Monday, February 24, 2020

বাচ্চার কান্না থামানোর দোয়া

বাচ্চা কাঁদলে কে কিভাবে থামান জানিনা। আমি ইদানিং যা শিখলাম, এক প্রকার অবচেতন মনেই, আল্লাহ'র ইচ্ছেতে।

বাবু ৩ মাস পর এসেছে বাসায়। জন্মের পর নানী বাসাতেই ছিল, (মাঝে একদিন এসেছিল)। তো নতুন পরিবেশ প্রথম দিন খুব কান্নাকাটি করল। খুব বেশি অস্বাভাবিক ভাবে। কত্ত দুয়া পড়ছি, তিলাওয়াত করছি কিন্তু কিছুতেই কান্না থামছে না।
বাচ্চার কান্না থামানোর দোয়া

কোলে চড়ে ঘুরে বেড়ানো ওর খুব প্রিয়। ঘুরতে ঘুরতে সামান্য থামলেই সে একটু পা দিয়ে ঠেলে। তো প্রথমদিন এত ঘুরছি কোলে নিয়ে সারা বাড়ি, কিন্তু রাজকন্যা আমার একটুও কান্না থামাচ্ছেনা। খুব চেঁচিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে, নিঃশ্বাস আটকে ফেলার মত অবস্থা। (বিঃদ্রঃ আমি রাজা না হলেও, আমার কন্যাকে আদর ও স্নেহের দিক দিয়ে রাজকন্যা করে রাখব ইন শা আল্লাহ।)
.
এবার কি করলাম ! আমিও না কান্না শুরু করলাম। রাতের আঁধারে ওকে নিয়ে বারান্দায় হাঁটছি আর কেঁদে কেঁদে দুয়া (মুনাজাত) শুরু করলাম।

দুয়া কবুল হবার শর্ত হিসেবে কয়েকবার দরুদ শরীফ পড়লাম। অতঃপর বলতে শুরু করলাম,
.
"ইয়া আল্লাহ ! নিঃসন্দেহে আমার মেয়ে তোমার পক্ষ থেকে আমার জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত ও উপহার। মেয়ের প্রতি বাবার হৃদয়ে যে স্বর্গীয় মমতা, অপরিমেয় ভালবাসা তা তো তুমিই সৃষ্টি করেছ। তাহলে মেয়ে কষ্টে থাকলে বাবার হৃদয়ের অবস্থা কী হয় তা তোমার থেকে উত্তম কে জানে? যে সৃষ্টি করেছে তাঁর থেকে উত্তম ভাবে কে বুঝে তাঁর সৃষ্টিকে?"
.
" ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু ! তুমি আমার মেয়ের কান্না থামিয়ে দাও। সে কান্না না থামলে আমিও থামাব না। তুমি তো দয়ালু, সব থেকে বেশী দয়াবান। আমি তো নামে মাত্র অভিভাবক। আমাদের বাবা ও মেয়ে উভয়েরই প্রকৃত অভিভাবক তো তুমিই। আমার মেয়ে তোমার দেওয়া আমানত মাত্র। আমরা দুজনই কাঁদছি। তোমার দুই বান্দা বান্দীর কান্না তুমি কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে? পারবে কী?"
.
"ইয়া আল্লাহ ! রাহমানুর রাহীম। আমার বাচ্চা কি ক্ষুধার জন্য কাঁদছে? নাকি কোথাও ব্যাথা পেয়েছে? আমরা তো বুঝছিনা। ও তো খাচ্ছেওনা। তুমি তো জানো আসল কারণ। যা ই আমার মেয়ের কান্নার কারণ হোক তা ক্ষুধা বা ব্যাথা বা কোন নেগেটিভ এনার্জি তুমি তা দূর করে দাও।"
.
"আমি তো জেনেছি সূরা ফাতিহার প্রতি আয়াত পড়ে যা চাওয়া হবে তুমি তা দিবে। তারপর একেক আয়াতের পর চাইতে থাকলাম বাবুর কান্না থামুক।"
.
" ইস্তেগফার পড়লে আল্লাহ সংকট থেকে বের হবার পথ বাতলিয়ে দেন। পড়তে থাকলাম আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি। ইয়া আল্লাহ, ইয়া জুল জালালি ওয়াল ইকরাম, আমার মামণির না বলতে পারা কষ্ট ব্যাথা গুলো দূর করে দাও। "
.
আরো বলতে থাকলাম, "দাম্পত্যে ঝগড়া মনোমালিন্যে পরের মেয়ে (আহলিয়া) কে জান্তে অজান্তে কাঁদিয়েছি বলেই কী আমার মেয়েকে কাঁদাচ্ছ? আচ্ছা আজকের পর খুব সতর্ক থাকব ইন শা আল্লাহ অন্যের মেয়ে যেন অসতর্কতাতেও না কাঁদে। আমার মেয়েকে কাঁদিও না"
.
"ইয়া আল্লাহ, নাকি আমারই কোন পাপে, কোন অপরাধে সে শাস্তি পাচ্ছে? বান্দা হিসেবে আমি খুবই খারাপ, জঘন্য, পাপী লজ্জার সাথে স্বীকার করি, কিন্তু বাবা হিসেবে তুমি আমার মাঝে কোন অপূর্ণতা রাখোনি এটাও গর্বের সাথে বলি। তুমি বান্দার দুয়া কবুল যদি নাও করো, বাবার দুয়া তো কবুল করো ইয়া রব্ব, ইয়া গাফুরুর রাহীম !"
.

আল্লাহ এর সুন্দর সুন্দর নাম গুলো দিয়ে সম্বোধন করেই তাঁকে ডাকতে থাকলাম।

এসব বলেই যাচ্ছি, খেয়ালই করিনি কখন বা মামণিটা কোলেই ঘুমিয়ে গিয়েছে, ঘুমের ঘোরে কি যে মিষ্টি করে ফিক ফিক করে হাসছে সুবহানআল্লাহ। অন্যদিকের পুরো দুনিয়ার ক্লেশ মুহুর্তে ভুলিয়ে দিতে এমন একটা নিষ্পাপ হাসিই যথেষ্ট।

বাসার ভেতর থেকে বলছে (বারান্দায় ছিলাম) অনেকক্ষন আগেই নাকি কান্না থেমে গিয়েছে। মানে দুয়াতে এত মশগুল ছিলাম টেরই পাইনি যে মামণিটা কখন ঘুমিয়েছে। একটু আদর করে নাকে নাক ঘষলাম। আবার ঘুমের মধ্যেই হেসে উঠল।
.
তাতক্ষনিক দুয়া করলাম, ইয়া আল্লাহ ও যখন ঘুমোবে, ঘুমের মধ্যেও ওকে প্রশান্তিতে রেখো। ওকে জান্নাতের বাগানে বেড়িয়ে আনো, ওখানে খেলা করাও। জান্নাতে খাবার খাওয়াও।

বিশ্বাস করুন কাকতলীয়ভাবে (মূলত আল্লাহ'র ইচ্ছেতেই) সে ঘুমের ঘোরেই মুখে খাওয়ার স্টাইল করে চোক চোক শব্দ করে কি ই বা চুষে খাচ্ছে। এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌ গত তিনদিন ধরে আমার দুষ্টু মিষ্টি কিউট অভিমানী জিদি মামনিটা আর অস্বাভাবিক ভাবে জ্বালাতন করে না, অস্বাভাবিক ভাবে কাঁদেওনা।
.
তবে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। আমার কোলে আসবে। আমি ওকে নিয়ে ঘুরবো আর এসব দুয়া পড়ব। দুয়া যদি থামাই, কিংবা হাঁটাহাঁটি যদি থামাই, ওমনি একটু ঠেলা দিবে। কী যে চালাক হয়েছে মাশাআল্লাহ। এভাবেই ঘুমিয়ে যাবে।
.
আমিও ইদানিং দুয়া বাড়িয়ে দিয়েছি। সে আমাকে নতুন করে দুয়া করতে শিখিয়েছে।

দুয়া করতে শিখুন। নিজের জন্য, নিজের বাচ্চার জন্য, নিজের বাবা মা স্ত্রীর জন্য, উম্মাহ'র জন্য। আল্লাহ তায়ালা আপনার কাকুতি মিনতি শুনতে পছন্দ করেন।

কাঁদুন। কাঁদতে শিখুন বিশ্ব জগতের অধিপতির কাছে। যে কিনা তার রবের কাছে কাঁদতে পারে, সে তার রবের থেকে যেকোন প্রয়োজন আদায় করে নেবার সামর্থ্য রাখে।

লেখাঃ- Shah Mohammad Tonmoy

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: