Wednesday, August 31, 2016

ইরান ও ইরাক যুদ্ধে ইমাম খোমেনীর অবদান

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমেরিকা-ইসরাইলের নির্দেশে ও সৌদী-আমিরাত-কুয়েতের ষড়যন্ত্রে ইরাকের তৎকালীন সৈরশাসক সাদ্দাম ইসলামী ইরানে আক্রমণ করে বসে।
একদিকে আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোয়েন্দা সাহায্য, আর অপরদিকে রাজতান্ত্রিক আরব রাজা বাদশাহদের অঢেল অর্থনৈতিক সাহায্যে আশীর্বাদপুষ্ট সাদ্দামের সেনাবাহিনী হয়ে উঠে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শক্তি।

এদিকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ইরানের উপর আমেরিকা-ইউরোপ চাপিয়ে দেয় অত্যাধিক কঠিন অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। আর ইসলামী ইরানের সেনাবাহিনী (যা ছিল ইরানের তৎকালীন ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ রেজা শাহর আমলের অনৈসলামিক সেনাবাহিনী) সাদ্দামের অত্যাধিক শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করতে অসমর্থ হয়ে যায়, ফলে সাদ্দাম দখল করে নেয় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল 'খুররামশাহর'!

অতঃপর ইমাম খোমেইনী (রহঃ) এর পরিকল্পনা ও নির্দেশে ইরানের ইসলামপন্থী সাধারন জনগন ও ইসলামী বিপ্লবে ভূমিকা পালনকারী ইসলামী রাজনৈতিক কর্মীদের অংশগ্রহণে গঠন করা হয় 'ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী'।
এই নবগঠিত, অপরিপক্ক, অনভিজ্ঞ, অদক্ষ ও অপেশাদার বাহিনীই মহান আল্লাহ পাকের উপর অগাধ ভরসা, বিশ্বাস এবং ইসলামের প্রতি অদম্য আবেগ, ভালবাসা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে যুগের ফেরাউন-নমরূদ রূপী সাদ্দামের অজেয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে!

এদিকে সাদ্দাম ইরানের 'খুররামশাহর' জবরদখল করার পর সেখানে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সে প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত সৈন্য ও অস্ত্র সমাবেশ করে খুররামশাহরে। এবং প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষনা দেয় -
'যদি খোমেইনী আমার কাছ থেকে খুররামশাহর পুনরুদ্ধার করতে পারে, তাহলে আমি খোমেইনীকে আমার বাগদাদ লিখে দেব'!
সদ্য দখল করা খুররামশাহরের দখলদারিত্ব বজায় রাখা সাদ্দামের জন্য হয়ে উঠে আত্মঅহংকারের প্রতীক! আর ইরানের ইসলামী বিপ্লবী বাহিনীর জন্য খুররামশাহর পুনরুদ্ধার করা হয়ে উঠে ইসলামের মর্যাদা রক্ষার ইস্যু।

এদিকে খুররামশাহর ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী অসংখ্য শহীদ কুরবানী করার বিনিময়ে সাদ্দামের নিষ্ঠুর বাহিনীকে ইরানের আরও অভ্যন্তরে প্রবেশ করা থেকে ঠেকিয়ে রাখে ও দীর্ঘদিন ধরে খুররামশাহর মুক্ত করার জন্য সাধনা করতে থাকে ...

একদিন হযরত ইমাম খোমেইনী (রহঃ) জামায়াতে নামাজের ইমামতি করার জন্য দাঁড়ালেন ও তাকবীর দেবার জন্য মাত্র হাত উপরে তুললেন; এমন সময় পেছন থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে মসজিদে প্রবেশ করল ও বলতে লাগল -
'ইমাম একটু অপেক্ষা করুন!
কিবলামুখি দাঁড়ানো ইমাম খোমেইনী (রহঃ) কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওই ব্যক্তিটির দিকে ঘাড় ঘুরালেন।
দৌড়ে আসতে থাকা ওই ব্যক্তিটি বলে উঠল -
'যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে মাত্র খবর এসেছে; আমরা খুররামশাহর সাদ্দামের হাত থেকে মুক্ত করেছি!'

ইমাম খোমেইনী (রহঃ) সেই ব্যাক্তি কথা শুনে কোন প্রতিক্রিয়া ও ভ্রুক্ষেপ না করেই পুনরায় কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলেন - 'আল্লাহু আকবার'!
তিনি নামাজ শুরু করে দিলেন ...
সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও মালিক মহান আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড়ানো ইমামের কাছে নগন্য খুররামশাহরের কোন মূল্যই যেন নেই!

যুদ্ধ ও প্রতিরোধের কঠিন দিনগুলোতে যখন তাঁকে বলা হত যে সাদ্দামকে আমেরিকা ও রাশিয়া বিপুল পরিমাণে অমুক অমুক অত্যাধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে, আর আমাদেরকে অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে! আমাদের মজুদে তেমন কোন অস্ত্রই নেই, আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করব? আমাদের কী আছে?
আত্মবিশ্বাসী ইমাম বলিষ্ঠ ভাবে জবাব দিতেন -
'আমাদের আল্লাহ আছে!'

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহঃ) এভাবেই তাঁর সমস্ত কাজে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতেন আর মহান আল্লাহ পাকের উপরই ভরসা করতেন। ছোট বড় কোন কিছুই তাঁকে মহান আল্লাহ পাকের দিকে দেয়া মনোযোগ থেকে অন্যমনস্ক করতে পারত না! এমনকি ইমামের আদরের বড় পুত্র শহীদ মুস্তাফা খোমেইনীর শাহাদাতের ঘটনাও তাঁকে মহান আল্লাহ পাক ও ইসলামের প্রতি ভালবাসা ও মনোযোগ থেকে গাফেল করতে পারেনি।

ইসলামী বিপ্লবের আগে ইমামের ইরাকে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় যখন খবর আসলো যে উনার প্রানপ্রিয় সন্তান মুস্তফা খোমেইনীকে শহীদ করা হয়েছে, তিনি এই শোকাবহ ঘটনার কারনে কোন রকম বিশেষ প্রতিক্রিয়াই প্রদর্শন করেননি, শুধু পাশের রুমে গিয়ে জোরে জোরে পবিত্র কুর'আন তিলাওয়াত করতে থাকেন। সন্তানের শাহাদাতে তিনি একফোঁটা অশ্রুও বিসর্জন দেননি!
ডাক্তাররা বলতে থাকেন যে যদি তিনি কান্নাকাটি না করেন, তাহলে তাঁর হার্টে মারাত্মক সমস্যা হবে; কিন্তু তারপরওতিনি ক্রন্দন করেননি।
অথচ অতঃপর একদিন শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের স্মরণে আয়োজিত এক শোক মজলিসে যখন তাঁর সামনে হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর সন্তান হযরত আলী আকবার (আঃ) এর শাহাদাতের শোকাবহ ঘটনা বর্ণনা করা হয়, তখন তিনি ক্রন্দনে ফেঁটে পড়েন!

তাঁর কাছে নিজের সন্তানের শাহাদাতের চেয়ে জান্নাতের নেতা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর সন্তানের শাহাদাত অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শোকাবহ ছিল!

ইমাম (রহঃ) বলতেন -
"যদি শত্রুরা আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে ঘেরাও করে, তাহলে তারা জানুক যে আমরা রমজানের সন্তান; আর যদি তারা আমাদেরকে সামরিকভাবে ঘিরে ফেলে, তাহলে তারা জেনে রাখুক যে আমরা আশূরার সন্তান!"

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: