দোয়া কবুলের গল্প সিরিজে স্বাগতম, আজ আমরা শুনবো প্রথম পর্বের ঘটনাটি।
দু'আ কবুলের গল্প
সাল ২০১১। একজন সরকারি চাকরিজীবীর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। দেখতে প্রথম সারির রুপসী ছিলাম, অথচ বিয়ের পর কেন যেন গা শিওরে ওঠা অসুস্থ রুগ্ন মেয়েতে পরিনত হয়ে গেলাম। লজ্জায় আর লোকের কথার ভয়ে বাহিরে বের হতাম না। সবার একই কথা, "এমন চেহারা কেন হলো!শরীরের এ অবস্থা কেন হলো?"
স্বামীর সাথে অস্বাভাবিক খারাপ সম্পর্ক। বোনাবুনি হতো না। মিল মহব্বত ছিল না। জীবনটা আমার বিশিয়ে গেছিল এবং তারও বিষিয়ে ওঠেছিল বুঝতে পারতাম। এদিকে শরীরে এক গাদা হরমোনাল সমস্যা।একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি সন্তান ধারনে অক্ষম। শুরু করলাম চিকিৎসা। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি, গাছের শিকর বাকর, স্বপ্নে শেখা চিকিৎসা কিছুই বাদ রাখলাম না। হাজারো সমস্যা আমার। এদিকে স্বাস্থ্যহানি, চেহারার অবস্থা বেহাল, সংসারে অশান্তি, আমার বাবা মার একমাত্র মেয়ে হয়েও কেমন করে যেন তাদের সাথেও সম্পর্কের অবনতি।
সাল ২০১৮। লাখ টাকা চলে গেছে আমার পেছনে।স্বামী হাজার বার সেপারেশন চায়। কিন্তু আমি চাই না।ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। আমার কোন সন্তান নেই, সংসারে শান্তি নেই, নিজের শরীরের কোন উন্নতি নেই, মনে সুখ নেই, বাবা মা দূরে গেছে। আমার কোন কষ্টেই যেন তারা ব্যথিত হন না। মনে হয় তারা বাবা মাই ই নন আমার। অথচ এর কারন পাই না আমি।
একা একা ডিসিশন নিলাম, আর কোন চিকিৎসা নিবো না। বিয়ের বয়স ৮বছর চলছে। কোন সন্তান নেই। আমি এবার আল্লাহ কে ডাকবো পুরোদমে। আগেও নামাজ পড়তাম, তবে ছাড়া ছাড়া। মন দিয়ে নয়।
এবার মন লাগাবো।
শরীরের অবস্থা ভালো না। ওজন ৩৭কেজি। কিছু খেতে পারি না। ভিটামিন আর রুচির ঔষধ খেতে খেতে পেটটা পঁচিয়ে ফেলেছি। আর খাবো না কিছু।
শুরু করলাম দোয়া করা। অনেক বেশি কিছু না কিন্তু। জাস্ট ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতাম। তাহাজ্জুদ পড়তাম আর সারাক্ষন আস্তাগফিরুল্লাহ পড়াতাম।সারাক্ষণ মানে, সারাক্ষন। ওঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, ঘরে বাইরে, রাস্তা ঘাটে সবসময়ই মুখে থাকতো আস্তাগফিরুল্লাহ।
দোয়া কবুলের যা যা নিয়ম ও সময় ছিল তার মধ্যে যা যা সম্ভব হয়েছে আমার দ্বারা তার কোনটা বাদ দিলাম না।
১ঃ তাহাজ্জুদের নামাজে
২ঃ বৃষ্টি চলাকালীন
৩ঃ জমজমের পানি পান এর সময়
৪ঃ আজান ও ইকামাতের মাঝামাঝি টাইমে
৫ঃ সফর কালে
৬ঃ সিজদাহ্ দেওয়া অবস্থায় (নফল নামাজে)
এভাবে দোয়া করতে লাগলাম। যখনি বৃষ্টি হতো, দৌড় দিয়ে ছাদে গিয়ে ভিজতাম আর আকাশের দিকে তাকিয়ে দোয়া করাতাম হাত তুলে। কবিরাহ গুনাহ থেকে নিজেকে দুরে রাখলাম।
আর আমার দোয়ার বিষয় গুলি ছিল----
১ঃ আমার শরীর স্বাস্থ্য যেন ঠিক হয়।
২ঃ আমি যেন সুন্দর ফুটফুটে সুস্থ একজন সন্তান পাই
৩ঃ আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক সুন্দর চাই।
৪ঃ আমার বাবা মার সাথে সব স্বাভাবিক চাই।
৫ঃ মুখে অনের রুচি চাই, যেন অনেক অনেক খাওয়া দাওয়া করতে পারি।
আল্লাহ কে বলতাম, আল্লাহ আমি তো টাকাপয়সা চাচ্ছি না। আমার জীবনের এই ৫টা ইচ্ছা আর চাওয়া আপনি ফুলফিল করে দিন। যদি কোনদিন কোন কাজে আপনাকে খুশি করে থাকি তার বিনিময়ে আমাকে একটা সন্তান দিন এবং এই সন্তানের অছিলায় আমার জীবনের সব জটিলতা আপনি সারিয়ে তুলুন আল্লাহ্।
সংক্ষিপ্ত ভাষায় যদি বলি, আমি আমার সব চাওয়া পেয়েছি। যেখানে ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছিল, সেখানে কোন চিকিৎসা ছাড়াই আল্লাহ আমার গর্ভে সুস্থ একজন পুত্র সন্তান দেন। সাথে বাকি চাওয়া গুলিও পাই আলহামদুলিল্লাহ্।
সাল ২০২০ আগস্ট এর ১৫। আমার কোলে ২২দিনের ফুটফুটে সুস্থ এক পুত্র সন্তান। আমার স্বামীকে দেখলে অবাক হই, এ কি সেই আগের লোক নাকি অন্য নতুন কেউ.....? এতো চেঞ্জ....!!! বাবা মার কথা কি আর বলব, মনে হচ্ছে আমি তাদের পেট থেকে নতুন করে আবার বের হয়েছি। শরীরের সব অসুখ আর জটিলতা কই গেলো জানি না। ওজন আলহামদুলিল্লাহ্ ৫৭কেজি। ৩৭কেজি এখন ইতিহাস। দুনিয়াতে সুখী মানুষ মনে হয় একমাত্র আমিই আলহামদুলিল্লাহ্।
লেখা : কাশফিয়া খোন্দকার উর্মি
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: