Sunday, August 16, 2015

কোথায় আছে নবি মুসার [আ.] রহস্যময় অলৌকিক সেই সিন্দুক?

কোথায় আছে নবি মুসার [আ.] রহস্যময় অলৌকিক সেই সিন্দুক

 কোথায় আছে সেই রহস্যময় অলৌকিক সিন্দুক? কেন তাকে হাজার বছর ধরেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অলৌকিক সিন্দুক’ বা ‘আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট’। আরবিতে এবং কুরআনের ভাষায়- ‘তাবুত’। রহস্যময় এই সিন্দুকের ব্যাপারে মুসলিম, ইহুদি, খৃস্টান- তিনটি ধর্মের অনুসারীরাই একমত যে, এ সিন্দুকটির অস্তিত্ব আছে এবং এটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। আল্লাহর পক্ষ থেকে রহস্যময় এ সিন্দুকটি বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে প্রদান করেছিলেন তাদের নবি হজরত মুসা [আ.]। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় আছে সেই রহস্যময় অলৌকিক সিন্দুক? কেন তাকে হাজার বছর ধরেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? প্রতি শতাব্দীতে হাজারও রহস্যভেদী মানুষ সেই সিন্দুকটির খোঁজ করেছেন, কিন্তু পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি।

এখনও একদল রহস্যসন্ধানী লোক সিন্দুকটি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
খৃস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে নবি মুসার মৃত্যুর পর তার সান্নিধ্যধন্য নবি ইউশা ইবনে নুন সিন্দুকটির তত্ত্বাবধান করতেন। তার মৃত্যুর পর বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের পুরোহিতগণ এটি দেখাশোনা করতেন। কেননা এই সিন্দুকের অলৌকিক ক্ষমতা ছিলো বলে তারা বিশ্বাস করতো। তারা বিশ্বাস করতো, এই সিন্দুক সঙ্গে থাকলে কেউ তাদের পরাজিত করতে পারবে না এবং তারা সবার ওপর বিজয় অর্জন করবে।

বেশ কিছু বছর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় সিন্দুকটি তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা সিন্দুকটি নিয়ে বিপাকে পড়ে। কেননা যেখানেই সেটি রাখা হতো তার আশেপাশের লোকজনের মধ্যে মহামারী প্লেগ ছড়িয়ে পড়তো। এভাবে বেশ কিছুদিন তারা সিন্দুকটিকে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করে, একই ফল পাওয়া যায়। অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। উপায়ন্তর না দেখে তারা সিন্দুকটিকে একটি গরুর গাড়িতে করে অজানার উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়।
এরপর এটি বাদশাহ তালুতের হস্তগত হয়। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন। কুরআনে তার এবং সিন্দুকটির বর্ণনা এসেছে-
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آَيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِمَّا تَرَكَ آَلُ مُوسَى وَآَلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘বনি-ইসরাইলদেরকে তাদের নবি আরো বললেন,তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে যাতে থাকবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের প্রশান্তি, আর তাতে থাকবে মুসা, হারুন এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৮)

এরপর সিন্দুকটি হজরত দাউদ [আ.]-এর হাতে আসে এবং তিনি তার পুত্র হজরত সোলায়মান [আ.]-কে এর তত্ত্বাবধানকারী নিযুক্ত করেন। হজরত সোলায়মান [আ.] আল্লাহর নির্দেশে জেরুসালেমে তার উপাসনালয় নির্মাণের সময় তাতে সিন্দুকটি স্থাপন করেন এবং সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেন। তার মৃত্যুর অনেক বছর পর ব্যাবিলনীয়রা জেরুসালেম দখল করে নেয় এবং তার উপাসনালয়টি ধ্বংস করে দেয়। এরপর থেকে সিন্দুকটির সঠিক অবস্থান আর জানা যায়নি। কিছু ইতিহাসগ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যাবিলনীয়রা জেরুসালেমের অন্যান্য সম্পদের সাথে সিন্দুকটিও নিয়ে যায়। কেউ বলছেন, ওই সময় আল্লাহর আদেশে সিন্দুকটি বেহেশতে স্থানান্তরিত করা হয়।
এরপর সিন্দুকটির অবস্থান সম্পর্কে অনেক গুজব শোনা যায়।

শোনা যায়, সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির সময় ইউরোপিয়ান নাইট টেম্পলার যোদ্ধারা সিন্দুকটি জেরুসালেম থেকে পুনরুদ্ধার করে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ মত দেন, এটি ইউথিওপিয়ার অর্থোডক্স চার্চে সুরক্ষিত আছে। কারো কারো মতে, এটি ভ্যাটিকান চার্চের গোপন কুঠুরিতে সুরক্ষিত আছে। কিন্তু এসবই গুজব যার কোনো প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর সিন্দুকটিও পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় বস্তু হিসেবেই মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে।
[সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট]
হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: