কাতর কন্ঠে অনুনয় করে শিশুটি-"আর খাবনা মা"।
"ছি বাবা, না খেলে আল্লাহ কত গুনাহ দিবেন জানো? বাকি ভাতগুলো এই এত বড় বড় সাপ বিচ্ছু হয়ে কামড় দিবে। খাও বাবা খাও" - মোক্ষম ঔষধ দিলেন মা। তার মাও তাকে এইভাবেই খাওয়াতেন কিনা।
মুখ বিরস করে খায় শুভ। মনে মনে ভাবে- আল্লাহ এত শাস্তি দেয় কেন?
কয়েক বছর পরের কথা। শুভর হুজুর এসেছে। "শুভ পড়তে যাও বাবা"- মা ডাকেন।
"পেট ব্যথা মা, যাবোনা"- তৎক্ষণাৎ উত্তর রেডী।
"গত সপ্তাহেও তুমি বলেছ পেট ব্যথা শুভ। জানোনা মিথ্যে বললে আল্লাহ কত গুনাহ দেন? যাও পড়তে যাও বলছি"
একটুও ভাল লাগেনা শুভর। নামায পড়তেও একটুও ভাল লাগেনা। কি হবে এইসব করে? সূরা দু'আ কিছুই তো আমি বুঝিনা, কিসব মুখস্থ কথা বলি প্রতিদিন। কই, আমার ক্লাসে যে হিন্দু খ্রীষ্টান ছেলেরা আছে, ওরাও তো নামাজ পড়েনা, আল্লাহ তো ওদেরকে গুনাহ আর আজাব দিচ্ছে না। আমি একা কি দোষ করলাম? আর হুজুর খালি মারে কেন আমাকে কিছু জিগেশ করলেই? ওনাকে আমার একটুও ভাল লাগেনা।
একটি শিশু এক টুকরো কাদামাটি। ধর্ম মানে ভয়- এই ধারনা দিয়ে দিয়ে বড় করা হয় শুভকে। কোনদিনও সে ধর্মের বিষয়গুলোকে ভালবাসে বড় হয় না। তার মনে শত শত প্রশ্ন, সে সেগুলোর উত্তর পায়না। টুকটাক বাবা মার চাপে পড়ে যেটুকুও সে ধর্ম মানত, সেটার মধ্যে কোন আন্তরিকতা বা নিজে থেকে করার ইচ্ছা ছিলনা, আল্লাহ শাস্তি দিবেন এই ভয়ে ভয়ে কিছুটা করত, এর বেশি কিছু না। তিলে তিলে তার মনের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতে থাকে। পড়াশুনার জন্য বিদেশে চলে যাওয়া মাত্র সে ধর্ম কে ছেড়ে দেয় ও শুধুমাত্র মুসলিম নামধারী একজন ধর্মহীন মানুষে পরিনত হয়। সে পৃথিবীতে যতগুলো বংশধর রেখে যায় কাউকেই সে ধর্ম শিখাতে পারে না, কারন সে নিজেই শেখেনি, কারন তার বাবা-মাও তাকে শেখাতে পারেনি। এই চক্র চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। পৃথিবীতে বাড়তে থাকে ধর্মহীন নামক একদন জীবন-পূজারী মানুষের সংখ্যা।
শুভ একটি কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু এমন হাজার হাজার শুভ ছড়িয়ে আছে আমাদের সমাজে। ইসলাম ধর্মের প্রতি আমাদের অনীহার সবচেয়ে বড়ো কারনগুলোর একটি হল আল্লাহর প্রতি ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে আমরা ছোটবেলা থেকে বড়ো হই। কিছু মুখস্থ আরবি দু'আ, সূরা, আর রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে যখন একটি মুসলিম শিশুকে বড় করা হয় তখন আস্তে আস্তে এই ব্যাপারগুলো তার কাছে একঘেয়ে হয়ে যায়, সে এগুলোতে কোন আকর্ষন অনুভব করে না। কেন সে একটা কাজ দিনের মধ্যে ৫ বার করবে যদি জিনিসটা তার ভালই না লাগে ? আর সাথে সাথে ভয় দেখানো ত চলছেই- এটা কর, নয়ত এত গুনাহ, ওটা কর, নয়ত এত আজাব।
খুব কম বাচ্চাই আল্লাহকে ভালবেসে বড় হয়। যারা পারে, তারা সৌভাগ্যবান। যারা পারেনা, এর পিছে বাবা-মা সহ আমাদের সমাজব্যবস্থা, অনেক কিছু দায়ী। আপনি যদি আপনার পরিচিত মানুষদের জিগেস করেন তারা নিয়মিত নামায পড়ে কিনা, দেখবেন তারা বেশিরভাগই পড়ে না। যদি আপনি তাদের কারন জিগেস করেন, দেখবেন আসলে তাদের কোন কারন নেই, তারা এমনিই পড়ে না ! যদিও মুসলিম শিশু হিসেবে ছোটবেলা থেকে সবাইকে নামাজ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
এই লেখাটি লেখা হয়েছে যাতে আল্লাহর যেই অসীম দয়াগুলোর মধ্যে আমরা বাস করি সারাক্ষন, কিন্তু তা বুঝিনা, সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় যুক্তি ও উদাহরন দিয়ে তুলে ধরার। আর্টিকেলটি সব বয়সী মানুষের পড়ার উপযোগী করে লেখা হয়েছে। আল্লাহ অসীম ও তাঁর দয়াও অসীম, কাজেই আমার মতন ভুলত্রুটিতে ভরা ক্ষুদ্র সৃষ্টির পক্ষে কখনই সেটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না, আগেই নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে নিচ্ছি।
প্রথমেই আপনাকে দিয়ে শুরু করি-
আপনার নাম মুহাম্মদ, আব্দুল আজীজ, আয়িশা, যেটাই হোক না কেন, আপনি নিজেই আল্লাহর একটা বড় দয়া। পৃথিবী, মহাকাশ, সৌরজগত, ছায়াপথ, এমনকি মহাজগত সৃষ্টির আগেও মহাজ্ঞানী ও অচিন্ত্য কল্পনীয় আল্লাহ জানতেন যে তিনি আপনাকে সৃষ্টি করবেন। আপনার জন্য আল্লাহ বিশেষভাবে চিন্তা করেছেন, আপনার জন্য আল্লাহ সময় দিয়েছেন, আপনাকে আল্লাহ গভীর যত্নে ও ভালবাসায়(মানুষের ভালবাসা যার সাথে তুলনার কোন যোগ্য নয়) সৃষ্টি করেছেন। আপনার ভিতরে তাঁর তৈরী করা পবিত্র আত্মাকে বিশেষভাবে অকল্পনীয় কোন উপায়ে ঢুকিয়েছেন((Chapter 38:71-72 Quran)। মহান আল্লাহ্ আপনাকে নিয়ে চিন্তা করেছেন, এই ব্যাপারটিই কি অনেক বেশি নয়?
আপনাকে আল্লাহ্ একটা মানুষ হিসেবে বানিয়েছেন। আপনাকে সৃষ্টির সেরা জীব করেছেন। নাও করতে পারতেন। মনে করেন আমি একটা ছাগল। আপনি আমাকে বেধে রেখেছেন, একটু পর আপনি আমাকে জবাই করবেন। আমার চোখের সামনে আপনি আমার মায়ের গলা কেটে চামড়া ছিলা শুরু করলেন। আমার খুব খারাপ লাগছে, এই মা আমাকে দুধ খাইয়ে বড় করেছে। এরপর আমার পালা, কিন্তু আমি জানি আমার কোন কথাই আপনার কাছে একটা ব্যা এর বেশি কিছু না। ইস আমি যদি ছাগল না হয়ে একটা মানুষ হতাম।
দুটি মানুষের মাধ্যমে তিনি আপনাকে পৃথিবীতে এনেছেন। কোটি কোটি শুক্রানুর মধ্যে শুধুমাত্র আপনার তথ্য যেই একটিমাত্র শুক্রানুতে ছিল, সেটিকেই তিনি স্থাপন করেছেন আপনার প্রানপ্রিয় মায়ের "রাহমা"-র মধ্যে(আরবি রাহমা= জরায়ু)| কোটি কোটির মধ্যে অন্য যেকোন একটি শুক্রানু থেকেও আপনার জন্ম হতে পারতনা, কারন তাহলে সেটি কখনই 'আপনি" হতেন না, সেটি হত আপনার অন্য কোন ভাই বা বোন। আপনি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন আপনার অস্তিত্তের কোন প্রয়োজন ছিলনা, কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ চিন্তা করেছেন তিনি আপনাকে সৃষ্টি করবেন। এবং তিনি করেছেন, এবং তিনি প্রতি মূহুর্তে আপনার যত্ন নিচ্ছেন। দেশের প্রেসিডেন্ট আপনার কথা জানেনা, আপনি বেচে আছেন না মরে গেছেন এটা নিয়ে তার মাথাব্যাথা নাই, সেখানে আল্লাহ্ এই মূহুর্তে আপনি সহ পৃথিবীর ভিতরে ও বাইরে যত প্রান আছে সবার দেখা শুনা করছেন। এবং একসাথে। প্রত্যেকের প্রত্যেক চাহিদা তিনি মিটাচ্ছেন।
প্রথম কয়েক সপ্তাহ আপনি প্রানহীন ছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে আপনার হৃৎপিণ্ড তৈরী হল, আপনার মধ্যে প্রানের স্পন্দন ধরা পড়ল। আপনার বাবা-মা খুশিতে আত্মহারা হলেন যে আপনার হার্টবিট শুনা যাচ্ছে।
আপনি জীবিত জন্ম নাই নিতে পারতেন। আপনি মৃত শিশু হতে পারতেন। আপনি বিকলাঙ্গ , পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, দুই মাথাওয়ালা, ভয়ঙ্কর কোন রোগ নিয়ে আসতে পারতেন। এরকম শিশু কোটি কোটি আছে, খুজলেই পাবেন। আল্লাহ আপনাকে আসতে দিয়েছেন পৃথিবীতে। দুটি মানুষ তাদের দিনরাত ফেলে আপনাকে পেলেপুষে বড় করে তুলেছেন।
আপনি আসার আগে থেকেই আপনার সকল রিযক আল্লাহ রিজার্ভ করে রেখেছেন। রিযক মানে শুধু খাদ্য নয়। খাদ্য, বাসস্থান, পড়াশুনা, ক্যারিয়ার, সঙ্গী, মেধা, স্বাস্থ্য- প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহ আপনার জন্য ঠিক করে রেখেছেন। আপনি কোন দেশে কোন অঞ্চলে থাকবেন, কোথায় পড়বেন, কি পড়বেন, জীবনে কি করবেন, সব কিছুই আপনার জন্য আগে থেকে ঠিক করে রাখা আছে।
আপনি মিনিটে ৬ লিটার অক্সিজেন নেন। দিনে ৮৬৪০ লিটার অক্সিজেন আপনার একার বরাদ্দ আছে। চিন্তা করেছেন কখনো? এক সিলিন্ডার অক্সিজেনের দাম কত জানেন?
আপনার শরীরটা কত দামি জানেন আপনি? আসলে পয়সা দিয়ে এটা আপনি বের করতে পারবেন না, এটা অমূল্য একটা জিনিস। আপনার হার্ট দিনে ১ লক্ষ বার পাম্প করে , আপনার একেকটি কীডনী দিনে ১৫০০ লিটার রক্তকে ফিল্টার করে। আপনার চোখের ধারেকাছেও কোন ঘোড়ার ডিম এসএলআর ক্যামেরা নেই। আপনার মস্তিষ্কের ধারেকাছেও কোন সুপার কম্পিউটার নেই। আপনি শুকনো পোড়ামাটির তৈরী(55:14), কিন্তু আল্লাহ আপনাকে নিখুতভাবে ডিজাইন করে দিয়েছেন।
একটা অন্ধ মানুষের পাশে যদি বসেন, আপনার খারাপ লাগবে। একটা মানুষ আজীবন কিছুই দেখবে না , তার কষ্ট আপনি বুঝবেন না, আমিও না। চিন্তা করুন, আপনার দুটি চোখ কালকে থেকে নেই। দেখুন কেমন লাগে। অনেকেই আজকে অন্ধ হয়ে গেছে পৃথিবীতে, তাইনা? আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করেছেন, তাইনা?
ধর্মীয় একটা গল্প-
একজন ধার্মিক লোক ছিল। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করল- আল্লাহ আমি একদম একাকী আপনার ইবাদত করতে চাই, আপনি ব্যবস্থা করে দিন। আল্লাহ তাকে বললেন একটা পাহাড়ে চলে যেতে। সেখানে একটা ডালিম গাছ থাকবে, প্রতিদিন সেখানে একটি করে ডালিম হবে, সেটা খেলে তার আর খিদে লাগবেনা।আর পাশে পানির ঝরনার ব্যবস্থা করে দিলেন।
সেই লোক ৫০০ বছর ইবাদত করল। এরপর সে মারা গেল। মৃত্যুর পর তাকে জিগেশ করা হল- তুমি অনেক ইবাদত করেছিলে, আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দিবেন। আচ্ছা বলতো, এই যে তুমি জান্নাত পাচ্ছ, এটা কি আল্লাহর দয়ায়, নাকি তোমার ইবাদতের জন্যে?
লোকটি উত্তর দিল- কেন, আমার ইবাদতের জন্যে।
আল্লাহ বললেন- আচ্ছা, তুমি তাই মনে কর? আসো মেপে দেখাই। একদিকে থাকবে তুমি আমাকে কি দিয়েছ, আরেকদিকে থাকবে আমি তোমাকে কি দিয়েছি।
পাল্লার একদিকে তোলা হল তার সব ইবাদত। আরেকদিকে তোলা হল আল্লাহ্ তাকে জীবনে যা যা দিয়েছেন। দেখা গেল, তার ৫০০ বছরের ইবাদতের মূল্য হল তার চোখের দৃষ্টিশক্তি।
আল্লাহ্ বললেন- তুমি চোখের মূল্য দিয়েছ আমাকে। আর যা যা অগনিত জিনিস আমি তোমাকে দিয়েছি, তার মুল্য তো নেই তোমার কাছে। চল এখন জাহান্নামে,সেখানে কিছুদিন থেকে মূল্য পরিশোধ করে আস।
লোকটি ভুল বুঝতে পারল। সে মাফ চাইল। অসীম দয়ালু আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দিলেন।
বিশ্বাস করাটা বড়ো ব্যাপার না। গল্পের শিক্ষাটাই মূল বিষয়।
আপনি কি সুস্থ সবল নীরোগ? তাহলে মনে রাখবেন, শুধু এটার-ই মূল্য আপনি জীবনেও শোধ করতে পারবেন না। আপনি যদি মনে করেন, একটা স্বাভাবিক শরীর পাওয়া খুব সাধারন একটা ব্যাপার, আপনি যেকোন সরকারী হাসপাতালে একদিন ঘুরে আসুন। বা আপনার পরিচিত কেউ যদি থাকে যার ২টি কিডনী নস্ট, বা যে স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে আছে, তাকে যেয়ে জিগেস করে আসুন তার কেমন লাগছে। ২টি ভাল কিডনী পেতে তার কেমন লাগবে তাকে জিগেশ করুন।
আপনার যদি বাবা-মা, পরিবার, একটা বাসা, গাড়ি, মোবাইল, ইন্টারনেট, স্কুল কলেজ বিশবিদ্যালয়ের পড়াশুনা, বাসায় একটা ফ্রীজ, ফ্রীজে বাড়তি খাদ্য---এই জিনিশগুলোর সব বা কিছু অংশও থাকে, আপনি লিখে রাখতে পারেন যে আপনার মতন সৌভাগ্য নিয়ে খুব বেশি মানুষ এই মূহুর্তে নেই। আপনি পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের সবচে ধনী মানুষদের একজন। দুনিয়ায় অনেক জায়গা আছে যেখানে বিশুদ্ধ পানি, কারেন্ট, গ্যাস এখনো মানুষের স্বপ্ন। বেশিদূর যেতে হবে না, আমাদের দেশেই অনেক যায়গা আছে এমন।
আপনি ভাবতে পারেন এগুলো আপনি অর্জন করেছেন। কিন্তু আসলে এগুলো আল্লাহ্ আপনাকে দিয়েছেন বলেই আপনি এগুলোর মালিক হতে পেরেছেন। আপনি হয়ত ৫০ হাজার টাকা বেতন পান। আপনার মতন মেধার, যোগ্যতার, একি পড়াশুনার অনেক অনেক মানুষ আছে যারা ২০ হাজার টাকা বেতন্ পায়। আল্লাহ্ আপনাকে দিয়েছেন। এবং তার চেয়েও বড় কথা হল এই জিনিসগুলো দিয়ে আল্লাহ্ আপনার কিছু পরীক্ষা নিচ্ছেন।
আপনি শেষ কবে না খেয়ে থেকেছেন? রোজা না, কারন রোজা রেখে আপনি জানেন সন্ধ্যা হলেই আপনি প্রচুর খাবেন। শেষ কবে আপনি সামান্য কয়েকটা ভাতের জন্য মানুষের কাছে হাত পেতেছেন ? শেষ কবে খাবার না পেয়ে ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে গিয়েছেন এবং সকালে খাবার মিলবে কিনা তারও কোন গ্যারান্টি নাই? সম্ভবত জীবনেও না। কিন্তু এই শহরেই এমন অনেক অনেক মানুষ আছে।
আপনি, আমি, আমরা সবাই ( যারা নেট এ ঢুকে এই লেখা পড়তে পারেন) কোন এক অজ্ঞাত কারনে অত্যন্ত ভাগ্যবান। অথচ একটা রিকশাওয়ালার কোন দোষ নেই যে সে গরীব। আল্লাহ্ আপনাকে আমাকে অত্যন্ত বেশি দয়া করেছেন যদিও আমরা এটার প্রতিদান দেওয়ার বা এই ক্ষমতাগুলোকে ব্যবহার করার কোন চেষ্টা করছি না। আমার এই দুই পয়সার আর্টিকেল দিয়ে আমি কিছুই পরিবর্তন করতে পারবনা। কোন জবাবদিহি আমি করতে পারবনা যদি আল্লাহ্ আমাকে পাকড়াও করেন। আপনিও না।
আপনি একজন জন্মগত মুসলিম। পৃথিবীতে আরো ৫০০ কোটি মানুষ আছে যারা এই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায় নাই। এটা তাদের দোষ না যে তারা অন্য ধর্মের। আপনি ছোট থেকেই ইসলাম পেয়েছেন, ইসলামের মধ্যে বড় হয়েছেন। আপনাকে ৩০ বছর পর নিজের ধর্ম ছেড়ে সমগ্র পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে ইসলাম গ্রহন করতে হয়নি। মুসলিম হবার কারনে আপনার খ্রীষ্টান বাবা আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি বা আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে চলে যায়নি। আপনি সত্য ধর্মের মধ্যেই আছেন।
আপনি মুহাম্মদ(স) এর উম্মাহ। যিনি শেষ নবী, যিনি নবীদের মধ্যে স্রেষ্ট, আপনি তার আদর্শের মানুষ। আপনার কাছে একটা সম্পুর্ন বই কু'রান এসেছে। আপনাকে হাজার হাজার বছরের মূর্তি, বা আগুন পূজা ছেড়ে আল্লাহকে নতুন করে বিশ্বাস করতে হয়নি।
আদম(আ) এর প্রতি দয়াঃ
আদম(আ) একটা ভুল করেছিলেন। আল্লাহ্ তাকে একটিমাত্র কাজ করতে মানা করেছিলেন, আদম(আ) সেই কাজটিই করেছিলেন।আদম (আ) নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেন। আল্লাহ্ সাথে সাথে মাফ করে দিলেন। নিজেই মাফ চাওয়ার দোয়া শিখিয়ে দিলেন।
এই সেই দোয়া-
"রাব্বান যালামনা আনফুসানা ওয়া ঈল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খসিরীন"
(They said, "Our Lord, we have wronged ourselves, and if You do not forgive us and have mercy upon us, we will surely be among the losers.")
আদম(আ) এর পুত্র কাবিলের প্রতি আল্লাহর দয়া-
আদম(আ) এর প্রথম যমজ সন্তান ছিল কাবিল ও তার বোন। দ্বিতীয় যমজ সন্তান ছিল হাবিল ও তার বোন । তারা বড় হলে আল্লাহ্ নির্দেশ দিলেন প্রত্যেক ভাইকে অপর ভাইয়ের বোনের সাথে বিয়ে দিতে। কাবিল হাবিলের বোন কে বিয়ে করতে রাজী হলনা কারন হাবিলের বোন তার আপন বোনের মতন সুন্দরী ছিলনা। ঈর্ষায় ক্রোধে সে একদিন হাবিলকে পাথর দিয়ে বাড়ি মেরে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি ছিল প্রথম মানব হত্যা।
হত্যা করে কাবিল বুঝতে পারল সে কি ভয়ঙ্কর একটি অন্যায় করেছে। ভাইয়ের লাশ পিঠে নিয়ে ঘুরতে লাগল সে উদ্দেশ্যহীন হয়ে। তীব্র অনুশোচনা ও গ্লানিতে পুড়ে যাচ্ছিল সে। দয়াময় আল্লাহ্ খুনীকেও দয়া করলেন। মৃত মানুষকে কবর দেয়া শিখিয়ে দিলেন। দুটি কাক পাঠালেন তার সামনে। একটি আরেকটিকে মেরে ফেলল। জীবিত কাকটি মাটিতে ঠুকরে একটি গর্ত করে মৃত কাকটিকে ফেলে বালু দিয়ে ঢেকে দিল।
শয়তান কে দয়া-
শয়তান আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি আল্লাহকে অমান্য করেছিল। কাজটা অকল্পনীয় রকম অবাধ্যতার পরিচয় দেয়। আপনি সরাসরি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন , আল্লাহ্ আপনাকে একটা হুকুম দিলেন, আপনি সেটা "করব না" বলতে পারবেন?
আল্লাহ শয়তানকে সেখানেই, সেই মুহুর্তেই অনন্তকালের জন্য জাহান্নামে ঢুকাতে পারতেন। আল্লাহ্ তা করলেন না। শয়তানকে বের করে দিলেন জান্নাত থেকে। শয়তান আল্লাহর কাছে আর্জি জানাল- " আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত আয়ু দাও আর এমন ব্যবস্থা করে দাও যেন আমি মানুষের মনের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে পারি"
আল্লাহ্ তাও দিলেন তাকে !!
শয়তান যাওয়ার আগে বলল- "আল্লাহ্, এই আদমের কারনে আজকে আমি অভিশপ্ত আর বিতাড়িত। আমিও মানুষকে ছাড়ব না। আমি তাদের কাছে আসব, সামনে ও পিছন থেকে, ডান ও বাম থেকে। তুমি দেখবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ-ই তোমার কৃতজ্ঞ না"
আল্লাহ্ বললেন- "বের হয়ে যাও অভিশপ্ত শয়তান! মানুষের মধ্যে যেই তোমার অনুসারী হবে, তোমাদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ন করব।"
পৃথিবীর ডিজাইন-
পৃথিবীটাকে আল্লাহ্ এত চমৎকার করে ডিজাইন করেছেন আমাদের বসবাসের জন্যে সেগুলো আমরা সবাই চাক্ষুস দেখি প্রতিদিন। দিনের বেলা আলো আর উষ্ণতা প্রয়োজন, তাপশক্তি প্রয়োজন, একটা সূর্য আছে সব প্রয়োজন মিটানোর জন্য। রাত্রেবেলা শীতলতা আর কোমলতা প্রয়োজন, সূর্য ডুবে যায়, ডিমলাইট হিসেবে একটা কোমল চাঁদ উঠে, আকাশ ভর্তি করে তারা ও নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে, নীরবে সাক্ষী দেয় ক্ষমতাধর কোন স্রষ্টার।
যদি আল্লাহ্ শুধুই প্রচন্ড রাগী শাস্তিদাতা কোন সত্তা হতেন, তাহলে প্রতিটা দিন-ই আমাদের শুরু হত আতঙ্ক নিয়ে, ভয় নিয়ে, যে আরো একটা দিন বাচঁব কিনা, আজকে নতুন কি কি "গজব" পড়বে আমাদের উপর। আমরা সারাদিন আল্লাহকে অস্বীকার ও অমান্য করতেই থাকি, করতেই থাকি, কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের উপর দয়া করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন।
আমরা ঢাকায় থাকি। ঢাকা বিশ্বের এক নম্বর বসবাসের অযোগ্য শহর। আপনি আমি আমরা সবাই এই শহরে বহুদিন ধরে আছি। আমরা কি মরে যাচ্ছি? প্রতিদিন কি আপনার দম আটকিয়ে আসে বা আপনার কি মনে হয় "আজকের দিনটা বাচার মতন অক্সিজেন পাব তো?"
ঢাকায় ২ কোটির উপর মানুষ। যেই পরিমান অক্সিজেন প্রয়োজন এই শহরকে বিশুদ্ধ করার মতন, সেই পরিমান গাছ ঢাকায় নাই। কিন্তু তারপরো আমরা শাসকষ্টে মরে যাচ্ছি না। কখনো পেপারে দেখেছেন কি- "শ্বাস নিতে না পেরে যুবকের মৃত্যু" ??
আমরাও বেচে আছি। ভাল-মন্দ খেয়ে, সুখে, দুখে বেচে আছি। কিছু না কিছু খাবার সবার জুটে এখানে, না খেয়ে কেউ মরে যাচ্ছে না। হ্যা, কেউ হয়ত আজকে খায়নি বা রাতে খেতে পারবেনা, কিন্তু বেচে থাকার মতন খাবার আল্লাহ্ সবাইকে দিচ্ছেন। কমলাপুর স্টেশনের ঐ ভিক্ষুকটাও হয়ত একমুঠ ভাত আর ডাল খাবে। কিন্তু খাবে।
ঢাকার খাবারে অনেক ভেজাল, অনেক রঙ, অনেক কেমিক্যাল তাইনা? বিশ্বে প্রতিদিন ১৬ হাজার বাচ্চা মারা যায় না খেতে পেয়ে। তাদের কাছে আমাদের ফেলে দেওয়া বাসি পচা খাবার গুলোর দাম কয়েকটী জীবনের সমান।
ঢাকা খুব খারাপ তাইনা ? আপনাকে কি আমি বলব সিরিয়া গাযা ফিলিস্তিনের কথা? আজকে রাতে অনেক মানুষ-ই সেখানে মারা যাবে, তারা আর কখনই তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে না। ঢাকা শহরে বের হলে এখনো কেউ আপনাকে গুলি করে মেরে ফেলে না তাইনা?
আল্লাহ্ কতটা দয়ালু বা সহনশীল? ঃ-
নূহ(আ) এর জাতিকে আল্লাহ্ ৯৫০ বছর সময় দিয়েছিলেন ঈমান আনার জন্য। একটা মানুষ ৯৫০ বছর ধরে একি কথা বলে গেছেন, এটা আমি আপনি উপলব্ধি করতে পারবনা। সাড়ে নয়শ বছর পর আল্লাহ্ তাদের উপর থেকে দয়া তুলে নেন।
এটা কি শাস্তি ছিল নাকি ন্যায়বিচার ছিল? এটা ছিল "ন্যায়বিচার" . আল্লাহ্ প্রতিশোধপরায়ন কোন সত্তা নন। নীচু স্তরের অপবিত্র কোন অনূভূতি আল্লাহর মধ্যে নেই। আমরা যেটাকে শাস্তি বলি, সেটা আসলে হচ্ছে "ন্যায়বিচার". মানুষের ক্ষেত্রে বিচার ন্যায় বা অন্যায় হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্ কখনো অন্যায় করতে পারেন না, তাঁর বিচার সম্পূর্ন ন্যায় এবং পক্ষপাতবিহীন।
শেষ বিচারের দিনেও যারা জাহান্নামে ঢুকবে, এটাও ন্যায়বিচার। একটা মানুষকে পুরো একটা জীবন দেয়া হয়েছিল সত্য জানার জন্য, সে তা জানে নাই, সে সারা জীবন কাটিয়েছে ভোগ বিলাসের পিছে, আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, সে জাহান্নামে যাবে, এটা সে ডিজার্ভ করে।
মূসা(আ) এর সময়ের কথা। প্রচন্ড অনাবৃষ্টি। বনী ঈসরাইল এর লোকেরা মূসা(আ) কে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলল। মূসা(আ) দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাকে বললেন- এই গোত্রে এমন একজন আছে যে আল্লাহকে বিশ্বাস করেনা। সে গোত্র থেকে বের না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি বৃষ্টি দিবনা"।
মুসা(আ) সবাইকে ডাকলেন। সবার সামনে এই কথা বললেন। বললেন অবিশ্বাসী মানুষ যে আছে সে যেন মানুষের মঙ্গলের জন্য উঠে বের হয়ে যায়।
কেউ বের হল না। তিনি আবার বললেন। কেউ বের হল না।
একটু পর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। সবাই বিস্মিত। মূসা(আ) বিস্মিত। তিনি আবার গেলেন আল্লাহর কাছে। আল্লাহ্ তাকে বললেন-
" মূসা! লোকটি আমার কাছে তওবা করে বলেছে- ' আল্লাহ্ আমাকে এভাবে লজ্জিত করবেন না, আমি মাফ চাচ্ছি।' আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি।"
মূসা(আ) কৌতুহল বোধ করলেন। তিনি লোকটির পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ্ বললেন-
"যার পরিচয় আমি কাউকে দেইনি, তুমি কিভাবে আশা কর তোমাকে আমি তার পরিচয় দেব? তার পরিচয় আমার আর তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ"।
আল্লাহ্ ও জীবরীল (আ) ও আপনি-
মুহাম্মদ(স) প্রথমবার জীবরীল (আ) কে দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পাখাগুলো ছিল মুহাম্মদ(স) এর পুরো দৃষ্টিসীমা জুড়ে। জীবরীল (আ) ফেরেশতাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত। আল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ন কাজগুলো তিনি করেন। যত গ্রন্থের যত ওহী এসেছে, সবগুলো নিয়ে এসেছেন জীবরীল (আ). তাঁর দায়িত্ত গুলো অত্যন্ত সম্মানের।
আল্লাহ্ যখন তাঁর কোন বান্দাকে ভালবাসেন, কারন হয়ত সে আল্লাহর ইবাদত করছে বা যেকোন ভাল কাজ করছে, তখন আল্লাহ্ জীবরীল (আ) কে ডাকেন। ডেকে এই আদেশ দেন-
"জীবরীল ! আমি আল্লাহ্, আমি সাকিবকে ( সাকিব আপনি) ভালবাসি। অতএব, তুমিও তাকে ভালবাস এবং সবাই তাকে ভালবাসবে।"
জীবরীল (আ) ফেরেশতাদের কাছে আসেন। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ফেরেশতাদের তিনি বলেন-
"সাকিবকে আল্লাহ্ ভালবাসেন, অতএব আমি তাকে ভালবাসি। অতএব তোমরা এবং পৃথিবীতে যত ফেরেশতা আছ, সবাই তাকে ভালবাস।"
আল্লাহ্ যে এই কাজটি করেন, তাঁর কোন দরকার ছিলনা এটি করার। তিনি এটা নাই জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সবাইকে জানান। পুরো মহাজগত কে তিনি জানিয়ে দেন, যে তিনি আল্লাহ্, মহাজগতের মালিক, তিনি আপনাকে ভালবাসেন।
IF ALLAH LOVES YOU RIGHT NOW, WHAT MORE DO YOU WANT ???!!!
THERE IS NO WAY HE WILL PUNISH SOMEONE WHOM HE LOVES. NO WAY.
এটি সহীহ বুখারীর একটি হাদিস। এর আরো অর্ধেক অংশ আছে, সেটা হচ্ছে যখন আল্লাহ্ কাউকে ঘৃনা করেন। বুঝতেই পারছেন বাকিটা।
এই মুহূর্তে দুটি সম্ভাবনা আছে আল্লাহ্ আপনাকে ভালবাসেন নাকি ঘৃনা করেন। আপনি ভাল জানেন আপনার কি অবস্থা।
একটা বুড়ী কোনদিন-ও কোন ভাল কাজ করে নাই। খালি একবার সে জীবনে একটা পিপাসায় কাতর কুকুরকে কুয়া থেকে পানি তুলে পান করিয়েছিল।
আল্লাহ্ তার এই কাজটা এতই ভালবাসলেন, তাকে পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দিয়ে দিলেন।
ফেরাউন(ফারাও) এই পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক ছিল। সে নিজেকে আল্লাহ্ দাবি করত। সে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ছেলেশিশুদেরকে হত্যা করত, আর মেয়েশিশুদেরকে বাচিয়ে রাখত, কেন মেয়েদের বাচিয়ে রাখত না বললেও চলবে।
আল্লাহ্ তাকেও দয়া করেছিলেন। আল্লাহ্ মূসা(আ) কে যখন ফেরাউনের কাছে পাঠালেন , মূসা(আ) কে ওহী নাযিল করে বলে দিলেন যেন উনি ফেরাউনের সাথে নম্র ভদ্র সুন্দরভাবে আচরন করেন। আল্লাহর অসীম দয়া ফেরাউন নিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
একদিন মুহাম্মদ(স) হাশরের মাঠের বর্ননা দিতে গিয়ে হাসছিলেন। সাহাবারা বললেন- রাসুলুল্লাহ আপনি তো কখনো কেয়ামতের কথায় হাসেন নাই আগে।
তিনি বললেন- আমাকে হাশরের ময়দানের একটি দৃশ্য দেখানো হল। আমার উম্মাহর মধ্যে একদল লোক থাকবে যাদের পাপ অনেক বেশি। সেদিন তারা হাসবে। অন্যান্য মানুষ তাদেরকে জিগেস করবে- কি ব্যাপার, তোমরা এই ভয়ঙ্কর দিনে হাসছ কেন? তারা উত্তরে বলবে- আমরা অনেক পাপ করেছিলাম। কিন্তু আমরা তওবা করেছিলাম। আমরা আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছিলাম। আজকে সেই সবগুলোকে পাপকে আল্লাহ্ পূন্য বানিয়ে দিয়েছেন। সেই পাপগুলোর জন্যই আজকে আমরা জান্নাতে যাচ্ছি।
কু'রানে ফুজ্জার(পাপী) শব্দটি ৩ বার এসেছে, আবরার(পূন্যবান) শব্দটি এসেছে তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ বার। আযাব শব্দটি এসেছে ১১৭ বার, সোয়াব শব্দটি তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৩৪ বার। যেকোন ভাল কাজের পুরস্কার কে আল্লাহ্ দুইগুন দশগুন হাজারগুন বাড়িয়ে দেন শুধুমাত্র আমাদেরকে দয়া করে। আর একটি খারাপ কাজকে আল্লাহ্ একটি করেই ধরেন। মানুষ একটি ভাল কাজ করা মাত্র ডানকাধের ফেরেশতা সেটি লিখে ফেলেন। আর একটি খারাপ কাজ করলে বাম কাধের ফেরেশতা সেটি লেখেন না, অপেক্ষা করেন, যদি মানুষটি ভুল বুঝতে পারেন, তিনি সেটা আর লেখেন না ।
আল্লাহ্ অসীম দয়ালু। কিন্তু সবার জন্য না। যে এই দয়া চেয়ে নিবে না, আল্লাহ্ তাকে দিবেন না। যে চাইবে, আল্লাহ্ তাকে দয়া করতেই থাকবেন, করতেই থাকবেন।
আল্লাহ্ যদি সবাইকে দয়া নাই করতেন, তাহলে গুটিকয়েক মুসলিম বাদে অমুসলিম এবং ধর্মহীন মুসলিম কেউই আমরা বেচে থাকতাম না কারন দয়া পাবার মতন তেমন কোন কাজ আমরা করি না। আল্লাহ্ কি অমুসলিমদের না খাইয়ে রেখেছেন পৃথিবীতে? যেসব মানুষ মনে করে আরেকটা মানুষ হিন্দু বলে তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া তার ইসলাম ধর্মের অধিকার, তারা কি এটা জানে না যে সে আল্লাহর দয়ার উপর একটা চরম অন্যায় করল? সে কি পার পেয়ে যাবে, এতই সোজা?
জাহাজ দুর্ঘটনায় আপনি মহাসাগরে পড়ে গেছেন। কয়েকদিন প্রানপন চেষ্টা করার পর আপনি দেখলেন, আসলে কোন লাভ নেই, আপনি বাঁচবেন না। খুব আস্তে আস্তে আপনি পানির সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করে দিলেন ও নিজেকে ভাগ্যের হাতে আত্মসমর্পণ করলেন।
আপনি যখন একবার বুঝতে পারবেন, অসীম ক্ষমতাধর দয়ালু আল্লাহ্ আমাদেরকে যা যা দিচ্ছেন, এর বিনিময়ে আমরা তাঁকে কিছুই ফেরত দিতে পারবনা, তখন আপনার হাতে উপায় হল- আল্লাহর কাছে নিজেকে উজাড় করে আত্মসমর্পণ করা ও আল্লাহর কাছে স্বীকার করা-
"আল্লাহ্! আপনার কোন নিয়ামত আমি অস্বীকার করব? আমি জীবনেও আমার সামান্য ইবাদত দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবনা, যদি না আপনি আমাকে দয়া করেন। আমি আপনার দয়া চাই প্রভু। আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। নিশ্চয়ই আপনি অসীম দয়ালু"
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কু'রানের প্রথন সুরার প্রথম শব্দটিই যথেষ্ট।
“আলহামদু লিল্লাহ” . আসুন শব্দটি বিশ্লেষণ করি।
হামদ শব্দটি একটি বিশেষ ধরণের প্রশংসা। আরবিতে সাধারন প্রশংসাকে মাদহ مدح বলা হয়। এছাড়াও সানাআ ثناء অর্থ গুণগান। শুকর شكر অর্থ ধন্যবাদ দেওয়া।
হামদ শব্দটি দিয়ে একি সাথে প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয়, নম্রতা প্রকাশ করা যায়।
আমরা আল্লাহকে শুধু ধন্যবাদ দেই না, বরং আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি কারন তিনি আমাদেরকে যে এত অসীম নিয়ামত দিয়েছেন, যা আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করি—তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর প্রশংসা করার জন্য হামদ সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ।
একটি ফুল সুন্দর, আপনি সেটির প্রশংসা করবেন, কিন্তু সেটির প্রতি আপনি কখনো কৃতজ্ঞ হবেন না। কেউ আপনার একটা উপকার করলে আপনি তাকে ধন্যবাদ দিবেন, কিন্তু সাথে সাথে তার প্রতি ভালবাসা, বিনয়, কৃতজ্ঞতা, নম্রতা, প্রশংসা আপনি করবেন না। একমাত্র আল্লাহর ক্ষেত্রে এই সবকিছু একসাথে আমরা প্রকাশ করি।
আর-রাহমান এর ব্যাখ্যাঃ
প্রথমত, রাহমা-ন এবং রাহি-ম: এই দুটো শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ: দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিতে থাকে। শিশুর জন্য সকল দয়ার উৎস হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ।
রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু, অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারব না।
আল্লাহর দয়াগুলোর প্রতি পূর্নভাবে কৃতজ্ঞ হতে পারলেই ধর্মের প্রতি সে নিজে থেকে অনুভব করা শুরু করতে পারে, তখন তাকে আর গুতিয়ে গুতিয়ে নামাজ পড়তে পাঠাতে হয় না। আপনি যদি কোন মানুষের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ থাকেন কারন একবার সে আপনার জীবন বাঁচিয়েছিল, তাহলে আপনি দেখবেন আপনি সবসময় তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করছেন। একিভাবে আপনি যখন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করবেন নিজের ভেতরে, আপনি দেখবেন বাকি কাজগুলো আপনার জন্য কত বেশি সহজ হয়ে যাচ্ছে। কারন আপনি নিজেও জানেন আপনি কোনভাবেই আল্লাহকে এর মূল্য ফেরত দিতে পারবেন না। এমনকি সেটা আল্লাহও জানেন। কিন্তু বিনিময়ে তিনি আপনাকে আরো ভালবাসবেন, আরো দয়া করবেন। আর সেটাই কি আমরা সবাই চাই না মুসলিম হিসেবে?
এরপর থেকে কিছু খাওয়ার আগে চিন্তা করবেন যে , একটা ভাতের দানা সৃষ্টি করার ক্ষমতাও আমাদের নাই। কোন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতাই আসলে আমাদের নাই। আমরা খালি প্রকৃতির উপাদান গুলো কে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করি, ব্যস এটুকুই। অতএব, কৃতজ্ঞ হওয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।
এই আর্টিকেল এর অর্থ এই না যে, তাহলে আগে জীবনটা উপভোগ করে নেই, একবারে শেষকালে মাফ চেয়ে নিব, কারন আল্লাহ্ তো অসীম দয়ালু। প্রথমত, আপনি জানেননা আপনি কতদিন বাচবেন। দ্বিতীয়ত, আপনি একি সাথে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ আর অবাধ্য হতে পারেননা, এটা একটা আত্মপ্রতারনা ছাড়া আর কিছুই না।
ইসলাম কোন "Taken as Granted" ধর্ম না যে এটা আমি পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছি, কাজেই আমি যা ইচ্ছা করব। পৃথিবীতে অনেক অনেক মানুষ আছে যাদের কাছে ইসলামের বানী নিয়ে গেলে তারা আমাদের চেয়ে হাজার গুন ভাল মুসলিম হতে পারত ( এবং অনেক কনভার্টেড মুসলিম এর প্রমান দিয়ে যাচ্ছে) .আল্লাহর সাথে আমাদের কোন ওয়াদা নাই যে উনি আমাদের জান্নাত দিতে বাধ্য। আমরা আল্লাহকে মানি আর না মানি, আল্লাহর কিছুই যায় আসে না। আমরা যদি নিজের আত্মা কে নিয়ে জুয়া না খেলতে চাই তাহলে আমাদের উচিত এখন থেকেই ইসলাম ধর্মকে শিখে নিজের জীবনে প্রয়োগ করে মানুষকে জানান।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: