নবী মূসা(আ) এর একটা লাঠি ছিল, সেটা দিয়ে বাড়ি দিয়ে তিনি মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়তেন। আল্লাহ্ তাঁর লাঠিটাকে একটা ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সেটা সাপ হয়ে যেতে পারত। এটা অবশ্যই আল্লাহর একটা নিদর্শন। কিন্তু এই ধরনের নিদর্শনের একটা সমস্যা আছে। ধরুন আমার দাদা সরাসরি নিজের চোখে মূসা(আ) এর লাঠিটা দেখেছিলেন। তিনি তার সারাজীবন ধরে এই লাঠিটার কথাই বলে গেছেন। যতবার তিনি এটার কথা বলতেন, তিনি আবেগে থরথর করে কাঁপতেন আর তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ত। আমার বাবা, চাচারা সবাই এগুলো শুনেছেন তার কাছ থেকে। আমরা আবার তাদের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু এটা আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটা অলৌকিক গল্প, এর বেশি কিছু নয়। গল্পটা যদিও আমরা বিশ্বাস করি, কিন্তু আমার দাদার আবেগ আর আমাদের আবেগের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। একই জিনিস ঘটবে যখন আপনি আমার কাছ থেকে ঘটনাটা শুনবেন। আপনি একটু চোখ বড়ো বড়ো করবেন, হয়ত বলবেন - ওয়াও । ব্যস, এই পর্যন্তই। সময়ের সাথে সাথে মিরাকলটা ম্লান হতে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এক সময় এটা শুধুই একটা ইতিহাসের গল্প হয়ে থাকবে।
যত নবীদের যত মিরাকল( মু'যেযা) ছিল, সবগুলোই সময়ের সাথে সাথে চলে গেছে। আমাদের কাছে এগুলো শুধুই গল্প। আর একটা গল্প বিশ্বাস ও করা যায়, অবিশ্বাস ও করা যায়, কে এসে প্রমান দেবে? শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) কেও নিশ্চয়ই আল্লাহ্ একটা মিরাকল দিয়েছেন, যাতে আমরা সেখান থেকে সন্দেহতীতভাবে বের করতে পারি যে আল্লাহ্ আসলে আছেন, এবং তিনি মহাজগতের স্রষ্টা, এবং তাঁর অসীম জ্ঞানের কিছু সরাসরি নমুনা। এবং সেই মিরাকলটাকে হতে হবে স্থায়ী, কারন তাঁর পরে আর কোন আল্লাহর নবী আসবে না। মিরাকলটা এমন হতে হবে যে যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে, ততদিন এটা মানুষ নিজের চোখে দেখবে। অবিশ্বাস করার প্রত্যেকটি নুন্যতম সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা থাকতে হবে এই মিরাকলের।
এই পর্বে কুর'আনের ভিতরে যে গাণিতিক প্যাটার্নগুলো আছে তার কিছু কিছু তুলে ধরা হয়েছে। "কিছু কিছু" কেন? কারন, হাজার বছর ধরে গবেষনার পরও মানুষ এখনো কুর'আনের অনেক কিছুর ব্যাখ্যাই বের করতে পারেনি। কুর'আন রীডিং দিয়ে পড়ে এর রহস্যময়তা বের করা অসম্ভব। কিন্তু আপনি যখন নিজের চোখে এই হিসাবগুলো দেখবেন, আপনার ইচ্ছা করবে চিৎকার করে কাদঁতে। আপনি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন যে এই ছোট্ট আরবি বইয়ের কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ্র মুখ থেকে বের হওয়া কথা । ( এটা শুনে আপনি ভাবা শুরু করবেন না যে, আল্লাহর মানুষের মতন মুখ আছে। আল্লাহর চেহারা শুধুমাত্র "আল্লাহর নিজের মত" ) . আপনি চিন্তা করুন যে, আল্লাহ আপনার জন্য চিন্তা করে কিছু কথা বানিয়েছেন এবং আপনাকে তাঁর কিছু কথা দিয়েছেন চিঠির মত করে। এই কথাগুলোই আপনার সাথে আল্লাহর একমাত্র যোগাযোগ এই পৃথিবীতে। এর পরেরবার যখন আপনি কুর'আন হাতে নিবেন, এই কথাগুলো মনে করবেন। এই বইয়ের কথাগুলো এই মহাবিশ্বের বাইরে লেখা হয়েছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান দুটি জগতের মধ্যে যোগাযোগের প্রাচীন বইটি আল্লাহ্ আপনাকে গিফট দিয়েছেন। কুর'আনের গণিতবিদ্যা এখান থেকে শুরু হল। ব্র্যাকেটে যখন যেই ছবির লিঙ্কগুলো দেওয়া থাকবে সেটা দেখার জন্য অনুরোধ করা হল। এই আর্টিকেল গুলো আমি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগের জন্য তৈরি করি, তারপরো ফেসবুক এ অনেকে পড়েন, সেজন্য পাশে ছবির লিঙ্ক দিয়ে দেই। আপনি যদি গণিতের এই পুরো আর্টিকেল টি বুঝতে চান অবশ্যই ছবিতে ক্লিক করবেন।
কুর'আনে আছে-
[] ১১৪টি সূরা
[] ৬২৩৬ টি আয়াত ।
[] ৭৮,২৫৭ টি শব্দ
A,B,C দিয়ে আমি আলাদা আলাদা ৩টি গ্রুপে ভাগ করেছি বিষয়গুলোকে।
A. ১৯ রহস্যঃ
পুরো কুর'আন একটি অকল্পনীয় জটিল গাণিতিক প্যাটার্ন দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। আল্লাহ্ কুর'আনে এক জায়গায় ১৯ সংখ্যাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, জাহান্নামের ১৯ জন পাহারাদার আছে, আর তারা হচ্ছেন ফেরেশতা।
"There are nineteen in charge of it." (Qur'an, 74:30)
কিন্তু মানুষ গবেষনা করে বের করেছে যে, কুর'আনে ঘুরে ফিরে বিভিন্ন হিসাব নিকাশে বার বার ১৯ সংখ্যাটি পাওয়া যায়।
[] সূরা ১১৪টি। ১৯ X ৬ = ১১৪
[] সবগুলো সূরার নম্বর যোগ করলে ( ১+২+৩+৪+...+১১৪) দাঁড়ায় ৬৫৫৫। ১৯X৩৪৫ = ৬৫৫৫ ।
[] আল্লাহ শব্দটি কুর'আনে আছে ২৬৯৮ বার। ১৯X১৪২= ২৬৯৮
[] ১ম যে সূরাটি নাযিল হয়েছিল সেটি ছিল ৯৬ নম্বর সূরা, সূরা আলাক। শেষের দিক থেকে গুনলে এটি ১৯ নম্বর সূরা।
[] সূরা আলাক-এ মোট আয়াত ১৯টি আর মোট শব্দ ২৮৫ টি। ১৯X১৫=২৮৫
[] শেষ সূরা নাযিল হয়েছে সূরা আন-নাস্র। মোট শব্দ ১৯টি।
[] সূরা নাস্র এর প্রথম আয়াতে আল্লাহর সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। আয়াতে মোট অক্ষর ১৯টি।
[] বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এ মোট অক্ষর ১৯ টা।
[] ১১৪ টি সূরার মধ্যে ১১৩টি শুরু হয়েছে "বিসমিল্লাহ..." দিয়ে। ৯ নং সূরা, সূরা আত-তাওবার শুরুতে কোন বিসমিল্লাহ নেই। ২৭ নং সূরা আন-নামল হচ্ছে একমাত্র সূরা যেখানে ২ বার বিসমিল্লাহ আছে, একবার প্রথমে, একবার আয়াত ৩০ এ। সূরা আত-তাওবা থেকে গোনা শুরু করলে সূরা আন-নামল হচ্ছে ঠিক ১৯তম সুরা !!!
আরো আছে। আত তাওবা ৯ নম্বর সুরা। আন-নামল ২৭ নম্বর সুরা। ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত যোগ করলে হয় ৩৪২। (9 + 10 + 11 +12 +13 +14 +15 +16 + 17 + 18 + 19 + 20 + 21 + 22 + 23 + 24 + 25 + 26 + 27) । ১৯X১৮= ৩৪২ ।
[] আর রাহমান শব্দটি কুর'আনে আছে ৫৭ বার। ১৯X৩= ৫৭
[] কুর'আনে ৩০টি আলাদা আলাদা সংখ্যা বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। রিপিটিশন না ধরে যদি প্রত্যেকটি সংখ্যাকে যোগ করা হয় তাহলে আসে ১৬২,১৪৬ । ১৯X৮৫৩৪= ১৬২, ১৪৬ .
[] ৫০তম সূরা হচ্ছে সুরা Qaf । এটার প্রথম অক্ষর "Qaf" । Qaf অক্ষরটি এই সূরায় আছে ৫৭ বার (১৯X৩=৫৭) . এই সূরায় আয়াত আছে ৪৫ টি। এবার যদি যোগ করি,তাহলে হয়, ৫০+৪৫= ৯৫। ১৯X৫=৯৫।
১৯ একটি প্রাইম নাম্বার। যে নাম্বার কে অন্য কোন নাম্বার দিয়ে ভাগ করা যায়না তাকে প্রাইম নাম্বার বলে। আল্লাহ্ কেন ১৯ দিয়ে পুরো কুর'আনের মধ্যে একটি কোড রেখেছেন তা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আমরা শুধু এটুকু ধারনা করতে পারি যে , আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন তিনি কুর'আন কে নিজে রক্ষা করবেন, এগুলো হয়ত তাঁরই কিছু নিদর্শন। আরেকটা কারন হচ্ছে আপনি যখন নিজের চোখে যাচাই করে এই জিনিশগুলো দেখবেন, আপনি নিজেই বুঝবেন আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে।
B. সমার্থক আর বিপরীত শব্দঃ
পুরো কুর'আনে আল্লাহ্ বিশেষ বিশেষ কতগুলো শব্দ রীপিট করেছেন। মাঝে মাঝে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করেছেন। আসুন একটু হিসাব করে দেখা যাক।
[] দিন ( Yawm) শব্দটি কুর'আনে আছে ৩৬৫ বার। দিনের বহুবচন হচ্ছে Ayyam আর Yawmayn. বহুবচন দুটি মোট এসেছে ৩০ বার। মাস শব্দটি ( Shahar) এসেছে ১২ বার। কোন মিল পাচ্ছেন ?
একবচন, বহুবচন ও সব মিলিয়ে "দিন" কথাটি এসেছে মোট ৪৭৫ বার। ১৯X২৫= ৪৭৫. আরো একটি ব্যাপার লক্ষনীয় যে, সূর্য নিজের অক্ষের উপর একবার পুরো ঘুরতে সময় নেয় ২৫ দিন।
[] পৃথিবী ( Dunya) আর পরকাল ( akhirah) দুটি শব্দ আছে ১১৫ বার করে।
[] সাত আসমান ( Seven heavens/ Sab'a Samawati) এর কথা বলা আছে ঠিক ৭ বার।
[] বিশ্বাস ( Imaan) আর অবিশ্বাস ( Kuf'r) দুইটি শব্দই এসেছে ২৫ বার করে।
[] জান্নাত আর জাহান্নাম দুটি শব্দ এসেছে ৭৭ বার করে।
[] শয়তান শব্দটি এসেছে ৮৮ বার। বিপরীতে ফেরেশতা( মালা'ইকা) এসেছে ৮৮ বার।
[] পুরুষ ও নারী দুটি শব্দই কুর'আনে এসেছে ২৩ বার করে। মানুষের ক্রোমোজম সংখ্যা হচ্ছে ৪৬. বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকে ২৩ টি করে ক্রোমোজম নিয়ে একটি সন্তান তৈরী হয়।
[] সূর্য ( শামস) আর আলো (নূর) দুটি শব্দ এসেছে ৩৩ বার করে।
[] পূন্যবান ( আল-আবরার) এসেছে ৬ বার। পাপী ( ফুজ্জার) এসেছে ৩ বার। আল্লাহ সব সময় শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমান দ্বিগুণ করে দিবেন বলেছেন। ঠিক একইভাবে 'আযাব' শব্দটি যতবার এসেছে, 'সওয়াব" তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ আযাব ১১৭ বার, সওয়াব ২৩৪ বার।
[] যেমন কাজ করা হয়, তেমন ফল পাওয়া যায়। আল্লাহ্ এইগুলোকেও সমান সমান করে বলেছেন। যাকাত দিলে বরকত হয়। তাই যাকাত শব্দটি এসেছে ৩২ বার, বরকত এসেছে ৩২ বার। "গাছের চারা উৎপাদন" করলে "গাছ" হয়, তাই দুটি শব্দ এসেছে ২৬ বার করে। কোন মানুষ হেদায়াত পেলে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হয়, তাই এ দুটো শব্দ এসেছে ৭৯ বার করে।
[] আব্দ মানে দাসত্ব, আর আবীদ মানে দাস। দাসের কাজ দাসত্ব করা, তাই দুটি শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে।
[] "নেশা" করলে "মাতাল" হয়, তাই দুটি শব্দই এসেছে ৬ বার করে।
[] সূরা আ'রাফের একটি আয়াত হল - "যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের উদাহরন হচ্ছে কুকুরের মতন" ।
""যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে" এই বাক্যটি কুর'আনে আছে ৫ বার। যেহেতু তাদের উদাহরন কুকুরের সাথে, তাই কুকুর "আল কালব" কথাটিও এসেছে ৫ বার।
[] "মানুষ' ( Insaan) কথাটি এসেছে ৬৫ বার। আর মানুষ বানানোর উপকরনগুলো আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন সূরায় বলা হয়েছে। মানুষ বানানোর উপকরনগুলো আলাদা আলাদা করে যদি দেখা হয় যে কোনটি কতবার এসেছে-
Soil (turab) = 17
Drop of Sperm (nutfah)= 12
Embryo ('alaq) =6
A half formed lump of flesh (mudghah)= 3
Bone ('idham) =15
Flesh (lahm) =12
সবগুলো যোগ করলে আসে ঠিক ৬৫।
[] এটা একটু কঠিন। কুর'আনে Land কথাটি এসেছে ১৩ বার। Sea কথাটি এসেছে ৩২ বার। যোগ করলে হয় ৪৫।
যদি আমরা এখান থেকে বের করতে চাই, স্থলভাগ কত শতাংশ , তাহলে, {(১৩X১০০) / ৪৫ } = ২৮.৮৮৮৮৮৮৮৮৮৮৮৯ % ( এগারটি ৮, একটি ৯ )
যদি আমরা বের করতে চাই, জলভাগ কত শতাংশ , তাহলে, {(৩২X১০০) / ৪৫}= ৭১.১১১১১১১১১১১১ ( বারটি ১)
বর্তমান পৃথিবীতে জল ও স্থলের পরিমান হুবহু এই একই।
[] নবী ঈসা(আ) ও নবী আদম (আ) এর তুলনা-
সূরা আলে ইমরান। আয়াত ৫৯. আল্লাহ বলেছেন- "আল্লাহর কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো" ।
আসুন ব্যাখ্যা করি। নবী ঈসা(আ) ও নবী আদম(আ) কেউই মানুষের মাধ্যমে জন্ম নেননি । আদম (আ) কে আল্লাহ্ বাবা-মা ছাড়া তৈরী করেছিলেন, ঈসা (আ) কে বাবা ছাড়া তৈরী করেছিলেন।
কুর'আনে "আদম" ও "ঈসা" দুইটি নাম এসেছে ২৫ বার করে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন, এনাদের তুলনা তাঁর কাছে একই রকম, তাই এদের নামের সংখ্যাও এক রাখা হয়েছে।
এখানেই শেষ হয়নি, আরো আছে। এই ছবিটি লক্ষ্য করুন।
লাল বক্সটি হচ্ছে একমাত্র আয়াত ( সুরা ৩, আয়াত ৫৯) যেখানে তাঁদের দুইজনের নাম একিসাথে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম থেকে গোনা হলে এই আয়াতটিতে ৭ম বার এই নামদুটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিচ থেকে গোনা হলে এই আয়াতটিতে ১৯ তম বার এই নামদুটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবারো সেই ১৯. আপনি গুনে দেখতে পারেন।
না, এখনো শেষ হয়নি। উপর থেকে আবার গোনা হলে এই নামদুটি ১৯ তম বার ব্যবহার হয়েছে সূরা নম্বর ১৯ এ ( সূরা মারইয়াম, নীল বক্স) . এই সূরায় "ঈসা" নামটি এসেছে আয়াত ৩৪ এ, আর "আদম" নামটি এসেছে আয়াত ৫৮ তে। আয়াত ৩৪ থেকে গোনা শুরু করলে আয়াত ৫৮ হচ্ছে ২৫ তম আয়াত। আর এদের দুইজনের নাম কুর'আন এ এসেছে ঠিক ২৫ বার করে। সেকারনেই ঈসা(আ) এর তুলনা হচ্ছে আদম(আ) এর মতন।
[] কুর'আনে ৭০ বার "That day" ( Yawma Izin) বাক্যাংশটি এসেছে। সেই দিনটি হচ্ছে কেয়ামতের দিন, তাই "The day of ressurection" ( Yawmal Qiyama) কথাটিও এসেছে ৭০ বার।
[] সালাহ ( Salah) হচ্ছে নামাজের একবচন। সালাহ শব্দটি এসেছে ৮৩ বার। নামাজের বহুবচন হচ্ছে "সালাওয়াত" ( Salawat). দিনে নামাজ পড়তে হয় ৫ বার। তাই সালাওয়াত শব্দটিও পুরো কুর'আনে এসেছে ঠিক ৫ বার।
[] জিহবা ( Tongue) দিয়ে উপদেশ ( Advice) দেওয়া হয়। দুটি শব্দই এসেছে ২৫ বার করে।
c. সূরার সাথে আয়াতের সম্পর্কঃ
[] সূরা আল- কাহফ, সুরা নম্বর ১৮. এই সুরাটির নামই হচ্ছে "গুহা" . এখানে কয়েকজন যুবকের একটা ঘটনা আছে। ঘটনাটা এরকম যে, কয়েকজন বিশ্বাসী যুবক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয় ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। আল্লাহ তাদেরকে ৩০৯ বছরের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। এখানে ৯ নম্বর আয়াত থেকে গুহাবাসীদের ঘটনাটা শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ২৫ নম্বর আয়াতে।
আয়াত ৯- আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ?
আয়াত ২৫- তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছিল ৩০০ বছর, সাথে আরো ৯ বছর।
আসুন এবার দেখা যাক। আয়াত ৯ থেকে আয়াত ২৫ পর্যন্ত প্রত্যেকটি শব্দ সিলেক্ট করে যদি গোনা হয়, দেখা যায় এখানে ঠিক ৩০৯ টি শব্দই আছে। কাকতালীয় ???
[] কুর'আনের অনেক সূরার শুরুতেই কয়েকটি করে শব্দ আছে, যেমন- আলিফ লাম মীম, ইয়া সীন...ইত্যাদি। আসুন দেখা যাক এদের মধ্যে কোন প্যাটার্ন আছে কিনা।
সূরা আন- নামল। ২৭ নম্বর সূরা। মোট আয়াত আছে ৯৩ টি । এই সূরাটি শুরু হয়েছে দুটী শব্দ দিয়ে - ত্ব, সীন (ط س) । এই সূরাটির বৈশিষ্ট্য হল এটার সবগুলো আয়াত ও শব্দের মধ্যে-
ত্ব ( ط) আছে- ২৭ বার
সীন (س) আছে - ৯৩ বার।
এবার চিন্তা করুন। ২৭ নম্বর সূরা। আয়াত ৯৩ টি। শুরু হয়েছে যে দুটি অক্ষর দিয়ে সে দুটি অক্ষর এসেছে ২৭ বার ও ৯৩ বার।
[] সূরা ইয়া-সীন। প্রথম আয়াত হচ্ছে "ইয়া-সীন". এই সূরায় ইয়া অক্ষর আছে ২৩৭ বার, সীন ৪৮ বার। যোগ করলে হয় ২৮৫ বার। ১৯X১৫ = ২৮৫. আবার সেই ১৯।
[] সূরা বাকারা। ২ নম্বর সূরা। মোট আয়াত ২৮৬. আমরা এর ১৪৩ নম্বর আয়াতটি দেখব।
আয়াত ১৪৩( অংশবিশেষ) - And thus We have made you a MIDDLE nation
অনুবাদ- এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি
এটা খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে, ২৮৬ আয়াত বিশিষ্ট সূরার ঠিক মাঝখানের আয়াতটি হচ্ছে এই ১৪৩ নম্বর আয়াত। ২৮৬/২= ১৪৩ . মনে রাখতে হবে কুর'আন নাযিল হয়েছিল মৌখিক ফর্ম এ, এটা কেউ লিখে রাখত না। আর সূরা গুলো ছোট ছোট অংশে নাযিল হোত। কিভাবে আগে থেকে না লিখে রেখে অনুমান করা সম্ভব কোন আয়াতটি হবে সূরার একদম MIDDLE আয়াত ??
[ ] সূরা নূহ। সূরা নম্বর ৭১ . মোট আয়াত ২৮. কয়েকটি হিসাব করা যাক। আল্লাহ্ কিভাবে নম্বর প্যাটার্ন সাজান আসুন দেখি।
* পুরা কুর'আনে "নূহ" শব্দটি আছে ৪৩ বার।
* ৭১-২৮= ৪৩ ( সূরা নূহ এর সূরা নম্বর থেকে আয়াত নম্বর বিয়োগ করলাম)
* "নূহ" নামটি এসেছে ২৮টি আলাদা আলাদা সূরায়।
* সূরা নূহ ( সূরা ৭১) এর আগের যে কয়টি সুরায় "নূহ" শব্দটি নেই, তাদের সংখ্যা হচ্ছে ৪৩. আর সূরা নূহ এর পরের যে কয়টি সুরায় "নূহ" শব্দটি নেই, তাদের সংখ্যাও হচ্ছে ৪৩ . আর নূহ শব্দটি কুর'আনে এসেছে ঠিক ৪৩ বার।
শেষ কথাঃ
আমি সবগুলো গাণিতিক উদাহরন দিতে পারিনি। কিছু কিছু আছে ভয়ঙ্কর জটিল। আর আমি কোন গণিতবিদ ও নই, আমি একজন সাধারন পড়াশুনা করা সাধারন মানুষ। যেগুলো আমার কাছে মনে হয়েছে সবাই বুঝতে পারবে আর নতুন করে এপ্রিশিয়েট করতে পারবে আমি সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর আমি আপনাকে রিমাইন্ডার দিলাম, আপনি চাইলে নিজেই শিখে নিতে পারবেন আমি জানি।
যারা দাবি করেছে বা করছে যে কুর'আন মানুষের লেখা, তাদেরকে যদি আপনি এইগুলোও দেখান, সবাই যে বিশ্বাস করে ফেলবে এমন কিন্তু নয়। অবিশ্বাসীরা সবসময়ই থাকবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এদের সাথে ডিবেট করা নয়, আমাদের দায়িত্ব হল কুর'আনকে ভালবাসা ও বোঝার চেষ্টা করা আল্লাহ্ কি পরিমান অসীম জ্ঞানী একজন সত্তা। একজন মুসলিম শিশু হিসেবে আমাকে ছোটবেলায় কুর'আন রিডিং পড়তে শেখান হয়েছিল, কিন্তু আমি বড়ো হয়েছি কুর'আনের বিন্দুমাত্র সংস্পর্শ ছাড়া। এই বইটি আমার কাছে কখনই ইন্টারেস্টিং মনে হয়নি, এই বইটির প্রতি আমার একধরনের Avoidal Tendancy তৈরী হয়ে গিয়েছিল। এবং আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এর পিছে একটি মানুষের একার যত না ভূমিকা, তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা তার বাবা-মার, বাংগালী সমাজের প্রচলিত ঘুনে ধরা সনাতন ইসলাম-শিক্ষার। মুহাম্মাদ(স) ১৪০০ বছর আগে যেই ইসলাম শিখিয়ে গেছেন তার অনেকটাই আমরা বিকৃত করে ফেলেছি আমাদের এই উপমহাদেশে। বাসার কোন হুজুরের সাথে আপনি মন খুলে ইসলাম নিয়ে কখনো কথা বলতে পেরেছেন জীবনেও ? শেষ কবে আপনার বাবা মা আপনার সাথে কুর'আন নিয়ে কোন কথা বলেছেন? কোনদিনও কি খাবার টেবিলে বা অফিসে বা বন্ধুদের আড্ডায় আপনি কুর'আনের সৌন্দর্য নিয়ে কোন কথা শুনেছেন ? বা বলেছেন?
জীবনের একসময়ে এসে আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেছি যে - "আমি কতটা নিকৃষ্ট মানের মুসলিম যে আমি আমার স্রষ্টার কথাগুলোকে বোঝার কোন চেষ্টা করছি না ? " আমি লজ্জা, গ্লানি ও অপরাধবোধে ভুগেছি। দোকানে গিয়ে তাফসীর ঘেটেছি। আমি দেখেছি সেগুলো ভয়ঙ্কর একঘেয়ে ভাষায় লেখা, সেগুলো আমার মতন একজন এভারেজ মুসলিম হজম করতে পারবেনা। আমি যে ভাষায় কথা বলি, আমার দরকার ঠিক সেরকম সাধারন ভাষার কোন জিনিষ। আমি এমন কাউকে খুজে বের করার চেষ্টা করেছি যে আমাকে কুর'আন শিখাতে পারে, আমি পাইনি। আমি আল্লাহর কাছে একটি দু'আ করেছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম-
"My Lord . I love you more than myself and my soul. You are my creator and to you is my final return. I love your book. I pray to you that you teach me your book. Please give me the light and power of this divine revelation so that I can learn it and I can spread your words. "
কেউ ডাকলে আল্লাহ্ সাড়া দেন। আমি আল্লাহর দিকে এক পা এগুনোর চেষ্টা করেছিলাম, আল্লাহ্ নিজে আমাকে পথ দেখিয়ে সামনে নিয়ে গেছেন। আমাকে আরবি ভাষার ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর সেরা মানের শিক্ষক, বই, স্কলারদের সাথে । আমাকে সঠিক মানুষ ও সঠিক রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন। কুর'আন সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুন্য। তারপরো আমি দেখে যাচ্ছি আল্লাহ্ কিভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। আমি শুধু তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম- আমি শিখতে চাই। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।
একধরনের ক্ষোভ নিয়ে আমি আর্টিকেল লেখি। আমাদেরকে বোরিং, আনন্দহীন উপায়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে ধর্ম শিখানো হয়, তারপরে ভ্রান্ত নানা পথে হোচঁট খেতে খেতে আমরা সেক্যুলার ধর্মহীন জীবন- পুজারীতে পরিনত হই। আমি সেদিনও একজন মহিলার মুখে বলতে শুনেছি- "এইসব কুর'আন হাদিস আমাদের জন্য না। এগুলা আলেমরা পড়বে, আমরা খালি তাদের কথা শুনব।" অথচ আমরাই নাকি সেই সৌভাগ্যবান ১.৫ বিলিয়ন মানুষ যারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার সূযোগ পেয়েছি। আমি চাই আপনি কুর'আন কে শিখুন ও হৃদয়ে ধারন করুন। ফল মূল লতা পাতায় আল্লাহর নাম খোঁজার চেয়ে আসুন আমরা কুর'আনকে নিয়ে নতুন করে অভিভূত হই। মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড়ো কারন হল, তারা কুর'আন কে এপ্রিশিয়েট করছে না। তারা কুর'আন নিয়ে কথা বলেনা, কুর'আন নিয়ে আবেগ দেখায় না, কুর'আন নিয়ে চিন্তা করেনা। এই বইটি কোন সাধারন বই নয়, অসাধারন বইও নয়। সাধারন-অসাধারন এই কথাগুলো সৃষ্টিজগতের জন্য প্রযোজ্য। কুর'আন সৃষ্টিজগতের ঊর্ধে একটি বই।
এই আর্টিকেল এর অনেক কিছুই আমি প্রথমবারের মতন জেনেছি। একদিন গভীর রাতে একা একা আমি যখন বিষয়গুলো পড়ছি, আমি আবিষ্কার করলাম আমি বিস্মিত হবার সীমা পার হয়ে গেছি। অনির্দিষ্টকাল আমার চেয়ারে বসে থেকে আমি অনুভব করলাম, ভয়ঙ্কর বিচিত্র একটা অনূভুতি আমার হচ্ছে। এটা অনেকটা এমন যে, আপনি ঘরে একা একা, কিন্তু আপনার মনে হচ্ছে কেউ একজন আপনার দিকে একদৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে আমি আমার পিছনের টেবিলের উপরে রাখা কুর'আন টার দিকে তাকিয়েছিলাম। জীবনে প্রথমবারের মত আমি অনুভব করেছি, যেন এটি কোন জড় পদার্থ নয়, এটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: