- (মুখচোখ বিরস করে) এইতো ভাই, চলতেসে কোনরকম আরকি।
- (একজনের বাচ্চা অসুস্থ) ভাল নাই ভাই। ভাল আর থাকি কেমনে বলেন। ভাল থাকার মতন কি কোন অবস্থা আছে?
- (একজন ছাত্র) ভাল নাই ভাই, অবস্থা খুব খারাপ। ক্লাস আর এসাইনমেন্টের চাপে পাগল হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে মরে যাই।
একটি বিশেষ কারনে আমরা মুসলিমরা কমপ্লেইন করা থেকে বিরত থাকতে পারিনা। সেই বিশেষ কারনটাই এই আর্টিকেল লেখার মূল উদ্দেশ্য। এই আর্টিকেল এ কুর'আন এর প্রথম সূরার প্রথম শব্দটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে আরবি সাহিত্যে ও গ্রামার এর উপর ভিত্তি করে।আমরা মুসলিম, কাজেই এই শব্দটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে জড়িত, প্রতিদিন আমরা এই শব্দটি ব্যবহার করি । কিন্তু তারপরও আল্লাহর কথার অনেক অনেক কিছু আছে যা আমরা জানিনা, যা জানলে আমরা কুরআনকে আরো গভীরভাবে অনুভব করতে পারতাম। আমি চেষ্টা করেছি যাতে আপনি আগের চেয়ে ১% বেশি হলেও আলহামদুলিল্লাহ- কে উপলব্ধি করতে পারেন। এই আর্টিকেল এর কোন মৌলিক কৃতিত্ব আমার নয়, বিভিন্ন লেকচার ও আমাদের বাস্তব জীবনের উদাহরণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
কুর'আন এখন আমরা যেভাবে বই আকারে পড়ি, এটা সেভাবে নাযিল হয়নি। ২৩ বছর ধরে আস্তে আস্তে এর আয়াতগুলো আল্লাহ্ পাঠিয়েছিলেন। প্রথম যেই সূরাটি পুরোটা একবারে নাযিল হয়, সেটা ছিল সূরা ফাতিহা। আপনার আমার প্রত্যেকের একটা আলাদা আলাদা পরিচয় আছে। আল্লাহর পরিচয় হচ্ছে সূরা ফাতিহা। আর আল্লাহ্ যেভাবে যে স্টাইলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন, সেভাবে আর কারোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
১. "আলহামদুলিল্লাহ" অর্থ আসলে কি ?
আমি এটার মোটামুটি একটা অনুবাদ দিচ্ছি যেটা আমরা সবসময় পড়ি-
"সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য- All praises belongs to Allah "
এটি এক শব্দের একটি বাক্য। ভেঙ্গে বললে এমন দাঁড়ায় - Al-Hamd Li Allah .
আল্লাহ্ এখানে একটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেছেন। শব্দটি হচ্ছে "হাম্দ" . হাম্দ শব্দটি আল্লাহ্ যেভাবে ব্যবহার করেছেন সেভাবে প্রচলিত আরবি গ্রামারে কখনো ব্যবহৃত হয়না।
প্রশংসাকে আরবিতে বলা হয় - "মাদ্হ" ও "সানা" ।
ধন্যবাদকে আরবিতে বলা হয়- "শুকর"
প্রশংসা আর ধন্যবাদ কি এক জিনিস ? না, এই দুইটি একই জিনিস না। এই দুইটি একদম আলাদা দুটি অনূভুতি। কাজেই "আলহামদুলিল্লাহ" বুঝতে হলে এই দুইটি জিনিস আমাদেরকে আলাদা করে বুঝতে হবে। একটি হল "ধন্যবাদ" ও আরেকটি হল "প্রশংসা" . জীবনে কখনো আমরা ধন্যবাদ দেই, কিন্তু প্রশংসা করি না। আবার কখনো আমরা প্রশংসা করি, কিন্তু ধন্যবাদ/কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনা।
অনেক কিছু আছে যেগুলোকে আমরা প্রশংসা করি, কিন্তু সেগুলোকে আমরা কখনোই ধন্যবাদ দেই না। লিওনেল মেসি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। ফুটবল খেলাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে এই মানুষটি। আমরা সবসময় মেসির খেলার "প্রশংসা" করি, কিন্তু আমরা কখনোই তাকে "ধন্যবাদ" জানাই না! আমরা কখনই বলি না যে, "মেসি তুমি কালকে হ্যাটট্রিক করেছ, তোমার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ, তোমাকে হাজার হাজার ধন্যবাদ !" আপনি একটা দামি গাড়ির প্রশংসা করবেন, আপনি আইফেল টাওয়ার এর ডিজাইন এর প্রশংসা করবেন, আপনি একটা আইফোন ৫ এর প্রশংসা করবেন, কিন্তু আপনি কখনোই এই জিনিসগুলোকে ধন্যবাদ দিবেন না। আপনি একটা দামী মার্সিডিজ গাড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু আপনি কখনই সেটার গায়ে হাত বুলিয়ে বলবেন না- ' হে মার্সিডিজ তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ !! ' . এই ধরনের প্রশংসাকে আরবিতে "মাদ্হ" বলা হয়।
বিপরীত জিনিসটাও ঘটে। আমরা বহু মানুষকে ধন্যবাদ দেই বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, কিন্তু আমরা তাদের প্রশংসা করিনা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন একটি শব্দ হল- ধন্যবাদ/থ্যাঙ্কস । ধরুন হাই-ওয়েতে আপনার গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছে, আপনি একা সেটা ঠিক করতে পারছেন না। একজন সহৃদয় ভদ্রলোক তাঁর গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে বাড়তি চাকাটা লাগাতে আপনাকে সাহায্য করলেন। আপনি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন ও তাঁকে ধন্যবাদ দিবেন। কিন্তু আপনি তাঁর প্রশংসা করবেন না। আপনি তাঁকে বলবেন না-" ভাই আমার! আপনি কি চমৎকার করেই না চাকা পাল্টাতে পারেন ! আপনার মতন এত দ্রুত চাকা পাল্টাতে আমি আর কাউকে দেখিনি !"
আরো একটা উদাহরন দেই। কুর'আনে সবচেয়ে বেশিবার যে নবীর কথা বলা হয়েছে(৭০ বার) তিনি হলেন নবী ইবরাহীম(আ) . তাঁর বাবা যে শুধু মুশরিক মূর্তিপূজারী ছিলেন শুধু তাই না, তিনি মূর্তি বানিয়ে বানিয়ে পাইকারী বিতরন করতেন ! আর এই মানুষের সন্তান ছিলেন ইবরাহীম(আ) !! স্বাভাবিকভাবেই বাবার এই ঘৃন্য কাজকে প্রশংসা করার মতন কিছু নেই। কিন্তু তারপরো ইবরাহীম (আ) তাঁর বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য ছিলেন। কারন আল্লাহ্ আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যেকোন অবস্থায় মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে। আল্লাহ্ আমাদেরকে বলেছেন-
"ANISH KURLI WALI WALIDAIKA"- Be Grateful to Me, and to Both of your parents.
আল্লাহ্ আমাদেরকে বলেননি- "আমার প্রশংসা কর, তারপর তোমার বাবা-মায়ের।" আল্লাহ্ আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে আদেশ দিয়েছেন। এটা কোন অনুরোধ নয়, এটা আদেশ। আপনার বাবা-মা যদি কাফির বা মূর্তিপূজারীও হয় এবং তারা আপনাকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্য জোর-ও করে, তারপরেও আপনি তাদের প্রতি ভাল আচরন করতে বাধ্য। আপনি কখনই তাদের শির্কের প্রশংসা করবেননা, কিন্তু আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য কারন তারা আপনার মা-বাবা, তারা আপনাকে লালন পালন করেছেন।
যখন আমরা মুসলিমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি, তখন আমরা আল্লাহকে মন থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ঠিক "এই" মূহুর্তে তিনি যা করছেন আমাদের জন্য , তাঁর জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি যে আমাদেরকে প্রতি সেকেন্ডে ভালবাসা ও দয়া দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেজন্যে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ/কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ্ হচ্ছেন নিখুঁত, তাঁর সিদ্ধান্ত ও কাজ শতভাগ নিখুঁত, এজন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করি। আর । তিনি যেটাই করেন, সেটা হচ্ছে পারফেক্ট, সেটা এরচে ভালো কোনভাবেই হতে পারেনা, এজন্য ধন্যবাদের সাথে সাথে আমরা তাঁর প্রশংসা করি। কাজেই আলহামদুলিল্লাহ হচ্ছে দুইটি জিনিস, এবং একসাথে একই সময়ে এই দুটো জিনিস-
১- আল্লাহর প্রতি প্রশংসা জানানো ( Praise is for Allah)
২- আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো ( Thanks is for Allah)
প্রচলিত অনুবাদে লেখা থাকে "আলহামদুলিল্লাহ= সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য" . যদি আল্লাহ্ বলতেন "আল-মাদ্হু-লিল্লাহ" , তাহলে এই অনুবাদটা ঠিক ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ সেটা বলেননি, কাজেই এই অনুবাদটা আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থটাই ঠিকমত তুলে ধরতে পারেনা, ভাব তো পরের কথা।
আমি আলহামদুলিল্লাহ শব্দের শুদ্ধতর আরেকটা অনুবাদ দিচ্ছি-
Alhamdulillah= All Praises and Thanks/Gratitude belong to Allah.
যেহেতু ধন্যবাদকে আরবিতে বলা হয় "শুক্র" আর প্রশংসাকে আরবিতে বলা হয় "মাদ্হ", কাজেই আলহামদুলিল্লাহ না বলে অর্থ অপরিবর্তিত রেখে কি আমরা এটাকে অন্যভাবে বলতে পারি না ? -
" আল-মাদ্হু ওয়া শুক্রু লিল্লাহ" - (All Praises and Thanks/Gratitude belong to Allah)
যদি দুইভাবে বললেই একই অর্থ হয় তাহলে কি আমরা আলহামদুলিল্লাহকে অন্যভাবে বলতে পারি না?? না, আমরা পারি না। অনুবাদ একই শোনালেও দুইভাবে বলার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, যদি আমরা একটু বুঝতে পারি।
" আল-মাদ্হু ওয়া শুক্রু লিল্লাহ" শুনলে মনে হতে পারে, মাঝে মাঝে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি, আবার মাঝে মাঝে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু না, সেটা কখনোই না। আমরা একই সাথে, একই মূহুর্তে তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আর এক শব্দে এই দুটি অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য "হাম্দ" এর চেয়ে উন্নত কোন শব্দ হতে পারে না !!!
২. বিশেষ্য নাকি ক্রিয়া? - Noun or Verb?
আরবিতে "আহ্মাদু" মানে হচ্ছে- আমি প্রশংসা করছি। যদি আল্লাহ্ কুর'আন শুরু করতেন "আহ্মাদুল্লাহ" (আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি) দিয়ে, তাহলে কি কোন সমস্যা ছিল? আমরা তো আল্লাহর প্রশংসা করিই, তাইনা?
সমস্যা ছিল। আহ্মাদুল্লাহ একটি ক্রিয়াপদ বা Verb. আর প্রত্যেকটি ক্রিয়াপদের একটি নির্দিষ্ট "সময়কাল ( Tense) " থাকা আবশ্যক। যখন আমি বলি আহ্মাদুল্লাহ, তার মানে আমি ঠিক এই মূহুর্তে এই সময়ে (Right now) আল্লাহর প্রশংসা করছি (present tense) . কিন্তু অন্যসময় আমি তাঁর প্রশংসা নাও করতে পারি ! Verbs are TEMPORARY.
আলহামদুলিল্লাহ একটি বিশেষ্য বা Noun. বিশেষ্য জাতীয় শব্দের কোন Tense নাই। আপনি যদি বলেন - "গোলাপ সবচেয়ে সুন্দর" , আপনি বুঝান না যে গোলাপ আজকে সুন্দর, বা আগামীকাল সুন্দর হবে, বা গতকালকে সুন্দর ছিল। গোলাপ সবসময়েই সুন্দর। আপনি ঘুরিয়েও বলতে পারেন- সব সৌন্দর্য গোলাপের ! Nouns are TIMELESS and PERMANENT.
যখন আল্লাহ্ বলেন "আলহামদুলিল্লাহ", তার মানে হচ্ছে- Praise is Allah's . আল্লাহ্ এখানে কোন সময়কাল নির্ধারন করে দেন নাই, এখানে কোন Tense নেই। আল্লাহ্ হচ্ছেন অমুখাপেক্ষী- আস সামাদ। সকল প্রশংসা ইতিমধ্যেই তাঁর, সকল প্রশংসার মালিক ইতিমধ্যেই তিনি। আমরা সারাজীবন ধরে তাঁর প্রশংসা করলেও তাঁর প্রশংসা একবিন্দু বাড়বে না, পৃথিবীর একটি মানুষও আজীবন একবারও আল্লাহর প্রশংসা না করলেও তাঁর প্রশংসা বিন্দুমাত্র কমবে না। আমাদেরকে আল্লাহর কোন দরকার নেই, আমাদের প্রশংসার আল্লাহর কোন দরকার নেই, তারপরো তিনি আমাদেরকে সম্মান দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন যাতে আমরা তাঁর প্রশংসা করতে পারি। আল্লাহ্ স্থায়ী, তাঁর প্রশংসাও স্থায়ী। তাই হাম্দ শব্দটি একটি বিশেষ্য। আল্লাহ্ কতটা অমুখাপেক্ষী সেটার একটা নমুনা আল্লাহ্ আমাদেরকে এই হাদিসে দিয়েছেন-
" হে আমার বান্দারা ! যদি তোমাদের মানুষ ও জীনদের প্রথমজন থেকে শুরু করে শেষজন ( পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে) একটি সমতল ভূমিতে একসাথে দাঁড়ায়, আর তারা প্রত্যেকে তাদের যা ইচ্ছা তা আমার কাছে চায়, আর আমি যদি যে যা চায় তা তাকে দিয়ে দিতাম, তাহলে একটা সুঁইকে সমুদ্রে ডুবিয়ে তুলে আনলে তার মাথায় সমুদ্রের যতটুকু পানি লেগে থাকে, আমার রাজত্ব সেই সামান্য পরিমানও কমত না । (মুসলিম) "
আল্লাহ্ যা কিছু করেন, সবকিছুই প্রশংসা ও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহ্ হচ্ছেন নিখুঁত। ত্রুটি, ভুল, অন্যায়, অবিচার, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদি যাবতীয় নিচু মানের বৈশিষ্ট্য থেকে তিনি মুক্ত। এগুলো সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য, স্রষ্টার নয়। আলহামদুলিল্লাহ শব্দের সবচেয়ে বড় ভাবার্থ হচ্ছে এটাই। একজন মুসলিম আল্লাহর যেকোন কাজের জন্য, প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের জন্য আল্লাহকে বলে- " সব প্রশংসা কেবল আপনার আল্লাহ্। আর আপনি যা করলেন, আপনি যেভাবে করলেন, সেটার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যেহেতু আপনি এটা করেছেন, কাজেই এটাই আমার জন্য বেস্ট। থ্যাঙ্ক ইউ আল্লাহ্। আলহামদুলিল্লাহ"।
এই একটি শব্দ আপনার জীবন পালটে দেওয়ার জন্য একাই যথেষ্ট। শুধুমাত্র এই একটি শব্দ। এটি কুর'আনের সূচনা, প্রথম শব্দ মাত্র। অথচ কুর'আনের ভেতরেই এখনো আপনি ঢুকেন নাই, পুরো বইটাই বাকি আছে! যেভাবে আল্লাহ্ কুর'আনের সূচনা করেছেন, তার কোন তুলনা হয়না। আল্লাহ্ নিজের নাম আগে রেখে বলতে পারতেন- "লিল্লাহিল হাম্দ" , অর্থ একই দাঁড়াত। কিন্তু আল্লাহ্ চেয়েছেন আমরা যেন আগে শুধু "হাম্দ" শব্দটি নিয়ে চিন্তা করি, আমরা যেন বুঝতে পারি কত অপরিসীম মহান এক সত্ত্বার কথা আমরা পড়তে যাচ্ছি এখন। মানুষকে কৃতজ্ঞতা শেখানোর জন্য আল্লাহর প্রথম শব্দটি হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যদি কৃতজ্ঞ হতে না পারি, আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে না পারি, আমরা কোনদিনও আল্লাহর কথাগুলোকে ও আল্লাহকে এপ্রিশিয়েট করতে পারবনা। একজন বিশ্বাসী হতে হলে আপনার মধ্যে প্রথম যেই জিনিসটা লাগবে সেটা হচ্ছে হাম্দ, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না হতে পারলে আপনি কুর'আনের বাকি গাইড্যান্স এর কথা ভুলে যান, কারন সেগুলো আপনার তেমন কোন কাজে আসবে না। আপনার জীবন কেটে যাবে কমপ্লেইন করে করে।
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ নাস্তিক( Atheist) আছে যারা স্রষ্টা আছেন কিনা এটা নিয়েই নিশ্চিত না। এমনকি কোটি কোটি মুসলিম আছে যারা তাদের জীবন নিয়ে হতাশ। আপনি আপনার চারপাশেই এমন মুসলিম দেখতে পারবেন। তাদের কমন কমপ্লেইনগুলো হল অনেকটা এরকম।
- "আল্লাহ্ কেন আমার সাথেই এমন করলেন? আমার জীবনে কেন এরকম হল? আমি এটা ডিজার্ভ করিনা। এটা আমার সাথে অবিচার। লাইফ ইজ সো আনফেয়ার। "
- " আমি ভাল নেই। ভাল থাকার মতন কিছু নেই আমার জীবনে। ওরা তো আমার চেয়ে অনেক ভাল আছে ।"
- আমার চাকরিটা ভাল না। অমুক কত ভাল একটা চাকরি করে। আমি এতো কম বেতন পাই কেন? "
এদের সবার সমস্যা একটাই। এরা কেউ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারছেনা। এরা কেউ আল্লাহকেই এপ্রিশিয়েট করতে পারছেনা, নিজের জীবন তো দূরের কথা। এরা সবাই কোন না কোন ভাবে হতাশ, ডিপ্রেস্ড। "আলহামদুলিল্লাহ" একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় ডিপ্রেশনের ঔষধ। একজন মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারেনা। ইসলামে হতাশ হওয়ার মতন কিছুই নেই। একজন মুসলিম জানে যে, আল্লাহ্ প্রতি মূহুর্তে তাকে দেখেশুনে রাখছেন, আল্লাহ্ তাঁর জন্য সেটাই করবেন যেটা তার জন্য সবচেয়ে ভাল। আমি বলিনি যে - একজন মুসলিম "বিশ্বাস" করে। আমি বলেছি, একজন মুসলিম "জানে" । He doesn't only believe, he knows...without any doubt. হতাশা দূর করার জন্য এমনকি আজকালকার মুসলিমরাও "কোয়ান্টাম মেথড" জাতীয় জায়গায় যেয়ে হতাশা দূর করার কোর্স করে, নীলক্ষেত এর ফুটপাথ থেকে "তুমিও জিতবে" জাতীয় আজেবাজে বই পড়ে। কিন্তু আল্লাহ্ যে যাবতীয় সমস্যার সমাধান সহ "কিভাবে মুসলিম হতে হয়" এর একটা পুরো ম্যানুয়াল বই কুর'আন দিয়ে দিয়েছেন সেটা খুলে দেখার ইচ্ছা বা ধৈর্য তাদের হয়না। এরচে আফসোস আর কি হতে পারে?
৩. কেন আলহামদু-লি- "আল্লাহ্" ??
আলহামদুলিল্লাহ শব্দটিতে আল্লাহ্ প্রথমে আমাদেরকে হাম্দ অংশটি বুঝিয়েছেন। তারপর তিনি বলেছেন- হাম্দ হচ্ছে আল্লাহর জন্য- আলহামদু-লি-আল্লাহ ( আরবিতে লি = জন্য, For ) । আল্লাহর আরো অনেক নাম আছে। আমি কয়েকটা বলছি। আর-রাহমান, আর-রাহীম, আল-মালিক, আল-কুদ্দুস...ইত্যাদি। যদি সবগুলোই আল্লাহর নাম হয়, আল্লাহ্ কেন বললেন না- আলহামদু-লিল-মালিক ? বা আলহামদু-লির-রাহমান ??
আর- রাহমান মানে অকল্পনীয় দয়ালু। আল-মালিক মানে প্রভু। কুর'আনের প্রথম শব্দটি যদি আলহামদুলিল্লাহ না হয়ে হত আলহামদু-লির-রাহমান, তাহলে আমরা প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতাম আল্লাহর একটিমাত্র গুনবাচক নামকে এবং এটার অনুবাদ হত- " Praise and Thanks is for the Unimaginably Merciful".
কিন্তু আমরা শুধুমাত্র আল্লাহকে তাঁর দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই না। বরং আল্লাহর যা কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা জানি, আর যা কিছু আমাদের জানার বাইরে, সবকিছুর জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাই আমাদের এমন একটা শব্দ দরকার যেটা আল্লাহর সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে একসাথে তুলে ধরবে। আর সেই একমাত্র শব্দটি হচ্ছে- আল্লাহ্ । তাই আল্লাহ্ আমাদেরকে শিখিয়েছেন- আল হামদু লি আল্লাহ্ ।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে “শুক্র(কৃতজ্ঞতা)” আর “সব্র(ধৈর্য্য)” এই দুটি জিনিশ আপনাকে এক সাথে করতে হবে। আপনি যদি শুধু ধৈর্য্য ধারন করেন কিন্তু কৃতজ্ঞ হতে না পারেন, আপনি কখনো মানসিক শান্তি পাবেন না। আপনার জীবনে ছোট মাঝারি বড় সমস্যা আসবেই, এটাই জীবন। জীবনে সমস্যা আসলে আমরা সবাই যেটা করি সেটা হল, আমরা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলি। যদিও বা আমরা ধৈর্য্য ধরি, কয়জন আছি আমরা যারা সমস্যাটার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হই ?
আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করতেই পারেন, এটা আমি কি বললাম? সমস্যার জন্য কেন আমরা কৃতজ্ঞ হব? হ্যা, এটাই হচ্ছে সমাধান। কারন আপনি আপনার সমস্যা নিয়ে ভাবেন, আপনি এটা ভাবেন না যে কত হাজার হাজার সমস্যা থেকে আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করে চলেছেন প্রতি সেকেন্ডে। “আপনার” সমস্যাটা আরো অনেক অনেক খারাপ হতে পারত। আপনার চেয়ে অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে ঠিক এই মূহুর্তে এই সময়ে আরো কোটি কোটি মানুষ আছে। আপনি যেহেতু এই লেখা পড়তে পারছেন তারমানে আপনার কাছে এটা পড়ার মতন প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট আছে। আপনি লিখে রাখেন যে আপনি খুব ভাগ্যবান মানুষদের একজন। এই মূহুর্তে অনেক অনেক মানুষ এক বেলা খাবার আর থাকার জন্য একটু আশ্রয় খুঁজছে। এই মূহুর্তে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, আপনি তাদের মধ্যে একজন না। আল্লাহ আপনাকে এক একটা সমস্যা দেন আপনার একটা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। আপনি যদি সমস্যাটার জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহকে বলতে পারেন – “আল্লাহ আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আপনি আমাকে এত ছোট একটা পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন আপনি-ই এর সমাধান করে দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক, একমাত্র আপনিই আমার প্রভু ও রক্ষাকর্তা( ওয়ালী)” . আপনি যদি এটা একবার বলতে পারেন, তাহলেই আপনি দেখবেন ধৈর্য্য ধরা কোন ব্যাপার-ই না।
আমরা এমন একটা সমাজে বড় হই, যেখানে জন্ম পর থেকেই শ্বাস নেওয়ার পাশাপাশি আরেকটা সহজাত অভ্যাস আমরা রপ্ত করি- "কমপ্লেইন করা" . আমাদের বাবা-মা রা তাদের বন্ধুদের চায়ের দাওয়াতে বাসায় নিয়ে আসেন, তারপর শুরু হয় তাদের কমপ্লেইন করা। আমাদের প্রিয় টপিক হল "দেশ কত খারাপ" . দেশ বসবাসের অযোগ্য একটা জায়গা, এখানে বাস করার কোন মানেই হয় না, এখানে কোন নিরাপত্তা নেই, রাজনৈতিক দলগুলো কত খারাপ, দেশে কত দুর্নীতি, খাবারে ভেজাল ও কেমিক্যাল, গ্যাস কারেন্ট পানির সমস্যা, ইত্যাদি হেন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে আমরা কমপ্লেইন শুনিনা বা করিনা। যখন গরম পড়ে তখন আমরা গরম নিয়ে কমপ্লেইন করি, যখন বৃষ্টি হয় তখনো আমরা কমপ্লেইন করি যে রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে, চারদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা। আমাদের সংবাদপত্রগুলো এক একটি ফিতনা-পত্র আর কমপ্লেইন-পত্র ছাড়া আর কিছুই না। সব কিছু মিলিয়ে হতাশ হতে হতে আপনার একদিন হয়ত মনে হবে- “এর মধ্যে আমি বেঁচে থাকব কিভাবে?”
এর মধ্যেই আপনি বেঁচে থাকবেন। কারন আপনাকে চালানোর কাজ আপনি করেন না, করেন আল্লাহ। আপনার সমস্যার জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আল্লাহ আপনাকে সমাধান ও Guidance দিয়েই দিয়েছেন যেটা প্রয়োগ করে আপনি শান্তির একটা জীবন কাটাতে পারছেন না। আপনি শুধু মন থেকে কৃতজ্ঞ হন, এটাই সমাধান। অনেকেই আমরা আছি যারা আলহামদুলিল্লাহ শব্দটা মুখে উচ্চারন করি, তারপর শুরু করি আমাদের কমপ্লেইনগুলো !!
- হ্যা ভাই,আলহামদুলিল্লাহ, আছি আরকি কোনরকম । কি প্রচন্ড গরম পড়েছে দেখেছেন? একদম জঘন্য অবস্থা। এইবার ঠিকমত বৃষ্টি হয়নাই, আরো বেশি বৃষ্টি দরকার। ভাবসিলাম ফল কিনব কয়েকটা, যেই ফরমালিন ভাই, ফল কিনার চেয়ে বিষ কিনা ভাল। দেশের অবস্থা দেখসেন ভাই? চরম খারাপ। সব চোর বাটপারের দেশ রে ভাই। এই দেশের কিছু হবেনা আগামি ৫০ বছরেও...(চলতে থাকবে) ।
আমরা মুসলিমরা আলহামদুলিল্লাহর মানুষ, We are the people of Alhamdulillah. পৃথিবীতে আরো অনেক ধর্মের মানুষ আছে। একটি জিনিস কোন ধর্মে নেই একমাত্র ইসলাম বাদে। সেটি হল আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে নিজের মনকে উজাড় করে একটিমাত্র শব্দ ব্যবহার করে স্রষ্টার প্রতি ধন্যবাদ, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা, আন্তরিকতা, আবেগ, আনুগত্য প্রকাশ করার সৌভাগ্য আল্লাহ্ একমাত্র আমাদের মুসলিমদেরকেই দিয়েছেন। এরপর আপনি চিন্তা করে দেখুন আপনি কতটা সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান একজন মানুষ। মুসলিমরা সারাক্ষন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, মুসলিমরা সারাক্ষন পজিটিভ চিন্তা করে। আমরা যদি সত্যি সত্যিই আলহামদুলিল্লাহ উপলব্ধি করতাম ,আমরা কখনো ডিপ্রেস্ড হতাম না, আমরা কখনো আমাদের জীবন নিয়ে কমপ্লেইন করতাম না। আমাদের সমস্যাগুলো আল্লাহর দয়া, ভালবাসা ও নিয়ামতের চেয়ে কখনোই বেশি না।
একটি ঘটনা দিয়ে আমি আর্টিকেলটা শেষ করব। সেদিন এপ্রিলের ২৫ তারিখ শুক্রবার ছিল। তারিখটা আমার মনে আছে, কারন আমার জীবনের বিশেষ দিনগুলো আমার মনে থাকে। পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে ঢাকায় ভয়াবহ গরম পড়েছিল, দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়না, প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যেত। মানুষ গরমে সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। ফেসবুকে মানুষের এ জাতীয় স্ট্যাটাসও দেখলাম যে আমাদের উপর নাকি আল্লাহর গজব পড়েছে । শুক্রবার জুম্মাহর নামাজে ইমাম বললেন উনারা ছোটবেলায় খরা হলে দল বেঁধে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তেন। এমনও কখনো হয়েছে যে বাসায় ফিরতে ফিরতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমার কাছে একটা দু'আর বই আছে 'হিসনুল মুসলিম' নামে। সেখানে একটা বৃষ্টির দু'আ আছে - "আল্লাহুম্মা আগীসনা, আল্লাহুম্মা আগীসনা, আল্লাহুম্মা আগীসনা". সেদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আমি অনেকবার দু'আ টা পড়েছিলাম। আমি আল্লাহকে এটাও বলেছি- "আল্লাহ্ আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। গরম নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আপনি যাই করেন সেটাই হচ্ছে নিঁখুত। কিন্তু আমি একজন ক্ষুদ্র ও দূর্বল মানুষ। গরমে আমি কষ্ট পাচ্ছি ও অন্যান্যরাও কষ্ট পাচ্ছে। আমি আপনার কাছে বৃষ্টি চাই। আমাকে বৃষ্টি দিলে আপনার কিছু হবেনা, কিন্তু আমার অনেক উপকার হবে।"
আমি আল্লাহকে দেখতে পাইনা, কিন্তু আমি জানি তিনি আমাকে প্রতি সেকেন্ডে নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করেন। আমি জানি আমার প্রতিটি কথা তিনি শুনেন। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র আমার জন্য তাঁর কাছে একান্ত আলাদা সময় আছে। আমার দু'আর উত্তর দিলেন আল্লাহ্ ঠিক একদিনের মধ্যে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারা ঢাকায় বৃষ্টি শুরু হল। হয়ত এটা খুবই সাধারন একটা ঘটনা, হয়ত সেদিন এমনিই বৃষ্টি হত। আমি সেটা নিয়ে কেয়ার করিনা । আমি নিজের চোখে দেখেছি দু'আ করলে আল্লাহ্ উত্তর দেন। গরমে আমার কষ্ট হচ্ছিল, আমার বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছি, আল্লাহ্ আমাকে সেটা দিয়েছেন। আমি শুধু তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম।
একজন মুসলিম হাঁচি দিয়েও আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়। খাওয়া পরা ঘুমানো টয়লেট করা সহ পৃথিবীর যাবতীয় হালাল কাজের জন্য একজন মুসলিম আল্লাহকে স্মরন করে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে নেয়। একজন মুসলিমের জীবনের সারমর্ম হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
আপনি যদি এই আর্টিকেল এর প্রত্যেকটি কথাও ভুলে যান, খালি নিচের কয়েকটি কথা মনে রাখুন ও আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন। ফলাফল আপনি নিজের চোখেই দেখতেই পারবেন।
১- এই আর্টিকেল পড়ার পর থেকে ঠিক আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আপনি পৃথিবীর একটা বিষয় নিয়েও কমপ্লেইন করবেন না। অন্য কারোর কাছে করবেন না, এমনকি নিজের কাছেও করবেন না। আপনি কতটা কৃতজ্ঞ হতে পারেন এটা হবে সেটার প্রথম এসাইনমেন্ট। ইচ্ছা হলে আপনি একটা সাদা কাগজে লিখে আপনার ঘরে টানিয়ে রাখতে পারেন- I will not complain about anything today.
[] যদি কারেন্ট চলে যায়, আপনি বলবেন- "আলহামদুলিল্লাহ, মাত্র ৫ বার কারেন্ট গিয়েছে, ১০ বার তো যায়নি।"
[] যদি গোসলের পানি না থাকে, আপনি বলবেন- "আলহামদুলিল্লাহ, খাওয়ার পানি তো আছে।"
[] যদি প্রচন্ড গরম পড়ে, আপনি বলবেন- "আলহামদুলিল্লাহ, গরম পড়েছে। কিন্তু দূর্ভিক্ষ ক্ষরা মহামারী কিছুই হয়নি "
[] আপনার জীবনে আগামী ২৪ ঘন্টায় ভাল-মন্দ যেটাই ঘটবে আপনি সেটার জন্যই মন খুলে আল্লাহর প্রশংসা করবেন। যদি আপনার হাত কেটে যায়, আপনি আল্লাহর প্রশংসা করবেন, কারন আপনার হাত এখনো আস্ত আছে, সেটা ভেঙ্গে যায়নি।
আপনি যদি ২৪ ঘন্টা এভাবে পার করতে পারেন, আপনি এরপর টার্গেট করবেন আগামী এক সপ্তাহ আপনি একটি কমপ্লেইনও করবেন না। এভাবে আপনি নিজের কৃতজ্ঞতাকে বাড়াতে থাকবেন আস্তে আস্তে। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন আপনি কোথায় পৌঁছে যান।
২- আপনি একটা সাদা কাগজ নিবেন। সেটাতে আপনি হেডিং দিবেন "Things for whose I will Thank Allah" . সেটাতে আপনি একটা একটা করে লেখা শুরু করবেন আল্লাহ্ আপনাকে আজ পর্যন্ত কি কি জিনিস দিয়েছেন। লেখা শেষ হলে সেই কাগজটা একবার পড়ে নিয়ে পাশে রেখে আপনি ২ রাকাত নামাজ পড়বেন ঘুমানোর আগে। সেই নামাজে আপনি প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাবেন। আপনার লিস্টটা অনেকটা এমন হতে পারেঃ My life, For making me Human & Muslim, house, food, water, family, parents, education, healthy body, eyesight, 4 limbs, Internet.......... |
কয়েকবছর পরের কথা। আপনার বন্ধু আপনাকে ফোন করে জিগেস করেছে "কেমন আছিস? আঙ্কেল আন্টি কেমন আছেন? " . আপনি হেসে বললেন- " আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল আছি বন্ধু। মা গতকালকে মারা গেছেন।" আপনার বন্ধু স্থম্ভিত গলায় বলল- "কিভাবে তুই ভাল আছিস?" আপনি তাকে বললেন- "কারন আল্লাহ্ যা করেন তা হচ্ছে পারফেক্ট। আর বাবা বেঁচে আছেন এখনো, আমি বেঁচে আছি এখনো, তাই আমি ভাল আছি। "
আমি অত্যন্ত আশাবাদী। কিন্তু আমি এরকম ছিলাম না সবসময়। আল্লাহ্ আমার শিক্ষক। তিনি আমাকে কৃতজ্ঞতা শিখিয়েছেন। তিনি যেভাবে শিখান তার ধারেকাছেও কেউ আসতে পারেনা। আমি আপনাকে নিয়েও আশাবাদী। আপনি চেষ্টা করুন, আপনি নিশ্চয়ই পারবেন উপরের কয়েকবছর পরের "আপনার" মতন হতে। আপনার শেষ নিঃশ্বাস না পড়া পর্যন্ত আপনার হাতে সময় আছে এখনো। আপনি চেষ্টা করুন। আপনার জীবন একটা অমূল্য গিফট, এটাকে নষ্ট করবেন না দয়া করে।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: