Saturday, April 11, 2020

প্রেম কি হারাম ?

ক. "তোমাদের রিলেশান টা হারাম। তুমি কি জানো না বিয়ের পূর্ব প্রেম হারাম?"

"না তো,কখনো শুনি নি!"

.

খ. "আপু! এমন ইচ্ছে ছিলো না,কিন্তু এক্সিডেন্টলি….আমরা যদি বিয়ে করে নেই, তবু এই ব্যাভিচারের গুনাহের ভাগ কি বাবা মা পাবে?"

.

প্রথমজন ছিলো আমার ক্লাসমেট যে জানতোই না বিয়ের পূর্ব প্রেম হারাম! দ্বিতীয়জন আমার হারাম সম্পর্ক নিয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্ট পড়ে ইনবক্সে প্রশ্নটা করেছিলেন।

.

আমি প্রথমে এই হারাম প্রেম আপনাকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বা করতে পারে তা নিয়ে বলবো না,পরে বলবো। আগে বলি এটা কিভাবে আপনার কিছু দাবীকে মিথ্যা প্রমাণিত করে বা যাকে/যাদের খুব ভালোবাসেন বলে দাবী করেন সে দাবীটা কতটুকু নড়বড়ে!

.

১. আপনি নিশ্চই দাবী করেন আপনি আপনার বাবা /ভাই কে ভালোবাসেন? এ দাবী মিথ্যে। দাইয়্যুস বলা হয় সেই ব্যক্তিকে যার অধিনস্থ নারীরা (যেমন কন্যা,স্ত্রী,বোন) বেপর্দায় চলাফেরা করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “তিনজন আছেন যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কিয়ামাতের দিন নজর দেবেন না। যে
পিতামাতার অবাধ্য, যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে এবং দাইয়্যুস ব্যক্তি।” [সুনান আন নাসাঈ,হাদিস সাহীহ]

.

ইমাম আহমাদের বর্ণনাকৃত অন্য আরেকটি সাহীহ হাদীসে ‘আল্লাহ নজর দেবেন না’ এর সাথে এসেছে 'দাইয়্যুস' ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [মুসনাদে আহমাদ]।

এটা সম্ভব নয় যে আপনি পর্দা মেইনটেইন করবেন আবার প্রেমও করবেন! যখন আপনি প্রেম করছেন,তখন নিঃসন্দেহে আপনি একজন বেপর্দা নারী বলে গণ্য হবেন,বোরকা নিকাব হিজাব যত যাই কিছু পরেন না কেন!

পর্দা কেবল মাত্র পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়। গাইরে মাহরামের সাথে প্রেমালাপ,ঘুরতে যাওয়া পর্দা বহির্ভূত কাজ। আর যখন আপনি বেপর্দা মেয়েদের দলভূক্ত হচ্ছেন,তখন আপনার পিতা/ভাই হচ্ছেন দাইয়্যুস "আপনার জন্য"।

তাদের প্রতি আপনার ভালোবাসার দাবী মিথ্যে নয় কি? ভালোবাসলে কাউকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া যায়? আপনার বাবার একটি আঙ্গুল মোমের আগুনে দু'মিনিট ধরে পুড়ছে-ইমেজিন করুন তো কেমন লাগে?

.

২. যিনা/ব্যাভিচার শুধু লজ্জাস্থানের দ্বারাই যে হয় তা নয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শোনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর লজ্জাস্থান সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”

( সহিহ বুখারী ও মুসলিম)।

তো আপনি যখন রোমান্টিক কথা বলছেন,জাস্ট হাতটা ধরে হাঁটছেন,আর ভাবছেন "আমি পবিত্র আমিতো যিনা করিনি"--তখন কিন্তু এই হাদীস আপনাকে ব্যাভিচারী বলছে! কেননা হাত ধরলেও হাতের যিনা, কথা বললে মুখের যিনা! আর ফাইনালি সব যিনা মিলে অজান্তেই আপনাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় যাকে কিনা পরে বলেন " এক্সিডেন্টলি...."

.

আপনি যখন এমন যিনায় হাবুডুবু খাচ্ছেন, তখন জানেন কি তা আপনার পিতামাতাকে কিভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সন্তান বিবাহ উপযোগী হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা বিবাহের ব্যবস্থা না করে তবে সন্তান ব্যভিচারে লিপ্ত হলে সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতাও পাপী হবে (মিশকাত)।’ এটা সত্যি যে পিতামাতারা আজকাল তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার কথা ভাবতেই পারেন না! আবার এমনও দেখি পিতামাতা বিয়ে দিতে চায় কিন্তু সন্তান টালবাহানা করে বিভিন্ন অযুহাতে।

কারণ? বয়ফ্রেন্ডের জব হয় নাইতো এখনো! অথবা আরও এসটাবলিশ না হলে প্রেমিকার বাবা কন্যাদানে আপত্তি করবেন। আরও সময় দরকার এসটাবলিশ হওয়ার জন্য! বিয়ে করা সম্ভব না হলে রোজা রাখতে বলা হয়েছে,হারামে আরাম করতে কিন্তু বলা হয়নি! আপনার ব্যাভিচারের জন্য যদি পিতামাতাকেও লাঞ্চিত করা হয়,কেমন লাগবে তখন? আপনি সত্যি তাদের ভালোবাসেন তো?

.

৩. আপনি নিশ্চই দাবী করেন আপনি একজন সভ্য, সামাজিক মানুষ? মিথ্যে দাবী! "আপনার বাবার সাথে আপনার পাশের বাড়ির আন্টির ( যিনি কিনা দুই বাচ্চার মা) প্রেমলীলা চলছে"-কথাটা শুনতে কেমন লাগলো? জঘন্য না? কোন সভ্য,সামাজিকবোধ সম্পন্ন মানুষ কি এমন কাজ করতে পারে? অন্যের হক নষ্ট করতে পারে?

কিন্তু আপনি সেটাই করছেন। হয়তো আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে বিয়েটা আল্লাহ্ দিবেনই না! ভবিষ্যতে সে হয়তো হবে অন্যের স্বামী/স্ত্রী,কিছু বাচ্চার মা/বাবা। তো আপনি কি করছেন? অন্যের (ভবিষ্যতের) বউ/স্বামীর সাথে প্রেম করছেন! আপনি কি করে সিওর হলেন আল্লাহ্ আপনাদের বিয়ে দিবেন?

কেনো চুরি করছেন অন্যের হক্ব? যে ভালোবাসায়, রোম্যান্সে,সময়ে শুধু মাত্রই তার স্ত্রীর/স্বামীর হক্ব আছে তা আপনি ভোগ করছেন! এটা সভ্য, বিবেকবান, রুচিশীল মানুষের কাজ হতে পারে?

.

৪. আপনি নিশ্চই দাবী করেন যে আপনি এই দেশ কে ভালোবাসেন? মিথ্যে দাবী! "কাছের আসার নোংরা গল্প" গুলো যখন প্রকাশ্যে সার্ভ করা হয়,যখন ডাস্টবিনে ঠাঁই হয় নবজাতকদের,রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস "in an open relationship with…" ওয়ালা ফেবু ইউজার যখন অহরহ, তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে যিনা ব্যাভিচার কি পরিমাণ বেড়ে গেছে! এগুলো এখন ফ্যাশন।

হাদীসে উল্লেখিত যেসকল নাফরমানির কারণে ভুমিকম্পসহ প্রাকৃতির দূর্যোগ বেড়ে যায় বলা হয়েছে-তার মধ্যে একটি হলো যিনা! আর এই শাখায় আপনি কি সুন্দর অবদান রেখে চলেছেন। আল্লাহ না করুন এই নাফরমানির জন্য যদি আজাব আসে? প্রাকৃতিক দূর্যোগ বেড়ে যায়? আ'দ,সামুদ জাতিকে কি আমরা ভুলে গেছি? সেই রব ই তো আমাদের রব! ভয় করে না?

আচ্ছা ধরুন বিজ্ঞানীরা বললো অমুক অমুক কাজ করলে দেশের এই এই ক্ষতি হবে। আপনি দেশপ্রেমিক হিসেবে কাজগুলো করবেন নাকি বিরত থাকবেন? তাহলে দেশের উপর আল্লাহ পাকের আজাব আসতে পারে,এমন হারাম জঘন্য কাজগুলো কেন করছেন? আপনি দেশকে সত্যি ভালোবাসেন তো?

৫. "তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী

মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী

নারী,যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে,

কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। যে

ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয় অবিশ্বাস করে,

তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

(সূরা মায়িদা,আয়াত -০৫)।

এই আয়াত স্পষ্ট করে দিলো শুধুমাত্র বিয়ের পরই প্রেম করা যাবে তার আগে না! ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুনতো নিজের মর্যাদাকে কতো নিচে নামিয়ে ফেলছেন! বিয়ের পবিত্র বন্ধন ছাড়াই কোন পুরুষকে বিনোদিত করা কোন শ্রেণীর মেয়েদের কাজ নিশ্চই আপনি জানেন। আপনি কি তাদের সাথে নিজের সাদৃশ্য স্থাপন করছেন না?

আপনি কি বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ? আমাদের তো হওয়ার কথা জান্নাতের সর্দার্নী ফাতিমা রাদ্বীয়াল্লাহু তা'আলা আনহার মতো যিনি মুমূর্ষ অবস্থায়ও চিন্তিত ছিলেন এ নিয়ে যে তার লাশের সাইজ কেউ দেখে কিনা! রাতের আঁধারে তাকে কবর দেয়া হয়!।।

তাঁরা লাশের পর্দা নিয়ে ভাবতেন,কবরের নিষ্প্রাণ মানুষকে সংকোচ করতেন। আর আমরা রুহ ওয়ালা জলজ্যান্ত পর পুরুষ গুলোর কাছে, বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিজেকে সহজলভ্য করে দিচ্ছি! আমরা জান্নাতী নারীদের অনুকরণ না করে নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের অনুকরণ করছি। এই করতে কি দুনিয়ায় আসা? এই আমল নিয়ে কবরে যাবো? সাবধান হই এই সর্বনাশা পাপ হতে। আত্মসম্মানবোধকে জাগ্রত করুন। নিজেকে সহজলভ্য নয় বরং অমূল্য করে গড়ে তুলুন! ভুলে যাবেন না আপনি কার উম্মাহ! একজন মুসলিমাহ আপনি।

.

৬. পিতামাতার অবাধ্য সন্তানের দিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ নজর ই দিবেন না।

আপনার প্যারেন্টস কখনোই এই হারাম প্রেম এ্যালাউ করবেন না। তার মানে নি:সন্দেহে আপনি তাদের অবাধ্যে চলছেন। হাদীসের ভাষ্যমতে আপনি ধ্বংসের দিকে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছেন!

.

৬. আপনি জানেন কি আল্লাহ্'র চেয়ে বেশি কাউকে ভালোবাসা শির্ক? ইভেন বাবা মা কেও আল্লাহ্'র চেয়ে বেশি ভালোবাসা যাবে না!

.

আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ'ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। [ সুরা বাকারা ২:১৬৫ ]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা সর্বাধিক প্রিয় পাত্র হই।(বুখারী ,ঈমান অধ্যায়)

তার মানে দাড়ায় সর্বাধিক ভালোবাসতে হবে আল্লাহ্ কে,নয়তো শির্ক হবে। আর এরপর ভালোবাসতে হবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে,নয়তো ঈমানদার হওয়াই যাবে না। তো আল্লাহ্'র রুল কে অমান্য করে,রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ না করে কি তাঁদের সব চেয়ে বেশি ভালোবাসেন দাবী করতে চান? অবাস্তব কথা।

বলো, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সুরা আলি-ইমরান আয়াত ৩১)

অনুসরণ করছেন তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে? যিনি কিনা বেগানা নারীর সাথে হাত পর্যন্ত মিলান নাই! আর আপনি? ভালোবাসেন তো সত্যি আল্লাহ কে যেভাবে ভালোবাসার কথা? আয়াতটি আবার পড়ুন তো!

.

আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা'বুদ নেই। তবে যারা মিথ্যা মা'বুদের উপাসনা করে তারাও কিন্তু তাদের মিথ্যা মা'বুদকে অনেএএক ভালোবাসে,ওটা যে একরকম ভালোবাসা তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এ ভালোবাসা তো মূল্যহীন! যে ভালোবাসা কিনা সত্য মা'বুদের জন্য নয়!

মা বাবা,দেশ, হারাম প্রেমিক/প্রেমিকা এবং নিজের প্রতি আপনার যে ভালোবাসা আছে,সেটাও এক প্রকার ভালোবাসা। তবে মিথ্যা মা'বুদের উপাসকদের মতোই মূল্যহীন সে ভালোবাসা। যে ভালোবাসা ধ্বংস ডেকে আনে,যে ভালোবাসা জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়,যে ভালোবাসায় থাকে রবের নাফরমানী,সেটা আবার কেমন ভালোবাসা? আর সেই ঠুনকো ভালোবাসাই বুঝি সেলিব্রেট করেন ১৪ই ফেব্রুয়ারী? বেহায়াপনার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যাওয়ার এক স্পেশাল ডে। জেনে রাখুন হে মুসলিম মুসলিমাহ! এই দিবস পালন হারাম!

.

ফিরে আসুন,হারাম ছেড়ে ফিরে আসুন ইসলামের প্রশান্তিময় ছায়াতলে,হাতে সময় থাকতেই। আল্লাহ কে ভয় করুন যার কাছে আমাদের নিশ্চিত প্রত্যাবর্তন!

"আর তোমরা (নিজেদের) পাথেয় সংগ্রহ করে নাও; বস্তুত: নিশ্চিত উতকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে আল্লাহ্ভীতি এবং হে জ্ঞানবানগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো।"

(সূরা বাক্বারাহ্,আয়াত ১৯৭)

.

"এ কেমন ভালোবাসা?"

আমাতুর রহমান

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: