Saturday, October 3, 2015

আল্লাহ্‌ যেভাবে কথা বলেন

কিছুদিন আগে আমার সাথে একজন মুসলিমের কথা হয়। সে একজন জন্মগত মুসলিম, খুব সেক্যুলার ও না, খুব প্র্যাকটিসিং ও না, এই যুগে যেটা খুব স্বাভাবিক । কথাপ্রসঙ্গে কুরআন এর একটা বিষয় এল। সে আমাকে যে কথাটা বলল সেটা শুনে আমি একটা বড়ো ধাক্কা খেলাম। আমার চিন্তায় ছিল না একজন মুসলিম এভাবে ভাবতে পারে। সে আমাকে যেটা বলেছে-
" কুর'আন যে আল্লাহর বানী এটা কে প্রথম দাবি করেছেন? মুহাম্মাদ(স). তিনি যে আল্লাহর মেসেঞ্জার এটা কে প্রথম দাবি করেছেন ? মুহাম্মাদ(স). তাহলে তিনি যে সত্যি বলেছেন তার প্রমান কি? "
আমি তাকে জিগেস করেছি তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল গ্রন্থ ও তাদের মেসেঞ্জারদের নিয়ে তার মতামত কি। সে একই কথা বলেছে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম । ঘটনাটা নিয়ে আমি দিনের পর দিন চিন্তা করেছি এবং কিছু কিছু বাস্তব সত্য আমি বের করেছি। আমি চেষ্টা করেছি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার।

এই প্রশ্নটি একটি লুপের মতন গত সাড়ে ১৪শ বছর ধরে পৃথিবীতে ঘুরছে। কুর'আন যে আল্লাহর বানী তার কি প্রমান আছে? কি প্রমান যে এটি কোন মানুষ লেখেনি? কি প্রমান যে এটি মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব না? যদি এটি সরাসরি অবিকৃত অবস্থায় পৃথিবী, মহাকাশ, এমনকি মহাবিশ্বের বাইরে থেকেই আসে, নিশ্চয়ই স্রষ্টা এর মধ্যে প্রমান রেখে দিয়েছেন? কি সেইগুলো? আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি এই অলৌকিক বইটিকে। আসুন আমরা স্বচ্ছ যুক্তি দিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।

আপনি একজন মুসলিম। আমি একজন মুসলিম। আমরা জন্ম থেকেই মুসলিম। আমাদের বাবা মা মুসলিম না হলে আজকে হয়ত আমরা মুসলিম হতেও পারতাম, না হওয়ার চান্স বেশি ছিল। আমরা জানি যে ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম। আমরা জন্ম থেকেই জানি যে কুর'আন আল্লাহর কথা। আমরা আরবি পড়তে শিখেছি, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র রীডিং পড়া। আমরা আরবি ভাষা জানিনা। এরজন্য আমরা অনুবাদ পড়ি। কিন্তু অনুবাদ আল্লাহর কথা না, অনুবাদ মানুষের লেখা। মানুষের লেখা যতই ভাল হোক, সেটা মানুষের লেখা। আর বেশিরভাগ অনুবাদ পড়ে কারো ভাল লাগেনা, ঘুম আসে, একটু পড়ার পর ভারি ভারি কথা সহ্য করতে না পেরে আমরা রেখে দেই। আমাদের প্রত্যেকের বাসায় কুর'আন আছে। আপনি তো নিজের চোখেই দেখেন সেটা নিয়ে কি কি করা হয়। বয়স্করা সেটা সুর করে পড়ে, কেউ কেউ সেটার তাফসীর পড়ে, কেউ সেটা মুখস্থ করে। বিভিন্ন সময়ে এটার আয়াতকে কোটেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ওয়াজ-মাহফীল-মিলাদে ব্যবহার করা হচ্ছে, কুর'আন রিডীং দিয়ে খতম করা হচ্ছে।

সত্যি কথা হচ্ছে, কুর'আন আল্লাহর বানী এটা আমরা প্রথমত বিশ্বাস করেছি কারন আমরা মুসলিম। আপনি নিজেকে মনের গভীর থেকে প্রশ্ন করুন, আপনি খ্রীষ্টান হলে আপনি বিশ্বাস করতেন কিনা যে বাইবেল হচ্ছে সত্য গ্রন্থ, আর কুর'আন মিথ্যা ? আপনি কি কুর'আন কে পড়ে, বুঝে, এবং নিজের চোখে এর অলৌকিক ব্যাপারগুলো দেখে বিশ্বাস এনেছেন, নাকি আগে থেকেই আপনার বিশ্বাস ছিল, কুর'আন সেই বিশ্বাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছিল মাত্র? আমার কাছে তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর, আছে। আমি বাইবেল পড়ি। আমি দেখেছি সেটায় বিকৃত কথা আছে। আমি বাইবেল বিশ্বাস করি, কিন্তু সেটার সব কথা না। আসল বাইবেল এসেছিল হিব্রু ভাষায়, সেগুলো মানুষ বিকৃত করেছে।

কুর'আন আল্লাহর বই এটা বিশ্বাস করা সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকে দিনদিন কুর'আন আমাদেরকে আকর্ষন করেনি, বরং আমরা কুর'আন থেকে দূরে সরে গেছি। কুর'আন আমাদের কাছে শুধু একটা বই, Just a Normal Book. এর বেশি কিছু নয়। বরং স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি-র বইগুলো আমরা কুর'আন এর চেয়ে অনেক বেশি পড়ি, তিন গোয়েন্দার প্রতি আমাদের যে আগ্রহ কুর'আন এর প্রতি আমাদের তার ধারেকাছেও কোন আগ্রহ নেই। আমরা কুর'আন পড়ি নেকি ও সওয়াবের জন্য, তাজ্‌উইদ সহকারে তিলাওয়াতের জন্য। এটি আমাদের ঘরের তাকের উপর চরম অবহেলায় পড়ে থাকে। আপনি শেষ কবে মন থেকে আগ্রহ নিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী জানার জন্য ও বোঝার জন্য কুর'আন পড়েছেন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। আপনি যে আরবি পড়েছেন আপনি কি কিছু বুঝেছেন? নাকি কোনদিনও অনুবাদ পড়ে আপনি মনের মধ্যে বিশাল কোন ধাক্কা খেয়েছেন? আপনি খাননি, আমি জানি। আমিও খাইনি কখনো। কেন এমন হচ্ছে? আমরা কেন আল্লাহর কথাকে উপলব্ধি করতে পারছি না?

এই হল উত্তর। আমরা আরবি ভাষা, গ্রামার, আরবি সাহিত্য সম্পর্কে ১০০ ভাগ অজ্ঞ। সে কারনে বেশিরভাগ মানুষ কুর'আন কে শুধু রীডিং পড়তে পারে, এর ভেতরে ঢুকতে পারেনা। তারা যেটা বিচার করে, সেটা তাদের অজ্ঞতা থেকে, "তারা কি মনে করে" সেটা থেকে, "তারা কতটুকু কুর'আন পড়তে পারে" সেই জ্ঞান থেকে। আপনি যদি ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়তে যান, আপনাকে ইংরেজী শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলো পড়ানো হবে, যেমন- শেক্সপিয়ার, চার্লস ডিকেন্স। আপনাকে শেখানো হবে, কিভাবে তারা বাক্য বানাতেন, কিভাবে তারা বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতেন। তেমনি আপনি যখন আরবি সাহিত্য শিখতে যাবেন, আপনাকে কুর'আন শিখানো হবে। কারন এর উপরে পৃথিবীতে কোন সাহিত্য নেই আর আসবেও না, এমনকি পৃথিবীর বাইরেও নেই। আমি আরবি ভাষা ও কুর'আন এর একজন ছাত্র, একটি ইউনিভার্সিটি তে আমি পড়ি। আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এই প্রায় শুন্য জ্ঞান নিয়েও আমি নিজের চোখে কুর'আন এর যেই পরিমান অলৌকিক জিনিস দেখেছি, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি । অথচ আমি একসময় ভাবতাম যে একটা সুরা বানানো আর এমন কি কঠিন কাজ, কয়েকটা আরবি আয়াত বসিয়েই দিলেই তো হয়ে যায়। তারপর আমি আবিষ্কার করলাম, আল্লাহ্‌ কুর'আনে কমপক্ষে ৪ বার বলেছেন- যদি ক্ষমতা থাকে এর মতন বা এরচে ভাল কোন সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো আর সাক্ষী নিয়ে এস ( আল-ইসরা ৮৮, হূদ ১৩, ইউনুস ৩৮, বাকারাহ ২৩-২৪) । বহু অমুসলিম নকল কুর'আন বানানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেগুলো দিয়ে সাধারন মানুষকে প্রতারিত করা গেলেও ভাষাবিদরা জাল কুর'আন দেখামাত্র বুঝতে পারেন।

মিরাকল বলে আরবি ভাষায় কোন শব্দ নেই। কুর'আনে কখনো বলা হয়নি এটা একটি "মিরাকল" . যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে "এ'জাজুল কুর'আন"। এ'জাজ একটি ভার্ব বা ক্রিয়াপদ। এটি এসেছে আ'জাজ থেকে। আ'জীজ মানে হচ্ছে হাটু গেড়ে নতজানু হয়ে বসে পড়া( Fall on your knees) বা অক্ষমতা(Incapable). যে কোন কিছুকে অক্ষম করে দেয় তাকে আরবিতে এ'জাজ বলে। কতটুকু অক্ষম? উদাহরন দেই। একজন লোক রাস্তা পার হচ্ছে। একটা ট্রাক ভীষন গতিতে যাচ্ছে, লোকটি দেখেনি। ঠিক শেষ মূহুর্তে সে দেখলো একটা ট্রাক তার গায়ের উপর উঠে যাচ্ছে। মৃত্যুর ঠিক আগে সামান্য এক মূহুর্তের জন্য তার মনে হয়েছিল যে সে নড়তে পারছে না, পাথরের মতন অক্ষম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার যে অনুভূতি হয়েছিল সেটা হচ্ছে "আ'জীজ" আর ট্রাকটি ছিল "এ'জাজ" । কুর'আন নিজেকে এ'জাজ বলেছে কারন এটি এত বেশি শক্তিশালী, কেউ যদি এটাকে মিথ্যা প্রমান করতে আসে, হাটু গেড়ে অক্ষমতা প্রকাশ করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নাই, ঠিক যে ধরনের কিছু অনুভূতি আমার হয়েছে এবং যতবার আমি সেগুলো আবার পড়ি, আবার নতুন করে হয়। এই "অলৌকিক কুর'আন" নামের আর্টিকেল গুলোতে আমি যদিও মিরাকল শব্দটি ব্যবহার করব, কিন্তু আসলে আমি সবসময় বুঝাব যে কুর'আন হচ্ছে একটি এ'জাজ। মিরাকল শব্দটি কুর'আনের জন্য তুচ্ছ একটি শব্দ।

যে ত্রিকোণমিতি পড়েনি, সে স্বপ্নেও কল্পনাও করতে পারবেনা যে একটা চাঁদা দিয়ে একটা পাহাড়ের উচ্চতা বের করে ফেলা যায় মাটিতে বসেই। তার কাছে এটা হয় মিথ্যা, নয় জাদু, নয় অলৌকিক। একই জিনিস হয়েছে কুর'আন নিয়ে হাজার বছর ধরে। যারা বিশ্বাস করেনি তারা বলেছে এটা মিথ্যা, বা যাদু। কিন্তু, আপনি আমার কথা লিখে রাখেন, যে কেউ কুর'আন নিয়ে এক বিন্দু পড়াশুনা করেছে, যে কেউ এটার এমনকি ১% জেনেছে, সে আবেগে সিজদায় মাথা ঠুকতে বাধ্য। কিন্তু একটা শর্ত আছে, তাকে নিরপেক্ষভাবে পড়তে হবে। এমন অনেক অবিশ্বাসী আছে, যাকে আপনি হাজার প্রমান দিন, কোন লাভ নেই, তার কথা একটাই- " সব মিথ্যা। সব বানান। ধর্ম বলে কিছু নেই। সব মানুষের বানানো। "

কুর'আন নিয়ে গত সাড়ে ১৪শ বছর ধরেই তাই ভাষাবিদ ও বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে আসছেন। আমরা সবাই জানি কুর'আন এ এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়া হয়েছে যা আধুনিক বিজ্ঞান শত শত বছর রিসার্চ করে বের করেছে। Astronomy, Expanding Universe, Relativity, Pulsar, Orbit, Black Holes, Rotation of Earth, Barrier between Seas, Fingerprint, Human Embryology, Human Psychology, Mathematics সহ বহু জিনিশ যা অবিশ্বাসীরা কেউ কোন যুক্তি দিয়ে দেখাতে পারেনি কিভাবে এগুলো প্রাচীন একটা বইয়ে লেখা আছে আগে থেকেই।
তাহলে কি এগুলোই কুর'আন এর মিরাকল? উত্তর হচ্ছে- হ্যা এবং না। না কেন? আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আল্লাহ্‌ এমন এক সময়ে এই তথ্যগুলো দিয়েছেন যখন থেকে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি শুরু করেছে। আল্লাহ্‌ জানতেন মানুষ এগুলো আবিস্কার করবে, এবং তারপর এটা বের করবে যে এগুলো আগে থেকেই আল্লাহ্‌ জানেন !! কিন্তু যেই মানুষ কখনো বিজ্ঞান পড়েনি সে কি করবে? আপনি হয়ত মানুষের ভ্রুনবিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন। কিন্তু যে লোকটা পড়াশুনাই জানেনা, জীবনে বিজ্ঞান পড়েনি, তার জন্য কুর'আনের ভ্রুনবিদ্যার আয়াতটি কোন মিরাকল নয়। তার জন্য এটা খুব সাধারন একটা আরবি বাক্য ছাড়া আর কিছুই না।

তাহলে কি হবে? তাহলে হবে। কারন পুরো কুর'আন টাই একটা মিরাকল। আল্লাহ্‌ যেভাবে কথা বলেছেন এটাই একটা মিরাকল। যেভাবে তিনি শব্দ নিয়েছেন, বাক্য তৈরী করেছেন, ঘটনা সাজিয়েছেন, যেভাবে যিনি এই সাহিত্যটি তৈরী করে আমাদেরকে দিয়েছেন, পুরাটাই অলৌকিক ও মানুষের ক্ষমতার বাইরে। কুর'আনের যেই লাইনগুলো "আমার জন্য" মিরাকল, সেটা আপনার জন্য মিরাকল না-ও হতে পারে। আমি কুর'আন পড়ে দেখেছি যে, হুবহু আমার জীবনের কোন একটা ঘটনার সাথে মিলে যায় এমন লাইন আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি আমি যেই কয়টি আয়াত আমার জীবনে যখনি প্রয়োগ করেছি, সাথে সাথে আমার জীবনে পরিবর্তন ঘটে গেছে। এটাই "আমার" জন্য কুর'আনের মিরাকল।

মুসলিমদের একটা সমস্যা হল, যখন কেউ কুর'আন কে মিথ্যা বলে বা অস্বীকার করে, তারা রেগে যায়, তর্ক শুরু করে, প্রমান দেখানো শুরু করে। আপনাকে বুঝতে হবে, কেউ হারার জন্য ডিবেট করতে আসে না। মানুষ ডিবেট করেই এই কারনে, যাতে সে তার যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষ কে গুড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই প্রথমদিন যখন আপনি একজন নাস্তিককে উত্তরে বেশি কিছু বলতে পারবেন না, আপনি বাসায় গিয়ে পড়াশুনা করে পরেরদিন আবার তার কাছে আসবেন এবং দাবি করবেন যে আপনি সঠিক এবং সে ভুল । তার পরেরদিন সে আবার আপনার কাছে আসবে কুর'আনের কোথায় কি ভুল বা অসংগতি আছে সেগুলো নিয়ে। এভাবে কাদা ছোড়াছোড়ি চলতেই থাকবে। আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ্‌ খুব ভাল করেই জানতেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষ সবসময়ই দাবি করবে যে কুর'আন আসলে মানুষের বানানো বা মুহাম্মাদ(স) এর বানানো। সেজন্য আল্লাহ্‌ কুর'আনের মধ্যে এমনভাবে এর প্রমান রেখে দিয়েছেন যাতে মানুষ এটাকে অবিশ্বাস করার বিন্দুমাত্র কোন সুযোগ না পায়। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আগে মানুষকে এই প্রমানগুলো জানতে হবে। আপনি যত নাস্তিক দেখবেন চারপাশে, এরা কেউ কুর'আন নিয়ে পড়াশুনা করেনি কখনো। এরা আগে বিশ্বাস করেছে যে "স্রষ্টা বলে কেউ নেই", কাজেই এরপর আপনি এদের যাই যুক্তি দিবেন এরা আপনার সাথে তর্ক করতেই থাকবে। এদের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।

আপনি মুসলিম, আমি মুসলিম। আমরা সবাই বিশ্বাসী। তাহলে কেন এখন আবার নতুন করে কুর'আন কে জানতে হবে ?? আমরা তো বিশ্বাস করিই যে এটা আল্লাহর কথা? আপনি যদি আমার লেখা আর-রাহমান (http://tinyurl.com/kw3ow49) আর সালাতের শব্দগুলোর উপলব্ধির উপর লেখা(http://tinyurl.com/kbfyjsu) দুইটি পড়েন, আপনি আবিষ্কার করবেন আল্লাহ্‌ যে কতটা মহান তা আপনি আগের চেয়ে আরো বেশি করে বুঝতে পারছেন। আপনি আরো বেশি করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারছেন। এই সামান্য কয়েকটি তথ্য যে আপনার বিশ্বাসকে কতটুকু বাড়িয়ে দিবে তা আপনি পড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারবেন। একইভাবে আপনি কুর'আন কে যত ভাল জানবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে আল্লাহ্‌ কিভাবে কথা বলেন, আল্লাহ্‌ কিভাবে বাক্য তৈরী করেন, আল্লাহ্‌ কিভাবে শব্দ বেছে নেন। তারপরে আপনি অবাক হবেন। তারপরে আপনি আমার মতন স্তব্ধ হয়ে বসে থাকবেন । তারপরে আপনার মনে হবে আপনি কুর'আনের মহীমার কাছে পরাজিত। তারপরে আপনি উপলব্ধি করবেন কিভাবে কুর'আন আপনার চিন্তা-চেতনার মধ্যে বসে যাওয়া শুরু করেছে। আপনার মনে হবে আপনি কুর'আনকে অনুভব করতে পারছেন, আপনি আল্লাহকে অনুভব করতে পারছেন। আর তখন আপনি আবার নতুন করে বিশ্বাস আনবেন যে এই বইটি এই মহাজগতের বাইরের থেকে এসেছিল।
এই নিয়মিত লেখাগুলোতে আমি একটি সাহিত্য বই হিসেবে কুর'আনের অলৌকিক ব্যাপারগুলো একটার পর একটা তুলে ধরব। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কিভাবে এটি একটি মিরাকল। বৈজ্ঞানিক তথ্য গুলোও আমি আস্তে আস্তে তুলে ধরব। আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আমি সময় নিয়েছি এটার জন্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ্‌ কুর'আন শিখিয়েছেন ২৩ বছরে। আমারও কোন তাড়া নেই। ১ম পর্ব এখান থেকে শুরূ হচ্ছে। এই ভূমিকাটি আর কোন পর্বে আসবেনা।
.................................................................................
১ম পর্ব- আল্লাহর কথা বলার সৌন্দর্যঃ
প্রথম উদাহরনঃ ঈসা(আ) কে যেভাবে আল্লাহ্‌ বর্ননা করেছেন কুর'আন এ-
নবী মূসা(আ) বনী ইসরাইল জাতির মেসেঞ্জার ছিলেন। নবী ঈসাও বনী ইসরাইল জাতির মেসেঞ্জার ছিলেন। ৬১ নম্বর সূরা হচ্ছে আস-সফ। আমরা এই সূরার ৫ আর ৬ নম্বর আয়াত দুটি দেখব। ৫ নম্বর আয়াতে মূসা(আ) তার গোত্রকে ( আরবিতে "কওম") উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলেছেন । ৬ নম্বর আয়াতে ঈসা(আ) তার গোত্রকে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলেছেন। দুজনের গোত্র একই, ইসরাইল জাতি, যদিও নবী মূসা আর নবী ঈসা এর সময়ের মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য।
আয়াত ৫( অংশবিশেষ) -
Wa-ith qala moosa liqawmihi ya qawmi
যখন মূসা তাঁর জাতিকে বললঃ হে আমার জাতি
When Moosa said to His Nation - " O My Nation !"
আয়াত ৬ ( অংশবিশেষ) -
Wa-ith qala AAeesa ibnu maryama ya banee isra-eela
যখন মারিয়াম এর পুত্র ঈসা বলল- হে ইসরাইল এর সন্তানেরা!
When Eesa , Son of Mary, said, "O Children of Israel ! "
দুইটি বাক্য একদম পর পর। কিন্তু কেন ঈসা(আ) মূসা (আ) এর মতন করে বললেন না- "হে আমার সম্প্রদায় "? কেন তিনি তাদেরকে Children Of Israel (Banee Israel) বলে সম্বোধন করলেন?
মানুষের আইডেন্টিটি আসে বাবার কাছ থেকে। যেমন- মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ, আলী ইবন আবু তালিব। আমাদেরকেও বলা হয়- বনী আদম, মানে আদমের সন্তান। আমাদেরকে কখনো বলা হয় না- বনী হাওয়া। এটা পৃথিবীর শুরু থেকেই হয়ে আসছে।
মূসা(আ) যখন তাঁর জাতিকে "হে আমার জাতি" বলে ডাকলেন, তিনি এটাই বুঝালেন যে, তাঁর পিতাও ইসরাইল জাতির একজন। কিন্তু পুরো কুর'আনে কোথাও ঈসা (আ) কখনই তাঁর জাতিকে " হে আমার জাতি" বলে ডাকেন নি। যতবারই তিনি তাদেরকে সম্বোধন করেছেন, তিনি বলেছেন "O Children Of Israel". কিন্তু কেন???
কারন, ঈসা(আ) কখনই বলতে পারেন না "হে আমার জাতি" , কারন তাঁর পিতা ইসরাইল জাতির কেউ ছিলেন না। তাঁর কোন পিতা ছিল না। তিনি কোন পিতা ছাড়াই অলৌকিক উপায়ে মারিয়াম (আ) এর গর্ভে জন্ম নেন। তাই তিনি যতবারই ইসরাইল জাতিকে কিছু বলেছেন , তিনি বলেছেন "হে ইসরাইল এর সন্তানেরা" . এছাড়াও আল্লাহ্‌ বলেছেন- ঈসা ইবন মারিয়াম। প্রচলিত "পিতা থেকে আইডেন্টিটি আসে" এই নিয়ম ভেঙ্গে আল্লাহ্‌ তাঁকে তার মায়ের পদবি দিয়ে নামকরন করেছেন। মাত্র একটি দুইটি শব্দ হেরফের করে মহান আল্লাহ্‌ নবী ঈসা(আ) এর আসল পরিচয় আমাদের দিয়ে দিয়েছেন এখানে।
উদাহরন ২- দুইটি হৃৎপিণ্ড।
সূরা আহযাব। আয়াত নম্বর ৪. প্রথম অংশবিশেষ-
Ma jaAAala Allahu lirajulin min qalbayni fee jawfihi
আল্লাহ কোন পুরুষ মানুষের দেহের মধ্যে দুটি হৃৎপিণ্ড স্থাপন করেননি ।
Allah did not place two hearts inside the body of any man.
আসুন দেখা যাক। "Rajul" শব্দটির মানে হচ্ছে পুরুষ মানুষ। আল্লাহ এখানে রাজুল না বলে "নাস( ManKind) " বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি বলেননি। তিনি বিশেষভাবে পুরুষকে বুঝিয়েছেন এখানে। যদিও এই আয়াতের বাকি অংশটুকুতে নারীদের কথা বলা আছে। কেন আল্লাহ একটি রহস্য করলেন??
হৃৎপিণ্ড বুকের ভিতর থাকে। যখনি কুর'আনে হৃৎপিণ্ড-এর প্রসঙ্গ এসেছে, আল্লাহ্‌ সবসময় বলেছেন - "Kulubullati FisSudur- বুকের ভিতর যে হৃৎপিণ্ড". কিন্তু এই আয়াতে, আল্লাহ্‌ বুকের ভিতর না বলে "দেহের ভিতর" বলেছেন। তিনি বলেছেন- " Jawf- পূরো দেহ" | কেন তিনি আরো একটি রহস্য করলেন? স্বাভাবিকভাবে বললেন না কেন আল্লাহ?
আল্লাহ্‌ ঠিকই বলেছেন। কোন পুরুষ মানুষের শরীরে দুইটি হৃৎপিণ্ড থাকে না। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে একজন নারীর শরীরে দুইটি হৃৎপিণ্ড থাকে। কারন, নারীরা গর্ভধারন করতে পারে। আর প্রেগন্যান্ট হলে তার শরীরে আরেকটি হৃৎপিণ্ড জন্ম হয়। কিন্তু, সেই দুইটি হৃৎপিণ্ড একটি থাকে তার বুকের ভেতর, আরেকটি থাকে তার জরায়ুর ভেতর। কাজেই আল্লাহ্‌ "কালব(বুক)" ব্যবহার না করে " "জাউফ( শরীর)" কথাটি ব্যবহার করেছেন।
এভাবে সাহিত্য সৃষ্টি করতে কি আপনি কাউকে দেখেছেন কখনো???
অনুবাদ পড়ে কখনো কি জীবনেও আপনি এই অসাধারন জিনিসগুলো খেয়াল করতে পেরেছেন? একমাত্র আল্লাহর লেখা ভাষা বাদে আর কোন ভাষাতেই এগুলো ফুটে ঊঠবে না । পবিত্র কুরানে ছন্দের সাথে সাথে টপিক চেইঞ্জ হয়ে যাওয়ার যে অসাধারণত্ব, সেটাও কখনো কোনোদিনও অনুবাদে ফুটে ওঠা সম্ভব না। তাই নিরপেক্ষভাবে যদি কেউ সত্যি সত্যি কুর'আন বুঝতে চায়, তাকে আরবি শিখতেই হবে। এবং সে শিখবেই। কারন আল্লাহ্‌ "সূরা কামার" এ কমপক্ষে ৪ বার বলেছেন- "আমরা কুর'আন কে মনে রাখার জন্য সহজ করে তৈরী করেছি , কেউ কি আছে যে এটা থেকে শিক্ষা গ্রহন করবে? "

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: