Wednesday, October 14, 2015

রাসুলের প্রতি ভালোবাসা

সিহহা সিত্তার অন্যতম বোখারি শরিফের সংকলক ইমাম বোখারি (রহ) এর বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘ওরওয়া বিন মাসউদ’ নামে রাসূলে খোদা (সা) এর একজন সাহাবি বলেন “খোদার কসম! নবী করিম (সা) এর ওজুর পানি সাহাবাগণ কখনোই নিচে পড়তে দিতেন না, সব পানি পড়তো সাহাবিদের হাতে,তাঁরা ঐ পানি নিজেদের চেহারা ও শরীরে মাখতেন…যখনই নবীজীর ওজু করার সময় হতো সাহাবিরা তখনই ওজুর পানি হাতে নেওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতায় নেমে যেতেন।”
হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম (সা) যখন তাঁর চুল কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুলগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি খেতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে। এসব কাজ যদি শির্‌ক হতো তাহলে নবিয়্যে মুকাররামে ইসলাম মুসলমানদেরকে সেসব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। কেননা নবীজীর সন্তানের মৃত্যুর জন্যে যখন চন্দ্রগহণকে কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছিলো, নবীজী তখন কঠোরভাবে ঐ ভ্রান্ত আকিদার বিরোধিতা করেছিলেন। নবীজীর কাছ থেকে ফযিলত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে জনগণ যে চেষ্টা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী এ কাজের বিরোধিতা করেছেন এরকম কোনো বর্ণনা নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
আসলে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে যেসব পুণ্যবান সালেহিন বান্দার, তাঁদেরকে পবিত্র জ্ঞান করার অর্থ শেরেকি করা নয়, বরং সবসময় এই বিশ্বাস থেকেই করা হয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তাঁদের কারো পক্ষেই সম্ভব নয় অপর কারো জন্যে মঙ্গল বয়ে আনা কিংবা কারো বিপদ দূর করা। রাসূলে খোদার মিম্বার, তাঁর কবর, কবর ছোঁয়া এবং তাতে চুমু খাওয়া ইত্যাদি কাজ নবীজীর ওফাতের পর মুসলমানরা করতেন।মদিনার বিখ্যাত ফকিহ সায়িদ বিন মুসাইয়্যেব এবং ইয়াহিয়া বিন সায়িদ এসব কাজ করতেন। ঐশী ব্যক্তিত্ববর্গের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র কিংবা তাঁদের কবরকে পবিত্র জ্ঞান করার অর্থ হলো যেহেতু তাঁরা ছিলেন অনেক উন্নত পর্যায়ের এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী মানুষ, সেজন্যে তাঁদের প্রতিটি জিনিসই পবিত্র এবং মর্যাদা ও সম্মানের যোগ্য।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ইউসুফ (আ)র কাহিনীটি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইয়াকুব (আ) ছিলেন ইউসুফ (আ) এর পিতা। বার্ধক্যে এসে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ইউসুফ (আ) তাঁর জামাটি পাঠালেন বাবার জন্যে। হযরত ইয়াকুব (আ) পুত্র ইউসুফের দেওয়া জামাটি চোখে লাগালেন আর তাঁর চোখ ভালো হয়ে গেল। এটাই হলো তাবাররোক,এটাই হলো পবিত্রতা জ্ঞান। এই তাবাররোক করাটা বা আল্লাহর অলিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে পবিত্র জ্ঞান করাটা যদি শেরক হতো তাহলে কোরআন কি ইয়াকুব (আ) এর এই কাজকে নেতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করতো না? নবীজীর কবর ছোঁয়া বা কবরে চুমু দেওয়াতেও কোনো সমস্যা নেই বলে আহমাদ ইবনে হাম্বল মনে করতেন। সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলে খোদার সাথে সবসময়ের জন্যেই থাকতেন,তাঁরাও তাবাররোক অন্বেষণ করেছেন। আমরা এ সময়ের মুসলমানরা যারা নবীজীকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করি নি,তারা নবীজীর মাযার স্পর্শ করে, চুমু দিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের অন্তরের ভালোবাসা ও প্রেমের পরিচয় দেব এতে দোষের কী আছে?

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: