কুরআন মাজিদের যেই সূরাটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবায় এবং দুনিয়া বিমুখ হতে সবসময় সাহায্য করে তা হলো সূরাতুল তাকাসুর। এই সূরাটির মাধ্যমেই বুঝা যায় আল্লাহ তার বান্দাদের সম্পর্কে কত ভালোভাবেই না জানেন! যতবার'ই পড়ি আল্লাহর ভয়ে বুক কেঁপে উঠে।আল্লাহু আকবার। আজকে এই সূরার (১,২,৩,৫,৮)আয়াতসমূহের ভাবার্থতা ও গভীরতা মুফাসেরগণ,শায়েখ ও হাদিস এর আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।ওয়ামা তৌফিকী ইল্লা বিল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতা'লা বলেন -
★"অধিক (পার্থিব) সুখ সম্ভোগ লাভের মোহ/প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে (অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে) ভুলিয়ে রেখেছে।"[১]
ব্যাখ্যাঃ দুনিয়ার ধন-সম্পদ, পুত্র-পরিবার, বংশ, সম্মান-মর্যাদা, শক্তি ও কর্তৃত্বের উপকরণ এবং যে সব বিষয়ে এরূপ প্রতিযোগিতা হয় তার সবই উদ্দেশ্য। [সা’দী]
প্রাচুর্যের জন্য মানুষ সাধারণত চেষ্টা করে থাকে এবং অহংকার করে থাকে। হতে পারে সেটা ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, সাহায্য-সহযোগিতাকারী, সৈন্য-সামন্ত, দাস-দাসী, মান-মর্যাদা ইত্যাদি যা-ই মানুষ বেশী পেতে চায় এবং অপরের উপর প্রাধান্য নেয়ার চেষ্টা করে। আর যা দ্বারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকেনা। [সা‘দী] এভাবে মানুষ আল্লাহ্ থেকে, তাঁর মা‘রিফাত থেকে, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন থেকে, তাঁর ভালবাসাকে সবকিছুর ভালবাসার উপর স্থান দেয়া থেকে, যার ইবাদতের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা থেকে গাফেল হয়ে গেছে। [সা‘দী] অনুরূপভাবে তারা আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে গেছে। [বাদায়ে‘উস তাফসীর]
.
.
★"এমনকি (এ অবস্থাতেই) তোমরা কবরে এসে পড়।"[২]
ব্যাখ্যা:আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পৌছে দেখলাম তিনি الْهٰكُمُ التَّكَاثُرُ তেলাওয়াত করে বলছিলেন, “মানুষ বলে, আমার ধন! আমার ধন! অথচ তোমার অংশ তো ততটুকুই যতটুকু তুমি খেয়ে শেষ করে ফেল, অথবা পরিধান করে ছিন্ন করে দাও, অথবা সদকা করে সম্মুখে পাঠিয়ে দাও। এছাড়া যা আছে, তা তোমার হাত থেকে চলে যাবে- তুমি অপরের জন্যে তা ছেড়ে যাবে।” [মুসলিম: ২৯৫৮, তিরমিয়ী: ২৩৪২]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের যদি স্বর্ণে পরিপূর্ণ একটি উপত্যকা থাকে, তবে সে (তাতেই সন্তুষ্ট হবে না; বরং) দুটি উপত্যকা কামনা করবে। তার মুখ তো (কবরের) মাটি ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা ভর্তি করা সম্ভব নয়। [বুখারী-৬৪৩৯,৬৪৪০]
আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রতার ভয় করছিনা। বরং তোমাদের জন্য প্রাচুর্যের ভয় করছি। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের জন্যে ভুল-ভ্ৰান্তি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভয় করছি না, বরং ভয় করছি ইচ্ছাকৃত অন্যায়ের ” [মুসনাদে আহমাদ; ২/৩০৮]
★"(তোমরা যে ভুল ধারণায় ডুবে আছো তা) মোটেই ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে,"[৩]
ব্যাখ্যাঃ তোমরা ভুল ধারণার শিকার হয়েছ। বৈষয়িক সম্পদের এ প্রাচুর্য এবং এর মধ্যে পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হয়ে যাওয়াকেই তোমরা উন্নতি ও সাফল্য মনে করে নিয়েছো। অথচ এটা মোটেই উন্নতি ও সাফল্য নয়। অবশ্যই অতি শীঘ্রই তোমরা এর অশুভ পরিণতি জানতে পারবে। [ইবন কাসীর, আদ্ওয়াউল বায়ান]
★"কখনো নয়! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানে জ্ঞানী হতে"[৫]
ব্যাখ্যাঃ কেয়ামতের হিসাব-নিকাশে তোমরা যদি নিশ্চিত বিশ্বাসী হতে, তবে কখনও প্রাচুর্যের বড়াই করতে না এবং উদাসীন হতে না বরং সাবধান হয়ে যেতে। [সা‘দী]
★"তারপর তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই নিয়ামা'ত সম্পর্কে সেদিন জিজ্ঞেস করা হবে।"[৮]
ব্যাখ্যাঃ তোমরা সবাই কেয়ামতের দিন আল্লাহ্-প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। যে, সেগুলোর শোকর আদায় করেছ কি না, সেগুলোতে আল্লাহর হক আদায় করেছ কি না; নাকি পাপ কাজে ব্যয় করেছ?এতে সকল প্রকার নেয়ামত এসে যায়।[সা‘দী]
“কান, চোখ, হৃদয়- এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” [সূরা আল-ইসরা: ৩৬] এতে মানুষের শ্রবণশক্তি দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয় সম্পর্কিত লাখো নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যেগুলো সে প্রতি মুহুর্তে ব্যবহার করে।
বিভিন্ন হাদীসেও নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে এসেছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দু’টি নেয়ামত এমন আছে যাতে অধিকাংশ মানুষই ঠক খায়। তার একটি হলো, স্বাস্থ্য অপরটি হচ্ছে অবসর সময়।” [বুখারী: ৬৪১২]
পরিশেষে,আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা উপরোক্ত আয়াতসমূহের দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবেই বোঝা যায় যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালার আমাদেরকে কতই না ভালবাসেন।আমরা যাতে দুনিয়াবি মোহে নিজের আখিরাতকে বরবাদ করে জাহান্নামের টিকেট না কিনে ফেলি তাই মহান রাব্বুল আলামিন পরম করুণাময় আমাদের আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছেন।আমরা আর কবে বুঝবো!এখনো কী আমাদের রবের দিকে ফিরে আসার সময় হয় নাই?
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: