Friday, October 9, 2015

কো'রআনের কিছু আয়াত অস্পষ্ট, সত্যিই কি তাই ?

'তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক/অস্পষ্ট [মুতাশাবিহাত]। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপক/
অস্পষ্টগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেন : আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।' [3:7]
.
কো'রআনের কিছু অংশ রূপক/অস্পষ্ট আর সেগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না? সত্যিই কি তাই? কো'রআন দেওয়া হয়েছে কাদের জন্য? মানুষের জন্য? যদি মানুষের জন্য কো'রআন দেওয়া হয়ে থাকে মানুষ কেন বুঝতে পারবে না? কো'রআন মানুষের জন্য সাবলীল, সুন্দর ও সহজভাবে দেওয়া হয়েছে। কো'রআন বুঝার জন্য আন্তরিক আগ্রহ আর জ্ঞান প্রয়োগ দরকার। এ প্রসঙ্গে কো'রআনের আয়াত গুলিই দেখুন :
.
কো'রআন সুস্পষ্ট ও সহজ :
.
'এ হল মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং পথ নির্দেশ ও উপদেশ - ধর্মপরায়নদের জন্য।' [3:138]
.
'হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এতে [কো'রআনে] প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রত্যেক বিষয় সুস্পষ্ট করা হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।' [44:1-6]
.
'আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা [প্রাসংগিক] প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদ।' [16:89]
.
'আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?’ [54:17,22,32,40]
.
বুদ্ধিমানরাই কো'রআন অনুধাবন করে :
.
[39:18] যারা মনোনিবেশ সহকারে সব ধরনের কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।
.
[38:29] এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।
.
মুতাশাবিহাত :
.
শাবাহা শব্দের অর্থ একই ধরনের [Similar]। এখান থেকেই এসেছে মুতাশাবিহাত। শব্দ হিসেবে সমার্থক শব্দ ধরা যায়। যার একাধিক অর্থ আছে। যেমন : বাংলায় আছে হাত পাকা, এখানে বুঝায় না যে হাতটা কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে। বরং বুঝায় দক্ষ। এরকম কিছু শব্দ আরবিতেও আছে। সেগুলোর প্রকৃত অর্থ নিতে হবে। সেটাই বা কিভাবে নেব? সেটা নিতে হবে কো'রআনের অন্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। শাবাহা মানে যেহেতু একই ধরনের তাই মুতাশাবিহাত মানে সামঞ্জস্যশীলও বলা যেতে পারে।
.
কো'রআনের কিছু অংশ কি মানুষের বুঝা অসম্ভব?
.
কো'রআনে বুঝা যাবে না এমন কোনও আয়াত নেই, নেই কোনও কথা। কো'রআন বোধগম্য মানে পুরু কো'রআনই বোধগম্য। তাহলে [3:7] আয়াতের শেষের দিকে কেন বলা হয়েছে এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না? এটা অনুবাদের বিরাম চিহ্নের বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই না। কো'রআন মানুষের জন্য নাজিল হয়েছে। সেখানে মানুষের দুর্বোধ্য কিছু থাকা বাস্তবসম্মত নয়। তবে এটা ঠিক কো'রআন বুঝতে হলে আমাদের জ্ঞানের প্রয়োগ করতে হবে।
.
প্রকৃত অনুবাদ তুলে ধরার চেষ্টা করা হল :
.
[3:7] তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিদর্শন, সেগুলোই কিতাবের সার অংশ। আর অন্যগুলো বহুঅর্থবোধক/সামঞ্জস্যশীল। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার বহুঅর্থবোধক/সামঞ্জস্যশীলগুলোর [বহু অর্থের ভুল অর্থগুলি/অন্য আয়াতের সাথে অসামঞ্জস্যশীল অর্থ গ্রহন করে]। আর সেগুলোর অর্থ আল্লাহ আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা ব্যতীত কেউ জানে না । তারা বলেন : আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : রাশাদ খলিফা

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: