সূরা ইখলাসের মধ্যে তাওহীদ এর মূলনীতির একটি গুরুত্তপুর্ন বিষয় আছে। আমি চেষ্টা করেছি সহজ ভাষায় জানিয়ে দেওয়ার। কয়েকটি লিঙ্ক দিয়েছি, যদি আপনার দিন থেকে ১০ মিনিট সময় খরচ করেন , ইনশাআল্লাহ আপনি শিখতে পারবেন।
সূরা ইখলাসঃ-
-কু’ল হু আল্লাহু আহাদ ( বলুন, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় )
-আল্লাহুস সামাদ (আল্লাহ চিরন্তন/আদি-অন্তহীন/ অনির্ভর)
-লাম ইয়া লিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ (তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি)
-ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ (এবং তাঁর সাথে কোন কিছুর তুলনা হয়না )
তাওহীদ মানে " আল্লাহর একত্ববাদ" যেটা ইসলামের প্রধান ভিত্তি। তাওহীদ এর স্বীকৃতি দেয় যে বানী তা হল -
" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "
অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন "প্রকৃত" উপাস্য নেই।
লক্ষনীয় যে, "প্রকৃত" কথাটিতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
কারন, আল্লাহ ছাড়াও আরো অসংখ্য "উপাস্য" বা "ইলাহ" আছে। আমাদের আশেপাশেই আছে, আমাদের জীবনের পরতে পরতে সেগুলো আছে। সবচে ভয়ঙ্কর হচ্ছে যে, সেগুলো যে আমাদের 'ইলাহ" আমরা সেটাই বুঝতে পারিনা।
কিন্তু একজন মুসলিম কে সবার আগে বিশ্বাস করতে হবে যে, সেগুলো সব মিথ্যা উপাস্য।
তাওহীদ শব্দের উলটো হলো শরীক/শির্ক/ শিরক । অর্থাৎ আল্লাহ কে একমাত্র উপাস্য বলে স্বীকার না করা। যেটা ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শিরক যে করে, তাকে বলা হয় "মুশরিক" .আমরা হয়ত ভাবি, " কই, আমরা তো মুর্তিপূজা করি না, পীর-ফকিরের কাছে যাই না, আমরা তো আল্লাহ-কেই একমাত্র উপাস্য মানি, আমরা তো শিরক করি না"।
আসলেই কি তাই ? আল্লাহ কেনো এই কথাটি বলেছেন তাহলে ?
''অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ইমান আনা সত্তেও মুশরিক " [সুরা ইউসুফ ১২.১০৬]
কি সেইগুলো ? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
আল্লাহ মানুষকে "স্রষ্টা " সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েই তাকে সৃষ্টি করেছেন। হ্যা, মানুষ হয়ত সেটা অস্বীকার করে, কিন্তু আপনি দেখবেন একটা মানুষ, যে জীবনে ধর্মকর্মের ধার দিয়েও যায়না, সে-ও যখন এমন একটা বিপদে পড়ে যখন কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে না, তখন ঠিক-ই সে বিড়বিড় করে " আল্লাহ আমাকে রক্ষা কর, এইবারের মতন রক্ষা কর " ।
আল্লাহ রক্ষা করেন ঠিক-ই, কারন তিনি "অসীম" দয়ালু, মানুষের মতন ৫-১০টাকা দান করে তিনি নিজেকে দয়ালু ভাবেন না। বিপদ থেকে মুক্তি পেলেই আমরা তাঁকে আবার সুন্দর করে ভুলে যাই, আবার মেতে উঠি জীবনের আনন্দে। ছোট থাকতে আমি পরীক্ষার আগের রাত্রে নামায পড়ে ভাবতাম যাক খুব ইবাদাত হলো। বিষয়টা কি একি না !?!
যে আল্লাহ-কে একমাত্র "ইলাহ" বলে মানে, তার কাছে তার জীবনের GOAL, TARGET, OBJECTIVE, AMBITION সবকিছু একটাই- আর তা হল
" আমি আল্লাহর দাস, আমি যা কিছু করি সব তারঁ জন্যই করি, আমি তাঁর দাসত্ব করি, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান- SLAVE OF ALLAH IS THE GREATEST HONOR"
এই সুপ্ত জ্ঞান টি আল্লাহ প্রতিটি মানুষের ভিতর দিয়ে দিয়েছেন, সেটা আমরা ভুলে যাই, বা অস্বীকার করি, বা অবহেলা করি, যা করি না কেনো।
HERE COMES REPLACEMENT :
Replacement মানে কি ?বদলে দেওয়া, একটার যায়গায় আরেকটা জিনিস বসানো।
ধরুন, আপনার প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছে। আপনার ইচ্ছা করচে ভাত আর মুরগির মাংস খেতে। কিন্তু আপনার ফ্রীজে কোন খাবার নাই। অনেকক্ষন খুজে খুজে আপনি কিছু ন্যাতানো মুড়ি আর একটা কাল হয়ে যাওয়া কলা পেলেন। এখন কি আপনি বলবেন " আমি এটা খাবোনা" । না, আপনি তা বলবেন না। আপনি সেটাই খাবেন। কারন আগে আপনার ক্ষিদে মিটাতে হবে, কি দিয়ে মিটালেন এটা বড় ব্যাপার না।
একিভাবে, আপনি যদি মরূভুমিতে আটকা পড়েন, আপনি হয়ত গাছের তেতো ছাল বাকল চিবিয়ে খাবেন বেচে থাকার তাগিদে।
এটার নাম-ই REPLACEMENT . আমরা যখন একটা জিনিস পাইনা, আমরা আরেকটা জিনিশ দিয়ে সেটার অভাব পূরন করি। এটা মানুষের একটা খুব সাধারন প্রবৃত্তি।
একজন মুসলিম যখন তার জীবনের "প্রকৃত উদ্দেশ্য ( Slave of Allah)" যেটা হবার কথা ছিল, সেটা হারিয়ে ফেলে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সে অন্যান্য উদ্দেশ্য দিয়ে তার জীবনকে পূর্ন করার চেষ্টা করবে এবং জীবনে সফলতা ও শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এটা। খুবই।
অন্যদিকে, যে মুসলিম খুজে পেয়েছে কেনো সে বেঁচে আছে, তার চিন্তাটা এরকম-
" Verily, My Salah( Prayer) , my sacrifice, my living, and my dying are for Allah, the Lord of the Aalameen"
তাই খুব সাভাবিকভাবেই তার পড়াশুনা, চাকরি, পরিবার, সন্তান, জীবনযাপন সবকিছুর ব্যাপারে সে আগে খুজে বের করে যে - আল্লাহ কোনটা বলেছেন, আল্লাহ কোনটা বলেন নাই, আল্লাহ কোনটা পছন্দ করেন, কোনটা করেন না।
সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঃ
একজন মুসলিমের জন্য সবচে বড় বিশ্বাস হল এইটা যে-
" আমি মুসলিম। অতএব ইসলাম আমার জীবন-বিধান। আল্লাহ আমাকে যা করতে বলেছেন, অবশ্যই সেটা আমার ভালো। সেটা যদি আমার খারাপ-ও লাগে তাও সেটাই আমার জন্য ভালো। আর আল্লাহ যা যা আমার জন্য মানা করেছেন, সেটা অবশ্যই আমার জন্য ভালো না। সেটা যতই মজা হোক, সেটা যতই আনন্দের হোক, সেটা আমার জন্য খারাপ"
আমাদের "মূর্তি" গুলো কেমন ??
প্রাক ইসলামী যুগে মানুষ মূর্তি-পূজা করত। লক্ষ লক্ষ নবী কোটি কোটি বছর ধরে এক-ই কথা বলে গেছেন " এগুলো স্রষ্টা নয়, এগুলোর পূজা কোরনা, এগুলো তোমাদের-ই সৃষ্টি, এগুলোর কোন ক্ষমতা নেই" ।
না, আমরা মুসলিম রা সরাসরি মূর্তি-পূজা করি না। আমাদের জীবনের, আমাদের সমাজের মুর্তিগুলো অদৃশ্য। আমরাও তাদেরকেই আমাদের "ইলাহ" বা উপাশ্য হিসেবে মেনে নিয়েছি, কিন্তু আমরা তা জানি-ই না। ISN'T IT SAD !!!
মূর্তি গুলোর নাম দেওয়া যাক "HOLIC"
- MONEY-HOLIC : এদের জীবনে একটাই লক্ষ্য...টাকা। আরো টাকা, আরো টাকা, আরো টাকা। যত টাকা আয় করে এরা, সেই টাকা দিয়ে এরা আরো টাকা আয় করতে চায়। এরকম মানুষ আপনি, আমি, আমরা সবাই চিনি। এরা আমরাই। THIS BECOMES THEIR ILAH.
- WORK-HOLIC / CAREER-HOLIC : এদের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে ক্যারিয়ারের চুড়ান্ত শিখরে উঠতেই হবে। পৃথিবীর সব ডিগ্রী লাগবে, বিশ্বজয় করা খ্যাতি লাগবে, মানুষের সম্মান লাগবে, বিশাল বিশাল কোম্পানীর MD হতে হবে, বিশাল বিশাল টাকা বেতন পেতে হবে, বিশাল বিজ্ঞানী হতে হবে, দিনে ২২ ঘন্টা ল্যাবে বসে মানব-জন্ম রহস্য বের করতে হবে. THIS BECOMES THEIR ILAH.
- BODY-HOLIC : এরা দৈনিক ৮ ঘন্টা জিম করে, ২০টা কাচা ডিম খায়, শরীরের আর কোন পেশি কিভাবে ফোলানো যায় সেটা নিয়ে গবেষনা করতে হবে। বা যেতেই হবে পরবর্তী অলিম্পিক এ । মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কঠিন থেকে কঠিনতম অনুশীলন। THIS BECOMES THEIR ILAH.
- LOVE-HOLIC: সন্তানের জন্য, ভালোবাসার মানুষের জন্য আমরা বিনা দ্বিধায় বলে দেই " তুমি-ই আমার জীবন" . কেউ কেউ আছে, ভালোবাসার মানুষটিই তার জীবন। কেউ আছে, সন্তানটিই তার সমগ্র জীবন। THIS BECOMES THEIR ILAH.
- ENTERTAIN-HOLIC: পৃথিবীর যাবতীয় বিনোদন, মোড়ের টং এর আড্ডা থেকে শুরু করে দামি লাউঞ্জ এ সীসা, হ্যাং-আউট করা, পার্টি করা, দিনে ১৮ ঘন্টা ভিডিও গেইম খেলা, যা কিছু...যা কিছু...যা কিছু আমাদেরকে বিনোদনের নেশায় বূঁদ করে রাখে...সব হলো Entertain-মূর্তি।
IS ALLAH REALLY "THE ONE" IN OUR LIFE ???
কত হাজার হাজার বার আমরা বলি- আল্লাহু আহাদ- আল্লাহ এক।
আসলেই কি আমাদের জীবন আমরা "একমাত্র আল্লাহর" জন্য ব্যবহার করি ??
আমরা কি আসলেই "শুধু আল্লাহর জন্য" এই শিক্ষাটি ধারন করি ???
আসলেই কি আমাদের কাছে আল্লাহু আহাদ ??? আমরা কি তাঁকে "আহাদ" করতে পেরেছি ???
আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন-
" What deluded you from your gracious master, what was so important to you that you run after THAT and you couldn't run after THIS " [ 82:6]
তাওহীদ আমাদের এই শিক্ষা দেয়-
- There is NOTHING more important to me than HIM being please to me
- that HE forgiving me
- that he Would talk to me on the Day of Judgment that I am successful .
Brothers and Sisters in Islam, Lets Ask Ourselves -
ARE WE FULFILLING THE RIGHTS OF AHAD YET ?
Bottom Line : If something is taking you away from Allah, it needs to go. Simple.
May Allah make us the people of Tawheed. Ameen.
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: