ব্যাবিলনে আসার পর বনি ইসরাইলিদের ৭০ বছর কেটে গেছে। যুবক উজায়ের আ.একবার চাইলেন তিনি তার পূর্বপুরুষদের আদি বাসস্থান জেরুসালেম দেখতে যাবেন। তাই তিনি জেরুসালেমের উদ্দেশে রওনা হন। বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুসারে এ সময় তার বয়স ছিলো ৪০ বছর। তিনি এসে দেখতে পান পুরো জেরুসালেম এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। একটা বাড়ি-ঘরও আস্ত নেই। চারদিকে ছড়ানো ছিটানো ইট-পাথর, মানুষের হাড়-গোড় মাটির সাথে মিশে আছে। তিনি তার পরিবারের লোকদের কাছে যে জাঁকজমকপূর্ণ জেরুসালেমের কথা শুনেছিলেন, তার সঙ্গে এই জেরুসালেমের কোনো মিলই খুঁজে পেলেন না।
নবি উজায়ের [আ.]-এর পূর্বেকার কিতাব জাবুরে জেরুসালেমের ব্যাপারে উল্লেখ ছিলো-‘কেননা খোদা সিয়োনের পরিত্রাণ করবেন ও ইহুদার নগরসমূহ গাঁথবেন; লোকে সেখানে বাস করবে ও অধিকার পাবে।’ তিনি এটা ভেবে হয়রান হয়ে গেলেন, আল্লাহ তায়ালা এই বিরানভূমিকে কীভাবে আবার আবাদ করবেন? আল্লাহ তায়ালা তার নবির ঈমানকে পূর্ণতা দিতেই তাকে একটি পরীক্ষার মধ্যে ফেললেন।
নবি উজায়ের আ. জেরুসালেমে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। নিজের গাধাটিকে একটি ছোট গাছের সঙ্গে বেঁধে তার ছায়ায় বসে আহার সেরে ঘুমিয়ে পড়লেন।
এ বিষয়টি কুরআনের সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন-
‘অথবা সেই লোকটির উপমা (চিন্তা করো) যে একটি জনপদের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলো।সে বলেছিলো, ‘মৃত্যুর পর কিভাবে আল্লাহ্ এটাকে জীবিত করবেন?’ অতঃপর আল্লাহ্ তাকে একশ বছর মৃত রাখলেন, তারপর (পুনরায়) তাকে জীবিত করলেন।আল্লাহ্ বললেন, ‘(এরূপ অবস্থায়) তুমি কতো কাল অবস্থান করলে?’ সে বলেছিলো, ‘(সম্ভবত) একদিন বা দিনের কিছু অংশ।’ আল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘না, বরং তুমি একশ বছর অবস্থান করেছো। তোমার খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি লক্ষ্ করো, সেগুলোতে দীর্ঘদিনের অবস্থানের কোনো চিহ্ন নেই এবং তোমার গাধাটির দিকে তাকাও। তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করবো সে কারণে ভালোভাবে তাকাও (গাধাটির) অস্থিগুলোর প্রতি। কিভাবে সেগুলো আমি সংযোজিত করি এবং মাংস দ্বারা ঢেকে দেই।’ যখন তাকে তা সুস্পষ্টরূপে দেখানো হলো, সে বলেছিলো, ‘আমি জানি যে সকল বিষয়ের উপরে আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান।’
(সুরা বাকারাহ, আয়াত ২৫৯)
এই ঘটনার পর তার ঈমান পূর্ণ হয় এবং অনেক ঐতিহাসিক লিখেছেন, এর পরপরই বনি ইসরাইলের প্রতি তাকে আল্লাহ নবি হিসেবে মনোনীত করেন। যা হোক, ১০০ বছর পর জীবিত হয়ে তিনি দেখতে পান জেরুসালেম নগরী আবার আবাদ হয়েছে। সেখানে লোকজন সুরম্য বসতি গড়ে তুলেছে। নগরীটি পূর্বের চেয়ে যেন আরও বেশি জৌলুশপূর্ণ হয়েছে। তিনি এসব দেখে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন এবং নিজের দেশ ব্যাবিলনে ফিরে আসেন। কিন্তু ব্যাবিলনে ফিরে দেখেন, তার বাড়ি-ঘর আর আগের মতো নেই এবং সেখানের কোনো অধিবাসীকে তিনি যেমন চিনতে পারছেন না, তেমনি তারাও তাকে চিনতে পারছে না।অবশেষে উজায়ের আ.-এর এক ছেলে, যার বয়স তখন ১১০ বছরের অধিক, সে তার পিতার জন্মতিলক দেখে তাকে চিনতে পারে। যদিও পুত্রের চেয়ে পিতার বয়স তখন প্রায় ৭০ বছর কম ছিলো।
উজায়ের [আ.] তার মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবনের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলে ব্যাবিলনের ইসরাইলিরা তার পুনরুজ্জীবনকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ মনে করতে থাকে এবং তাকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে প্রচার করতে থাকে।
এ বিষয়ে আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
‘আবার ইহুদিরা বলে উজায়ের নাকি আল্লাহর পুত্র, আর খৃস্টানরা বলে মসিহ হচ্ছে আল্লাহর পুত্র। এসব হলো ওদের উদ্ভট কথাবার্তা যা ওদের মুখেই শোনা যায়। তারা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের পাদ্রী-পুরোহিতদেরকেই পালনকর্তা প্রভুর আসনে বসিয়ে রেখেছে। ওরা তো চায় নিজেদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে ফেলতে। (সুরা তওবা, আয়াত ৩০-৩২)
সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে তাবারি, উইকিপিডিয়া
হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: