Wednesday, April 26, 2017

মাজার চুম্বন কি শিরক ?

মাজার চুম্বন কি শিরক ?
একজন মুসলমান আলেম বললেন , মদীনায় মসজিদে নব্বীর পাশে দাড়িয়েছিলাম ।

হঠাৎ সেখানে শীয়া মাযহাবের এক লোক এসে নবীজীর (সাঃ) মাজারের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন দিতে শুরু করল ।
মসজিদের ইমাম সাহেব তা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , " ওহে মুসাফির , কেন তুমি এই বিবেক বুদ্বিহীন মাজারের দেয়ালকে চুমু দিচ্ছ ? এর মাধ্যমে তুমি তো শিরক করছ " ।
ইমাম সাহেবের ক্রুদ্ব চেহারা দেখে বেচারা শীয়া লোকটি ভারাক্রান্ত অন্তরে দ্রুত চলে গেল ।

মুসলিম আলেম তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলল , " এই দেয়ালে চুম্বন দেয়ার অর্থ হচ্ছে নবীজীর (সাঃ) প্রতি ভালবাসা । ঠক যেমন পিতা তার সন্তানকে চুম্বনের মাধ্যমে ভালবসা প্রকাশ করে । এখানে সে তো কোন শিরক করে নি " ।
ইমাম সাহেব বললেন , " না , এটাকেও শিরক বলে " ।

মুসলমান আলেম বললেন , " ও তাই নাকি , তাহলে সুরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) এর পরনের জামাটি তাঁর চোখে পরম স্নেহ মমতায় বুলালেন এবং তাঁর চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরে এল ।
এখন আমার প্রশ্ন হল , ঐ জামাটি তো কাপড়ের তৈরী ছিল । তাহলে কিভাবে ঐ জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এর চোখের উপর রাখাতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল ?

এমনটিই নয় কি যে , কাপড়ের তৈরী জামাটি হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের ছোয়া পেয়ে ঐরকম বিশেষত্ব পেয়েছিল ।

এ ছাড়াও সুরা ইউসুফের ৯৪ নং অায়াত অনুসারে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহুদূর থেকে ওনার পু্ত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের সুঘ্রান অনুভব করেছিলেন ।
এসবই তো হচ্ছে ভালবাসা ও ভক্তির আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ।

আমি বা আপনি কাবা গৃহের পবি্ত্র কাল পাথরটিকে তো অজস্র চুমু দিয়ে থাকি । তো এখানে আপনি শিরকের কি দেখলেন ? আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না " ।

ইমাম সাহেব বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাজের বাহানা দিয়ে যৌক্তিক কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন ।

উপরের ঘটনায় এটা বলা যায় যে , নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগন এক ধরনের বিশেষ আধ্যাতিকতায় পারদর্শী । আর তাঁদের এই বিশেষ আধ্যাতিকতা থেকে উপকৃত হওয়াতে কোন শিরক নেই । বরং তা হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদেরই অনুরুপ । কেননা তাঁরাও এই বিশেষত্বকে তাওহীদের নূর থেকেই গ্রহন করেছেন ।

আমরা আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের মাজারর পাশে বসে তাঁদের সাথে আন্তরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করি । যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই সেহেতু তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি ।

পবিত্র কোরআনে সুরা ইউসুফের ৯৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে ,
"-- হে পিতা , আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , কেননা আমরা ভুল করেছিলাম -- "।

সুতরাং আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও অলি আউলিয়াগনের তাওয়াছছুল করা বা তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ন জায়েজ বা বৈধ । আর যারা এটাকে তাওহীদ থেকে আলাদা মনে করে থাকেন , তারা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত নয় । অথবা অযথা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের অন্তর চক্ষুতে পর্দা পড়ে গেছে ।

সুরা মায়েদার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,
"-- যারা ঈমান এনেছো , পরহেজগার থেকো এবং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মাধ্যমের অন্বেষন কর ---"।

" মাধ্যম " এই আয়াতের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ওয়াজীব কাজের আজ্ঞাম দেয়া এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই নয় । বরং মুস্তাহাব বিষয় যেমন আম্বীয়া , পবিত্র ইমামগন , প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের প্রতি তাওয়াছছুল করাকেও মাধ্যম বলা হয়েছে ।

সুরা নিসার ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,
"-- আর যখন বিরোধিতাকারীরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল এবং তোমার কাছে এসে তোমার মাধ্যমে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল । আর নবী তাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন তখন তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহনকারী ও মেহেরবান হিসাবে উপলব্দি করেছিল --- "।

এ প্রসংগে একটি কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের আদি পিতা-মাতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) আমাদের শেষ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বায়েতগনের (আঃ) নামের উছিলায় আল্লাহর রহমত অর্জন করেছিলেন ।

আহলে সুন্নাতের দুটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি

এক ব্যক্তি নবীজীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন যে , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আমি কোন এক ব্যাপারে কসম করেছিলাম যে , যদি সফল হই তবে বেহেশতের দরজায় চুম্বন করব । এখন এ পর্যায় কি করব " ?
নবী (সাঃ) বললেন , " মায়ের পায়ে ও পিতার কপালে চুম্বন কর "।
লোকটি বলল , " পিতা মাতা যদি ইন্তেকাল করে তখন কি করব " ?
নবী (সাঃ) বললেন , " তাদের কবরে চুম্বন করলেই হবে " ।
সূত্র - আল আলামু - কুতুবুদ্দিন হানাফি , পৃ- ২৪ ।

সুন্নি মাযহাবের বিশিষ্ট সাধক সাফিয়ান ছাওরী ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে বললেন , " কেন মানুষ কাবা গৃহের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে ও চুম্বন করে ? ওটাতো একটা পুরান কাপড় ছাড়া আর কিছুই না " !
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেন , " এই কাজটি এমন যে , এক ব্যক্তি অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে । পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির হাত ধরে ক্ষমা চাইছে এবং তার চারিপার্শে ঘুরছে এই আশায় যে , ঐ ব্যক্তি যেন তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেয় " ।
আনোয়ারুল বাহিয়াহ , ইমাম সাদিক (আঃ) জীবনী ।

সম্মানীয় পাঠক ,
কখনই অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠ মোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না , দয়া করে। নিজের বিবেক বুদ্ধির প্রয়োগ করুন। পরিপূর্ন নিশ্চিন্ত মনে নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করুন ও তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্ত দুঃখ বেদণা , পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান । একটা কথা মনে রাখবেন আপনি ওলী আউলিয়া কারো কাছে চাইবেন না বরং তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবেন ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন বাবা আদম আঃ আল্লাহর কাছে নিজ ভুল স্বিকার করে নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর উছিলা দিয়ে।


-- ইসলামী চিন্তাধারার উপর একশ একটি মুনাযিরা , ইমাম আলী (আঃ) ফাউন্ডেশন , কোম, ইরান ,
পৃষ্ঠা - ১৬০ ছায়া অবলম্বনে ।

Wednesday, September 7, 2016

পাচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে আদায় করা যায়েজ কি ?

পাচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে আদায় করা যায়েজ কি ?
কোনো জরুরি অবস্থা ছাড়াই এবং যে কোনো স্থানেই একত্রিতভাবে তথা কোনো বিরতি ছাড়াই পাঁচ ওয়াক্ত নামায তিনবারে আদায় করা যে বৈধ তা সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে প্রমাণিত। চলুন প্রমান দেখা যাকঃ

সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৯/ সালাতের ওয়াক্তসমূহ, হাদিস নম্বরঃ ৫৩৫ ৫৩৫।
আদম (রহঃ)......... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিব ও ইশার) সাত রাকআত ও (যুহর ও আসরের) আট রাকাআত একসাথে আদায় করেছেন।
حَدَّثَنَا آدَمُ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَبْعًا جَمِيعًا وَثَمَانِيًا جَمِيعًا.

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৯ ১৫০৯।
আবুর রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ইবনু আব্বাস (রাঃ) আসরের পরে আমাদের ভাষণ দেন এমনকি সূর্য-ডুবে গেল এবং তারকাসমূহ প্রকাশ পেল। লোকেরা বলতে লাগল, আস সালাত, আল সালাত। বনী তামীমের এক ব্যাক্তি তার দিকে এগিয়ে এসে অন্য দিকে না তাকিয়ে অবিরাম বলতে লাগল, আল সালাত, আল সালাত। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক, তুমি আমাকে সুন্নাতের শিক্ষা দিচ্ছ? তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) বলেন, তা শুনে আমার অন্তরে কিছু খটকা লাগল। তারপর আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি ইবনু আব্বাসের বিবরণটির সত্যতা স্বীকার করলেন।
وَحَدَّثَنِي أَبُو الرَّبِيعِ الزَّهْرَانِيُّ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْخِرِّيتِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ خَطَبَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ يَوْمًا بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَبَدَتِ النُّجُومُ وَجَعَلَ النَّاسُ يَقُولُونَ الصَّلاَةَ الصَّلاَةَ - قَالَ - فَجَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ لاَ يَفْتُرُ وَلاَ يَنْثَنِي الصَّلاَةَ الصَّلاَةَ . فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَتُعَلِّمُنِي بِالسُّنَّةِ لاَ أُمَّ لَكَ . ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ . قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ شَقِيقٍ فَحَاكَ فِي صَدْرِي مِنْ ذَلِكَ شَىْءٌ فَأَتَيْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ فَسَأَلْتُهُ فَصَدَّقَ مَقَالَتَهُ .

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৭ ১৫০৭।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আট রাক'আত একত্রে এবং সাত রাক’আত একত্রে আদায় করেছি। আমি বললাম হে আবুশ শা’সা! আমার মনে হয়, তিনি যুহরের সালাত বিলম্বে এবং আসরের সালাত ত্বরানিত করেছেন। অনুরূপভাবে মাগরিবের সালাত বিলম্ব করে এবং ইশার সালাত ত্বরান্বিত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমিও তাই মনে করি।
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ جَابِرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَمَانِيًا جَمِيعًا وَسَبْعًا جَمِيعًا ‏.‏ قُلْتُ يَا أَبَا الشَّعْثَاءِ أَظُنُّهُ أَخَّرَ الظُّهْرَ وَعَجَّلَ الْعَصْرَ وَأَخَّرَ الْمَغْرِبَ وَعَجَّلَ الْعِشَاءَ ‏.‏ قَالَ وَأَنَا أَظُنُّ ذَاكَ ‏.‏

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৫ ১৫০৫।
ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধের সময় যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তার এইরূপ করার কারণ কি? তিনি বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর উম্মাতকে কষ্ট না দেওয়া।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبٍ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، - يَعْنِي ابْنَ الْحَارِثِ - حَدَّثَنَا قُرَّةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الزُّبَيْرِ، حَدَّثَنَا عَامِرُ بْنُ وَاثِلَةَ أَبُو الطُّفَيْلِ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، قَالَ جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَبَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ ‏.‏ قَالَ فَقُلْتُ مَا حَمَلَهُ عَلَى ذَلِكَ قَالَ فَقَالَ أَرَادَ أَنْ لاَ يُحْرِجَ أُمَّتَهُ ‏.‏

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৬ ১৫০৬।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রকার ভয়-ভীতি বা বৃষ্টি-বাদলা ছাড়াই মদিনায় যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। ওয়াকী’ বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাবী বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন তিনি এইরূপ করলেন? তিনি বললেন, যেন তাঁর উম্মাতের কোন কষ্ট না হয়। আবূ মু’আবিয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলা হল, এইরুপ করার উদ্দেশ্য কি? তিনি বললেন, তাঁর উদ্দেশ্য তাঁর উম্মাতেকে কষ্টে না ফেলা।
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، وَأَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ - وَاللَّفْظُ لأَبِي كُرَيْبٍ - قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، كِلاَهُمَا عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلاَ مَطَرٍ ‏.‏ فِي حَدِيثِ وَكِيعٍ قَالَ قُلْتُ لاِبْنِ عَبَّاسٍ لِمَ فَعَلَ ذَلِكَ قَالَ كَىْ لاَ يُحْرِجَ أُمَّتَهُ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِ أَبِي مُعَاوِيَةَ قِيلَ لاِبْنِ عَبَّاسٍ مَا أَرَادَ إِلَى ذَلِكَ قَالَ أَرَادَ أَنْ لاَ يُحْرِجَ أُمَّتَهُ ‏.‏
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর, হাদিস নম্বরঃ ১৫০১ ১৫০১।

ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ভয়-ভীতি ও সফর ছাড়াই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের সালাত এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلاَ سَفَرٍ ‏.‏

যারা শিয়াদের তিনওয়াক্তে পাচ ওয়াক্তের নামাজ ভাগ করে পড়াকে ভুল মনে করেন তারা এবার বলুন ইমাম বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসগুলো কি মিথ্যা? এই হাদিসগুলো মেনে কেউ যদি তিনবারে ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন তাহলে কি তার মুসলমানিস্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে?
১/ ফজর
২/ যোহর+আসর
৩/ মাগরীব+এশা

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কখনই কোন দাইয়ের দুধ পান করেন নি

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কখনই কোন দাইয়ের দুধ পান করেন নি
আসুন জেনে নেই রাসুল সাঃ কি সত্যিই কোন দাইয়ের দুধ পান করেছেন নাকি তার নামে মিথ্যাচার করা হয়, মহানবী (সাঃ) এর পিতার নাম - আবদুল্লাহ (আঃ) , এবং মাতার নাম - বিবি আমেনা (সাঃআঃ)।

আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ও আমাদের বিশ্বাস মতে হযরত হাওয়া (আঃ) থেকে বিবি আমেনা (সাঃআঃ) পর্যন্ত কেউই মুশরিক বা কাফের ছিলেন না ।

প্রচলিত ইসলামের ইতিহাসে বলা হয়ে থাকে যে , হালিমা নামক এক বেদুইন মহিলার দুধ পান করে মহানবী (সাঃ) লালিত পালিত হয়েছেন । কতটুকু সত্য ???

আল্লাহ কোন নবী রাসুলকেই দাইয়ের বা কোন মুশরিক মহিলার দুধ পান করান নি । সেখানে শ্রেষ্ঠ নবীকে (সাঃ) কেন তিনি দাইয়ের দুধ পান করাবেন !

এটা নবীজী (সাঃ) তথা ইসলামের শত্রুদের দ্বারা রচনা করা ভ্রান্ত ইতিহাস । এবং এটা কোরআনের বক্তব্যের সাথেও সম্পূর্ন পরিপন্থী ।

কারন হযরত মুসা (আঃ) কে আল্লাহ অন্য কোন দাইয়ের দুধ পান করতে দেন নি ।
সূত্র - সুরা কাসাস - ১২ ।

সেখানে সৈয়দুল মুরছালিন শ্রেষ্ঠ নবী (সাঃ) কে কি করে দাইয়ের দুধ পান করাবেন ?

এছাড়া পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার বলা আছে , দুই বৎসর পর্যন্ত শিশু তার মায়ের দুধ পান করবে, এবং মা আমেনা সুস্থ্য শরীরে নবীজী (সাঃ) এর ছয় বৎসর পর্যন্ত বেঁঁচে ছিলেন ।

সেখানে কোন দুঃখে আমাদের নবীজী (সাঃ) অসুস্থ দাই মা হালিমার ঘরে গেলেন । যেখানে ঐতিহাসিকগনের মতে বিবি হালিমা একজন জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ মহিলা ছিলেন ।

নবীজী (সাঃ) এর মাতা বিবি আমেনা ওনার জন্মের পরেও ছয় বছর পর্যন্ত সুস্থভাবে জীবিত ছিলেন এবং কোরআনের সিদ্বান্ত অনুযায়ী দুই বছর পর্যন্ত শিশু তার মায়ের দুধ পান করবে । সেখানে নবীজী ( সাঃ) এর বেলায় প্রচারিত এই কেচ্ছা কাহিনী পুরোপুরি ভাবেই ওনার মান সম্মান এবং কোরআনের বিধানের সাথেও সংগতিপূর্ন নয় ।

ঐতিহাসিকগন বলেন যে , সে সময় দাইয়ের দুধ খাওয়ানাটা আরবের প্রচলিত প্রথা ছিল । যদি তাই হয়ে থাকে তবে হযরত আব্বাস (আঃ) , হামজা (রাঃ) , জাফর (রাঃ) , আবু তালেব (আঃ) , আবদুল মোতালেব (আঃ) সহ আরও নামকরা ব্যক্তিদের বেলায় এই রকম দাইয়ের দুধ খাওয়ানোর ইতিহাস শোনা যায় না কেন ?

তারা যদি বলেন সেটা নবীর আমলের আগের ঘটনা ।
তবে নবীর পরে যেমন হযরত আলী (আঃ) , ইমাম হাসান (আঃ) , ইমাম হোসেন (আঃ) সহ অন্যদের বেলায় এই সব কেচ্ছা কাহিনী জানা যায় না কেন ?

তাছাড়া ছয় বছর পর্যন্ত নবীজী (সাঃ) এর মাতা সুস্থ শরীরে বেঁচে ছিলেন ।
তারপর ওনার মাতার ইন্তেকালের পর ওনারই চাচা আবু তালেব (আঃ) এবং চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদের অপার স্নেহ মমতায় উনি পরম আদরে লালিত পালিত হয়েছেন । তো এখানে দাই মা এর এই গল্পের কোন যৌক্তিক কারন বোধগম্য নয় ।

এগুলো সবই ওনার মান সম্মানকে খাটো করার হীন প্রয়াস থেকে ওনারই শত্রুদের রচনা করা মিথ্যা ইতিহাস ।

এইরকম আরো পড়ুন:
১/ শিয়ারা কি মুসলিম ?
২/ শিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো কি সত্য ?
৩/ আহলে বাইতের নামের শেষে আঃ কেন বলা হয় ?

Wednesday, August 31, 2016

ইরান ও ইরাক যুদ্ধে ইমাম খোমেনীর অবদান

ইরান ও ইরাক যুদ্ধে ইমাম খোমেনীর অবদান
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমেরিকা-ইসরাইলের নির্দেশে ও সৌদী-আমিরাত-কুয়েতের ষড়যন্ত্রে ইরাকের তৎকালীন সৈরশাসক সাদ্দাম ইসলামী ইরানে আক্রমণ করে বসে।
একদিকে আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোয়েন্দা সাহায্য, আর অপরদিকে রাজতান্ত্রিক আরব রাজা বাদশাহদের অঢেল অর্থনৈতিক সাহায্যে আশীর্বাদপুষ্ট সাদ্দামের সেনাবাহিনী হয়ে উঠে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শক্তি।

এদিকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ইরানের উপর আমেরিকা-ইউরোপ চাপিয়ে দেয় অত্যাধিক কঠিন অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। আর ইসলামী ইরানের সেনাবাহিনী (যা ছিল ইরানের তৎকালীন ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ রেজা শাহর আমলের অনৈসলামিক সেনাবাহিনী) সাদ্দামের অত্যাধিক শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করতে অসমর্থ হয়ে যায়, ফলে সাদ্দাম দখল করে নেয় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল 'খুররামশাহর'!

অতঃপর ইমাম খোমেইনী (রহঃ) এর পরিকল্পনা ও নির্দেশে ইরানের ইসলামপন্থী সাধারন জনগন ও ইসলামী বিপ্লবে ভূমিকা পালনকারী ইসলামী রাজনৈতিক কর্মীদের অংশগ্রহণে গঠন করা হয় 'ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী'।
এই নবগঠিত, অপরিপক্ক, অনভিজ্ঞ, অদক্ষ ও অপেশাদার বাহিনীই মহান আল্লাহ পাকের উপর অগাধ ভরসা, বিশ্বাস এবং ইসলামের প্রতি অদম্য আবেগ, ভালবাসা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে যুগের ফেরাউন-নমরূদ রূপী সাদ্দামের অজেয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে!

এদিকে সাদ্দাম ইরানের 'খুররামশাহর' জবরদখল করার পর সেখানে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সে প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত সৈন্য ও অস্ত্র সমাবেশ করে খুররামশাহরে। এবং প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষনা দেয় -
'যদি খোমেইনী আমার কাছ থেকে খুররামশাহর পুনরুদ্ধার করতে পারে, তাহলে আমি খোমেইনীকে আমার বাগদাদ লিখে দেব'!
সদ্য দখল করা খুররামশাহরের দখলদারিত্ব বজায় রাখা সাদ্দামের জন্য হয়ে উঠে আত্মঅহংকারের প্রতীক! আর ইরানের ইসলামী বিপ্লবী বাহিনীর জন্য খুররামশাহর পুনরুদ্ধার করা হয়ে উঠে ইসলামের মর্যাদা রক্ষার ইস্যু।

এদিকে খুররামশাহর ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী অসংখ্য শহীদ কুরবানী করার বিনিময়ে সাদ্দামের নিষ্ঠুর বাহিনীকে ইরানের আরও অভ্যন্তরে প্রবেশ করা থেকে ঠেকিয়ে রাখে ও দীর্ঘদিন ধরে খুররামশাহর মুক্ত করার জন্য সাধনা করতে থাকে ...

একদিন হযরত ইমাম খোমেইনী (রহঃ) জামায়াতে নামাজের ইমামতি করার জন্য দাঁড়ালেন ও তাকবীর দেবার জন্য মাত্র হাত উপরে তুললেন; এমন সময় পেছন থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে মসজিদে প্রবেশ করল ও বলতে লাগল -
'ইমাম একটু অপেক্ষা করুন!
কিবলামুখি দাঁড়ানো ইমাম খোমেইনী (রহঃ) কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওই ব্যক্তিটির দিকে ঘাড় ঘুরালেন।
দৌড়ে আসতে থাকা ওই ব্যক্তিটি বলে উঠল -
'যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে মাত্র খবর এসেছে; আমরা খুররামশাহর সাদ্দামের হাত থেকে মুক্ত করেছি!'

ইমাম খোমেইনী (রহঃ) সেই ব্যাক্তি কথা শুনে কোন প্রতিক্রিয়া ও ভ্রুক্ষেপ না করেই পুনরায় কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলেন - 'আল্লাহু আকবার'!
তিনি নামাজ শুরু করে দিলেন ...
সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও মালিক মহান আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড়ানো ইমামের কাছে নগন্য খুররামশাহরের কোন মূল্যই যেন নেই!

যুদ্ধ ও প্রতিরোধের কঠিন দিনগুলোতে যখন তাঁকে বলা হত যে সাদ্দামকে আমেরিকা ও রাশিয়া বিপুল পরিমাণে অমুক অমুক অত্যাধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে, আর আমাদেরকে অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে! আমাদের মজুদে তেমন কোন অস্ত্রই নেই, আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করব? আমাদের কী আছে?
আত্মবিশ্বাসী ইমাম বলিষ্ঠ ভাবে জবাব দিতেন -
'আমাদের আল্লাহ আছে!'

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহঃ) এভাবেই তাঁর সমস্ত কাজে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতেন আর মহান আল্লাহ পাকের উপরই ভরসা করতেন। ছোট বড় কোন কিছুই তাঁকে মহান আল্লাহ পাকের দিকে দেয়া মনোযোগ থেকে অন্যমনস্ক করতে পারত না! এমনকি ইমামের আদরের বড় পুত্র শহীদ মুস্তাফা খোমেইনীর শাহাদাতের ঘটনাও তাঁকে মহান আল্লাহ পাক ও ইসলামের প্রতি ভালবাসা ও মনোযোগ থেকে গাফেল করতে পারেনি।

ইসলামী বিপ্লবের আগে ইমামের ইরাকে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় যখন খবর আসলো যে উনার প্রানপ্রিয় সন্তান মুস্তফা খোমেইনীকে শহীদ করা হয়েছে, তিনি এই শোকাবহ ঘটনার কারনে কোন রকম বিশেষ প্রতিক্রিয়াই প্রদর্শন করেননি, শুধু পাশের রুমে গিয়ে জোরে জোরে পবিত্র কুর'আন তিলাওয়াত করতে থাকেন। সন্তানের শাহাদাতে তিনি একফোঁটা অশ্রুও বিসর্জন দেননি!
ডাক্তাররা বলতে থাকেন যে যদি তিনি কান্নাকাটি না করেন, তাহলে তাঁর হার্টে মারাত্মক সমস্যা হবে; কিন্তু তারপরওতিনি ক্রন্দন করেননি।
অথচ অতঃপর একদিন শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের স্মরণে আয়োজিত এক শোক মজলিসে যখন তাঁর সামনে হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর সন্তান হযরত আলী আকবার (আঃ) এর শাহাদাতের শোকাবহ ঘটনা বর্ণনা করা হয়, তখন তিনি ক্রন্দনে ফেঁটে পড়েন!

তাঁর কাছে নিজের সন্তানের শাহাদাতের চেয়ে জান্নাতের নেতা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর সন্তানের শাহাদাত অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শোকাবহ ছিল!

ইমাম (রহঃ) বলতেন -
"যদি শত্রুরা আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে ঘেরাও করে, তাহলে তারা জানুক যে আমরা রমজানের সন্তান; আর যদি তারা আমাদেরকে সামরিকভাবে ঘিরে ফেলে, তাহলে তারা জেনে রাখুক যে আমরা আশূরার সন্তান!"

Monday, August 29, 2016

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক (শেষ অংশ)

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক (শেষ অংশ)

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক

লেখক: আল্লামা সাইয়্যেদ মোর্তজা আসকারী
অনুবাদ : আবুল কাসেম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ওহুদের যুদ্ধ
তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে তিন হাজার কুরাইশ যোদ্ধা মদীনার নিকটবর্তী ওহুদপ্রান্তে বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সমবেত হয়। মহানবী (সা.) একহাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা থেকে বের হয়ে ওহুদে পৌঁছলেন। দুই দল মুখোমুখি হলে তিনি শ্রেষ্ঠ বীর হযরত আলীর হাতে ইসলামের পতাকা দিলেন। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার হাতে দলীয় পতাকা দেয়া হত এবং এরূপ বীরদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারাবাহিকতা অনুসারে একে একে পতাকা ধারণ করত। ওহুদের যুদ্ধে নয় জন কুরাইশ যোদ্ধা একের পর পতাকা ধারণ করেছিল। তাদের সকলেই হযরত আলী(আ.)-এর তরবারির আঘাতে নিহত হয়েছিল। তাদের মৃত্যুর পর কুরাইশরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করছিল,কিন্তু মুসলমানরা মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করে গণিমত (কাফেরদের ফেলে যাওয়া মালামাল) সংগ্রহে মগ্ন হলে পেছন থেকে মুশরিকদের এক দল তাদের আক্রমণ করে পর্যুদস্ত করে।

খন্দকের যুদ্ধ
পঞ্চম হিজরির জিলকদ মাসে মক্কার মুশরিকরা দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করে। মুসলমানরা হযরত সালমান ফারসির পরামর্শে বিশাল এক পরিখা খনন করে যাতে মুশরিক সেনাদল মদীনায় প্রবেশ করতে না পারে। আমর ইবনে আবদে উদ নামের আরবের এক প্রসিদ্ধ বীর তার ঘোড়া নিয়ে পরিখা অতিক্রম করে মুসলমানদের সামনে এসে মল্লযুদ্ধের আহ্বান জানাল। মুসলমানরা তার বিশাল দেহ ও রণমূর্তি দেখে তার মুখোমুখি হওয়ার সাহস করছিল না। সে তাদের আহ্বান করে বলছিল,‘তোমরা তো বিশ্বাস কর যে,তোমাদের কেউ নিহত হলে বেহেশতে যাবে তাহলে কেন অগ্রসর হচ্ছ না?’ তখন মহানবী (সা.) সাহাবীদের আহ্বান করে বললেন,‘তোমাদের মধ্যে কে তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছ?’ হযরত আলী (আ.) বললেন,‘আমি।’ তখন তিনি তাঁর পাগড়ি খুলে আলী (আ.)-এর মাথায় বেঁধে দিলেন। আলী আমরের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,‘আমি তোমাকে তিনটি প্রস্তাব দিচ্ছি,এর মধ্যে যে কোন একটি মেনে নাও : এক. ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাও;দুই. যে সৈন্যদলসহ এসেছ তা নিয়ে ফিরে যাও;তিন. যেহেতু আমার ঘোড়া নেই তাই যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়া থেকে নেমে আস।’ সে বলল,‘আমি তোমার তৃতীয় প্রস্তাব মেনে নিচ্ছি।’ অতঃপর সে ঘোড়া থেকে নেমে আসল। উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে সে তরবারি দিয়ে হযরত আলীর ওপর আঘাত হানল। তিনি ঢাল দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করলে তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে তাঁর মাথায় আঘাত হানল (ঐ স্থানেই পরবর্তীকালে ইবনে মুলজিমের তরবারির আঘাত লেগেছিল এবং তিনি তাতে শহীদ হয়েছিলেন)। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায়ই তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। সুযোগ বুঝে তিনি আমরের পায়ে তরবারি দিয়ে আঘাত হানলে তার পাবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল এবং তিনি আরেকটি আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। অতঃপর তাকে হত্যা করলেন। যদিও তখন যুদ্ধের রীতি ছিল হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির পোশাক ও অস্ত্রাদির অধিকারী হবে,কিন্তু হযরত আলী আবদে উদের দেহ থেকে বর্ম ও পোশাক না খুলেই চলে এলেন। হযরত ওমর তাঁকে বললেন,‘তার বর্মটির মূল্য একশ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা এক হাজার দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) হবে। তবুও কেন তা গ্রহণ করলেন না।’ তিনি বললেন,‘আমি চাইনি তাকে নগ্নদেহে ফেলে রাখতে।’ এ খবর যখন আমরের বোনের নিকট পৌঁছল তখন সে বলল,‘যদি তাকে সে নগ্ন করত তবে মৃত্যু পর্যন্ত তার জন্য আমি ক্রন্দন করতাম। কিন্তু যে তাকে হত্যা করেছে সে মহৎ ছিল। তাই তার জন্য আমি ক্রন্দন করব না।’১

খায়বরের যুদ্ধ
মদীনার ইহুদীরা খুবই সম্পদশালী ছিল। তারা মহানবী (সা.)-কে অত্যন্ত কষ্ট দিত। মহানবী (সা.) তাদের এক গোত্র বনি নাযিরকে দমনের জন্য তাদের আবাসস্থল খায়বরের দিকে যাত্রা করলেন। সেখানে তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল। দীর্ঘদিন তিনি তাদের অবরোধ করে রাখলেন,কিন্তু তা ফলপ্রসূ হল না। তিনদিন পরপর তাদের সঙ্গে মুসলমানদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়।

প্রথম দিন রাসূল (সা.) হযরত আবু বকরকে একদল সেনাসহ তাদের উদ্দেশে প্রেরণ করলেন। তিনি তাদের আক্রমণ করে পরাস্ত হয়ে ফিরে এলেন। মহানবী (সা.)-এর নিকট ফিরে এসে তিনি তাঁর সৈন্যদের বিরুদ্ধে কাপুরুষতার অভিযোগ আনলেন। সৈন্যরাও উল্টো তাঁকে ভীরু বলে অভিযুক্ত করল।২

দ্বিতীয় দিন তিনি হযরত ওমরকে সেনাদলসহ যুদ্ধে প্রেরণ করলেন। তিনিও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও সৈন্যরা ভীরুতার অভিযোগ আনল।৩

তৃতীয় দিনের আগের রাতে রাসূল (সা.) বললেন,‘আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করব যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসে। সে প্রচণ্ড আক্রমণকারী,পলায়নকারী নয়।’ সকল সাহাবী আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলেন ঐ ব্যক্তি যেন তিনি হন।

তৃতীয় দিন সকালে রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন,‘আলী কোথায়?’ সকলে বললেন,‘তিনি চোখের ব্যথায় আক্রান্ত ও পীড়িত।’ মহানবী (সা.) বললেন,‘তাকে আন।’ হযরত আলীকে আনা হলে তিনি তাঁর মুখের লালা তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন। আলী আরোগ্য লাভ করলেন। হযরত আলী বলেন,‘এরপর কখনও আমি চোখের ব্যথায় আক্রান্ত হইনি।’ রাসূল (সা.) যুদ্ধের পতাকা হযরত আলীর হাতে দিলেন এবং সৈন্যদের নিয়ে যাত্রা করতে বললেন। ইহুদীদের প্রসিদ্ধ বীর মারহাবের রণমূর্তিই মূলত পূর্ববর্তী সেনাদলের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিল। হযরত আলী ইহুদীদের দুর্গের নিকট পৌঁছলে মারহাব তাঁর সাথে মোকাবিলার জন্য বেরিয়ে আসল। যুদ্ধ শুরু হল এবং বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর হযরত আলী তার ওপর বিজয়ী হলেন ও তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর দুর্গের দরজা উপড়ে ফেললেন এবং তা ইহুদীদের খননকৃত পরিখার ওপর স্থাপন করলেন। এভাবে মুসলিম সৈন্যরা দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করে তা দখল করল।

হযরত আলী মহানবী (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত
রাসূল (সা.) মদীনার নিকটে সংঘটিত সকল যুদ্ধে হযরত আলীকে সঙ্গে নিতেন এবং মদীনায় কাউকে না কাউকে অস্থায়ীভাবে স্থলাভিষিক্ত হিসাবে রেখে যেতেন। যেমন তিনি একবার অন্ধ সাহাবী ইবনে মাকতুমকে এবং আরেকবার সাহাবী আবদুল্লাহ হ্ইবনে মাসউদকে মদীনায় দায়িত্ব দিয়ে যান। সাধারণত এ ধরনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে খুব অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে হত।
তাবুকের যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.)-কে কিছুটা দীর্ঘ সময়ের জন্য মদীনা ত্যাগ করতে হয়েছিল। তাবুক মদীনা হতে নয়শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং তিনি দুই মাসের অধিক সময়ের জন্য মদীনা ত্যাগ করছিলেন। এ অবস্থায় কখনই কাঙ্ক্ষিত ছিল না ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রকে তিনি অরক্ষিত রেখে যাবেন কিংবা সাধারণ কোন ব্যক্তির হাতে তার দায়িত্ব অর্পণ করবেন। তাই এ যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে তিনি আলী(আ.)-কে কেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করলেন। মুনাফিকরা বলা শুরু করল,‘রাসূল (সা.) তাঁর চাচাত ভাইয়ের প্রতি বিরক্ত হয়েছেন (তাই তাকে সঙ্গেনেননি)।’ এ কথা শুনে হযরত আলী (আ.) রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে মদীনার বাইরে রাসূল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন,‘হে আল্লাহর রাসূল! মুনাফিকরা বলাবলি করছে,আপনি আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে আমাকে মদীনায় ছেড়ে যাচ্ছেন। আমাকে আপনার সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দিন।’ রাসূল (সা.) বললেন,‘হে আলী! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,তোমার মর্যাদা আমার কাছে মূসার কাছে হারুনের মর্যাদার ন্যায় হোক। তবে পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পর কোন নবী নেই।’৪

কুরআন ও আলী (আ.)
মহানবী (সা.) হযরত আলীকে সমগ্র কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক প্রমাণসমূহ এ সাক্ষ্য দান করে যে,রাসূল (সা.) তাঁর পরে হযরত আলীকে ইসলামের প্রচারের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করছিলেন। আমি(লেখক) আমার ‘মায়ালিমুল মাদরাসাতাইন’ গ্রন্থে তাবাকাতে ইবনে সাদ,সুনানে ইবনে মাজা,মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে অসংখ্য হাদীস এ মর্মে উদ্ধৃত করেছি যে,মহানবী (সা.) প্রতি রাতে আলী (আ.)-এর সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করতেন(তাঁকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে)। হযরত আলী রাসূলের গৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সালাম’ বলে অনুমতি চাইতেন। রাসূল (সা.) অনুমতি দিলে তিনি গৃহে প্রবেশ করতেন। তখন রাসূল (সা.) তাঁর ওপর অবতীর্ণ আয়াতসমূহ আলীর জন্য পাঠ করতেন এবং ব্যাখ্যা দান করতেন। অতঃপর বলতেন,‘হে আলী,লিখে রাখ।’ হযরত আলী কখনও কখনও বলতেন,‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ভুলে যাওয়ার আশংকা করছেন?’ তিনি বলতেন,‘না। কারণ,আমি আল্লাহর নিকট দোয়া করেছি যেন তুমি কখনও ভুলে না যাও;বরং তুমি আমার ও তোমার অংশীদারদের (বংশধর) জন্য লিখে রাখ।’ যদি সে বৈঠকে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন উপস্থিত থাকতেন তবে বলতেন,‘এদের জন্য ও হুসাইনের বংশের ইমামদের জন্য লিখে রাখ।’ নবী বংশের পবিত্র ইমামদের নিকট এ গ্রন্থটি ছিল।
সে যুগে কোন লেখা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য পশুর শুষ্ক চামড়ার ওপর লেখা হত। হযরত আলী উটের শুষ্ক ও পাকা চামড়ার ওপর পবিত্র কুরআন সংকলিত করেছিলেন। তাঁর সংকলিত ব্যাখ্যা সম্বলিত কুরআন সত্তর হাত দীর্ঘ চর্মপত্রে লিপিবদ্ধ ছিল। আমি আমার তিন খণ্ডে রচিত ‘আল কুরআনুল কারিম’ গ্রন্থে রাসূল(সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ দু’ধরনের ওহীর প্রতি ইশারা করেছি। এ দু’ধরনের ওহী হল : কুরআনী ওহী ও বর্ণনা বা ব্যাখ্যামূলক ওহী। কুরআনী ওহী হল যা কুরআনের মূল অংশ হিসাবে মুজিযাস্বরূপ,কেউ তার অনুরূপ আনতে পারবে না এরূপ চ্যালেঞ্জসহ তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যার মধ্যে বিন্দুমাত্র কম-বেশি হওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর নিকট শুধু কুরআনী ওহীই আসত না;বরংতাঁর ওপর যখন কোন আয়াত অবতীর্ণ হত তখন জিবরীল (আ.) ঐ আয়াতের ব্যাখ্যাও তাঁর জন্য নিয়ে আসতেন। যেমন পবিত্র কুরআনে নামাযের রাকায়াত সংখ্যা বর্ণিত হয়নি। শুধু বলা হয়েছে :
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ
‘তুমি সূর্য হেলে যাওয়ার পর হতে রাতের ঘোর অন্ধকার পর্যন্ত নামায প্রতিষ্ঠা কর।’৫ হযরত জিবরীল (আ.) এ আয়াত বর্ণনা করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি;বরং তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রতিটি নামাযের রাকায়াত সংখ্যা ও তা কীভাবে পড়তে হবে তা রাসূলের উদ্দেশে বর্ণনা করেছেন। কুরআন বহির্ভূত কিন্তু কুরআনের ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট যে অংশ ওহীরূপে জিবরীল (আ.) নিয়ে আসতেন তা হল বর্ণনা বা ব্যাখ্যামূলক ওহী।
যে ধরনের ওহীই আসত মহানবী (সা.) তা লিখে রাখার জন্য ওহী লেখকদের ডেকে পাঠাতেন এবং আয়াতসমূহকে তিনি ব্যাখ্যাসহ লেখার নির্দেশ দিতেন। ওহী লেখকরাও তৎকালে প্রচলিত বিভিন্ন লিখন সামগ্রীতে,যেমন তক্তা,পশুর হাড়,চামড়ায় তা লিখে রাখতেন।
রাসূল (সা.) যেরূপে আয়াতসমূহ ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করতেন,তাঁরাও সেরূপে ব্যাখ্যাসহ তা লিপিবদ্ধ করতেন। সুতরাং রাসূল (সা.)-এর সময় সংকলিত কোন কুরআনই তাঁর পবিত্র মুখনিঃসৃত বর্ণনামূলক ওহী ব্যতীত লিপিবদ্ধ ছিল না। কিন্তু যেহেতু তাঁর এ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী ছিল তারা সেগুলোসহ কুরআন সংকলনের বিরোধী ছিল। যেমন : পবিত্র কুরআনে বর্ণিত-وَالشَّجَرَ‌ةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْ‌آنِ ‘এবং ঐ বৃক্ষ যাকে কুরআনে অভিশপ্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে৬- অভিশপ্ত বৃক্ষ যে বনি উমাইয়্যা তা কুরআনের এ আয়াতের সাথে উল্লিখিত থাকলে বনি উমাইয়্যার ক্ষমতা লাভের বিষয়টি অবৈধ প্রমাণিত হত। তাই তারা এর বিরুদ্ধে ছিল এবং তা সংকলিত হতে দেয়নি। কিন্তু কুরআন তার ব্যাখ্যাসহ রাসূলের পবিত্র আহলে বাইতের নিকট ছিল। সাহাবীরাও কম-বেশি কুরআনের সূরা ও আয়াতসমূহ ব্যাখ্যাসহ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। সাহাবীদের সংকলিত কুরআনের মধ্যেযে পার্থক্য পরিলক্ষিত হত তা এ ব্যাখ্যার (বর্ণনামূলক ওহীর) বিদ্যমানতা ও অবিদ্যমানতার কারণে ছিল,মূল কুরআনে কম বা বেশি হওয়ার কারণে কখনই ছিলনা।
কুরআনের মূল আয়াত মহানবী (সা.)-এর ব্যাখ্যা ব্যতীত কখনই বোধগম্য নয়। তাইস্বয়ং আল্লাহ্ই তাঁকে মানুষের জন্য তা ব্যাখ্যা করতে বলেছেন।৭ কিন্তু কুরাইশদের একাংশের জন্য ঐ ব্যাখ্যা বিপজ্জনক ছিল বলে তারা এ কাজে বাধা দিয়েছে। মুসনাদে আহমাদ এবং সুনানে ইবনে মাজাতে আবদুলাহ্ ইবনে আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত হয়েছে,‘আমি রাসূল (সা.) থেকে যা শুনতাম তা-ই লিপিবদ্ধ করতাম,কিন্তু কুরাইশরা (এর একাংশ) আমাকে বলল,তুমি কি আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে যা শোন,তা-ই লেখ,অথচ তিনি মানুষ হিসাবে কখনও রাগান্বিত হন (তখন কারও প্রতি অসন্তুষ্ট হন) এবং কখনও আনন্দিত হন (তখন কারও প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন)। তাদের কথায় আমি (তাঁর বাণী) লিপিবদ্ধ করা হতে বিরত হলাম। পরে বিষয়টি আল্লাহর রাসূলকে বললাম। তিনি বললেন,লেখ। (কারণ) আমার মুখ থেকে সত্যব্যতীত কিছুই বের হয় না।’৮

পবিত্র কুরআনের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা হযরত আলী (আ.)-এর নিকট ছিল এবং রাসূল(সা.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি তাঁর পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী তা পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে বিন্যস্ত করেন। যদিও তাঁর সংকলিত কুরআন কুরাইশরা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল,‘আমাদের নিকট (ব্যাখ্যাহীন) যে কুরআন রয়েছে তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ অথচ তাদের সংকলিত সে কুরআনে জিবরীল (আ.) কর্তৃক আনীত ব্যাখ্যা বিদ্যমান ছিল না (যদিও কুরআন বোঝার জন্য তা আবশ্যক ছিল)। হযরত আলী (আ.) কুরাইশদের উদ্দেশে বলেন,‘এরপর,তোমরা (রাসূলের ব্যাখ্যা সম্বলিত) এ কুরআন আর দেখবে না।’ তিনি সেটিকে ইমাম হাসান ও হুসাইনের নিকট হস্তান্তর করেন। ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালার উদ্দেশে যাত্রার পূর্বে তা উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার নিকট গচ্ছিত রাখেন এবং অসিয়ত করেন তাঁর শাহাদাতের পর সেটি তাঁর পুত্র আলী ইবনুল হুসাইনকে দেওয়ার। এভাবে তাপরবর্তী ইমামদের হাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। পরবর্তী ইমামগণ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা এ গ্রন্থ থেকেই করতেন এবং কখনও নিজেদের প্রবৃত্তির বশে মনগড়া কিছু বলতেন না। কারণ,তাঁরা নিজেরাই বলতেন,‘যদি কেউ কুরআনের বিষয়ে মনগড়া কিছু বলে তবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।’ সুতরাং কুরআনের ক্ষেত্রে তাঁরা সকলেই মহানবী (সা.)-এর ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতেন যেটি স্বয়ং আলী (আ.) তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী থেকে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এ যুক্তিতে তাঁরাও হযরত আলী (আ.)-এর ন্যায় পবিত্র কুরআনের পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।

হযরত আলী ও গাদীরে খুম
রাসূল (সা.) তাঁর সমগ্র জীবনে আলীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসাবে প্রস্তুত করার কাজেরত ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ হজ্ব সম্পাদনের পর তাঁর স্বহস্তে প্রশিক্ষিত এ শিষ্যকে তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে (সূরা মায়েদা : ৬৭) ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত হিসাবে ঘোষণা করেন। যদিও রাসূল (সা.) তাঁর নবুওয়াতী জীবনের বিভিন্ন সময় মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের সামনে আলীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন,এমনকি তাঁর বংশের বার জন ইমাম ও প্রতিনিধির নামও অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুসলমানদের বিশাল কোন সমাবেশে এ ঘোষণা তিনি ইতোপূর্বে দেননি। (যেহেতু স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি নবুওয়াতী মিশনের পূর্ণতার জন্য অপরিহার্য ছিল সেহেতু তিনি চেয়েছেন ইসলামী ভূখণ্ডের সকল প্রান্ত থেকে মুসলমানরা এ সমাবেশে আসুক। মহানবী (সা.) এ উদ্দেশ্যে এ হজ্বে আসার পূর্বেই সকলকে এতে যোগদান করার জন্য বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এ হজ্বে কমপক্ষে সত্তর হাজার মুসলমান অংশগ্রহণ করেছিলেন)।
মহানবী (সা.) যখন আরাফার মহাসমাবেশে বক্তব্য দানের জন্য উঠলেন তখন হযরত জিবরীল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে হযরত আলীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণার নির্দেশ নিয়ে আসলেন। কিন্তু রাসূল (সা.) পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা ঘোষণা হতে বিরত থাকলেন। তিনি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন যে,কুরাইশ ও অন্য আরবরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে : তিনিও আরব গোত্রপতিদের মত (স্বীয় পুত্রের অনুপস্থিতিতে) নিজের চাচাত ভাইকে স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তাই তিনি যথাযথ সময়ের অপেক্ষা করতে লাগলেন।
অতঃপর হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলে সকল হাজী স্ব স্ব দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য যাত্রা শুরু করলেন। রাসূল (সা.)ও তাঁদের সঙ্গে যাত্রা করে ‘জোহফা’ নামক স্থানে পৌঁছলেন যেখান থেকে ইয়েমেন,সিরিয়া ও মদীনার পথ পৃথক হয়ে যায়। ঠিক সে সময় পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় : ‘হে রাসূল! তোমার ওপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করে দাও;যদি তুমি তা না কর,তবে তোমার রেসালাতের দায়িত্বই পালন করলে না।’৯
রাসূল (সা.) অনতিবিলম্বে সকলকে যাত্রা বিরতি করার নির্দেশ দিলেন। তিনি নিজের জন্য তাঁবু খাটালেন এবং অন্যদেরকে তাঁবু স্থাপনের আদেশ দিলেন। সে সাথে বললেন,‘যারা আগে চলে গিয়েছে তাদের ফিরে আসতে বল এবং যারা এখনও এসে পৌঁছায়নি তাদের জন্য অপেক্ষা কর।’ অতঃপর গাদীরে খুমে সকলকে নিয়ে যোহরের নামায পড়লেন। নামাযান্তে উটের ওপর বসার আসনগুলো দিয়ে উঁচু করে এক মঞ্চ তৈরি করা হল। তিনি তাতে আরোহণ করে বললেন,‘আমি কি মুমিনদের ওপর তাদের নিজেদের থেকেও অগ্রাধিকার রাখি না?’ সকলে উত্তর দিলেন,‘হ্যাঁ।’ তখন তিনি হযরত আলী (আ.)-এর হাত এতটা উঁচু করে ধরলেন যে,তাঁদের উভয়ের শুভ্রবগল দেখা যাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন,‘আমি যার মাওলা,এ আলীও তার মাওলা (অভিভাবক)। হে আল্লাহ্! যে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে,তুমিও তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ কর এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে,তুমিও তাকে শত্রু হিসাবে গ্রহণ কর এবং যে তাকে সাহায্য করে,তুমিও তাকে সাহায্য কর,আর যে তাকে পরিত্যাগ করে,তুমিও তাকে পরিত্যাগ কর।’১০
মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে,মহানবী (সা.) তখন বললেন,‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি মূল্যবান ও ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধর,তাহলে আমার পর বিচ্যুত হবে না। নিশ্চয়ই সূক্ষ্মদর্শী,সর্বজ্ঞাত (আল্লাহ্) আমাকে জানিয়েছেন যে,এ দু’টি হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত একে অপর থেকে পৃথক হবে না।’১১
রাসূল (সা.) সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন সভা আয়োজিত হলে তাতে বিশেষ পাগড়ি পড়তেন যার নাম ছিল ‘সাহাব’। তিনি গাদীরের সমাবেশে তাঁর এ বিশেষ পাগড়ি আলী (আ.)-এর মাথায় পরিয়ে দিলেন। তখন উপস্থিত সকলে হযরত আলীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করলেন। হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরও তাঁকে অভিনন্দন জানালেন। হযরত ওমর তাঁকে উদ্দেশ করে বললেন,‘হে আবু তালিবের সন্তান! তুমি এখন থেকে সকল মুমিন নর ও নারীর নেতা ও অভিভাবক হয়ে গেলে।’১২(সমাপ্ত)

তথ্যসূত্র
১.সীরাতে ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ৫২০;বিহারুল আনওয়ার,২১তম খণ্ড,পৃ. ২০৭
২.তারীখে তাবারী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০০
৩.প্রাগুক্ত
৪.সীরাতে ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ৫২০
৫.সূরা বনি ইসরাঈল : ৭৮
৬.প্রাগুক্ত : ৬০
৭.সূরা নাহল : ৪৪
৮.মুসনাদে আহমাদ,২য় খণ্ড,পৃ. ১৬২;আল মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনা,বৈরুত,প্রকাশকাল ১৩৮৯ হিজরি
৯.সূরা মায়েদা : ৬৭
১০.সহীহ তিরমিযী,৫ম খণ্ড,২০তম অধ্যায় (বাবু মানাকিবি আলী ইবনে আবি তালিব),পৃ. ৬৩৩,হাদীস নং ৩৭১৩;সহীহ ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,বাবু ফাজায়িলি আলী ইবনে আবি তালিব,পৃ. ৪৩,হাদীস নং ১১৬ এবং পৃ. ৪৫,হাদীস নং ১২১;মুসনাদে আহমাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৭২ ও ২৮১;মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯-১১০;খাসায়িস,নাসায়ী,পৃ. ২২ ও ১২২;আন নিহায়া ফিগারিবিল হাদীস,ইবনে আসীর,৫ম খণ্ড,পৃ. ২২৮;আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,ইবনে কাসীর,১২তম খণ্ড,পৃ. ২১৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকা,৯ম অধ্যায়,হাদীস নং৪,পৃ. ১২২;তারিখুল কাবীর;বুখারী,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৭৫
১১.মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪ ও ১৮ (আবু সাঈদ খুদরী সূত্রে বর্ণিত);সুনানে তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩২৯,হাদীস নং ৮৩৭৬;মুসতাদরাক,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯ ও১৪৮,ফাজায়িলুস সাহাবা,পৃ. ৩৭৪,মুজামুল আওসাত,তাবরানী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৭৪;মুজামুল কাবীর,৫ম খণ্ড,পৃ. ১৬৬ ও ১৬৯
১২.মুসনাদে আহমাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২৮১;তারীখে ইসলাম,যাহাবী,পৃ. ৬৩৩;আন নিহায়া ফি গারিবিল হাদীস,ইবনে আসির,৫ম খণ্ড,পৃ. ২২৮;তারিখে বাগদাদ,৮ম খণ্ড,পৃ. ২৯০;আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ৩৮৬

(ঢাকা থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রত্যাশা’, ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা)

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক (১ম অংশ)

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক (১ম অংশ)
লেখক: আল্লামা সাইয়্যেদ মোর্তজা আসকারী
অনুবাদ : আবুল কাসেম

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক

হযরত আলী (আ.) হলেন ইসলামের অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। আমরা এ প্রবন্ধে তাঁর জীবনের স্মরণীয় কিছু দিক তুলে ধরব।
হযরত আলী নবী (সা.) কর্তৃক প্রশিক্ষিত
হযরত আলী (আ.) হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট লালিত-পালিত ও প্রশিক্ষিত হয়েছেন। তাঁদের পূর্বপুরুষ হাশিম তাঁর সন্তানদের গ্রীষ্মকালে ব্যবসার জন্য ইরান ও সিরিয়ায় এবং শীতকালে ইয়েমেন ও আফ্রিকায় প্রেরণ করতেন। এ রীতি পরবর্তীকালে অব্যাহত থাকে এবং হযরত আবদুল মুত্তালিবের সন্তানরাও ঐ ঋতুতে এরূপ ব্যবসায়িক সফরে বের হতেন। কিন্তু দু’বছর হযরত আবু তালিব ব্যবসার উদ্দেশ্যে মদিনার বাইরে যেতে পারেননি। এ কারণে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে এবং তিনি পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। আর মহানবী (সা.) তাঁর অপর চাচা হযরত আব্বাসের নিকট গিয়ে হযরত আবু তালিবের সাহায্যে এগিয়ে আসার প্রস্তাব করেন। তারা উভয়ে আবু তালিবের নিকট গিয়ে প্রস্তাব রাখেন তাঁর সন্তানদেরকে তাঁদের দায়িত্বে অর্পণ করার। তখন আবু তালিব আকিলকে নিজের কাছে রেখে বাকি সন্তানদের দায়িত্ব তাঁদের ওপর অর্পণ করেন। রাসূল (সা.) হযরত আলীকে নিজের জন্য বেছে নেন এবং হযরত আব্বাস জাফরকে সঙ্গে নিয়ে যান। তখন থেকে রাসূল (সা.) হযরত আলীর লালন-পালন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেন। এ সম্পর্কে স্বয়ং আলী (আ.) বলেন : ‘যখন আমি শিশু ছিলাম তখনই তিনি আমার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আমাকে তাঁর পবিত্র বুকে চেপে ধরতেন,তাঁর কাছে টেনে নিতেন এবং তাতে আমি তাঁর পবিত্র শরীরের ঘ্রাণ নিয়েছি। অনেক সময় তিনি কিছু চিবিয়ে আমার মুখে দিতেন। তিনি আমার কথায় কখনও কোন মিথ্যা পাননি এবং আমার কোন কাজে দুর্বলতা পাননি। সে সময় থেকেই আমি তাঁকে অনুসরণ করে চলতাম যেভাবে একটি উষ্ট্রশাবক তার মাকে অনুসরণ করে। তিনি প্রতিদিন সুন্দর নৈতিক চরিত্রের নতুন নতুন দিক আমার নিকট প্রকাশ করতেন এবং আমাকে তা অনুসরণ করার নির্দেশ দিতেন...।’

আলী (আ.) প্রথম ওহী অবতীর্ণের সাক্ষী
মহানবী (সা.) নবুওয়াতের কয়েক বছর পর থেকেই প্রতি বছর এক মাস হেরা পর্বতের গুহায় ইতিকাফে (ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান) বসতেন। তাঁর পূর্বেও তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব সেখানে ইবাদতের জন্য যেতেন। যখন মহানবী (সা.) হেরা পর্বতের গুহায় অবস্থান করতেন হযরত আলী (আ.) সেখানে তাঁর জন্য খাদ্য,পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যেতেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর ওপর প্রথম ওহী অবতীর্ণের ও সাক্ষী ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন : ‘যখন আল্লাহর রাসূলের ওপর প্রথম ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের আর্তনাদ শুনেছিলাম। আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! এ আর্তনাদ কিসের? তিনি বললেন : শয়তান পূজিত হওয়ার সকল আশা হারিয়ে ফেলেছে,এটি তারই আর্তনাদ। হে আলী! আমি যা কিছু দেখি তুমিও তা-ই দেখ এবং আমি যা শুনি,তুমিও তা-ই শোন;কিন্তু তুমি নবী নও;বরং তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত ও দায়িত্বশীল।’

আলী (আ.) রাসূলের সঙ্গে প্রথম নামায আদায়কারী
মহানবী (সা.)-এর ওপর প্রথম ওহী অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি গৃহে ফিরে আসেন। জীবরাঈল (আ.) ঐ দিনই তাঁর নিকট নামাযের বিধান নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং তাঁকে ওজু করা ও নামায পড়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। তখনই রাসূল (সা.) হযরত খাদীজা ও হযরত আলীকে নিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করেন। তাবারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : ‘ইয়াহিয়া ইবনে আরিফ কিন্দী বলেন : আমি হজ্বের জন্য মক্কায় গিয়ে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের অতিথি হলাম। তাঁর গৃহ কাবাঘরের নিকটেই ছিল। মধ্যাহ্নের সময় এক ব্যক্তিকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম তার সঙ্গে একজন নারী ও একজন বালক ছিল। অতঃপর বালকটি তার ডান পাশে এবং ঐ নারী তার পেছনে দাঁড়ানো। তারপর তারা উপুড় হল,এরপর সোজা হয়ে দাঁড়াল ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি এ দৃশ্য দেখে আশ্চর্য হলাম। আব্বাস এলে তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন তিনি বললেন : তুমি কি জানতে পেরেছ তারা কে ছিল? আমি বললাম : না। তিনি বললেন : সে হল আমার ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্। সে বলে যে,তার ওপর আসমান থেকে ওহী অবতীর্ণ হয়। যে তার ডান পাশে ছিল সে হল আলী,আর তার পেছনে যে নারী ছিল সে ছিল তার স্ত্রী খাদিজা। আমি পৃথিবীর ওপর এ তিনজন ব্যতীত অন্য কাউকে এ ধর্মের অনুসারী হিসাবে চিনি না।’

ইসলামের প্রথম আহ্বান ও হযরত আলীর নেতৃত্বের ঘোষণা
তাবারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : ‘নবুওয়াতের তৃতীয় বর্ষে পবিত্র কুরআনের
وَ أَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ (তোমার নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর)  আয়াতটি অবতীর্ণ হলে মহানবী (সা.) হযরত আলীকে এক পাত্র ঘোল ও একটি দুম্বার রান কিনে তা রান্না করে আবদুল মুত্তালিবের পরিবারের সকলকে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। হযরত আলী রাসূলুল্লাহর নির্দেশ মত সবকিছু প্রস্তুত করে সকলকে ডাকলেন। তাঁরা সকলে এলে রাসূল (সা.) ঐ রান এবং ঘোল থেকে কিছু খেলেন। অতঃপর অতিথিদের সামনে তা পরিবেশনের নির্দেশ দিলেন। তারা সকলে পেট ভরে খেল;কিন্তু তার পরও খাদ্য যে রকম ছিল তেমনই অবশিষ্ট রইল। আবু লাহাব এ দৃশ্য দেখে বলল : ‘আশ্চর্য যাদু দেখাল মুহাম্মদ!’ সে এ কথা বলার পর সকলেই স্থান ত্যাগ করে চলে গেল। তারা চলে গেলে রাসূল (সা.) হযরত আলীকে বললেন : ‘দেখলে সে কী করল? তুমি তাদের জন্য আবার আয়োজন কর ও তাদের সবাইকে দাওয়াত দাও।’ এবার তারা খাদ্য গ্রহণ শুরু করতেই মহানবী (সা.) বললেন : ‘তোমাদের মধ্যে কে আমাকে আমার ধর্ম প্রচারের কাজে সাহায্য করতে রাজী আছ? আমি তাকে আমার ভাই,সহযোগী ও আমার স্থলাভিষিক্ত হিসাবে মনোনীত করব।’ কিন্তু তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিল না। একমাত্র হযরত আলী (আ.) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে সাহায্য করব।’ মহানবী (সা.) তখন হযরত আলীকে উচুঁ করে উঠিয়ে ধরে বললেন : ‘এ হচ্ছে তোমাদের মধ্যে আমার ভাই,সহযোগী,স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি। তোমরা তার কথা শুনবে ও তার আনুগত্য করবে।’ তারা উঠে যেতে যেতে আবু তালিবকে উপহাস করে বলল : ‘তোমার ভ্রাতুষ্পুত্র তোমাকে তোমার ছেলের আদেশ মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছে।’

হযরত আলী মহানবী (সা.)-এর শয্যায়
হযরত আবু তালিবের ইন্তেকালের পর মহানবী (সা.) ও মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের নিপীড়ন বৃদ্ধি পেলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ আসল। কুরাইশরা তাদের পরামর্শের জন্য যে স্থানে সমবেত হত সেখানে সমবেত হয়ে মহানবী (সা.)-কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ হত্যায় যেন কোন বিশেষ গোত্রকে দায়ী না করা যায় এজন্য সকল গোত্র থেকে একজন করে লোক মনোনীত করা হল। বনি হাশিম থেকে আবু লাহাব মনোনীত হল। মহানবী (সা.) জীবরাঈল (আ.) কর্তৃক এ বিষয়ে খবর পেলেন এবং যে রাতে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে সে রাতেই হিজরতের নির্দেশ পেলেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) ঐ রাতে আলীকে তাঁর শয্যায় এমনভাবে শায়িত হতে বললেন যেন মুশরিকরা মনে করে স্বয়ং রাসূল সেখানে শুয়ে রয়েছেন। আলী (আ.) তাঁকে প্রশ্ন করলেন : ‘এতে কি আপনার জীবন রক্ষা পাবে?’ রাসূল (সা.) বললেন : ‘হ্যাঁ,এতে আমার জীবন রক্ষা পাবে।’ হযরত আলী রাসূল (সা.)-এর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে তাঁর শয্যায় নিশ্চিতভাবে শুয়ে পড়লেন। রাসূল (সা.) অলৌকিকভাবে তাঁর ঘর অবরোধকারী মুশরিকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সওর পর্বতের দিকে চলে গেলেন। মুশরিকরা আবু লাহাবের পরামর্শে ভোর বেলায় তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই যখন ভোর হল তারা একযোগে রাসূলের শয়নকক্ষে প্রবেশ করল। কিন্তু তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে হযরত আলীকে সেখানে দেখে হতচকিত হয়ে গেল। তারা তাঁকে প্রশ্ন করল : ‘মুহাম্মাদ কোথায়?’ আলী বললেন : ‘তোমরা কি তাঁকে আমার হাতে অর্পণ করেছিলে?’

রাসূল (সা.)-এর আমানতের দায়িত্ব পালন
কুরাইশরা একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখত না;কিন্তু এর বিপরীতে তাদের শত্রু মহানবী (সা.)-এর ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা ছিল। এ কারণে তাদের সোনা-রূপা ও অর্থ-সম্পদ তাঁর কাছে আমানতস্বরূপ রাখত,এমনকি তারা তাঁকে ‘আমীন’ বা বিশ্বস্ত বলে ডাকত। মহানবী (সা.) যখন হিজরত করেন তখন তাঁর নিকট গচ্ছিত আমানতসমূহ হযরত আলী (আ.)-এর হাতে অর্পণ করে তা তাদের প্রকৃত মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। হযরত আলী কাবা ঘরের নিকট দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিলেন যে,যারা নবী (সা.)-এর নিকট আমানত রেখেছে তারা যেন তা তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ করে। তিনি তিন দিন ধরে সকলের আমানত ফিরিয়ে দিলেন।

হযরত আলীর প্রতীক্ষায় মহানবী (সা.)
হযরত আলী (আ.)-এর ওপর অপর যে দায়িত্ব মহানবী (সা.) হিজরতের সময় অর্পণ করেছিলেন তা হল তাঁর কন্যা ফাতিমা,ফুফু ফাতিমা বিনতে আবদুল মুত্তালিব এবং হযরত আলীর মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদকে সঙ্গে নিয়ে মদিনায় হিজরত করা। মহানবী (সা.) মদিনায় নিকটবর্তী কোবা নামক স্থানে পৌঁছে আলী (আ.)-এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। হযরত আবু বকর তাঁকে মদিনার দিকে রওয়ানা দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকলে তিনি বলেন : ‘আলী আসুক,তারপর যাব।’ চারশ’ আশি কিলোমিটার পথ উত্তপ্ত মরুভূমির ওপর উটের রশি ধরে টেনে টেনে আসতে আলীর পা ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। রাসূল (সা.) তাঁর মুখের লালা সেখানে লাগিয়ে দিলে তিনি আরোগ্য লাভ করেন। অতঃপর তাঁদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মদিনায় প্রবেশ করেন। এ ঘটনা আলী (আ.)-এর প্রতি মহানবী (সা.)-এর তীব্র ভালবাসার প্রমাণ।

হযরত আলীর বীরত্ব ও সাহসিকতা
বদর যুদ্ধ : বদর যুদ্ধে এক হাজার কুরাইশ যোদ্ধা সশস্ত্র অবস্থায় তিনশ’ তেরজন মুসলমান সেনার মুখোমুখি হল। মহানবী (সা.)-এর সঙ্গীরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কারণ,তাঁরা কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলাকে অবরোধ করার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন-যুদ্ধের জন্য নয়। মহানবী (সা.) কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বদর অভিমুখে যাত্রা করলেন। এক অসম যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হল। এ যুদ্ধে সত্তরজন কুরাইশ নিহত হয়। এর মধ্যে ৩৫ জন বড় যোদ্ধা ও গোত্রপতি আলী (আ.)-এর হাতে নিহত হয়। তৃতীয় হিজরিতে কুরাইশরা বদর যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মদিনায় দিকে যাত্রা করে। মহানবীও তাদের মোকাবিলা করার জন্য মদিনা থেকে বের হলে দু’দল উহুদ প্রান্তরে পরস্পরের মুখোমুখি হল। সে সময় যুদ্ধে ঐ ব্যক্তির হাতেই পতাকা অর্পণ করা হত যে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা এবং যদি তার হাত থেকে পতাকা পড়ে যেত তবে তারপর যে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তার হাতে তা দেওয়া হত। উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের নয় জন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা যারা একের পর এক পতাকা ধারণ করেছিল তারা আলী (আ.)-এর এর হাতে নিহত হয় যা কুরাইশদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
(চলবে)

তথ্যসূত্র
1. তারিখে কামিল,২য় খণ্ড,পৃ.
2. নাহজুল বালাগা,খুতবাতুল কাসেয়াহ,খুতবা নং
3. প্রাগুক্ত
4. প্রাগুক্ত
5. সূরা শুয়ারা : ২১৪
6. তাবারী,২য় খণ্ড,পৃ.
(ঢাকা থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রত্যাশা’,১ম বর্ষ ২য় সংখ্যা)

Sunday, August 28, 2016

দোয়া সম্পর্কে বার ইমামীয়াদের বিশ্বাস

দোয়া সম্পর্কে বার ইমামীয়াদের বিশ্বাস
মহানবী (সাঃ) বলেন, " দোয়া হল বিশ্বাসীদের অস্ত্র , দ্বীনের খুঁটি এবং আকাশ ও পৃথিবীর জন্য নূর " ।

আর এটা বার ইমামীয়া শীয়াদের বিশেষত্বে পরিনত হয়েছে , যার দ্বারা এই গোত্রকে স্বতন্ত্রভাবে সনাক্ত করা যায় । তারা এ দোয়ার গুরুত্ব , আদব এবং এগুলোর মধ্যে কোনগুলো আহলে বাইত (আঃ) থেকে বর্নিত হয়েছে সে সম্পর্কে শত শত পুস্তক লিখেছেন । এ সকল পুস্তকে মহানবী (সাঃ) ও আহলে বাইত (আঃ) এর লক্ষ্য সম্পর্কে এসেছে । আর সেই সাথে তাঁদের অনুসারীদেরকে নিয়মিত দোয়া পাঠের ব্যাপারে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়া হয়েছে ।

এমনকি তাঁদের নিকট থেকে বর্নিত হয়েছে ,
" সর্বোত্তম প্রার্থনা হল দোয়া " ।
" মহান আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম প্রার্থনা হল দোয়া " ।
" নিশ্চয়ই দোয়ার মাধ্যমে চরম দূর্দশা ও শাস্তি অপসারিত হয় " ।
" দোয়া সকল শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা থেকে মানুষকে মুক্তি দান করে " ।

দোয়ার সম্রাট হযরত আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) থেকে অসংখ্য দোয়া বর্নিত হয়েছে ।

এর কারন সুষ্পষ্ট , তিনি হলেন একত্ববাদীদের সর্দার এবং মুমিনদের শিরোমনি । তাঁর বক্ত্যব্য এর মত তাঁর দোয়াও অারবী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অবদান হিসাবে পরিগনিত হয়ে আসছে । যেমন, দোয়ায় কুমাইল ইবনে যিয়াদ নামে প্রসিদ্ব দোয়াটি । এ দোয়াগুলোতে সন্নিবেশিত আছে খোদা পরিচিতি, দ্বীনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন যা একজন সঠিক ও সমুন্নত মুমিন মুসলমান হওয়ার পথে সহায়ক ।

প্রকৃতপক্ষে মহানবী (সাঃ) ও আহলে বাইত (আঃ) এর নিকট থেকে বর্নিত দোয়াগুলো মুসলমানদের জন্য উত্তম পন্থাস্বরুপ । যদি কেউ এগুলো সম্পর্কে গভীর ভাবে চিন্তা করে তাহলে এগুলো তাকে ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা প্রদান করবে এবং আল্লাহর পথে পরিশুদ্ব আত্মার অধিকারী করবে ।

সুপ্রিয় পাঠক ,
অবশ্যই এটা চ্যালেজ্ঞ দিয়ে বলা যায় যে , এই রকম উন্নত মানের অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া দোয়ার ভাষা ও সাহিত্যমান একমাত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের নিকট ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া অসম্ভব ।

ইমাম আলী (আঃ) কতৃক বর্নিত দোয়ায় কুমাইলের সামান্য কিছু অংশবিশেষ তুলে ধরছি , লক্ষ্য করুন প্রতিটি বাক্যের শব্দ চয়ন ও প্রায়োগিক ব্যবহারের নমুনা ---

"---- হে আমার মাবুদ , আমার প্রতিপালক , আমার মালিক , আমার অভিভাবক ,
কোন বিষয় আমি তোমার কাছে অভিযোগ জানাব ।
আর কোনটা নিয়ে আমি অশ্রু  ঝরাব , আর বিলাপ করব ।
শাস্তির যাতনা ও তার তীব্রতার জন্য , নাকি শাস্তির মেয়াদের দীর্ঘতার জন্য ?

অতএব যদি তুমি আমাকে তোমার শত্রুদের সাথে শাস্তি দিতে নিয়ে যাও
এবং তোমার কঠিন আযাব ভোগকারী লোকদের সাথে আমাকেও একত্র কর ।
আর তোমার প্রেমিক ও অলী আউলিয়াদের কাছ থেকে আমাকে পৃথক করে নাও ।

তাহলে হে আমার মাবুদ , হে আমার মালিক , হে আমার অভিভাবক , হে প্রতিপালক !
আমি তোমার এ শাস্তি সয়ে নেব , কিন্ত তোমার থেকে এ বিছিন্নতা আমি কিভাবে সহ্য করব ? এবং ধরা যাক , আমি তোমার আগুনের দহন সইতে পারলাম ।
কিন্ত কেমন করে আমি তোমার ক্ষমা ও দয়া না পাবার বেদনা সহ্য করব ?
কেমন করে আমি আগুনের মাঝে বসবাস করব যখন তোমার ক্ষমার উপর ভরসা করে অামি আশায় বুক বেধেছি ? ------- " ।

পাঠক ,
দোয়ার ছোট্ট এই অংশটুকু আবার গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং উপলব্দি করুন এর প্রতিটা কথার অন্তনিহিত তাৎপর্য । অাসলেই পৃথিবীর বার ইমামীয়া অনুসারীগন বা শীয়ারা সত্যিই ভাগ্যবান - এই অর্থে যে , এই শীয়ারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক ঘোষিত ও নির্বাচিত পবিত্র বারজন ইমাম (আঃ) গনের আনুগত্য করে থাকেন ।

-- শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস -
লেখক - আল্লামা মুহাম্মাদ রেজা আল মুজাফফর
পৃষ্ঠা - ৬৪ থেকে ।

২৫ শে জিলক্বদের (দাহুল আরদ) আমল

২৫ শে জিলক্বদের (দাহুল আরদ) আমল
২৫শে জিলক্বদে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর প্রথমাংশ পানি থেকে উত্থিত হয় অতঃপর ধিরে ধিরে তা বিস্তার লাভ করে এবং এদিনেই পৃথিবীর পানি ও অসমতল ভূমি এমনভাবে শুষ্ক ও সমতল হযেছিল যাতে এটা বসবাসের উপযোগী হয়। দাহউল আরদ্বের অর্থ: দাহ্ভ ( ﺩﺣﻮ) এর অর্থ হচ্ছে প্রসারণ এবং অনেকে কোন জিনিসকে তার স্বস্থান হতে নাড়া দেয়ার অর্থে তফসির করেছেন। সুতরাং দাহউল আরদ্ব ( ﺩﺣﻮ ﺍﻻﺭﺽ ) (পৃথিবীর সম্প্রসারণ) এর অর্থ হচ্ছে যে, শুরুতে ভূপৃষ্ট পানি দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। এ পানি পর্যায়ক্রমে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন গর্তে স্থান করে নেয় এবং পানির তলা হতে শুষ্ক ভূমি উঁকি দেয়। ফলে দিনের পর দিন ভূপৃষ্ঠ প্রসারিত হতে থাকে। পৃথিবী শুরুতে অসমতল ও বসবাস অযোগ্য ছিল। পরবর্তী বন্যা আকারের প্রচণ্ড বর্ষন ব্যাপক আকারে হতে থাকে ও ভূপৃষ্ঠকে ধুয়ে দেয় এবং উপত্যকাগুলোর পরিধি বাড়তে থাকে, আস্তে আস্তে ভূপৃষ্ঠ মানুষের বসবাস ও চাষাবাদের উপযোগী হয়ে ওঠে। আর এ সম্প্রসারণকেই দাহউল আরদ্ব বলা হয়। উক্ত দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রেওয়ায়েত ও আমল বর্ণিত হয়েছে:

আমিরুল মুমিনিন থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, ২৫শে জিলক্বদে প্রথমবারের মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হয়। সুতরাং যদি কেউ উক্ত দিনে রোজা রাখে এবং উক্ত রাতে ইবাদত করে তাহলে তাকে ১০০ বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে।

আরো বলা হয়েছে যে, যদি কয়েকজন একত্রিত হয়ে উক্ত দিনে আল্লাহর যিকর করে তাহলে তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তাদের দোয়াকে কবুল করে নিবেন। (ইকবাল, পৃষ্ঠা ৩১৪)

মুস্তাহাব হচ্ছে উক্ত দিনের সূচনা লগ্নে (সূর্যোদয়ের সময়) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে ৫ বার সূরা শামস তেলাওয়াতের মাধ্যেমে নামাজ আদায় করে। অতঃপর উক্ত দোয়াটি পাঠ করে:

لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ اِلاَّ بِاللهِ الْعَلىِّ الْعَظيمِ، يا مُقيلَ الْعَثَراتِ، اَقِلْنى عَثْرَتى يا مُجيبَ الدَّعَواتِ، اَجِبْ دَعْوَتى، يا سامِعَ الاْصْواتِ، اِسْمَعْ صَوْتى وَارْحَمْنى وَتَجاوَزْ عَنْ سَيِّئاتى وَما عِنْدى، يا ذَاالْجَلالِ وَالاْكْرامِ
(ইকবাল, পৃষ্ঠা ৩১৪)

শেইখ তুসি (রহ.)বর্ণনা করেছেন যে, উক্ত দিনে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করা হচ্ছে উত্তম:

اَللّـهُمَّ داحِىَ الْكَعْبَةِ، وَفـالِقَ الْحَـبَّةِ، وَصارِفَ اللَّزْبَةِ، وَكاشِفَ كُـلِّ كُـرْبَـة، اَسْئَلُكَ فى هذَا الْيَوْمِ مِنْ اَيّامِكَ الَّتى اَعْظَمْتَ حَقَّها، وَاَقْدَمْتَ سَبْقَها، وَجَعَلْتَها عِنْدَ الْمُؤْمِنينَ وَديعَةً، وَ اِلَيْكَ ذَريعَةً، وَ بِرَحْمَتِكَ الْوَسيعَةِ، اَنْ تُصَلِّىَ عَلى مُحَمَّد عَبْدِكَ الْمُنْتَجَبِ، فِى الْميثاقِ الْقَريبِ يَوْمَ التَّلاقِ، فاتِقِ كُلِّ رَتْق، وَداع اِلى كُلِّ حَقٍّ، وَعَلى اَهْلِ بَيْتِهِ الاْطْهارِ الْهُداةِ الْمَنارِ، دَعائِمِ الْجَبّارِ، وَوُلاةِ الْجَنَّةِ وَالنّارِ، وَاَعْطِنا فى يَوْمِنا هذا مِنْ عَطآئِكَ الْمَخْزُونِ، غَيْرَ مَقْطوُع وَلا مَمْنوُن، تَجْمَعُ لَنا بِهِ التَّوْبَةَ وَحُسْنَ الاَْوْبَةِ، يا خَيْرَ مَدْعُوٍّ وَاَكْرَمَ مَرْجُوٍّ، يا كَفِىُّ يا وَفِىُّ، يا مَنْ لُطْفُهُ خَفِىٌّ، اُلْطُفْ لى بِلُطْفِكَ، وَاَسْعِدْنى بِعَفْوِكَ، وَاَيِّدْنى بِنَصْرِكَ، وَلا تُنْسِنى كَريمَ ذِكْرِكَ، بِوُلاةِ اَمْرِكَ، وَحَفَظَةِ سِرِّكَ، وَ احْفَظْنى مِنْ شَوائِبِ الدَّهْرِ اِلى يَوْمِ الْحَشْرِ وَالنَّشْرِ، وَاَشْهِدْنى اَوْلِيآئَكَ عِنْدَ خُرُوجِ نَفْسى، وَحُلُولِ رَمْسى، وَانْقِطاعِ عَمَلى، وَانْقِضآءِ اَجَلى، اَللّهُمَّ وَاذْكُرْنى عَلى طُولِ الْبِلى، اِذا حَلَلْتُ بَيْنَ اَطْباقِ الثَّرى، وَنَسِيَنِى النّاسُونَ مِنَ الْوَرى، وَاَحْلِلْنى دارَ الْمُقامَةِ، وَ بَوِّئْنى مَنْزِلَ الْكَرامَةِ، وَاجْعَلْنى مِنْ مُرافِقى اَوْلِيآئِكَ، وَاَهْلِ اجْتِبآئِكَ وَأصْفِيائِكَ، وَبارِكْ لى فى لِقآئِكَ، وَارْزُقْنى حُسْنَ الْعَمَلِ قَبْلَ حُلُولِ الاْجَلِ، بَريئاً مِنَ الزَّلَلِ وَسُوءِ الْخَطَلِ، اَللّـهُمَّ وَ اَوْرِدْنى حَوْضَ نَبِيِّكَ مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ أَهْلِ بَيْتِهِ، وَاسْقِنى مِنْهُ مَشْرَباً رَوِيّاً سآئِغاً هَنيئاً، لا اَظْمَأُ بَعْدَهُ، وَلا اُحَلاَّ وِرْدَهُ، وَ لا عَنْهُ اُذادُ، وَاجْعَلْهُ لى خَيْرَ زاد، وَ اَوْفى ميعاد، يَوْمَ يَقُومُ الاْشْهادُ، اَللّهُمَّ وَالْعَنْ جَبابِرَةَ الاْوَّلينَ وَالاْخِرينَ، وَبِحُقُوقِ اَوْلِيآئِكَ الْمُسْتَاْثِرينَ، اَللّـهُمَّ وَاقْصِمْ دَعآئِمَهُمْ، وَاَهْلِكْ اَشْياعَهُمْ وَ عامِلَهُمْ، وَ عَجِّلْ مَهالِكَهُمْ، وَاسْلُبْهُمْ مَمالِكَهُمْ، وَضَيِّقْ عَلَيْهِمْ مَسالِكَهُمْ، وَالْعَنْ مُساهِمَهُمْ وَمُشارِكَهُمْ، اَللّـهُمَّ وَعَجِّلْ فَرَجَ اَوْلِيآئِكَ، وَارْدُدْ عَلَيْهِمْ مَظالِمَهُمْ، وَاَظْهِرْ بِالْحَقِّ قآئِمَهُمْ، وَاجْعَلْهُ لِدينِكَ مُنْتَصِراً، وَبِاَمْرِكَ فى اَعْدآئِكَ مُؤْتَمِراً، اَللّـهُمَّ احْفُفْهُ بِمَلائِكَةِ النَّصْرِ، وَبِما اَلْقَيْتَ اِلَيْهِ مِنَ الاَْمْرِ فى لَيْلَةِ الْقَدْرِ، مُنْتَقِماً لَكَ حَتّى تَرْضى، وَيَعُودَ دينُكَ بِهِ وَعَلى يَدَيْهِ جَديداً غَضّاً، وَيَمْحَضَ الْحَقَّ مَحْضاً، وَيَرْفِضَ الْباطِلَ رَفْضاً، اَللّـهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ وَعَلى جَميعِ آبائِهِ، وَاجْعَلْنا مِنْ صَحْبِهِ وَاُسْرَتِهِ، وَابْعَثْنا فى كَرَّتِهِ، حَتّى نَكُونَ فى زَمانِهِ مِنْ اَعْوانِهِ، اَللّهُمَّ اَدْرِكْ بِنا قِيامَهُ، وَاَشْهِدْنا اَيّامَهُ، وَصَلِّ عَلَيْهِ، وَعَلَيْهِ السَّلامُ، وَارْدُدْ اِلَيْنا سَلامَهُ، وَرَحْمَـةُ اللهِ وَبَرَكـاتُهُ.

(মেসবাহুল মোতাহাজজেদ, পৃষ্ঠা ৬৬৯)

Wednesday, June 1, 2016

রমযান মাসের তারাবীর নামাজ

রমযান মাসের তারাবীর নামাজ
রমযান মাসের তারাবীর নামাজ বিষয়ক আলোচনা।
বইঃ ইমামিয়া বিশ্বাসের সনদ, লেখকঃআয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী

(তারাবীর নামাজ) রাসুলের(সাঃ) অনুসরনে আদায় করা মুস্তাহাবে মুয়াক্কাদাহ বলে পরিগনিত।কুরান ও নবী পরিবারের(আঃ) অনুসারী ১২ ইমামিয়া শিয়াদের ফেকাহ মোতাবেক রমযান মাসের রাতগুলোতে মোট ১০০০ রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব,কিন্তু এ নামাজগুলো জামায়াতে আদায় করা বেদাআত। অবশ্যই এ নামাজগুলো একাকী (ফোরাদা) মসজিদে এবং অধিকাংশ সময় ঘরে আদায় করতে হবে।

যায়েদ ইবনে সাবেত রাসুল(সাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, কোন ব্যক্তির জন্যে ঘরে নামাজ আদায় করা মসজিদে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, যদি না তা ওয়াজিব/ফরজ নামাজ হয়। কেননা ওয়াজিব/ফরজ নামাজগুলো মসজিদে আদায় করা মুস্তাহাব।(তুসী,খেলাফ কিতাবুস সালাত,মাসয়ালা-২৬৮)

রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৫ম ইমাম বাকের(আঃ) বলেন,মুস্তাহাব নামাজগুলো জামায়াতে পড়া যাবে না এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে যে কোন প্রকার বেদায়াতই পথভ্রষ্টতা যার পরিনতি হল আগুন।(সাদুক খেসাল ২/১৫২)।

রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৮ম ইমাম রেজা(আঃ) ও স্বীয় রেসালা যা ‘একজন মুসলমানের আকাইদ ও আমল’ শিরোনামে লেখা হয়েছে,তাতে উল্লেখ করেছেন যে, মুস্তাহাব নামাজগুলোকে জামায়াতে আদায় করা যাবে না এবং এমনটি করা হল বেদায়াত।(সাদুক,উয়ুনে আখবারে রেজা(আঃ),খঃ২,পাতা-১২৪)।

জামায়াতবদ্ব হয়ে তারাবীর নামাজ আদায় করার ব্যাপারটি (যা আহলে সুন্নাতের মধ্যে প্রচলিত) পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যক্তিগত মতের ( ইজতিহাদ বে রায়) মাধ্যমে বৈধতা দান করা হয়েছে। সত্য পিপাসুরা পাদটিকায় উল্লেখিত দলীল গুলো দেখতে পারেন।(কাসতালানী এরশাদুস সারী ৩/২২৬,আইন উমাদাতুল কারী ১১০/১২৬,শাতেবী,আল এ’তেশাম ২/২৯১)।