Wednesday, October 14, 2015

সোয়ালক্ষ হজ্ব ফেরৎ সাহাবী ও কাফের - মুনাফিক প্রসংগ

" --- হে রাসুল , পৌছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে , তোমার প্রভুর কাছ থেকে এবং যদি তুমি তা না কর , তূমি তাঁর রেসালতই পৌঁছে দাও নি এবং আল্লাহ তোমাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না --- " ।
সুরা - মায়েদা / ৬৭ ।


পাঠক ,
অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসাবে আমি উপরোক্ত আয়াতটির বিষয় ভিন্ন আঙ্গিকে দুটি কথা নিবেদন করতে চাই ।
দ্বিমত অবশ্যই আপনার থাকতেই পারে ।
বিনীত অনুরোধ , শালীন ভাষায় যে কোন সমালোচনা শিরধার্য ।
মূল কথায় আসি -

আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট -
জীবনের প্রথম ও শেষ হজ্ব পালন শেষে মহানবী (সাঃ) পদব্রজে মক্কা থেকে মদীনায় ফিরছেন । সময়কাল দশম হিজরী । সংগে প্রায় সোয়ালক্ষ হাজী সাহাবাগন । স্বভাবতই হজ্ব ফেরৎ এই বিশাল কাফেলায় কোন অমুসলিম যেমন খ্রীষ্টান , হিহুদী , মূর্তিপূজারী মুশরিক থাকার কোন প্রশ্নই নেই ।
দিনের তাপমাত্রা প্রায় ৬০ ডিগ্রী । মরুভূমির প্রচন্ড গরম । বিশাল এই হজ্ব ফেরৎ কাফেলা তখন খুম নামক এক স্থানে অবস্থিত এক গাদীর বা জলাশয়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছে । সদ্য হজ্ব ফেরৎ বিশাল এই হাজী সাহাবাগনের নেতৃত্বে আছেন স্বয়ং মোহাম্মাদ (সাঃ) । জোহর ওয়াক্ত তখন সমাগত । তখনই এই আয়াতটি নাজিল হয় ।

আয়াতটিকে বিশ্লেষন করলে নিমোক্ত পয়েন্টসগুলি দেখতে পাই যে --
১) - মহানবী (সাঃ) এর কাছে পূর্ব থেকেই এই বার্তাটি ছিল ,
২) - কোন কারনে হয়তোবা মহানবী (সাঃ) বার্তাটি জনসম্মুখে ঘোষনাটি দিতে ইতস্তত করছিলেন ,
৩) - মহান অাল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সাঃ) বার্তাটি ঘোষনা দেয়ার জন্য কঠিনভাবে বললেন ,
৪) - মহান আল্লাহর কঠিনতা এমনই মারাত্মক পর্যায় ছিল যে , তিনি চুড়ান্ত হুমকি দিয়ে বললেন যে , যদি বার্তাটি যথাযথ ভাবে ঘোষনা না করা হয় তাহলে পুরো রেসালতই বাতিল ,
৫) - প্রচন্ড দয়ালু আল্লাহ এটাও জানতেন যে , তাঁর প্রিয় হাবিব , নবীজী (সাঃ) কেন ইতস্তত করছেন ,
৬) - মহান আল্লাহ নিজে তখন জামিনদার হলেন এই ভাবে যে , হে নবী , তুমি নির্ভয় বার্তাটি ঘোষনা কর , কোন ভয় পেও না , স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে অবাধ্য উচ্ছৃখংল কাফের জনতার রোষানল থেকে রক্ষা করবেন ,
৭) - আয়াতটির শেষ লাইনে , মহান আল্লাহ " কাফের " - এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন ।
উপরের আয়াতটির বিশ্লেষন থেকে এটা জলের মত পরিষ্কার যে , বার্তাটি সাংঘাতিক রকমের গুরুত্বপূর্ন । নইলে মহানবী (সাঃ) কেনইবা ইতস্তত করছিলেন । আর মহান আল্লাহ কেনইবা এতটা জোর তাগিদ বা হুমকি দিলেন । আবার পাশাপাশি মহান আল্লাহ তাঁকে অভয় দিলেন ।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানতেন যে , এই বার্তাটি অনেকেই মেনে নিতে পারবে না । আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) আদেশ অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যানকারীগনকে কাফের বলা হয় ।

এখন আমার মিলিয়ন ডলারের জিজ্ঞাস্য হল যে --
ঐ কাফেলা তো কোন যুদ্ব ফেরৎ কাফেলা নয় । সোয়ালক্ষ হজ্ব ফেরৎ সাহাবা , তাও আবার মহানবী (সাঃ) স্বয়ং নিজে নেতৃত্ব দি্চ্ছেন । ঐ কাফেলায় কোন অমুসলিম বা শত্রুপক্ষ কেউই ছিল না । সকলেই সম্মানীত সাহাবা ।
এই রকম মহা পবিত্র একটা কাফেলায় মহানবী (সাঃ) , যে কোন বার্তা ঘোষনা দিতে কেনইবা ভীত হবেন ?
কেনইবা আল্লাহকে নির্ভয়ের গ্যারান্টি দিতে হবে ?
কেনইবা আল্লাহ অবাধ্য জনতা ও কাফের এই শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন ?
তাহলে কি , সরিষার মধ্যেই ভূত !
অর্থাৎ হজ্ব ফেরৎ কাফেলার মধ্যে মুমিন সাহাবীদের সাথে সাথে মুনাফিক ভয়ংকর হিংস্র প্রকৃতির সাহাবাগনও ছিলেন ?

সুপ্রিয় পাঠক ,
মহান আল্লাহ কখনই অহেতুক কোন কথা বলেন না ।
আল্লাহর এই ধারনা যে অমূলক ছিল না , আসুন তা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নিন --

গাদীর এ খুম প্রান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কতৃক নির্বাচিত বেলায়েতে আলী তথা বার ইমামত ধারা ঘোষিত হবার প্রায় বছর খানেক পরে ২৮শে সফর ১১ হিজরিতে মহানবী (সাঃ) ওফাত বা ইন্তেকাল করেন ।

মহানবী (সাঃ) ওফাতের পূর্বে গাদীর এ খুমের ঘোষিত নির্দেশটাকে নিজ হাতে খাতায় লিখে দিতে চাইলেন । কিন্ত -
১) - ওঁনাকে খাতা কলম দেয়া হল না ,
২) - খাতা কলম ওঁনার সামনেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হল ,
৩) - নবীজী (সাঃ) প্রচন্ড অসন্তষ্ট হয়ে ওদেরকে তৎক্ষনাত ঘর থেকে বের করে দিলেন ,
৪) - নবীজী (সাঃ) এর ওফাতের পরে নবীকন্যার পবিত্র গৃহে অগ্নিসংযোগ করা হল ,
৫) - জ্বলন্ত দরজাতে প্রচন্ড জোরে লাথি মেরে নবীকন্যাকে গর্ভস্থ সন্তানসহ হত্যা করা হল ,
৬) - ইমাম আলী (আঃ) এর গলায় দঁড়ি বেঁধে ১ম খলীফা বাহাদুরের দরবারে নিয়ে যাওয়া হল ,
৭) - নবীকন্যার বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি বাগে ফাদাক অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর করে ছিনিয়ে নেয়া হল ,
৮) - ইমাম আলী (আঃ) কে রমজান মাসে মসজিদে সেজদারত অবস্থায় বিষাক্ত তলোয়ার দিয়ে হত্যা করা হল ,
৯) - ইমাম হাসান (আঃ) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হল ,
১০) - ইমাম হাসান (আঃ) এর কাফনে অজস্র তীর ছোঁড়া হল যাতে করে প্রিয় নানার পাশে দাফন না করতে পারে ,
১১) - ইমাম হোসেন (আঃ) কে কারবালা প্রান্তরে ৭২ জন সহ জবাই করে হত্যা করা হল ,
১২) - ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হল ------------
ধারাবাহিক ভাবে সর্বমোট ১১ জন পবিত্র ইমাম (আঃ) গনকে তলোয়ার ,খাবার , ফল ও পানিতে বিষ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ।

এঁনারা কিন্ত কোন সাধারন পর্যায়ের মুসলমান জনগন ছিলেন না ।
মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত পুতঃপবিত্রতার গ্যারান্টিযুক্ত ইমাম ও মহানবীর (সাঃ) আহলে বাইত ।
এই পবিত্র ১১ জন ইমামগন ওনাদের সময়কার ক্ষমতায় আসীন খলীফাগনের প্রত্যক্ষ মদদে খুন হয়েছেন ।
এই ১১ জন পবিত্র ইমামগনের হত্যার বিচার আজ পর্যন্ত কোন খলীফা বা কেউই করে নি ।

উল্টা কুখ্যাত কুলাঙ্গার হত্যাকারীকে ইদানীং রাঃআনহু বলা হচ্ছে

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল যে , এই জঘন্য ভয়াবহ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধগুলো অন্য কোন ননমুসলিম করার সাহস পায় নি । প্রত্যেক ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছে নবীর উম্মত বলে দাবিদারগনের হাতে !

পাঠক ,
একবার ভাবুন , রোজ কেয়ামতের ময়দানে আমি বা আপনি কোন মুখ নিয়ে নবীজীর (সাঃ) সামনে দাঁড়াব ?

কারন আমরা জ্ঞানে হোক বা অজান্তে হোক - প্রত্যেকেই কিন্ত বনু সকীফার অনুসরনকারী গর্বিত মুসলমান ।

আপনি হয়তোবা জানেন না যে , উপরোক্ত প্রতিটা ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বনু সকীফাওয়ালাদের হাতে । এবং আমি সহ আপনি - আমরা সবাই এই বনু সকীফার অনুসরনকৃত মুসলমান ।

পৃথিবীতে যারা গাদীর এ খুমের অনুসরনকৃত মুমিন মুসলমান তাদেরকে আমরা হরহামেশা কাফের , রাফেজী , বাতিল ইত্যাদি বলে গালিগালাজ ও ঘৃনা করি ।

পৃথিবীতে ইসলাম টোটাল দুই প্রকার -
১)- বনু সকীফা ইসলাম
২)- গাদীর এ খুম ইসলাম ।

দুঃখের বিষয় যে , আমরা একটি বারও খুজে দেখলাম না যে , জন্ম থেকেই বনু সকীফার নেতৃত্বে আছেন স্বয়ং ঈবলীশ মহোদয় ।
আর গাদীর এ খুম হচ্ছে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক নির্বাচিত ও অনুমোদিত ইসলাম ।

হায় , বনু সকীফার মুসলমান ! আমরা আর কতকাল নিদ্রামগ্ন থাকিব ???

আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজহুম ।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: