আমরা সবচাইতে বেশি উদাসীন আমাদের পরিবার নিয়ে। বাইরের মানুষদের নিয়ে আমরা যতটা বেশি চিন্তিত ঘরের মানুষগুলো আমাদের কাছে ঠিক ততটাই অবহেলিত! আমরা অনেকেই দ্বীনের জ্ঞান অন্যের কাছে বিতরণ করি।বন্ধু-বান্ধব, নিকট আত্নীয় অনেকেই নিয়ে আশা রাখি যে,তারা দ্বীনের কাফেলার সাথী হোক কিন্তু সবার আগে এই চিন্তাটা হওয়া উচিত ছিল আমাদের পরিবারগুলো নিয়ে!
আমার মা হয়ত খুব একটা পর্দা করতে সাচ্চন্দ্যবোধ করেন না, মাহরাম-ননমাহরাম নিয়ে সচেতন নন বললেই চলে, প্রতিবেশীর সাথে "গীবত" এর মত জঘন্য "কবিরাগুনাহ" এ লিপ্ত কিংবা আমার বাবা হয়ত সিগারেটে আসক্ত নয়ত চোখের হেফাজত নিয়ে কোন আক্ষেপ-ই তার নেই, হালাল-হারাম নিয়ে সচেতনতার নামগন্ধও তার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না নতুবা সর্বকনিষ্ঠ সহোদর আজ হয়ত হস্তমৈথনের বিষাক্ত বাতাসে আসক্ত, নাচ-গান, টিভি, গেমস, সিনেমার নায়ক-নায়িকার রোমান্টিকতার ছোঁয়ায় পাগলপারা এমনও হতে পারে যুগের তালে অবৈধ সম্পর্কের নষ্টামিতে জীবনকে সাঁজাতে ব্যতিব্যস্ত!
এসবই আমাদের খুব করে জানা; কিন্তু সেই সৎ সাহস-ই হয়ত আমাদের নেই যে,আমরা এসব অনৈতিক কাজে আওয়াজ তুলব, তাদেরকে সচেতন করব!অথচ বাইরের অনলাইন কিংবা অফলাইনের মানুষগুলো নিয়ে আমাদের আক্ষেপের জুড়ি নেই। পক্ষান্তরে,পরিবারের সদস্যদের জান্নাতের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ব্যাপারে আমরা মোটেও উদ্ধিগ্ন নই। যাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, যাদের সম্পর্কে আমরা বেশি জিজ্ঞাসিত হব তাদের ব্যাপারেই আমরা সবচাইতে বেশি উদাসীন। কিন্তু বাস্তবতা হওয়া উচিত ছিল এর ঠিক উলটো!
প্রতিটা মানুষ যদি আগে পরিবার, পরে সমাজ ও শেষে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে ভাবত তবে পৃথিবীতে এত অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য সৃষ্টি হত না। পারিবারিক নৈতিকতার অবক্ষয় আজ আমাদের সমাজকে কোলষিত করেছে। নিজেকে পরিবর্তনের পর সবার আগে পরিবারকে প্রাধান্য দিন দেখবেন প্রতিটা সমাজই বদলে যাবে,অন্ধকার কেটে গিয়ে উদিত হবে নতুন দিনের নতুন সূর্য।
রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারকে এমনভাবে গড়েছিলেন যে, তার পরিবারের প্রতিটা সদস্যের চরিত্রই ছিল শিক্ষণীয়। কেউ পরিবারের ওপর আঙ্গুল তুলে বলতে পারে নি যে আপনার পরিবারের ওমুক সদস্য এমন! আমাদের ভাই-বোনদের হয়ত পরিপূর্ণ পাব না, মা-বাবাদের প্রতি সম্মানবোধের কারণে হয়ত তাদের সেভাবে শুধরে দিতে পারব না তবে সবার আগে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে হবে।
তাদের "গীবত" নিয়ে সচেতন করার আগে আমি নিজে গীবতের বিষয়ে শতভাগ সচেতন কিনা, পর্দার বুলি আওড়ানোর আগে নিজের চক্ষুকে হেফাজতের কোন অবহেলা আমার মাঝে আছে কিনা, ছোট ভাই-বোনদের শাসনের আগে এটা বিবেচনা করতে হবে তাদের প্রতি আমি স্নেহশীল কিনা; নাকি আদরের তুলনায় বেশি কঠোর, বড় ভাই-বোনদের সচেতন করার আগে ভেবে দেখতে হবে তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল কিনা! কেবল তখনই অন্যদের কাছে আমার নসিহত গ্রহণযোগ্যতা পাবে যখন আমি নিজেকে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারব; এর আগে মোটেও নয়!
রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের কাছে এতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন কারণ তিনি নিজেকে উপযুক্ত প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। তাই,কারো কাছে দ্বীনের জ্ঞান ছুড়েঁ মারার আগে যাচাই করা উচিত আমার এই কথা তাদের ওপর কতটুকু প্রভাব পড়বে? আর যদি আপনি ভেবে থাকেন যে এভাবে এতসব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব না, শুধু নিজে ঠিক থাকলেই হল বাকিরা জাহান্নামে যাক তবে নিশ্চিত জেনে রাখুন আপনার এসব ইবাদতের নূন্যতম গ্রহণযোগ্যতাও আল্লাহর কাছে নেই!
আমি ফাঁকা বুলি ছুড়েঁ দিচ্ছি না কিংবা গায়েবের খবর জানি এমনও নয়! হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি তোমরা অবশ্যই ভাল কাজে মানুষদেরকে নির্দেশ দিবে এবং অবশ্যই অন্যায় কাজে মানুষদেরকে নিষেধ করবে। যদি তা না কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করবেন। এরপর তোমরা তার নিকট প্রার্থনা করলেও তিনি তা কবুল করবেন না।" এছাড়াও রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"প্রত্যেক দায়িত্ববান ব্যক্তিকেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।"
আর নিঃসন্দেহে দায়িত্বের দিক দিয়ে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের ক্ষেত্রে আপনার পরিবার,আপনার সমাজ অধিক হকদার। এই হক আদায় না করে যদি কেবল অনলাইন দুনিয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তবে এটা আপনার পূরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার ব্যাপারে মোটেও সহায়ক হবে না।
অতএব,অন্যের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজের সংশোধন যতটা জরুরী, রবের কাছে নিজের ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য পারিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করাও ততটাই জরুরী!
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: