Friday, May 20, 2016

শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত পালন করা কি যায়েজ ?

শবে বরাত-শব অর্থ রাত বা রজনী আর বরাত অর্থ ভাগ্য। দুশব্দের একত্রে অর্থ হবে, ভাগ্য-রজনী। শাবান মাসের মধ্য রজনী অর্থাৎ ১৫ই শাবান শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত পালিত হয়।

শবে বরাতের বা শাবান এর মধ্যরাতের ফযিলত কি কিঃ

শবে বরাতের দলিল দেখুন  শবে বরাত শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
১.আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন:
এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে জান্নাতুল বাকী  গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন ? আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন।
তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
‘মহান আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।’
হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮),
তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২) বর্ণনা করে বলেন,
অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন।

২. আবু মূসা আল আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),
এবং তাবরানী তার মুজামুল কাবীর (২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

৩. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যখন শাবানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন।

এসকল সূত্রেই অনেক হাদীসবিদ শাবানের মধ্যরাতের ফযীলত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেনঃ

ইমাম আহমাদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
[ইবনে তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]

ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
[ইমাম ইবনে রাজাব তার লাতায়েফুল মাআরিফ গ্রন্থে (পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
[ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১,১৩৩,১৩৪]।

ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
[তার লাতায়েফুল মাআরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য]।

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
[ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্‌সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯]

উপরোক্ত মুহাদ্দিসগনসহ আরো অনেকে এ রাত্রিকে ফযীলতের রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন।

শবে বরাতের বিরোধীতা করে কারা ?
প্রচলিত সুন্নি মাযহাবের সকল ভাইয়েরা শবে বরাত পালন করলেও সৌদি আরব দখলকারী ওহাবী সম্প্রদায় শবে বরাত পালনকে বিদআত বলে প্রচার করে থাকে, তারা বলে থাকেন সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ট এসেছে যে,
আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষাংশে - শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮] ওহাবী ভাইয়েরা বলেন আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতেই আহবান করেন শবে বরাতের রাতকে গুরুত্বপুর্ন হিসেবে উনারা মানতে রাজী নন উনার কারণ হিসেবে দেখান যে বুখারী কিংবা মুসলিম শরীফে কেন  শবে বরাতের দলীল নেই। মুলত ওহাবী ভাইয়েরা নিজেদের পছন্দমত হাদিস সহীহ নাকি জ্বাল তা নির্ধারন করে থাকেন তাদের মনমত না হলেই বিদআত ও শীরক বলে গলা ফাটিয়ে থাকেন।

আল্লাহ কতৃক মনোনীত রাসুল সাঃ এর পরবর্তী ১২ ইমাম গণের মধ্যে ১২তম ইমাম (ইমাম মাহদী আঃ) ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শাবান জন্মগ্রহন করেন এ উপলক্ষে শীয়া মুসলিম ভাইয়েরা এইদিনটি নফল ইবাদাত এবং ইসলামী আলোচনার মাধ্যমে উদযাপন করে থাকেন।

শাবানের মধ্যরাত্রির পরদিন কি রোযা রাখা যাবে ?
উত্তরঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন।
(এর জন্য দেখুনঃ
বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০,
মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১,
মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮,
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১,
সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭,
সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং ৬৫৭)।

সে হিসাবে যদি কেউ শাবান মাসে রোযা রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের যে কোন দিন রোযা রাখা জায়েয বা সওয়াবের কাজ। তবে রোজা রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু শাবান মাসে রোজা রেখেছিলেন তাকে অনুসরন করে রোযা রাখা হচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরন করে চলার তৌফিক দিন। আমীন।
(আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ)

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: