়। মহিলারাও রাসূল (সঃ) কে দেখে।
কুরআনে আছে, و قل للمومنات يغضضن من أبصارهمن অর্থাৎ মু'মিন মহিলাদেরকে বলেন, তারা যেন তাদের চোখ নিচু রাখে। এবার বলুন, কবরে আল্লাহর রাসূলকে দেখানো জায়েয না নাজায়েজ ?
৩. মে'রাজের ঘটনা বোখারী মুসলিম সহ সকল হাদিসের কিতাবে আছে। বোখারীর বর্ণনায় আছে, রাসূল (সঃ) কিছু জাহান্নামী মহিলাদেরকে দেখলেন। তারা উলঙ্গ ছিলো। হাদীসের ভাষায়, معلقات بثديهن অর্থাৎ তাদেরকে দুধের স্থান থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবার বলুন, এটা দেখা জায়েয হয়েছে কি? রাসূল (সঃ) নিজেই বলেছেন, চোখের জেনা হলো কুদৃষ্টি?
পর্দার বিধান যুবতী এবং বৃদ্ধা মহীলাদের ক্ষেত্রে কি সমান না পার্থক্য আছে ! বৃদ্ধা মহীলাদের ক্ষেত্রে নিশ্চয় শরীয়তে কিছুটা শিথিলতা আছে ! আর যদি চিকিৎসার কথা বলেন তাহলেও নিশচয় উভয়ের ক্ষেত্রেই (বৃদ্ধা বা যুবতি) চিকিৎসকের সরণাপন্ন হওয়া দোষণীয় নয়, বরং এক্ষেত্রেও শিথিলতা বিদ্যমান ! অসুস্থ বা মূমুর্ষ হলে যদি চিকিৎসার জন্য ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে তো আর তা দোষনীয় না ! চিকিৎসার খাতিরে রোগিকে চেকআপ করা বা কোন মেজর অপারেশনের জন্য যদি তাকে স্পর্ষ করা হয় তাহলে এটা কি দোষনীয় বিষয় হবে !?
আপনারাইতো আপনাদের পরিবারস্থ মেয়েদের ডাঃ এর কাছে নিয়ে যান ! সন্তান ডেলিভারির মত বিষয়ও যদি ডাঃ এর সরনাপন্ন হণ তাহলে মৃত্যপথযাত্রি মূমুর্ষ একজন বৃদ্ধার ট্রিটমেন্ট বা তাকে সুস্থ করার জন্য স্পর্ষ করায় আপনাদের এত আপত্তি কেন ?? তাও যদি এমন কেউ যিনি দুনিয়ার স্বাভিবীক হায়াতে নেই কবরে বিশেষ অবস্থায় আছেন !
বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায় নবীর জমানায় উম্মুল মোমেনীনগন এবং বিভিন্ন মহীলা সাহাবীগন যুদ্ধের ময়দানে গমন করতেন ! তারা মুসলমান সৈনীকদের পানি পান করাতেন এবং শত্রুপক্ষের নিক্ষেপিত তীর কুড়িয়ে এনে দিতেন ! আর যেসব মুসলীম সৈন্য যুদ্ধে আঘাতপ্রাপ্ত বা আহত হতেন তাদের প্রাথমীক চিকিৎসাও তারাই করতেন যেমন ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ বেধে দেওয়া প্রভিতি !
উম্মে সুলাইম (রাঃ) জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন,উম্মে সালমা (রাঃ) জেহাদে অংশগ্রহণ করেছেন , হযরত মাইমূনা,সুফিয়া (রাঃ) জিহাদে অংশগ্রহনণ করেছেন ! রাসূল (সাঃ) এর সকল বিবিই জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন ! আহত মুসলমান সৌনিকদের জখমে পট্টি বেধে দিয়েছেন ! পানি পান কিয়েছেন,তীর কুড়িয়ে এনে দিয়েছেন !
আল্লাহ'র ইচ্ছায় নবীজি যখন মেরাজে গেলেন তখন বিভিন্ন আসমানে বিভিন্ন নবী রাসূলদের সাথে সাক্ষাত যেমন সম্ভব তাদের এই পৃথিবীর বুকে কবরে বারযাখ এর জিন্দেগিতে অবস্থান সত্বেও . . !
এবং নবীজির ইমামতিতে আসমানে সমস্ত নবীর নামায আদায় যেমন সম্ভব তেমনি উক্ত বালকের ঘটনাও আল্লাহ চাইলে ঘটা সম্ভব ! নাকি অসম্ভব ????
# অভিযোগ ২ -
পাঠক লক্ষ্য করুন! এছাড়াও উক্ত ঘটনায় মহান আল্লাহ্র সাথে শিরক করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, বালকটি মা মারা যাওয়ার পর রাসূল (সাঃ) তার মার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন অথচ এই ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্র ছাড়া আর কারো নেই, এমনকি নবী-রাসূলগনেরও নেই।
রাসুল (সাঃ) এর একটি ছেলে ৮ মাস বয়সে ইন্তিকাল করেছেন; তাতে তিনি ৩ দিন পর্যন্ত শোকে কাতর ছিলেন এবং দুঃখে কান্নাকাটি করেছেন কিন্তু তিনি তার নিজের ছেলের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারেননি। অনেক সাহাবী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন কিন্তু ১ সাহাবীর জীবনও তিনি ফিরিয়ে আনতে পারেননি l
খন্ডন ২ -
এই প্রশ্ন উত্থাপণের যৌক্তিকতা কি !? আর যদি তিনি মারাও যেয়ে থাকেন এবং নবীজি আল্লাহ'র ইচ্ছায় তাকে যদি জীবিত করতেন তাহলেও তো শিরক হবার কথা নয় !
“ঈসা (আঃ) মৃতকে জীবিত করতে পারতেন” এ বাক্যের ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি হল ঈসা (আঃ) নিজের ক্ষমতার মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করতেন আর মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি হল ঈসা (আঃ) মৃতকে জীবিত করতে পারতেন কিন্তু এটা শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুমের কারনে। ঈসা (আঃ) এর দোয়ার ফলে তার হাওয়ারীগনের দ্বারাও এমন কারামত সংঘঠিত হয়েছে !
সাহাবীদের সালাত এবং দুআর কারণে মৃত ঘোড়া এবং গাধা জীবিত হওয়ার ঘটনা এবং এক আনসারী সাহাবীর মৃত্যুর পর তাঁর মায়ের দুআর কারণে তাঁর আবার জীবন লাভের ঘটনা,এক নওমুসলীম মহীলা সাহাবীর দূয়ার ফলে তার মৃত শিশুর জীবিত হওয়া এসব কি শিরক ছিল ??? এসব ঘটনা তো বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে সহীহ রেওয়াতে বরণিত হয়েছে অথচ সাহাবীদের ক্ষেত্রে নাকি এমন ঘটেনি বলে আপনারা কি নিকৃষ্ট মিথ্যার আশ্রয়ই না নিলেন ! যা ভেবে আশ্চর্য না হয়ে পারছিনা ! মিথ্যাচার আর অপব্যাখ্যারও তো একটা সীমা থাকা দরকার !!
এভাবে বিভিন্ন সাহাবী বা আল্লাহ ওয়ালাদের কারামতের ক্ষেত্রে খ্রিষ্টানদের দৃষ্টি ভঙ্গিনিয়ে ব্যাখ্যা করলে শিরক ছাড়া আর কিছুই খুজে পাওয়া যাবে না। আর মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়লে ইমানের বৃদ্ধি ছাড়া কমার কোন সুযোগ নেই। অপব্যাখ্যা কারীরা এখানেই ধরাটা খেয়েছে !!
আর আপনারা সবকিছু নিজেরা সব সময় যাচাই করে দেখেন তো নাকি ? না মুরাদ সাহেবের অপব্যাখ্যা সম্বলীত বইটির তাকলীদ করছেন চক্ষুষমান গোয়ার বা অন্ধের মত ?
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: