Friday, October 9, 2015

বুখারি শরিফে হজরত আলীর বিরুদ্বে জাল হাদিস

“আহনাফ ইবনে কায়েস(রাঃ) বলেন, এক সময় আমি হজরত আলী(রাঃ) সাহাযার্থে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে আবু বাকরা(রাঃ) এর সাথে দেখা হলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ?বললাম,হযরত আলীর সাহায্যার্থে (সিফফিনের যুদ্বে) যাচ্ছি। এতদশ্রবন তিনি আমাকে বললেন, বাড়ি ফিরে যাও। আমি রাসুলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি, যখন ২জন মুসলমান পরস্পর মুখোমুখি হয়, তখন তাঁদের হত্যাকারী ও হত্যাকৃ্ত উভয়েই জাহান্নামী হয়। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হত্যাকারী তো স্বীয় অপরাধের কারনে জাহান্নামী হবে। তবে হত্যাকৃ্ত ব্যক্তির অপরাধ কি? উত্তরে তিনি বললেন, হত্যাকৃ্ত ব্যক্তি তো হত্যাকারীকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট ছিল।“
(বুখারী শরিফ,১ম অধ্যায়,প্রকাশকঃ সোলায়মান বুক ডিপো, ৩৮,বাংলাবাজার,ঢাকা।)

সম্মানিত পাঠক, আমরা জানি যে, মুয়াবিয়া ছিলেন একজন সর্বজনস্বীকৃ্ত মুনাফিক। তার পিতা আবু সুফিয়ান রাসুলের(সাঃ) বিরুদ্বে ২২ বছরে ২৬টি যুদ্ব করেছিলেন। মুয়াবিয়ার মা হেন্দা রাসুলের(সাঃ) চাচা হামজার (রাঃ) কলিজা ভক্ষনকারিনী। মুয়াবিয়ার কুপুত্র বেহেস্তের সর্দার ইমাম হুসাইনের হত্যাকারী। এই মুনাফিক মুয়াবিয়া সিফিফিনের যুদ্বের জন্য দায়ী-ইতিহাস তাই বলে।সুতরাং তাঁকে জান্নাতি মুসলমান ভাবার কোন অবকাশ নাই। আর উপরে উল্লেখিত হাদিসে হজরত আলীকে ও জাহান্নামি বানান হল, যার সম্পর্কে রাসুলের কয়েকটি হাদিস নিম্নরুপঃ

রাসুল(সাঃ) বলেছেন, “ সুসংবাদ! হে আলী,নিশ্চয়ই তুমি এবং তোমার অনুসারিগন(শিয়াগন) জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
(সুত্রঃ 
তাফসীরে তাবারী,খন্ড-৩০,পাতা-১৪৭;

মুসনাদে হাম্বাল,খন্ড-৫,পাতা-২৮;
তাফসীরে দুররে মানসুর,খন্ড-৬,পাতা-১২২;
তারিখে বাগদাদ,খন্ড-১২,পাতা-২৮৯;
তারিখে দামেস্ক (ইবনে আসাকির,খন্ড-২,পাতা-৪৪২;হাদিস# ৯৫১;
আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খন্ড-২,পাতা-৬৫৫;
নুরুল আবসার(শিবলাঞ্জী),পাতা-৭১,১০২;
য়া নাবিউল মুয়াদ্দাহ,পাতা-৬২;
তাতহিরাতুল খাওয়াস(ইবনে জাওজী আল হানাফী),পাতা-১৮;
তাফসীরে ফাতহুল কাদীর(আল শাওকানী),খন্ড-৫,পাতা-৪৭৭;
তাফসীরে রুহুল মায়ানী আলুসী,খন্ড-৩০,পাতা-২০৭;
ফারাইদ সিমতাইন(ইবনে শাব্বাঘ),খন্ড-১,পাতা-১৫৬;

মানাকিব(ইবনে আল মাগাজেলী),পাতা-১১৩;
মুখতাসার তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৩,পাতা-১০;
মিয়ান আল ইতিদাল,খন্ড-২,পাতা-৩১৩;
আরজাহুল মাতালেব,পাতা-১২২,১২৩,৮৭৭(উর্দু),
ফুসুল আল মাহিম্মা,পাতা-১২২;
কিফায়াতুল তালেব,পাতা ১১৯;

হুলিয়াতুল আউলিয়া,খন্ড-৪,পাতা৩২৯;

আল তাবরানী মুজাম আল কাবির,খন্ড-১,পাতা-৩১৯; 
আল হায়সামী মাজমা আল জাওয়াইদ,খন্ড-১০,পাতা-২১-২২;
ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৪২,পাতা-৩৩১;
আল হায়সামী আল সাওয়ায়িক আল মুহারিকা,পাতা-২৪৭;
মুয়াদ্দাতুল কুরবা,পাতা-৯২;
াফসীরে ফাতহুল বায়ান,খন্ড-১০,পাতা-২২৩(নবাব সিদ্দিক হাসান খ ভুপালী,আহলে হাদিস);
তাফসীরে ফাতহে কাদীর,খন্ড-৫,পাতা-৬৪,৬২৪;
সাওয়ারেক আল মুহারেকা( ইবনে হাজার মাকিক),পাতা-৯৬;
শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,খন্ড-২,পাতা-৩৫৬;

নুজহাত আল মাজালিস,খন্ড-২,পাতা-১৮৩;
মানাকেব(আল খাওয়ারেজমী),খন্ড-৬,পাতা-৬৩।

মুয়াবিয়া কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী সাহাবি ও তাবেঈনদেরকে ইমাম আলীর বিপক্ষে জাল হাদিস তৈরী করার জন্য টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিল। যেমনঃ সাহাবীদের মধ্যে আবু হুরাইরা, আমর ইবনুল আ’স ও মুগিরা ইবনে শোবাহ এবং তাবেঈনদের মধ্যে উরওয়াতু ইবনে যুবাইর।
ইমাম আলীর শাহাদাতের পর আবু হুরাইরা কুফাতে গিয়েছিল। আর সেখানে গিয়ে সে ( মুয়াবিয়ার ক্ষমতাবলে) আলীর বিপক্ষে জাল হাদিস তৈরী করে রাসুলের(সাঃ) উদ্বৃতি দিয়ে বিভিন্ন আশ্চর্য ধরনের বিষয়কে উল্লেখ করতে লাগলো। রাতের পর রাত ‘বাবুল কিনদাহ’ কুফার মসজিদে বসে বসে লোকজনের মধ্যে তার তৈরীকৃত জাল হাদিস বর্ননা করতো এবং তাদেরকে বিপথে নিয়ে যেত।

এক রাতে তার ঐ সভায় বুদ্বিমান এক যুবক অংশ নেয়। কিছু সময় তার অযৌক্তিক আলোচনা শোনার পর তাকে উদ্দেশ্য করে বললঃ ‘তোমাকে আল্লাহর কসম! তুমি কি শুনেছ যে, রাসুল(সাঃ) আলীর ব্যাপারে এই দোয়াটি করেছিলেনঃ – ‘ হে আল্লাহ! তাকেই তুমি ভালবাসো যে আলীকে ভালবাসবে আর তাকেই তুমি শত্রু ভাবো যে আলীর সাথে শত্রুতা করবে’।

আবু হুরাইরা দেখলো যে, এই মুতাওয়াতির হাদিসটিকে অস্বীকার করতে পারবে না। তাই সে বললঃ আল্লহকে সাক্ষী রাখছি,হ্যাঁ আমি এই হাদিসটি শুনেছি।

ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন যুবকটি বললোঃ সুতরাং আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি যে, তুমি আলীর বন্দ্বুদের সাথে শত্রুতা কর আর তাঁর শত্রুদের সাথে বন্দ্বুত্ব। অতএব,তুমি রাসুলের(সাঃ) অভিশাপ প্রাপ্ত। তারপর ঐ যুবক ঐ সভা থেকে বেরিয়ে গেল
( শারহে নাহজুল বালাগাহ-ইবনে আবিল হাদিদ,খন্ড-৪,পাতা ৬৩ ও ৬৮)।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: