হঠাৎ সেখানে শীয়া মাযহাবের এক লোক এসে নবীজীর (সাঃ) মাজারের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন দিতে শুরু করল ।
মসজিদের ইমাম সাহেব তা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , " ওহে মুসাফির , কেন তুমি এই বিবেক বুদ্বিহীন মাজারের দেয়ালকে চুমু দিচ্ছ ? এর মাধ্যমে তুমি তো শিরক করছ " ।
ইমাম সাহেবের ক্রুদ্ব চেহারা দেখে বেচারা শীয়া লোকটি ভারাক্রান্ত অন্তরে দ্রুত চলে গেল ।
মুসলিম আলেম তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলল , " এই দেয়ালে চুম্বন দেয়ার অর্থ হচ্ছে নবীজীর (সাঃ) প্রতি ভালবাসা । ঠক যেমন পিতা তার সন্তানকে চুম্বনের মাধ্যমে ভালবসা প্রকাশ করে । এখানে সে তো কোন শিরক করে নি " ।
ইমাম সাহেব বললেন , " না , এটাকেও শিরক বলে " ।
মুসলমান আলেম বললেন , " ও তাই নাকি , তাহলে সুরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) এর পরনের জামাটি তাঁর চোখে পরম স্নেহ মমতায় বুলালেন এবং তাঁর চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরে এল ।
এখন আমার প্রশ্ন হল , ঐ জামাটি তো কাপড়ের তৈরী ছিল । তাহলে কিভাবে ঐ জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এর চোখের উপর রাখাতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল ?
এমনটিই নয় কি যে , কাপড়ের তৈরী জামাটি হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের ছোয়া পেয়ে ঐরকম বিশেষত্ব পেয়েছিল ।
এ ছাড়াও সুরা ইউসুফের ৯৪ নং অায়াত অনুসারে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহুদূর থেকে ওনার পু্ত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের সুঘ্রান অনুভব করেছিলেন ।
এসবই তো হচ্ছে ভালবাসা ও ভক্তির আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ।
আমি বা আপনি কাবা গৃহের পবি্ত্র কাল পাথরটিকে তো অজস্র চুমু দিয়ে থাকি । তো এখানে আপনি শিরকের কি দেখলেন ? আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না " ।
ইমাম সাহেব বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাজের বাহানা দিয়ে যৌক্তিক কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন ।
উপরের ঘটনায় এটা বলা যায় যে , নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগন এক ধরনের বিশেষ আধ্যাতিকতায় পারদর্শী । আর তাঁদের এই বিশেষ আধ্যাতিকতা থেকে উপকৃত হওয়াতে কোন শিরক নেই । বরং তা হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদেরই অনুরুপ । কেননা তাঁরাও এই বিশেষত্বকে তাওহীদের নূর থেকেই গ্রহন করেছেন ।
আমরা আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের মাজারর পাশে বসে তাঁদের সাথে আন্তরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করি । যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই সেহেতু তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি ।
পবিত্র কোরআনে সুরা ইউসুফের ৯৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে ,
"-- হে পিতা , আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , কেননা আমরা ভুল করেছিলাম -- "।
সুতরাং আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও অলি আউলিয়াগনের তাওয়াছছুল করা বা তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ন জায়েজ বা বৈধ । আর যারা এটাকে তাওহীদ থেকে আলাদা মনে করে থাকেন , তারা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত নয় । অথবা অযথা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের অন্তর চক্ষুতে পর্দা পড়ে গেছে ।
সুরা মায়েদার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,
"-- যারা ঈমান এনেছো , পরহেজগার থেকো এবং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মাধ্যমের অন্বেষন কর ---"।
" মাধ্যম " এই আয়াতের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ওয়াজীব কাজের আজ্ঞাম দেয়া এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই নয় । বরং মুস্তাহাব বিষয় যেমন আম্বীয়া , পবিত্র ইমামগন , প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের প্রতি তাওয়াছছুল করাকেও মাধ্যম বলা হয়েছে ।
সুরা নিসার ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,
"-- আর যখন বিরোধিতাকারীরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল এবং তোমার কাছে এসে তোমার মাধ্যমে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল । আর নবী তাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন তখন তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহনকারী ও মেহেরবান হিসাবে উপলব্দি করেছিল --- "।
এ প্রসংগে একটি কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের আদি পিতা-মাতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) আমাদের শেষ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বায়েতগনের (আঃ) নামের উছিলায় আল্লাহর রহমত অর্জন করেছিলেন ।
আহলে সুন্নাতের দুটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি ।
এক ব্যক্তি নবীজীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন যে , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আমি কোন এক ব্যাপারে কসম করেছিলাম যে , যদি সফল হই তবে বেহেশতের দরজায় চুম্বন করব । এখন এ পর্যায় কি করব " ?
নবী (সাঃ) বললেন , " মায়ের পায়ে ও পিতার কপালে চুম্বন কর "।
লোকটি বলল , " পিতা মাতা যদি ইন্তেকাল করে তখন কি করব " ?
নবী (সাঃ) বললেন , " তাদের কবরে চুম্বন করলেই হবে " ।
সূত্র - আল আলামু - কুতুবুদ্দিন হানাফি , পৃ- ২৪ ।
সুন্নি মাযহাবের বিশিষ্ট সাধক সাফিয়ান ছাওরী ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে বললেন , " কেন মানুষ কাবা গৃহের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে ও চুম্বন করে ? ওটাতো একটা পুরান কাপড় ছাড়া আর কিছুই না " !
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেন , " এই কাজটি এমন যে , এক ব্যক্তি অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে । পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির হাত ধরে ক্ষমা চাইছে এবং তার চারিপার্শে ঘুরছে এই আশায় যে , ঐ ব্যক্তি যেন তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেয় " ।
আনোয়ারুল বাহিয়াহ , ইমাম সাদিক (আঃ) জীবনী ।
সম্মানীয় পাঠক ,
কখনই অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠ মোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না , দয়া করে। নিজের বিবেক বুদ্ধির প্রয়োগ করুন। পরিপূর্ন নিশ্চিন্ত মনে নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করুন ও তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্ত দুঃখ বেদণা , পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান । একটা কথা মনে রাখবেন আপনি ওলী আউলিয়া কারো কাছে চাইবেন না বরং তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবেন ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন বাবা আদম আঃ আল্লাহর কাছে নিজ ভুল স্বিকার করে নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর উছিলা দিয়ে।
-- ইসলামী চিন্তাধারার উপর একশ একটি মুনাযিরা , ইমাম আলী (আঃ) ফাউন্ডেশন , কোম, ইরান ,
পৃষ্ঠা - ১৬০ ছায়া অবলম্বনে ।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: