Sunday, November 1, 2015

ইমাম আলী আঃ ও মা ফাতিমা আঃ এর বিবাহ

ইমাম আলী আঃ ও মা ফাতিমা আঃ এর বিবাহ
প্রশ্ন:
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) ছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ) এর আপন চাচাত ভাই, তাই আলী (আঃ) এর সঙ্গে ফাতিমা (সাঃ আঃ) এর বিয়ে ছিল দূর-সম্পর্কের চাচার সঙ্গে বিয়ে । এ ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি ছিল কিনা ? এ ধরনের বিয়ের কারণ কী এবং এখনও এ ধরনের বিয়ে কী বৈধ ?

উত্তর:-
এ ধরনের বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই । কারণ, তা না হলে বিশ্বনবী (সাঃ) নিজ কন্যার জন্য এ ধরনের বিয়ের অনুমতি দিতেন না । আর হ্যাঁ , অনেক বিশিষ্ট সাহাবিও হযরত ফাতিমা (সাঃআঃ) কে বিয়ের জন্য রাসূল (সাঃ) এর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন । কিন্ত রাসূল (সাঃ) সেইসব প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন এবং ফাতিমা (সাঃআঃ) এর সম্ভাব্য স্বামী কে হবেন সেটা স্বয়ং আল্লাহই নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছিলেন বলে বর্ণনায় এসেছে ।

তাই এটা সুস্পষ্ট যে , হযরত আলী (আঃ) ও ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহার) বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছিল মহান আল্লাহরই সরাসরি নির্দেশ । ইসলামী বর্ণনা বা হাদিস অনুযায়ী , হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) হলেন সব যুগের নারী জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং বেহেশতি নারীদের নেত্রী । তাই বিবেকই বলে যে , তাঁর স্বামীকেও হতে হবে রাসূলে খোদার পর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি । অন্য কথায় আলী (আঃ) না থাকলে ফাতিমা (সাঃআঃ) কে চিরকুমারী থাকতে হত ।

পিতার আপন ভাই না হলে তার দূর-সম্পর্কের ভাই , যেমন , চাচাত , ফুপাত , খালাত বা মামাত ভাইদের জন্য ওই ভাইদের মেয়েকে বিয়ে করা সব যুগেই বৈধ , বরং সুন্নাত তথা মুস্তাহাব ।

এ ধরনের বিয়েকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা বা এ ব্যাপারে বর্তমান যুগে মুসলমানদের কোনো কোনো অঞ্চলে কোনো অনীহা বা আপত্তি থাকার বিষয়টি এক ধরনের কুসংস্কার মাত্র ।

পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে , কাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ ও কাদের সঙ্গে বিয়ে অবৈধ - সূরা নিসার ২২ থেকে ২৪ নম্বর আয়াত দ্রষ্টব্য

তাই ফাতিমা (সাঃআঃ) ও আলী (আঃ) এর বিয়েকে কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা মনে করাও ঠিক নয় ।

সুরা নিসার ২২ থেকে ২৪ নম্বর আয়াত --
২২। অতীতে যা ঘটেছে তা ব্যতীত, [এখন থেকে] তোমাদের পিতাদের বিবাহিত নারীদের তোমরা বিবাহ করো না। নিশ্চয়ই ইহা লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য এবং জঘন্য এক প্রথা।

২৩। তোমাদের [জন্য বিবাহে] নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তোমাদের মাতা, কন্যা, ভগ্নী, ফুপু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, বোনের মেয়ে, দুগ্ধ মাতা, দুগ্ধ-বোন, শ্বাশুরী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত সৎ কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে। তবে যদি তাদের সাথে সংগত না হয়ে থাক, তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নাই। এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং একই সময়ে দুই ভগ্নীকে বিবাহ করা। অতীতে যা ঘটেছে তা ব্যতীত। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

২৪। তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত আরও [নিষিদ্ধ করা হয়েছে] সকল বিবাহিত নারী। এভাবেই আল্লাহ্‌ [নিষেধ সমূহের] বিধান স্থাপন করেছেন। উল্লেখিত নারীগণ ব্যতীত অন্য নারীকে তোমাদের সম্পত্তি থেকে উপহার দান করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ করা হলো - [যা] ব্যভিচারের জন্য নয় [বরং চরিত্রের] পবিত্রতার জন্য। তাদের মাধ্যমে যে সুখ ও আনন্দ তোমরা ভোগ করেছ তার দরুণ তাদের মোহর পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর নির্ধারণের পরে, কোন বিষয়ে [পরিবর্তনের জন্য] পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ নাই। এবং আল্লাহ্‌ সব জানেন এবং সর্ব বিষয়ে প্রজ্ঞাময় ।
(লেখাটি সংগৃহীত)

Wednesday, October 14, 2015

রাসুলের প্রতি ভালোবাসা

রাসুলের প্রতি ভালোবাসা
সিহহা সিত্তার অন্যতম বোখারি শরিফের সংকলক ইমাম বোখারি (রহ) এর বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘ওরওয়া বিন মাসউদ’ নামে রাসূলে খোদা (সা) এর একজন সাহাবি বলেন “খোদার কসম! নবী করিম (সা) এর ওজুর পানি সাহাবাগণ কখনোই নিচে পড়তে দিতেন না, সব পানি পড়তো সাহাবিদের হাতে,তাঁরা ঐ পানি নিজেদের চেহারা ও শরীরে মাখতেন…যখনই নবীজীর ওজু করার সময় হতো সাহাবিরা তখনই ওজুর পানি হাতে নেওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতায় নেমে যেতেন।”
হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম (সা) যখন তাঁর চুল কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুলগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি খেতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে। এসব কাজ যদি শির্‌ক হতো তাহলে নবিয়্যে মুকাররামে ইসলাম মুসলমানদেরকে সেসব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। কেননা নবীজীর সন্তানের মৃত্যুর জন্যে যখন চন্দ্রগহণকে কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছিলো, নবীজী তখন কঠোরভাবে ঐ ভ্রান্ত আকিদার বিরোধিতা করেছিলেন। নবীজীর কাছ থেকে ফযিলত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে জনগণ যে চেষ্টা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী এ কাজের বিরোধিতা করেছেন এরকম কোনো বর্ণনা নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
আসলে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে যেসব পুণ্যবান সালেহিন বান্দার, তাঁদেরকে পবিত্র জ্ঞান করার অর্থ শেরেকি করা নয়, বরং সবসময় এই বিশ্বাস থেকেই করা হয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তাঁদের কারো পক্ষেই সম্ভব নয় অপর কারো জন্যে মঙ্গল বয়ে আনা কিংবা কারো বিপদ দূর করা। রাসূলে খোদার মিম্বার, তাঁর কবর, কবর ছোঁয়া এবং তাতে চুমু খাওয়া ইত্যাদি কাজ নবীজীর ওফাতের পর মুসলমানরা করতেন।মদিনার বিখ্যাত ফকিহ সায়িদ বিন মুসাইয়্যেব এবং ইয়াহিয়া বিন সায়িদ এসব কাজ করতেন। ঐশী ব্যক্তিত্ববর্গের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র কিংবা তাঁদের কবরকে পবিত্র জ্ঞান করার অর্থ হলো যেহেতু তাঁরা ছিলেন অনেক উন্নত পর্যায়ের এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী মানুষ, সেজন্যে তাঁদের প্রতিটি জিনিসই পবিত্র এবং মর্যাদা ও সম্মানের যোগ্য।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ইউসুফ (আ)র কাহিনীটি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইয়াকুব (আ) ছিলেন ইউসুফ (আ) এর পিতা। বার্ধক্যে এসে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ইউসুফ (আ) তাঁর জামাটি পাঠালেন বাবার জন্যে। হযরত ইয়াকুব (আ) পুত্র ইউসুফের দেওয়া জামাটি চোখে লাগালেন আর তাঁর চোখ ভালো হয়ে গেল। এটাই হলো তাবাররোক,এটাই হলো পবিত্রতা জ্ঞান। এই তাবাররোক করাটা বা আল্লাহর অলিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে পবিত্র জ্ঞান করাটা যদি শেরক হতো তাহলে কোরআন কি ইয়াকুব (আ) এর এই কাজকে নেতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করতো না? নবীজীর কবর ছোঁয়া বা কবরে চুমু দেওয়াতেও কোনো সমস্যা নেই বলে আহমাদ ইবনে হাম্বল মনে করতেন। সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলে খোদার সাথে সবসময়ের জন্যেই থাকতেন,তাঁরাও তাবাররোক অন্বেষণ করেছেন। আমরা এ সময়ের মুসলমানরা যারা নবীজীকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করি নি,তারা নবীজীর মাযার স্পর্শ করে, চুমু দিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের অন্তরের ভালোবাসা ও প্রেমের পরিচয় দেব এতে দোষের কী আছে?

ওমর পথভ্রষ্ট ?

ওমর পথভ্রষ্ট ?
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তার রাসুল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের নিজস্ব কোন সিধান্তের অধিকার থাকবে। আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ অমান্য করলে সে প্রকাশ্যে পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।
( সুরা আহযাবঃ৩৬)

তাহলে রাসুল (সাঃ) যখন লেখনির সরঞ্জাম হাজির করার হুকুম দিয়েছিলেন
তখন যে সমস্ত সাহাবী তারা নিজেদের 'কিয়াসি অধিকার বলে' হুকুমটি পালন করেননি, তারা কোরআনের উক্ত আয়াতের আলোকে প্রকাশ্য গোমরাহির মধ্যে নিমজ্জিত বলে প্রমানিত হলেন।

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ)- এর রোগ যখন প্রবল হয়ে পড়লো তখন তিনি বললেনঃ আমাকে লিখবার উপকরন দাও আমি তোমাদের জন্য এমন এক লিপি লিখে দিয়ে যাব যার পরে তোমরা কখন পথ হারাবে না। তখন ওমর রাঃ বললেন, নবীজি (সাঃ)-এর রোগ এখন প্রবল হয়েছে। আর আমাদের নিকটতো আল্লাহর কিতাবই রয়েছে। সেটাই আমাদের জন্য যথেস্ট।
সহিহ আল বুখারী -খন্ড-১, হাদিদ নং-১১২।
এখন কথা হলো কোরআনের উপরিউক্ত আয়াত অনুযায়ী ওমর পথভ্রষ্ট।

Monday, October 12, 2015

দাবী করা হয় উমর রাঃ এর সাথে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী এর বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় আসলে কি তাই ?

দাবী করা হয় উমর রাঃ এর সাথে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী এর বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় আসলে কি তাই ?
এক ভাইজান জানতে চেয়েছেন তাই এটি পোস্ট করলাম, দাবী করা হয় উমরের সাথে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী আঃ এর বিবাহ হয়এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয়! যাদের নাম নাকি জায়েদ ও ফাতেমা !

ইতিহাস বলছে উমর ইসলাম গ্রহন করে ৪০ বছরে এবং তার মৃত্যু হয় ৬৩ বছরে !

হজরত আলী আঃ ইসলাম মানেন নয় বছর বয়সে যদিও তিনি এক মুহুর্তের জন্যও শিরক করেন নি! আর হজরত আলী আঃ বিবাহ করেন ২৫ বছর বয়সে অর্থাত ইসলাম আনার ১৬ বছর পরে!

আর হজরত আলীর বিবাহের সময় উমরের বয়স ছিলো ৫৬ বছর !

তাহলে উমরের বয়স কত বাকি থাকে যদি ইতিহাসের এই কথাটি মানা হয় যে তার মৃত্যু ৬৩ বছরে হয় ???

অর্থাৎ ৬৩-৫৬ বাদ গেলে, থাকে ৭ বছর মাত্র !

হজরত আলীর সর্ব প্রথম সন্তান হল ইমাম হাসান আঃ আর দ্বিতীয় হল ইমাম হোসায়েন আঃ আর তৃতীয় হল হজরত জ্যায়নাব আঃ আর চতুর্থ হল হজরত উম্মে কুলছূম আঃ!

এমতাবস্হায় যদি কমপক্ষে দুবছর বেশি করেও দেওয়া হয় উমরের বয়সের সাথে তাহলে উমরের মৃত্যুর সময় উম্মে কুলছুমের বয়স দাড়ায় মাত্র ৫ বছর!!!!

তাহলে বিবাহ হয়েছিলো কখন সন্তান তো দুরের কথা !!!!!
যখন উম্মে কুলছূমের বয়স ৩ বছর ছিলো তখন তার সাথে বিবাহ হয় উমরের ????????

মুল ঘটনাঃ
 সত্য ঘটনা হচ্ছে, যে উম্মে কুলছুমের বিবাহ হজরত উমরের সাথে হয় তিনি হলেন হযরত আবু বকরের মেয়ে। আবু বকরের মৃত্যুর পরে আসমা বিনতে উমাইস এর বিবাহ হজরত আলীর সাথে হয়, যিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ও উম্মে কুলছুম বিনতে আবু বকর কে ।

Friday, October 9, 2015

হযরত খাব্বাব (রা)-এর অনন্য জীবন এবং এ থেকে আমাদের শিক্ষা

হযরত খাব্বাব (রা)-এর অনন্য জীবন এবং এ থেকে আমাদের শিক্ষা
মক্কার কাফের মুশরেকরা ছিল প্রবল ক্ষমতাধর। তারা ছিল প্রচণ্ড ইসলামবিরোধী। কাফেরদের বেশির ভাগই ছিল ভয়ানক প্রকৃতির লোক। একেবারে ক্ষ্যাপা হায়েনার মতো ভয়ানক। উম্মে আনমার তাদেরই একজন। সে ছিল ব্যবসায়ী। দাস বেচা-কেনা ছিল তার পেশা। দাসরাও তো অন্যদের মতোই মানুষ ছিল। তবুও তখনকার দিনে বাজার নিয়ে দাসদের কেনা-বেচা করা হতো। মানুষকে মানুষ বেচত, কেউবা তাকে কিনত। এরকম কাজ যে কতটা অমানবিক ছিল তা কল্পনা করাও কঠিন। তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর মুহাম্মদ (সা) এ অপমানজনক পেশার অবসান ঘটালেন।

উম্মে আনমার দাস বেচাকেনা করলে কী হবে? তার নিজের জন্যও এটা দাসের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তাই সে একজন বলিষ্ঠ ও ছটপটে দাস খুঁজছিল। দাস কেনার জন্য আনমার একদিন বাজারে গেল। শত শত দাস উঠেছে বাজারে। এদের মধ্যে একজনকে আনমারের খুব পছন্দ হলো। দাসটি ছিল বেশ জোয়ান ও শক্ত-সমর্থ। দাসটির নাম খাব্বাব। তাকে বেশ ভদ্র ও বুদ্ধিমান বলে মনে হচ্ছিল। তাই দাসটিকে পেয়ে আনমার যারপরনাই খুশি হলো।

বিক্রেতার দাবি মিটিয়ে আনমার খাব্বাবকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। সে দাসটিকে তরবারি তৈরির কলাকৌশল শেখানোর পরিকল্পনা নিল। তাই তাকে মক্কায় একজন কর্মকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হলো। খাব্বাব ছিলেন বেশ বুদ্ধিমান। তাই তিনি অল্পদিনের মধ্যেই তরবারি বানানো শিখে ফেললেন। হযরত খাব্বাবের বুদ্ধিমত্তা ও গুণের কারণে আনমার যারপরনাই খুশি হলো। দাসটির সাহস, যোগ্যতা ও ন্যায়নিষ্ঠা আনমারকে বিস্মিত করল।

তখন ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগ। ইসলামের দাওয়াত প্রচারের কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। মহানবী (সা) অতি গোপনে দীনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা তাঁর সাথী হয়েছেন তাঁরাও অতি সাবধানে মানুষকে দীনের দাওয়াত দিচ্ছেন। ইসলাম প্রচারের এ খবর হযরত খাব্বাবের কানে এসে পৌঁছল। আর যায় কোথায়? তাঁর মন ছিল সত্যের প্রতি অনুরাগী। তাই হযরত খাব্বাব (রা) আর বসে থাকতে পারলেন না। তিনি চুপি চুপি মহানবী (সা)-এর কাছে গিয়ে তাঁর মনের বাসনা খুলে বললেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইসলাম কবুল করার ফলে বদলে গেল হযরত খাব্বাবের জীবন। দীনের পরশ তাঁকে সত্যের প্রতি আরও বেশি আকুল করে তুলল। খোদায়ী দীনের স্পর্শ পেয়ে তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। এখন তাঁর একটাই ভাবনা। আল্লাহর কথা কিভাবে প্রচার করা যায়। কিভাবে ইসলামের আলো পথহারা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। তিনি কামারশালায় কাজ করেন। আর ফাঁকে ফাঁকে শুধু আল্লাহর চিন্তায় মগ্ন থাকেন।
খাব্বাব (রা) নিজে থেকে না বললেও তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর চাপা থাকল না। বাতাসের বেগে তা মক্কার সবখানে ছড়িয়ে পড়ল। এ খবর মনিব আনমারের কানেও গেল। দাস ইসলাম কবল করেছে! আনমারের মাথায় আগুন ধরে গেল। তাই ইসলামবিরোধী আনমার বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল। ক্ষণিকের মধ্যেই আনমার তার দলবলসহ কামারশালায় গিয়ে হাজির হলো। সেখানে পেয়ে গেল খাব্বাবকে। আর যায় কোথায়? প্রচণ্ড রাগ ও উত্তেজনায় কাঁপছে আনমার। সে হুঙ্কার ছেড়ে বলল,
: তুই না কি মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছিস, বল, জবাব দে?
: হ্যাঁ করেছি, জবাব দিলেন খাব্বাব।
এমনিতেই আনামর ছিল বেশ উত্তেজিত। মুখের ওপর খাব্বাবের জবাব শুনে সে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো রেগে গেল। আনমার রাগতস্বরে বলল,
: তোর এত বড় সাহস? আমার কেনা গোলাম হয়ে তুই আমার ধর্ম ত্যাগ করেছিস? তুই নাস্তিক হয়ে গেছিস? বলতে বলতে খাব্বাবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আনমার। তার দলের লোকেরা কামারশালার হাতুড়ি ও লোহার পাত দিয়ে হযরত খাব্বাবকে পেটাতে লাগল। গায়ে যত শক্তি ছিল তা দিয়ে খাব্বাব (রা)-কে এলোপাতাড়ি মারতে লাগল। ফলে আঘাতের পর আঘাতে খাব্বাবের দেহ ক্ষতবিক্ষত হলো। তাঁর শরীরের চামড়া ছিঁড়ে গেল। মাথা কেটে গিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগল। টাটকা খুন ঝরতে জরতে খাব্বাবের দেহ প্রায় অবশ হয়ে পড়ল। অত লোকের শত আঘাত তিনি আর সইতে পারছিলেন না। ফলে একসময় জ্ঞান হারালেন। সেদিন তো এভাবেই কেটে গেল। মারের এই ধাক্কা সামলাতে তাঁকে যে কী কষ্ট পেতে হয়েছে তা বর্ণনা করাও কঠিন। তারপর থেকে আরও বহুবার খাব্বাবকে অনেক জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। মার খেয়েছেন, জীবনেরও হুকমি এসেছে। তারপরও হযরত খাব্বাব (রা) দীনের স্পর্শ ত্যাগ করেননি।

অনেক সময় মনিবের লোকেরা তাঁকে পশুর মতো করে টেনে-হিঁচড়ে মরুভূমিতে নিয়ে যেত। ভর দুপুরে মরুভূমি আগুনের ফুলকি ছড়াত। আর এ সময় দুশমনরা হযরত খাব্বাবকে তপ্ত বালুর ওপর শুইয়ে রাখত। কখনও তাঁর শরীরে লোহর বর্ম পরানো হতো। ফলে তিনি নড়াচড়া করতে পারতেন না। মাঝে মাঝে ফুটন্ত বালুতে উপুড় করে শুইয়ে খাব্বাবকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফেলে রাখা হতো। ফলে গরমে তাঁর চামড়া পুড়ে যেত। অনেক সময় গরমে ঘাম ঝরতে ঝরতে খাব্বাব(রা) অবশ হয়ে যেতেন। তখন তৃষ্ণায় তাঁর বুক ফেটে যেতে চাইত। তিনি পানি চেয়ে চিৎকার করতেন। এতে কাফেররা খুশি হতো। তারা হায়েনার মতো কপট হাসি হেসে খাব্বাবকে উপহাস করত। এক ফোঁটা পানি তো দিতই না, বরং তারা খাব্বাবকে উদ্দেশ্য করে বলত,
: বোঝ মজা। মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করার শাস্তি বোঝ। এবার মাথা ঠিক হয়েছে তো? তা হলে ইসলাম ত্যাগ কর। নতুন ধর্ম ত্যাগ করলে তোকে ছেড়ে দেব। পানি, খাবার সবই পাবে। শুধু বল, আমি মুহাম্মদের ধর্ম ছেড়ে দিলাম।

হযরত খাব্বাব (রা) দুশমনদের কথা শুনে আরও দৃঢ় হন। তাঁর মুখে তখন জোরে জোরে ধ্বনিত হতো মহান আল্লাহর নাম। আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে একসময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। তারপর আবারও জ্ঞান ফিরে এলে আল্লাহকেই ডাকতে থাকতেন। হযরত খাব্বাবের ওপর দিনের পর দিন ধরে চলত এ ধরনের নির্যাতন। উম্মে আনমারের বদমেজাজিও অত্যাচারী এক ভাই ছিল। সে ছিল আরও নিষ্ঠুর। সে প্রতিদিন খাব্বাবের কামারশালায় যেত। এসেই উত্তপ্ত লোহার পাত তুলে চেপে ধরত খাব্বাবের মাথায়। এতে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে খাব্বাবের জ্ঞান হারিয়ে যেত। হুঁশ ফিরে এলে তাঁকে আবারও নির্যাতন করা হতো। তারপরও তিনি দমে যাননি। কোনো অত্যাচারকেই খাব্বাব পরোয়া করতেন না। হযরত খাব্বাব ছিলেন অতিশয় দরিদ্র। তবে তাঁর মন ছিল সত্যের সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপর। তিনি ছিলেন পাহাড়ের মতো দৃঢ়চেতা ও অনড়। মহান আল্লাহকে ভালবেসে তিনি আরও ইস্পাত কঠিন হয়ে ওঠেন। তিনি একাই কাফের কুরাইশতের সাথে লড়াই করেছেন। তাদের অন্যায় ও অসত্য অহমিকাবোধকে রুখে দাঁড়িয়েছেন। কাফেরদের শত নিপীড়নের মুখেও মিথ্যা ও অন্যায়ের কাছে তিনি মাথা নত করেননি, সত্যের পথ থেকে একচুলও নড়েননি। হযরত খাব্বাব (রা) আমাদের জন্য তাই অনন্য আদর্শ হয়ে আছেন।

Monday, August 17, 2015

আবুযর (রাঃ)

আবুযর (রাঃ)
হযরত ঊসমান(রাঃ) দ্বারা মদীনা থেকে রাসুলের(সাঃ) বিশ্বস্ত সাহাবী আবুযরের(রাঃ) বহিস্কারের সময় আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলীর(আঃ)র ভাষন(খোতবা # ১২৯)
হে আবুযর(১)! তুমি আল্লাহর নামে ক্রোধ দেখিয়েছিলে।সুতরাং যার ওপরে রাগান্বিত হয়েছিলে তার বিষয়ে আল্লাহতে আশা রেখো।মানুষ তার জাগতিক বিষয়ের জন্য তোমাকে ভয় করতো,আর তুমি তোমার ঈমানের জন্য তাদেরকে ভয় করতে।কাজেই তারা যেজন্য তোমাকে ভয় করে তা তাদের কাছে রেখে দাও এবং তুমি যে জন্য তাদেরকে ভয় কর তা নিয়ে বেরিয়ে পড়।যে বিষয় থেকে তুমি তাদেরকে বিরত রাখতে চেয়েছিলে তাতে তারা কতই না আসক্ত এবং যে বিষয়ে তারা তোমাকে অস্বীকার করেছে তার প্রতি তুমি কতই না নির্লিপ্ত।অল্পকাল পরেই তুমি জানতে পারবে আগামীকাল (পরকালে) কে বেশী লাভবান এবং কে বেশী ঈর্ষনীয়।এমনকি সমস্ত আকাশ ও পৃ্থিবী যদি কারো জন্য রুদ্ব হয়ে যায় এবং সে যদি আল্লাহকে ভয় করে, তবে আল্লাহ তার জন্য খুলে দিতে পারেন।শুধু ন্যায়পরায়নতা তোমাকে আকর্ষন করে এবং অন্যায় তোমাকে বিকর্ষন করে।যদি তুমি তাদের জাগতিক বিষয়ের বিষয়ের প্রীতি গ্রহন করতে তাহলে তারা তোমাকে ভালবাসতো এবং যদি তুমি তাদের সাথে এর অংশ গ্রহন করতে তবে তারা তোমাকে আশ্রয় দিত।
(১)আবুযর গিফারীর নাম ছিল জুনদাব ইবনে জুনাদাহ।তিনি মদীনার পুর্বপ্রান্তে অবস্থিত রাবাযাহ নামক একটা ছোট গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। রাসুলের(সাঃ) ইসলাম প্রচারের কথা শোনা মাত্রই তিনি মক্কা থেকে এসেছিলেন এবং রাসুলের(সাঃ) সঙ্গে সাক্ষাত করে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন।এতে কাফের কুরাইশগন তাকে নানাভাবে অত্যাচার-উতপীড়ন করেছিল।কিন্তু তার দৃঢ় সংকল্প থেকে টলাতে পারেনি।ইসলাম গ্রহকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ বা ৫ম।ইসলামে অগ্রনী হবার সাথে তার আত্নত্যাগ ও তাকওয়া এত উচুস্তরের ছিল যে, রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ
“আমার লোকদের মধ্যে আবুযরের আত্নত্যাগ ও তাকওয়া মরিয়ম তনয় ঈসার মত।“
খলিফা উমরের রাজত্বকালে আবুযর সিরিয়া চলে গিয়েছিলেন এবং উসমানের সময়েও সেখানে ছিলেন।তিনি উপদেশ প্রদান,ধর্মপ্রচার,সৎপথ প্রদর্শন ও নবী পরিবারের(আঃ)(আহলুল বায়েত) মহত্ব সম্বন্দ্বে জগনকে অবহিত করে দিন অতিবাহিত করেছিলেন।ব্ররতমান সিরিয়া ও জাবাল আমিলে(উত্তর লেবানন)শিয়া সম্প্রদায়ের যে চিনহ পাওয়া যায় তা তার প্রচার ও কার্যক্রমের ফল।সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া তাকে ভাল চোকাহে দেখতো না।উসমানের অন্যায় কর্মকান্ড ও তহবিল তসরুফের প্রকাশ্য সমালোচনা করতেন বলে মুয়াবিয়া তার উপর খুব বিরক্ত ছিল।কিন্তু সে তাকে কিছু করতে না পেরে উসমানের কাছে পত্র লিখলো যে,আবুযর যদি আরো কিছুদিন এখানে থাকে তবে সে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলবে। প্রত্ত্যুত্তরে উসমান লিখলো যে,আবুযরকে যেন জিনবিহীন উটের পিঠে চড়িয়ে মদিনায় প্রেরন করা হয়।উসমানের আদেশ পালিত হয়েছিল।মদীনায় পৌছেই তিনি ন্যায় ও সত্যের প্রচার শুরু করলেন।তিনি মানুষকে রাসুলের(সাঃ) সময়ের কথা স্মরন করিয়ে দিতে লাগলেন এবং রাজকীয় আড়ম্বর প্রদর্শনের বিষয়ে সতর্ক করতে কাগলেন।এতে উসমান অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে তাঁর কথা বলা বন্দ্ব করতে চেষ্টা করলেন।একদিন উসমান তাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন,আমি জানতে পেরেছি তুমি নাকি প্রচার করে বেড়াচ্ছ যে,রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ
“ যখন বনি উমাইয়া ৩০জন সংখ্যায় হবে তখন তারা আল্লাহর নগরীসমুহকে তাদের নিজের সম্পদ মনে করবে,তাঁর বান্দাগনকে তাদের গোলাম মনে করবে এবং তাঁর দ্বীনকে তাদের প্রতারনার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে”।
আবুযর বললেন,তিনি রাসুলকে(সাঃ) এরুপ বলতে শুনেছেন।উসমান বললেন যে, আবুযর মিথ্যা কথা বলেছে এবং তিনি তার পার্শ্বে উপবিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা এমন কথা শুনেছে কিনা।উপস্থিত সকলে না বোধক উত্তর দিয়েছিল।আবুযর তখন বললেন যে,এ বিষয়ে আলী ইবনে আবি তালিবকে জিজ্ঞাসা করা হোক।তখন আলীকে ডেকে আনা হল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আবুযরের বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেন ।তখন উসমান আলীর কাছে জানতে চাইলেন কিসের ভিত্তিতে তিনি এ হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন।আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী(আঃ) বললেন তিনি রাসুল কে(সাঃ) বলতে শুনেছেনঃ
“আকাশের নীচে ও মাটির উপরে আবুযরের অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী আর কেউ নেই”।
এতে উসমান আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে রইলেন।কারন আবুযরকে মিথ্যাবাদী বলা মানে হলো রাসুলকে(সাঃ) মিথ্যাবাদী বলা।কিন্তু ভেতরে ভেতর উসমান আবুযরের উপর ভীষন রাগান্বিত হয়ে রইলেন।কারন তিনি আবুযরকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করতে পারেননি।অপরদিকে মুসলিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্নসাতের জন্য আবুযর প্রকাশ্যভাবে উসমানের সমালোচনা অব্যাহত রাখলেন।যেখানেই তিনি উসমানকে দেখতেন সেখানে নিম্নের আয়াত আবৃতি করতেনঃ
“........ আর যারা স্বর্ন ও রৌপ্য পুঞ্জীভুত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট,পার্শ্বদেশ ও পৃষ্টদেশে দাগ দেয়া হবে।সেদিন বলা হবে,এটাই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভুত করতে “(কোরান-৯:৩৪-৩৫)।
উসমান অর্থ দিয়ে আবুযরের মুখ বন্দ্ব করতে চাইলেন কিন্তু এই স্বাধীঞ্চেতা লোকটিকে তার সোনার ফাঁদে আটকাতে পারেননি।এ লোকটি কোন কিছুতেই ভীত বা প্রলুব্দ্বও হলেন না,আবার তার মুখও বন্দ্ব হলো না; অবশেষে মদীনা ত্যাগ করে রাবাযাহ চলে যাবার জন্য উসমান তাকে নির্দেশ দিলেন এবং মারওয়ান ইবনে হাকামকে( এই হাকামকে তার কুকর্মের জন্য রাসুল মদীনা থেকে বহিস্কার করেছিলেন;সে তার পুত্রসহ নির্বাসনে ছিল এবং উসমান তাকে ফেরত এনেছিল)নিয়োগ করেছিল আবুযরকে বের করে দেয়ার জন্য।একই সাথে উসমান একটি অমানবিক আদেশ জারী করেছিল যে,আবুযরকে যেন কেউ বিদায় সম্ব্বর্ধনায় না জানায়।কিন্তু আমিরুল মুমিন হযরত আলী,ইমাম হাসান,ইমাম হুসাইন,আকীল ইবনে আবি তালিব,আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ও আম্মার ইবনে ইয়াসির খলিফার অমানবিক আদেশ অমান্য করে আবুযরকে বিদায় সম্ব্বর্ধনায় দিয়েছিলেন।সেই বিদায় সম্ব্বর্ধনায় আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী এই খোতবা দিয়েছিলেন।
রাবাযাহতে যাবার পর থেকে আবুযর অতি দুঃখ কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। এ স্থানে তার পুত্র যর ও তার স্ত্রী মারা গিয়েছিল এবং তার জীবিকা নির্বাহের জন্য যে ভেড়া ও ছাগল পালন করতেন সেগুলোও মরে গিয়েছিল।তার সন্তানদের মধ্যে একটি কন্যা জীবিত ছিল,যে পিতার দুঃখ-কষ্ট ও উপোসের অংশীদার ছিল।যখন তাদের জীবিকার সকল পথ বন্দ্ব হয়ে গেলতখন দিনের পর দিন উপোস করে সে পিতাকে বললো, “বাবা, আর তো ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারি না।আর কতদিন এভাবে কাটাবো।জীবিকার সন্দ্বানে চলো অন্য কোথাও যাই”।আবুযর কন্যাকে সাথে নিয়ে এক নির্জন স্থানের মধ্য দিয়ে যাত্রা করলেন।কোথাও বৃক্ষপত্র পরযন্ত তাঁর চোখে পড়লো না।অবশেষে এক স্থানে ক্লান্ত হয়ে তিনি বসে পড়লেন।তিনি কিছু বালি মাথার নীচে রেখে শুয়ে পড়লেন।অল্পক্ষনের মধ্যেই তার চোখে-মুখে ইন্তেকালের লক্ষন দেখা দিল।
পিতার এহেন অবস্থা দেখে কন্যা বিচলিত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো এবং বললো,”বাবা,এ নির্জন স্থানে তোমার ইন্তেকাল হলে আমি কিভাবে তোমার দাফন-কাফন করবো”।প্রত্যুত্তরে পিতা বললেন, “ বিচলিত হয়ো না।রাসুল(সাঃ) আমাকে বলেছেন অসহায় অবস্থায় আমার ইন্তেকাল হবে এবং কয়েকজন ইরাকী আমার দাফন-কাফন করবে।আমার ইন্তেকালের পর আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাস্তার পাশে বসে থেকো এবং কোন যাত্রীদল যেতে থাকলে তাদেরকে বলো রাসুলের(সাঃ) প্রিয় সাহাবা আবুযর মারা গেছে”।ফলে তার ইন্তেকালের পর তার কন্যা রাস্তার পাশে বসেছিল।কিছুক্ষন পরে একটা যাত্রীদল সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আবুযরের এহেন অসহায় অবস্থায় ইন্তেকালের কথা শুনে তারা অত্যন্ত শোকে বিহবল হল।তারা তাদের যাত্রা স্থগিত করে আবুযরের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করলেন।৩২ হিজরী সনের জিলহজ মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল।
৩য় খলিফা হযরত উসমানের(রাঃ)রাজত্বকাল সম্পর্কে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী(আঃ)
৩য় খলিফা হযরত উসমানের(রাঃ)রাজত্বকাল সম্পর্কে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী(আঃ)বলেন যে, উসমান ক্ষমতায় আসার পর পরই উমাইয়া গোত্র সুবিধা পেয়ে গেল এবং বায়তুল মাল লুটপাট শুরু করে দিল।খরায় শুকিয়ে যাওয়া অঞ্চলের গরুর পাল সবুজ ঘাস দেখলে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে উমাইয়া গোত্রও সেভাবে আল্লাহর সম্পদের(বায়তুল মাল) ওপর পড়লো এবং গোগ্রাসে তা নিঃশেষ করতে থাকলো।অবশেষে উসমানের প্রশ্রয় ও স্বজনপ্রীতি এমন এক পরযায়ে গেল যখন মানুষ তার ঘর অবরোধ করে তরবারী দ্বারা আঘাত করলো এবং সে যা গলাধকরন করেছিল তা বমি করায়ে ছাড়লো।
উসমানের সময়ে কু-শাসন এমনভাবে বিরাজ করেছিল যে,উচ্চ মরযাদা সম্পন্ন সাহাবীগনের অকদর ও দারিদ্র দেখে কোন মুসলিম স্থির থাকতে
পারতো না।অথচ সমুদয় বায়তুল মাল উমাইয়া গোত্রের নিয়ন্ত্রনে ছিল;সরকারী পদসমুহ তাদের অনভিজ্ঞ যুবক শ্রেনীর দখলে ছিল,মুসলিমদের বিশেষ সম্পদ(রাষ্টায়ত্ব সম্পদ) তাদের মালিকানায় ছিল;চারনভুমি তাদের পশুপালের জন্য নির্ধারিত ছিল।গৃহ নির্মিত হয়েছিল শুধুমাত্র তাদের দ্বারা এবং ফলের বাগান ছিল তা শুধু তাদের জন্য।যদি কোন সরিদয় ব্যক্তি এসব বাড়াবাড়ির কথা বলতো তবে তাদের পাঁজর ভেঙ্গে দেয়া হত।এহেন আত্নসাতের জন্য কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করলে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হতো।দরিদ্র ও দুস্থদের যাকাত এবং সর্বসাধারনের বায়তুলমালের কি অবস্থা উসমান করেছিল তার নমুনা নিম্নের গুটি কয়েক উদাহরন থেকে অনুমান করা যাবেঃ
১/হাকাম ইবনে আবুল আ’সকে রাসুল(সাঃ) মদীনা থেকে বহিস্কার করেছিলেন। রাসুলের সুন্নাহ ও আগের খলিফাদ্বয়ের নীতি ভংগ করে উসমান তাকেই মদীনায় এনে বায়তুলমাল থেকে ৩ লক্ষ দিরহাম দিয়েছিলেন(বালাজুরী-১০০,পৃঃ২৭,২৮,১২৫)।
২/পবিত্র কোরানে মোনাফেক বলে ঘোষিত অলিদ ইবনে উকবাহকে বায়তুল মাল থেকে ১ লক্ষ দিরহাম দেয়া হয়েছে(রাব্বিহ-১১৮,৩য় খন্ড,পৃঃ৯৪)।
৩/উসমান তার কন্যা উম্মে আবানকে মারওয়ান ইবনে উকবাহকে বায়তুল মাল থেকে ১ লক্ষ দিরহাম দেয়া হয়েছিল(হাদীদ-১৫২,১ম খন্ড,পৃঃ১৯৮-১৯৯)
৪/উসমান তার কন্যা আয়শাকে হারিছ ইবনে হাকামের কাছে বিয়ে দিয়ে তাকে বায়তুল মাল থেকে ১ লক্ষ দিরহাম দিয়েছিলেন(হাদীদ-১৫২,১ম খন্ড,পৃঃ১৯৮-১৯৯)।
৫/তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে খালিদকে ৪ লক্ষ দিরহাম দিয়েছিলেন(কুতায়বাহ-৪৮,পৃঃ৮৪)।
৬/আফ্রিকা থেকে খুমস হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ৫ লক্ষ দিরহাম মারওয়ান ইবনে হাকামকে দিয়েছিলেন(কুতায়বাহ-৪৮,পৃঃ৮৪)।
৭/সাধারন বদান্যতার কারন দেখিয়ে রাসুলের প্রানপ্রিয় কন্যার রাষ্টায়ত্ব ‘ফদক’ মারওয়ান ইবনে হাকামকে দান করেছিলেন(কুতায়বাহ-৪৮,পৃঃ৮৪)।
৮/ মদীনার মাহযুব নামক বানিজ্যিক এলাকা জনগনের ট্রাষ্ট হিসাবে রাসুল(সাঃ) ঘোষনা করেছিলেন কিন্তু উসমান তা তার জামাতা হারিছ ইবনে হাকামকে দান করেছিলেন(কুতায়বাহ-৪৮,পৃঃ৮৪)।
৯/ মদীনার চারপাশের তৃনভুমিতে উমাইয়া গোত্র ছাড়া অন্য কারো উটকে চরতে দেয়া হতো না।(হাদীদ-১৫২,১ম খন্ড,পৃঃ১৯৯)।
১০/উসমানের ইন্তেকালর পর তার ঘরে ৫০,০০০ দিনার(স্বর্ন মুদ্রা) ও ১০,০০,০০০ দিরহাম(রৌপ্য মুদ্রা) পাওয়া গিয়েছিল।তার নাখারাজ জমির কোন সীমা ছিল না।ওয়াদ-আল কুরা ও হুনায়নে তার মালিকানাধীন ভুসম্পত্তির মুল্য ছিল ১ লক্ষ দিনার।তার উট ও ঘোড়ার কোন হিসাব ছিল না।
১১/প্রধান নগরীগুলো উসমানের আত্নীয়-স্বজনদের শাসনাধীন ছিল।কুফার শাসনকর্তা ছিল অলিদ ইবনে উকাবা।একবার মদ পান অবস্থায় সে ইমামতি করতে গিয়ে ফজরের সালাত ২ রাকাতের পরিবর্তে ৪ রাকাত পড়ায় জনগন উত্তেজিত হয়ে পড়ে।এতে খলিফা তাকে সরিয়ে অন্যতম চিনিহিত মোনাফেক সাঈদ ইবনে আসকে কুফার শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। এভাবে মিশরে আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ,সিরিয়ায় মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান ও বসরায় আব্দুল্লাহ ইবনে আমিরকে শাসনকর্তা নিয়োগ করে স্বজনপ্রীতি্র মাধ্যমে প্রশাসনে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন।(হাদীদ-১৫২,১ম খন্ড,পৃঃ১৯৯)।