Wednesday, October 21, 2015

হায় হুসেইন! হায় হুসেইন!! শি’আদের কিতাব থেকেই মৃতের জন্য মাতম না করার বর্ণনা

মৃত্যু মানব জীবনের শেষ পরিনতি। শুধু মানব নয় জিন ও ফেরেশতাসহ সৃষ্টিজগতের সমস্ত মাখলুকাত অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, এবং তা নির্ধারিত সময় অনুযায়ীই। শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব, তাঁর জন্মও নেই মৃত্যুও নেই।
স্বাভাবিকভাবেই কারো মৃত্যুতে ব্যাথিত হই, এবং আমরা কান্নাকাটি করি। ইসলাম ধর্মে শোক পালন করা ও মৃতের জন্য অশ্রু বিসর্জন করা বৈধ। তবে রাসুল (সাঃ)-এর সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মৃতের জন্য মাতম করা, বিলাপ করে কান্নাকাটি করা, মুখমণ্ডলে আঘাত করা, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা, চুল মুণ্ডন করা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হওয়া অবশ্যই ইসলাম বহির্ভূত কাজ ও সীমালঙ্ঘন।
বিলাপকারীর আহাজারি, কথা বা আচরন থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে। সে আল্লাহ তায়ালার ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তার প্রতি অন্যায়-অবিচার করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)
নিঃসন্দেহে হুসেইন (রাঃ)-এর শাহাদাৎ বরনের ঘটনাটা মর্মান্তিক। আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় ব্যাথিত। কিন্তু আমাদের সমাজে শি’আদের কর্তৃক যে মাতম প্রচলিত তা ইসলাম সম্মত পদ্বতি নয়। মৃতের জন্য মাতম করে কাঁদা, গাল চাপড়ানো, বুকের কাপর ছিরে ফেলা, চুল ছেঁড়া, মাথা নেড়া করা এবং সর্বনাশ ও ধ্বংস কামনা করা নিষিদ্ধ। রাসুল (সাঃ) অসংখ্য হাদীসে উপরোক্ত কর্ম করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যা বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবন মাযাহ, নাসায়ী, তিরমিযি সহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে।
যেহেতু উপরোক্ত হাদীস গ্রন্থগুলো শি’আদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেহেতু আমরা এখানে শুধুমাত্র শি’আদের কিতাব থেকেই মাতম করার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ইন শা আল্লাহঃ
১) আলী (আঃ) রাসুল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে সম্বোধন করে বলেনঃ ‘’আপনি যদি মাতম থেকে নিষেধ না করতেন, আর ধৈর্য ধারন করার নির্দেশ না দিতেন, তাহলে আপনার জন্য ক্রন্দন করে আমরা চোখের পানি শেষ করতাম’’ নাহজুল বালাগাহ, পৃষ্ঠা নঃ ৫৭৬; মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল ২/৪৪৫
২) আলী (আঃ) বলেছেনঃ ‘’মুসিবতের সময় নিজ হাত দিয়ে যে রানের উপর আঘাত করলো, তার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে গেল’’ আল-খিসাল লি সাদুক, পৃষ্ঠা নঃ ৬২; ওয়াসায়েলুশ শি’আ ৩/২৭০
৩) কারবালার ময়দানে হুসেইন (আঃ) তার বোন যয়নাবকে বলেনঃ ‘’হে আমার বোন! আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ দিচ্ছি, তুমি অবশ্যই এ শপথ রক্ষা করবে। আমি যখন মারা যাবো, তুমি আমার জন্য কাপড় ছিঁড়বে না, নখ দ্বারা তোমার চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে না, আমার শাহাদাতের জন্য তুমি মুসিবত ও মৃত্যুকে আহবান করবে না’’ মুনতাহাল আমাল ১/২৪৮
৪) আবু জাফর কুম্মি বর্ণনা করেন, আলী (আঃ) তার শিস্যদের শিক্ষা দিয়েছেনঃ ‘’তোমরা কালো কাপড় পরিধান করবে না, কারন তা ফির’আউনের পোশাক’’ আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন বাবুইয়াহ আল কুম্মি, মান লা ইয়াহদূররুহুল ফকিহ, ১/২৩২; ওয়াসায়েলুশ শি’আ লিল হুর আল-আমেলি ২/৯১৬
৫) কুরআনের আয়াতঃ ‘’এবং সৎ কাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না’’ মুমতাহিনা ৬০/১২
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় শি’আদের বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরুস সাফি’-তে উল্লেখ করা হয়েছেঃ ‘’নাবী (সাঃ) নারীদের এ মর্মে বায়আত করেছেন যে, তারা কাপড় কালো করবে না, বুকের কাপড় ছিঁড়বে না এবং সর্বনাশ ও মুসিবত বলে মাতম-চিৎকার করবে না’’
৬) কুলাইনি ‘ফুরুউল কাফি’ ৫/৫২৭ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাঃ) ফাতেমা (আঃ)-কে ওসিয়ত করে বলেছেন যে, আমি যখন মারা যাবো তুমি চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে, আমার উপর তোমার চুল দ্বারা আঘাত করবে না, মুসিবত বলে মাতম করবে না এবং আমার জন্য বিলাপকারিনী দিয়ে ক্রন্দনের ব্যাবস্থা করবে না’’ কুলাইনি, ‘ফুরুউল কাফি’ ৫/৫২৭
৭) শি’আদের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন বাবুইয়াহ আল কুম্মি, যিনি শি’আদের নিকট সাদুক উপাধিতে ভূষিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) সর্বপ্রথম বলেনঃ ‘’বিলাপ করে ক্রন্দন করা জাহেলী আমল’’ আবু জাফর মুহাম্মাদ বাবুইয়াহ আল কুম্মি, মান লা ইয়াহদুররুহুল ফকিহ ৫/২৭১-২৭২; ওয়াসায়েলুশ শি’আ লিল হুর আমেলি ২/৯১৫; আল হাদায়েকুন নাদেরাহ ৪/১৪৯; জামে আহাদিসিশ শি’আ লিল হাজ হুসেইন আল-বুরুজারদি ৩/৪৮৮; বিহারুল আনওয়ার ৮২/১০৩; মুহাম্মাদ বাকের, আল মাজলিসি
৮) অনুরুপ শি’আ আলেম মাজলিসি, নুরী, বুরুজারদি রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘’আল্লাহর নিকট অপছন্দ ও অভিশপ্ত দুটি শব্দ, মুসিবতের সময় আর্তনাদ করা ও গানের সময় আওয়াজ করা অর্থাৎ বিলাপ করে ক্রন্দন করা ও গান-বাদ্য করা’’ বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি ৮২/১০৩; মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল ১/১৪৩-১৪৪; জামে আহাদিসিশ শি’আ ৩/৪৮৮; মান লা ইয়াহদূররুহুল ফকিহ ২/২৭১
সুত্রঃ কতিপয় প্রশ্ন যা শি’আ যুবকদের সত্যের দিকে ধাবিত করছে, মুল সুলাইমান ইবন সালেহ আল-খারেশি; অনুবাদ সানাউল্লাহ নজির আহমদ; সম্পাদনা আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ও মোঃ আবদুল কাদের; পৃষ্ঠা নঃ ২৩- ২৫

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: