Friday, December 25, 2015

শিয়াদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো কি সত্য ?

শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যাচার করা হয় যা শিয়া আলেমদের সাথে কথা বলার পর পরিস্কার হয় আসলে সুন্নি মুসলমান ভাইয়েরা তাদের সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণে অনেকেই উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে থাকেন।

প্রশ্নঃ
হযরত আলী ছাড়া বাকি তিন খলিফাদের নাকি শীয়ারা কাফের বলে ?
শীয়ারা কি সাহাবীদেরকে অশোভন উক্তি বা গালি দিয়ে থাকে ?
শীয়ারা কি নবীপত্নী বিশেষ করে হযরত আয়েশা সম্পর্কে অশোভন উক্তি করে ?
শীয়ারা নাকি আলী কে রাসূল (সাঃ) এর থেকেও শ্রেষ্ঠ মানে ?
শীয়ারা নাকি এটা বিশ্বাস করে যে , কোরআনের আয়াত ১১ হাজারের বেশি ?
রাসূল (সাঃ) হাদিস নাকি শীয়ারা মানে না ?
শীয়াদের মধ্যে রাফেজি ও আলাভী গোত্র সম্পর্কেও জানতে চাই ।
পরিশেষে জানতে চাই যে , মূলধারার শীয়া মাজহাব এ ব্যাপারে কী বলে ?


উত্তরঃ
সর্বপ্রথম শীয়া মাযহাবের পক্ষ থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষনা করা হচ্ছে যে ,
‘ সুন্নি মাযহাবের সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননা করা হারাম ’ ।
প্রথম তিন খলিফাকে মূল ধারার শীয়ারা তথা ১২ ইমামে বিশ্বাসী বা ‘ ইসনা আশারা ’ শীয়ারা কোন অবস্থাতেই কিছুতেই কাফির মনে করেন না বরং তাদের অবমাননাকে হারাম মনে করেন ।

বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের স্বার্থে হযরত আলী (আঃ) এই তিন সাহাবির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন নি বলেও তারা বলে থাকেন । তাদের সম্পর্কে বা সুন্নিদের কাছে সম্মানিত সাহাবিদের ব্যাপারে অশোভন উক্তি করা বা গালি দেয়াকে শীয়া মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করে গেছেন মূল ধারার শীয়া নেতৃবৃন্দ ও সকল আলেমগন ।
মূল ধারার শীয়া ধর্মীয় নেতারা সুন্নি মুসলমানদেরকে সম্পূর্ন মুসলমান বলেই মনে করেন

এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া উল্লেখযোগ্য ।

২০১০ সালে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এক ফতোয়ায় মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা সহ সুন্নি মাজহাবের সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননাকে সম্পূর্ন হারাম ঘোষণা করেন ।

এ ঐতিহাসিক ফতোয়া বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগায় ।
বিশেষ করে কুয়েতের দৈনিক ‘আল আম্বিয়া' , বার্তা সংস্থা মুহিত , লেবাননের দৈনিক আস সাফির , লন্ডনে থেকে প্রকাশিত আল হায়াত এবং মিশরের বেতার ও টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ফতোয়াটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয় ।

কোরআন অবিকৃত অবস্হায় রয়েছে---

শীয়া মুসলমানরা মনে করেন যে , পবিত্র কোরআন সম্পূর্ন অবিকৃত রয়েছে এবং বর্তমানে প্রচলিত কোরআন ও আদি কোরআনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ।

তবে কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যানাজিলের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতভেদ আছে এবং এ বিষয়টি ইসলামের নানা মাজহাব সৃষ্টি ও মুসলমানদের মধ্যে মতভেদের অন্যতম বড় কারণ ।

শীয়াদেরকেই সামগ্রীকভাবে রাফেজি বলে থাকেন বিভিন্ন মাজহাব বা অন্য ধারার মুসলমানরা ।

কারণ , শীয়া মুসলমানরা মনে করেন যে , একমাত্র হযরত আলীই (তাঁর ওপর সালাম) ছিলেন বিশ্বনবী (সঃ) কতৃক ঘোষিত ও মহান আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত প্রথম ইমাম বা খলিফা বা উলিল আমর ।

শীয়ারা হযরত আবু বকর , হযরত ওমর এবং হযরত ওসমানকে ন্যায়সঙ্গত খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন বলেই এই শব্দটি তথা রাফেজি অর্থাৎ ‘অস্বীকারকারী’ ব্যবহার করা হয় শীয়াদের সম্পর্কে ।

" রাফেজী " শব্দটির মূল অর্থই হচ্ছে - অস্বীকারকারী ।

আলাভীদের ব্যাপারে মূল ধারা অর্থাৎ বার ইমামীয়া শীয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি --

‘ অ্যালাভাইট ’ বা ‘ আলাভী ’ বলতে এক সময় হযরত আলী (আঃ) এর বংশধর ও তাঁর সমর্থকদেরকে বোঝাত ।
এখনও প্রাচীন বইয়ে ব্যবহৃত এই শব্দকে সেই অর্থেই ব্যবহার করা যায় ।

তবে আলাভী বলতে একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায় ছিল প্রাচীন যুগে এবং বর্তমান যুগেও এ সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায় ।
এরা হযরত আলী (আঃ) কে আল্লাহর সমতুল্য অথবা প্রকান্তরে হযরত আলী (আঃ) কেই আল্লাহ বলে মনে করে ।
মূল ধারা অর্থাৎ বার ইমামীয়া শীয়ারা তাদেরকে সম্পূর্ন রুপে মহা কাফির বলে মনে করেন ।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর এইসব বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে মূল ধারার শীয়ায় পরিণত হয়েছেন ।

শীয়াদের দৃষ্টিতে বিশ্বনবী (সাঃ) ও হাদিস --

শীয়ারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে মনে করেন । বিশ্বনবী (সাঃ) এর নাম শুনা মাত্র তারা উচ্চস্বরে দরুদ পড়াকে অনেকটা ওয়াজিবের মতই পালন করে থাকেন ।
চ্যালেজ্ঞ সহকারে বলা যায় যে , শীয়াদের মত এত বেশি দরুদ পাঠ অন্যরা করেন না ।

মহান আল্লাহর ঠিক পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন সকলের প্রানপ্রিয় হাবিবে খোদা মুহাম্মাদ (সাঃ) ।
অতএব হযরত আলী (আঃ) কে শীয়ারা মহানবী (সাঃ) এর থেকে বেশী মর্যাদাবান মনে করে না --- - এটা শীয়াদের বিরুদ্বে জঘন্য একটা মিথ্যাচার ব্যতীত আর কিছুই নয় ।

হাদিস প্রসঙ্গে কথা হল ,
শীয়ারা মনে করেন যে , সুন্নি ভাইরা যেসব হাদিস মেনে চলেন তার মধ্যে অনেক হাদিসই অনির্ভরযোগ্য , দূর্বল সনদ অথবা জাল হাদিস । তবে অবশ্যই সকল হাদিস নয় ।

আসলে মোদ্দ কথা হচ্ছে যে , সুন্নিদের মধ্যে অল্প কিছু পথভ্রষ্ট ও অনাচারী মুসলমানদের দোষ-ত্রুটিকে যেমন সমস্ত সুন্নি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য বলা যায় না, ঠিক তেমনি ভাবে শীয়াদের মধ্যেও কিছু বিচ্যূত বা পথভ্রষ্ট শীয়াদের কথা বা চিন্তা ধারাকে সব শীয়াদের মূল চিন্তাধারা বলে প্রচার করার বা মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই ।

কিন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে শীয়া মুসলমানদের নামে নানা অপপ্রচার যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে ।

এর পেছনে রয়েছে ইসলাম ধর্মের মূল শত্রুদের বড় ষড়যন্ত্র ।
কারন মুসলমানদের মধ্যে যত বিভেদ সৃষ্টি করা যায় ততই শত্রুদের লাভ
তারা এ ধরনের বিষয়গুলোকে অপব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য জিইয়ে রাখতে চায় ।

তাই সকলের প্রতি অনুরোধ যে , আসুন মহানবী (সাঃ) এর রেখে যাওয়া মূল ইসলামের পতাকাতলে সকলেই ঐকবব্দ ভাবে অবস্থান গ্রহন করি ।
ঈলাহী আমিন ।

নিবেদনে -
সাকিল আহমেদ ।

ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

লেখাটি সংগৃহীত ।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: