Saturday, October 3, 2015

আল্লাহর পরিচয়

তাওহীদ- ইসলামের প্রধান ভিত্তি/ আল্লাহর পরিচয়:
আপনি কি Inception সিনেমাটা দেখেছেন? আমি কাছে মনে হয়েছিল এই সিনেমাটি পৃথিবীর সবচে শক্তিশালী সিনেমাগুলোর একটা । এখানে দেখানো হয় একদল বিশেষ ধরনের "চোর" মানুষের স্বপ্নের ভিতর থেকে তথ্য বের করে আনে, কারন স্বপ্নটা তারাই ডিজাইন করে রাখে। তাদের ফাইনাল চ্যালেঞ্জ ছিলো একটা স্বপ্নের ভিতর একটা নতুন তথ্যকে Plant করা। এমনভাবে plant করা যেন মানুষটা কোনভাবেই সেটা বুঝতে না পারে। স্বপ্নগুলোকে আরো জোরালো করার জন্য তারা একটা স্বপ্নের ভিতর দিয়ে আরেকটা স্বপ্নে, সেটার ভিতর দিয়ে আরেকটায়, সেখান থেকে আরেকটায় চলাচল করে বিভিন্ন লেভেল এর মাধ্যমে। অত্যন্ত জটিল একটি আইডিয়া নিয়ে বানানো একটি সিনেমা।
তাওহীদ এর পুরো ব্যাপারটা হচ্ছে একটা IDEA . IDEA+BELIEF+ LOGIC. এটা এমন একটা জিনিস যে আপনি এটাকে খুব হাল্কাভাবেও বুঝতে পারেন চাইলে ( superficially) আবার চাইলে এটার গভীর থেকে গভীরে আপনি ঢুকতে পারেন। যত গভীরে ঢুকবেন আপনার স্রষ্টা ও ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বাস ততই মজবুত হবে। আইডিয়া টা যত বেশি আপনার ভিতরে আপনি PLANT করতে পারবেন, আপনি এর পরের লেভেলগুলোর আরো, আরো, গভীরে যেতে পারবেন। প্রতি মানুষ আলাদা আলাদা করে নিজের মতন চিন্তা করে। হয়ত আমি যেভাবে ভাবি সেটা পুরোটা কোনদিন লিখে বোঝাতে পারবনা, কারন মানুষের মস্তিস্ক অত্যন্ত জটিল ভাবে চিন্তা করে, কিন্তু তাও আমি চেষ্টা করেছি, কারন আমি জানি আমি এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি যে আমার মতন অনেকেই চিন্তা করে।
ইসলাম মানে কি ?
ইসলাম মানে " আত্মসমর্পন" , অর্থাৎ আমি নিজেকে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করলাম, তাঁর দেয়া জীবন বিধান মেনে নিলাম, তাঁর দেওয়া কু'র্‌আন কে বিশ্বাস করলাম, প্রেরিত সকল নবীর উপর বিশ্বাস করলাম, রসূলুল্লাহ (স) আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী, এই বিশ্বাস আনলাম, তাহলে বলা যাবে আমি ইসলাম ধর্মের অনুসারী-আমি একজন মুসলিম।
ইসলাম ধর্ম ৫টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কালেমা, নামায, রোজা, হজ ও যাকাত। একজন মুসলিমকে -অন্তত যে নিজেকে মুসলিম মনে করে, তাকে এইগুলো করতেই হবে। কিন্তু এইসব কিছুর আগেও সবচে গুরুত্তপুর্ন যে জিনিসটার উপর একজন মুসলিম কে বিশ্বাস আনতে হবে ( ঈমান আনতে হবে) তা হল তাওহীদ।
আমি ইসলামের একটা রূপক উদাহরণ দিতে চাই একটা বিল্ডিং এর সাথে। ইসলাম একটা বিল্ডিং যার একটা ভিত্তি/Foundation আছে, ৫টা পিলার আছে, আর উপরের দিকে উঠে গেছে এর ফ্লোরগুলো। এখন একটু চিন্তা করলেই দেখবেন সব বিল্ডিং একরকম হয় না।আপনার ৫তালা বাড়ির ফাউন্ডেশন আর একটা ২০০ তালা বিল্ডিঙের ফাউন্ডেশন কখনো এক হতে পারে না। একটা ২০০ তালা বিল্ডিং তখনি তৈরী করা যাবে যখন এর ভিত্তি হবে অত্যন্ত মজবুত, অনেক বড়ো জায়গার উপর, যার পাইলিং ( Piling) এর পিছেই হয়ত ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
ইসলামেরও মূল বিষয়-ও এটাই। তাওহীদ। আমরা ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের ঈমানের পিলারগুলোর উপর ফ্লোর তৈরী করতে পারবনা, যতক্ষন আমরা এর নিচের ভিত্তিটা মজবুত না করতে পারব। ঈমানের ক্রমানুসারে এ যদি বলা হয়, তাহলে নবীদের ঈমানের ভিত্তি সবচে বেশি ছিলেন, কারন তারা ছিলেন আল্লাহর দূত, তারপরেই ছিলেন সাহাবীরা, যাঁরা নিজ চোখে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে দেখছেন, নিজ চোখে রসূলুল্লাহ (স) কে দেখেছেন...এভাবে সম্ভবত আমাদের মতন মুসলিমদের অবস্থা খুব করুন। আমাদের মনে হয় পিলারগুলো-ও বাঁশের খুটির মতন নড়বড়ে, নিচে ভিত্তিও মাঝে মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যে বিল্ডিং এর ভিত্তিই নাই সেটার উপর যে একতলা ঘর্‌ও তোলা যায়না এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন মানুষকে মুসলিম হতে হলে প্রথমেই যে বাক্যটা বিশ্বাস করতে হয় তা হল -
"লা ইলাহা ইল্লালাহ "
আরবিতে লা = না , ইলাহা= প্রকৃত উপাস্য , ইল্লালাহ= আল্লাহ ব্যতিত । ইসলাম শুরুই হয়েছে একটা "না" দিয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ ছাড়া কারোর উপাসনা করা যাবেনা, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাসনা করার যোগ্য নয়।
ধরুন, একজন মানুষ। আপনি, আমি বা যে কেউ। একটা মানুষ তার রুমে বারান্দায় একা একা বসে আছে। রাত ২টা বাজে। আশেপাশের কোন বাড়িতে লাইট জ্বলছে না। হঠাত সে দেখলো, আকাশ থেকে একটা প্রকান্ড জ্বলজ্বলে কিছু তার দিকে নেমে এলো। পার্থিব কোন জীবের সাথে তার তুলনা দেওয়া সম্ভব নয়, দিলাম ও না। পাহাড়ের মতন সেই আলোর দূত তাকে বললেন , " আমি আমার প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি তাঁর পরিচয় নিয়ে আপনার কাছে" ।
কেমন হতো ব্যাপারটা ? নিশ্চয়ই এর পরদিন থেকে আপনার জীবনে একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে যেত। অবশ্যই যেতো। আপনার মধ্যে এমন কিছু রাতারাতি পরিবর্তন চলে আসত যা আপনি কোনভাবেই কারোর সাথে শেয়ার করতে পারতেন না।
কিন্তু আদৌ এরকম ঘটনা হয় না প্রতিদিন । কারন এগুলো তো মিরাকল বা অলৌকিক ঘটনা, এগুলো প্রতিদিন ঘটে না। সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ মানবজাতির কাছে এইজন্যে দূত হিসেবে মানুষকেই পাঠিয়েছেন। সেই মানুষগুলো জন্ম নিয়েছেন সাধারন মানুষ হিসেবেই সাধারন পরিবারে। এরপর তাঁদেরকে আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা আল্লহর নবী মনোনীত হয়েছেন। নিজেরা আগে আল্লাহ সম্পর্কে জেনেছেন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস এনেছেন । তারপর মানুষকে বলা শুরু করেছেন আল্লাহর কথা। একটা জিনিশ আমাদেরকে মাথায় রাখতে তে হবে, নবীরা সবার আগে মানুষের কাছে "তাওহীদ" এর দাওয়াত নিয়ে যেতেন। সবাইকে তারা বলতেন- "দেখো ভাই, নিশ্চয়ই স্রষ্টা একজন-ই। তাঁর নাম আল্লাহ। এই হল আল্লাহর পরিচয় । "
কাউকে আল্লাহর পরিচয় দেওয়ার আগে কি বলা যায়- আসো নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, আসো মুসলিম হই। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবে-
কার জন্যে করব?
কেন করব ??
কি উদ্দেশ্য আমার ???
হযরত ইব্‌রাহীম (আ) জন্মেছিলেন এমন এক সময়ে যখন মানুষ মূর্তিপূজা করত। তিনি যেভাবে আল্লাহ-র পরিচয় পেলেন আল্লাহ তা তুলে ধরেছেন সুরা আন্‌'আম এর ৭৫-৭৯ আয়াতে।
And thus did We show Abraham the realm of the heavens and the earth that he would be among the certain [in faith]
So when the night covered him [with darkness], he saw a star. He said, "This is my lord." But when it set, he said, "I like not those that disappear."
And when he saw the moon rising, he said, "This is my lord." But when it set, he said, "Unless my Lord guides me, I will surely be among the people gone astray."

And when he saw the sun rising, he said, "This is my lord; this is greater." But when it set, he said, "O my people, indeed I am free from what you associate with Allah .
Indeed, I have turned my face toward He who created the heavens and the earth, inclining toward truth, and I am not of those who associate others with Allah ."
দেখাই যাচ্ছে, হযরত ইবরাহীম (আ) প্রথমে নক্ষত্র, তারপরে চাঁদ ও সূর্য কে স্রষ্টা মনে করলেও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যা ডুবে যায় বা চলে যায় তা কখনো স্রষ্টা হতে পারে না।
আমি একদিন চিন্তা করলাম, মহানবী (স) ৪০ বছর বয়সে নবুয়্যাত প্রাপ্ত হন। চল্লিশ বছরে একটা মানুষ আধবুড়ো হয়ে যায়। কেনো আল্লাহ তাঁকে এতো দীর্ঘদিন নিজের পরিচয় দেননি ? হযরত মুহাম্মদ (স) ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন। এরপর কিছুদিন ব্যবসা করেন। তারপর তিনি ব্যবসা ছেড়ে দেন। স্রষ্টা-র সন্ধান শুরু করেন। দিনের পর দিন তিনি হেরা গুহায় একাকী কাটিয়েছেন, কখনো সেখানেই থাকতেন টানা কয়েকদিন।
কি চিন্তা করতেন তিনি?
কেমন লাগতো তাঁর?
মানুষের ক্ষুদ্র কল্পনাশক্তি দিয়ে এইগুলো উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। একটা গুহায় ১৫ বছর ধরে যেই মানুষটি গিয়েছেন, তাঁর চিন্তা আমি ধরতে পারবনা। ৪০ বছর বয়সে এক রমজানের মাসে আল্লাহর কাছ থেকে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) তাঁর কাছে প্রথম ওহী নিয়ে আসেন । মাটির মানুষ মুহাম্মদ (স) এর সাথে দেখা হয় সম্মানিত সেই সত্ত্বার। কেমন লেগেছিল তাঁর ? জানিনা আমি। তিনি কাপঁতে কাপঁতে বাসায় এসেছিলেন। তিনি নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ঐ মূহুর্তে তাঁর সমগ্র সত্তা জুড়ে ছিল- আল্লাহ, মহাজগতের স্রষ্টা। চল্লিশ বছর! চিন্তা করতে পারেন, চল্লিশ বছরে আল্লাহর সবচে প্রিয় নবী আল্লাহর পরিচয় জানতে পেরেছিলেন ।
আমি জন্মেছি ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে ৮৮ সালে। ছোটবেলার কিছু বছর দেশের বাইরে কাটালেও বড় হয়ে উঠা ঢাকার ঝিগাতলা ও মোহাম্মদপুরে। ছোটবেলা থেকে আমি আর দশটা জন্মগত মুসলিমের মতন প্রথাগত উপায়ে বড় হয়েছিলাম। তারপর বড় হয়ে একটা সময়ে আমি নামধারী মুসলিমের মতন ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলাম। আমি খুব ধার্মিক পরিবেশে বড় হয়েছি, অন্তত আমাদের সমাজে আমরা যেটাকে "ধার্মিক পরিবেশ" বলে থাকি। হুজুরের কাছে আমপারা কায়দা শেষ করে কু'র্‌আন ধরা, নামায শিখা, রোজা রাখা, ঈদ, মিলাদ, সবকিছুর মধ্যে দিয়ে আমি মুসলিম শিশু হিসেবেই বেড়ে ঊঠছিলাম। সব-ই ঠিক ছিল। আমি একজন জন্মগত মুসলিম . যা দেখেছি ছোট থেকে, তাই গ্রহন করেছি। কখনো প্রশ্ন তুলিনি, মনে প্রশ্ন আসলে কি করতাম তাও মনে নেই। হয়ত চেপে রাখতাম, কারন ছোট মানুষ আমি, কিছু জিগেশ করলেই তো শুনতে হবে- " ছোট মানুষের এত কথা শুনতে নাই, নামাজ পড়ে আসো যাও। "
আল্লাহ আছেন, জানতাম। আমার ৩ বছরের ছোট বোন-ও মাথায় টুপি পরে বলে- " আল্লাহর কাছে যাই।" সে-ও আল্লাহর কথা জানে, আমিও জানতাম। দুজনের জানার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য মনে হয় ছিলনা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটা উদাহরণ দেই। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নাম IMMUNITY. এটা দুইরকম । একটা হল ACTIVE IMMUNITY. আরেকটা হল PASSIVE IMMUNITY. ACTIVE IMMUNITY কিভাবে কাজ করে জানেন ? একটা জীবানু, ধরা যাক চিকেনপক্স, আপনার শরীরে ঢুকলে আপনার অশুখ হবে ঠিক-ই, কিন্তু আপনার শরীরে সেটার বিরুদ্ধে Antibody/ Memory Cell তৈরী হয়ে যাবে। এরপর জীবনের যেকোন সময় আপনার শরীরে ঐ জীবানু ঢোকা মাত্রই তা ধ্বংস হয়ে যাবে, আপনার আর কখনোই পক্স হবেনা।
PASSIVE IMMUNITY হল বাইরে থেকে শরীরে Antibody ঢুকিয়ে দেওয়া। এটাকে বলা হয় VACCINE দেওয়া। যেমন, জন্মের পর পোলিও টীকা দেওয়া হয় যাতে পোলিও না হয়। কারন আমরা কেউ চাই না কারোর পোলিও হোক। হবার আগেই আমরা সেটাকে প্রতিরোধ করে ফেলি।
এই উদাহরণ টার সারমর্ম হল- আমরা সবাই আসলে VACCINATED MUSLIM CHILD । "স্রষ্টা কে? তাঁর পরিচয় কি? " এই প্রশ্ন মনে আসার আগেই আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে একটি "ইসলাম ধর্ম" দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অবস্থা আমের পোকার মতন। যে পোকার জন্ম আমের মধ্যে, সে কি করে বুঝবে মিষ্টি কি জিনিস? যেই আমরা বড় হই ইসলাম কে সাথে নিয়ে, তারা ইসলামের সৌন্দর্য কতটা বুঝতে পারি বা বোঝার চেষ্টা করেছি? আল্লাহর অস্তিত্ব নিজের ভেতরে উপলব্ধি করার আগেই আমরা দেখেছি যে মহাজগতের একজন স্রষ্টা আছেন, তিনি হলেন আল্লাহ, আমি হলাম মুসলিম, নামাজ পড়তে হবে, রোজা রাখতে হবে, নাহলে আল্লাহ রাগ করবেন, আমি জাহান্নামে যাবো, বাসায় সবাই খারাপ বলবে।
তাই আমি খুব ধার্মিক পরিবেশে বড়ো হতে লাগলাম। নামাজ পড়তাম, কিছু বাদ-ও যেত। বাসায় সবসময় ধর্মীয় শাসন ছিল। খুব ছোট থেকেই রোজা রাখতাম । সমস্যা সেটা না। সমস্যা শুরু হল একটু বড়ো হবার পর।
আমি মিশনারী স্কুল ( সেন্ট যোসেফ) এ ছিলাম ৯৬-০৩ পর্যন্ত। খ্রীষ্টান স্কুল, পাশেই গীর্জা, ব্রাদার, ফাদার সবকিছুর মধ্যে কৈশোর কাটতে লাগল। ধর্মচর্চা বলতে স্কুলের ইস্‌লামিয়াত বই, সেটাকে পাঠ্যবই বলতেও আজ আমার লজ্জা লাগে । ছোটবেলার সেই রেগুলারিটি কমতে থাকল আস্তে আস্তে। বয়ঃসন্ধিকাল চলছে, নতুন নতুন রঙ লাগছে চোখে, পৃথিবীর নতুন নতুন নেশা নিয়েই আমার ক্ষুদ্র পৃথিবী চলতে লাগল। আমার একার না, আশেপাশের সব বন্ধুরাই ছিল আমার মতন। মুসলিম নামধারী একজন নামমাত্র মুসলিম এ পরিনত হয়ে যাচ্ছিলাম আমি আস্তে আস্তে। স্কুল শেষ হল। কলেজে ঢুকলাম। কো-এড কলেজ। জীবন রঙ্গিন থেকে রঙ্গিনতর হতেই থাকল !
ঢুকলাম মেডিকেল কলেজে। অন্ধকার জগত থেকে আল্লাহ আমাকে উদ্ধার করলেন ২৩-২৪ বছর বয়সে। আমি এমন কিছু মানুষকে খুব কাছে দেখে দেখেছিলাম নিজের বন্ধুদের মধ্যে, যাদের দেখে আমার মনে হয়েছিলো- মানুষ এতো ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী কিভাবে হতে পারে? আমরা যখন বিশ্বকাপ এর ফাইনাল খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম, তখন তারা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ত ফজরের সময় উঠার জন্য। কেউ কেউ এশার নামাজের পর কু'র্‌আন শিখতে যেত কাছেই কোথাও। একমাত্র আল্লাহ-ই মানুষকে পথ দেখান। কোন কিছুর "মাধ্যমে" দেখান। আমার ক্ষেত্রে এরা ছিল এই মানুষগুলো। যাদের দেখে আমি প্রথমবার বুঝতে পারলাম, আমার অতীত কতটা অপচয় করেছিলাম আমি।
আমাদের হলে প্রায়ই বিদেশ থেকে "জামাআত" আসত। আমি তাদের দেখতাম। অনেকেই থাকত রিভার্ট মুসলিম. সাদা, কালো, বাদামী। আমি চিন্তা করতাম, কতটা মনোবলে তারা তাদের পিতৃ-ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেছেন। আমি বোঝার চেষ্টা করতাম। পারতাম কিনা জানিনা। আমি নাস্তিক হয়ে যাইনি কখনো। আমি খালি ধর্মের প্রতি উদাসীন/নিরাশক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, কিন্তু খালি বিশ্বাসটাই ছিলো। আর কিছুই ছিল না। তাঁর চেয়েও বিপদজনক জিনিশ হল সেটা নিয়ে আমি খুব একটা মাথাও ঘামাতাম না।
জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্রষ্টা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষকে তাঁর বিভিন্ন নিদর্শন দেখান। বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে এই ইঙ্গিত দেন যে, স্রষ্টা একজন-ই এবং তিনি এক ও একক আল্লাহ।
স্রষ্টার নতুন করে পাওয়া পরিচয়-
আমার বয়স ২৩-২৪, আমার মোটামুটি বোঝার মতন বুদ্ধি ছিল ততদিনে। যেহেতু আমি ছোটবেলার মুসলমান, তাই প্রথমেই আমি আবার রেগুলার নামাজ পড়া শুরু করলাম। দৈনিক পাচবার আমি আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতে থাকলাম। আমি বলব, এটা অত্যন্ত কার্যকর একটা উপায় পুরানো জংধরা ধর্মটাকে নতুন করে শান দেওয়ার জন্য।
সবচে ভয়ঙ্কর ঘটনা শুরু হল খুব আস্তে আস্তে। যদিও আমি সবসময় বিশ্বাসী ছিলাম, এরপরো একদিন আমার মাথায় কতগুলো প্রশ্ন আসা শুরু করলো। আমি চেষ্টা করলাম সেগুলা চিন্তা না করতে, কিন্তু আমি যতবেশি চিন্তা করি সেগুলা চিন্তা না করতে, সেগুলা তত বেশি আমার মধ্যে আসে, ততবেশি সেগুলা আমাকে খোচাতে থাকে।
প্রশ্নগুলো সব-ই ছিলো স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে, অর্থাৎ তাওহীদ নিয়ে-
- আল্লাহ তো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তাহলে সবকিছুর একটা স্রষ্টা আছে। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন ?
- আল্লাহ দেখতে কেমন?
- যখন মহাজগত ছিলোনা, তখন কি ছিলো?
- যখন মহাজগত ধ্বংস হয়ে যাবে, আখিরাত, শেষ বিচার, জান্নাত, জাহান্নাম সব হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ কি করবেন ?
- আল্লাহ কি নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারেন ?
-আল্লাহ কি আরেকজন স্রষ্টা কে সৃষ্টি করতে পারেন?
এবং এইরকম অনেক প্রশ্ন আমার মধ্যে আসতে থাকল। আমার নিজেকে অত্যন্ত অসহায় মনে হতে লাগল। আমি ক্লাসের একজন বিজ্ঞ বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেশ করলাম- "দেখো ভাই, আমার এইসব মনে হচ্ছে, এগুলো নিশ্চয়ই খুব খারাপ চিন্তা" - সে আমাকে সান্ত্বনা দিলো ( আল্লাহ তাঁর মঙ্গল করুন) এই বলে যে - "দেখো, তোমার মনে এইসব প্রশ্ন আসবে এটা আল্লাহর-ই ঠিক করা, কাজেই তুমি এইসব নিয়ে বিচলিত হবে না। মানুষের মনে কৌতুহল জাগবে , এটা খুব-ই স্বাভাবিক" ।
ছোটবেলায় এইসব প্রশ্ন করলে হয়ত আমাকে বাসা থেকে বের করে দিত বা মারত বা বলত বাজে বন্ধুদের সাথে মিশে আমি গোল্লায় গেছি। কিন্তু একটা প্রশ্ন, একটা জিজ্ঞাসা, সেটা যতই অবাস্তব হোক, সেটাকে তো আমি অগ্রাহ্য করতে পারি না। বিশেষ করে যদি সেটা উঠতে বসতে আমার মাথার ভিতর ঘুরঘুর করতে থাকে।
যাই হোক, সেই ২৩-২৪ বছর থেকে এখন আমার বয়স ২৬ হবে হবে। আমি আস্তে আস্তে উত্তর পেয়েছি। আমি আমার স্রস্টার পরিচয় পেয়েছি। আমি ইসলাম কে জেনে, বুঝে, আবার নতুন করে গ্রহন করেছি।
তাওহীদ শব্দের অর্থ "একত্ববাদ" (Unification, making something one) । It is the belief that Allah is one, without any partner in His Dominion, One without similarity in His Attributes, and One without rival in His divinity.
আল্লাহর খুব সুন্দর পরিচয় আছে সুরা ইখলাস (১১২) তে-
"বল, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ চিরন্তন/আদি-অন্তহীন/অনির্ভর। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সাথে কোন কিছুর-ই তুলনা হয়না। "
মূলঃত এখান থেকেই আমি আমার অনেক উত্তর পেয়েছি সেই প্রশ্নগুলোর, যেগুলো আমাকে শান্তি দিত না।
মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা হবার কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য-
১- তারঁ গুণাবলী, ক্ষমতা, সব-ই শুধুমাত্র "তারঁ মতন" . প্রচলিত সৃষ্টির কোন নিয়মেই তাকে ফেলা যাবেনা।
২- তাঁর অস্তিতের সাথে Conflict করে এমন কোন কিছুই তাঁর সাথে যায় না। কাজেই এমন কোন উদাহরণ যা স্রষ্টার অস্তিত্তের বিরোধী, তা তাঁর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
৩- তাঁর কোন বৈশিষ্ট্য-ই জাগতিক, পার্থিব বা কল্পনার কোন বৈশিষ্টের সাথে বিন্দুমাত্র মিলবে না, মিলানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। মানুষকে সেই পরিমান চিন্তা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
৪- সৃষ্টি করার অসীম ক্ষমতা থাকতে হবে স্রষ্টার।
“আমরা আল্লাহকে কখনও আমাদের কল্পনায় ধারন করতে পারবো না। আমরা যেটাই কল্পনা করি, আল্লাহ হচ্ছেন সেটা ছাড়া অন্য কিছু। "
উত্তরসমূহ-
[] আল্লাহ তো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তাহলে সবকিছুর একটা স্রষ্টা আছে। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন ?
উঃ- উত্তর, লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ – কেউ না। কিন্তু কেন কেউ না? যদি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা থাকে, সবকিছুরই যদি একজন স্রস্টা থাকে, তাহলে তো সৃষ্টিকর্তাকেও কারও না কারও সৃষ্টি করতে হবে, তাই না?
না, আসলে তা না। কারনে তাহলে একি প্রশ্ন আবারো করা যাবে- সেই স্রষ্টাকে বানিয়েছেন কোন স্রষ্টা ? এবং এভাবে আজীবন এই প্রশ্নটি চলবে।এটাই হল সবচেয়ে যৌক্তিক উত্তর । যখন কিছু ছিলনা, তখন-ও শুধু আল্লাহ ছিলেন, যখন কিছু থাকবে না, তখন-ও তিনিই থাকবেন। তাঁকে কেউ সৃষ্টি করতে পারেনা। কারন তিনি কোন সৃষ্টি নন। এইজন্যই তিনি আহাদ ( unique/ অদ্বিতীয়)।
[] আল্লাহ দেখতে কেমন? তিনি কোথায় থাকেন?
উঃ কারোর পক্ষে জানা সম্ভব না। যদিও আল্লাহর চেহারা, হাত, পা, রাগ, ভালোবাসা, অনূভুতি ইত্যাদির কথা পাওয়া যায়, কিন্তু বুঝতে হবে সেটা আমরা আমাদের perception থেকে চিন্তা করি।আমি যখন ছোট ছিলাম, আমি ভাবতাম, আল্লাহ আকাশে থাকেন এবং সেখান থেকে নিচে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছেন। কারন আল্লাহ-কে ডাকতে গেলে আমরা প্রথমেই আকাশের দিকে তাকাই।
আল্লাহ দেখেন, কিন্তু আমাদের মতন করে না, আমাদের "চোখের" মতন করে না। তিনি মনের খবর জানেন, কিন্তু আমাদের "কানের" মতন কান দিয়ে না। তিনি রাগ করেন, সন্তুষ্ট হন, আমাদের ভালোবাসেন, কিন্তু আমাদের পার্থিব অনূভুতি দিয়ে না। সেটা আমরা কখনো বুঝতে পারবনা, বুঝা সম্ভব না। তাঁর চেহারা শুধুমাত্র তাঁর নিজের মতন। সেটা কেমন তা আমরা জানিনা।
[] যখন মহাজগত ছিলোনা, তখন কি ছিলো? যখন মহাজগত ধ্বংস হয়ে যাবে, আখিরাত, শেষ বিচার, জান্নাত, জাহান্নাম সব হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ কি করবেন ?
উঃ আল্লাহ ছিলেন, তিনিই থাকবেন অনন্তকাল। আর কিছু ছিল কিনা সেটা আমাদের জ্ঞানের পরিধির বাইরে।
[] আল্লাহ কি নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারেন ? আল্লাহ কি আরেকজন স্রষ্টা কে সৃষ্টি করতে পারেন?
উঃ সেটা সম্ভব না, কারন সেটা আল্লাহর অস্তিত্তের বিরোধী। এটি একটি অযৌক্তিক প্রশ্ন। সমস্যাটা "প্রশ্নের" মধ্যে।
" সন্তান গ্রহন করা পরম করুনাময়ের জন্য শোভনীয় নয়" [ সুরা মার্‌ইয়াম ১৯ঃ৯২]
[] যদি কিছু নাই ছিল, তবে আল্লাহ কিভাবে সব সৃষ্টি করলেন?
উঃ "তিনি যখন কোন কিছু করতে চান তখন তাকে শুধু "হও" বলে নির্দেশ দেন, আর অমনি তা হয়ে যায়" [ সুরা ইয়াসীন ৩৬ঃ৮২]
[] আল্লাহ কি অসীম? তাহলে অসীম মানে কি ?
উঃ- আমাদের চোখে অসীম কি ? নাম্বার ? ১ থেকে শুরু করেন। শেষ করা যাবে ? আমরা বলব , না যাবে না। নাম্বার অসীম। মহাবিশ্ব কি অসীম ? একটা রকেট নিয়ে উপরের দিকে যেতে থাকি এমন জালানী নিয়ে যা শেষ হবে না, এমন কি কোন জায়গা আসবে যে রকেট মহাজগতের ছাদে আটকে গেছে ? উত্তর হতে পারে হ্যা/না/ জানিনা।
আসলে কোনটাই অসীম নয়। এগুলো আমাদের চোখে, আমাদের বুদ্ধিমত্তায়, আমাদের perception এ হিসেব করলে অসীম। কিন্তু একমাত্র আল্লাহ অসীম। সেটা কি সেটা কখনো আমরা বুঝবনা। সীমিত বুদ্ধিমত্তার কারনে। কিন্তু এই পর্যন্ত বুঝবো। কারন সেটা আল্লাহ-ই দিয়েছেন।
" Creator is an Infinite One. All His creations are finite. No finite creation has the capability to understand the concept of being Infinite. "
প্রশ্ন-
আল্লাহ কি সব জানেন ? তাহলে কে জান্নাতে/জাহান্নামে যাবেন সব-ই তো তিনি জানেন তাইনা ? তাহলে আমরা যাই করি না কেন, সব-ই তো আল্লাহ আগেই ঠিক করে রেখেছেন। তাহলে ধর্ম-কর্ম করে আমার কি লাভ? আমি তো একটা গিনিপিগ মাত্র, তাইনা ?
উঃ হ্যা, আল্লাহ সব জানেন। এমনকি, আমাকে বানানোর আগেই তিনি জানতেন আমি, আজকের এই দিনে, এই লেখাটা লিখব, এবং আমার মৃত্যু কোথায় কিভাবে হবে, এবং আমাকে তিনি কি করবেন, সব-ই তাঁর জানা। কিন্তু, আমাকে তিনি মানুষ বানিয়েছেন, আমাকে বুদ্ধি, বিবেক, চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়েছেন, আমাকে কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা জানিয়েছেন, কোন পথে গেলে আমার মঙ্গল হবে তা বলে দিয়েছেন। কি কি করতে হবে, আর কি কি করা যাবেনা, তাও বলে দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ আমাকে জোর করছেন না কোন কিছু নিয়ে। আমি কি করব তিনি খুব ভালো করেই জানেন। কিন্তু আমার পরিনতি আমি জানিনা, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জানবনা।
Human and Jinn race are given Free Will. (Free Will= You decide whatever you do, good or bad. God doesn't force you anything)
প্রশ্ন- পৃথিবীতে এত অশান্তি, আল্লাহ কেনো সব দূর করে দিচ্ছেন না?
উঃ- হ্যা, চাইলেই তিনি দিতে পারেন। কি করবেন সব-ই তাঁর ইচ্ছা। তিনি দেখছেন আমরা কে কি করি। কে মানুষকে সাহায্য করি। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করি কিনা তিনি তা দেখছেন। এই পৃথিবীতে তিনি আমাদের পুরস্কার /শাস্তি দিতেও পারেন, নাও পারেন। তবে আমাদের প্রত্যেকটি কাজের, অনু পরমানু হিসাব তিনি মৃত্যুর পর আদায় করবেন।
মানুষের সীমিত কল্পনা-শক্তি-
আমি মাঝে মাঝে একটা স্বপ্ন দেখি। দেখি যে, আমি পড়ে যাচ্ছি। অনেক উপর থেকে আমি পড়ে যাচ্ছি। আমি জানি আমি মরে যাচ্ছি। প্রচন্ড আতঙ্কে, প্রচণ্ড অসহায়ের মতন আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি। সীমাহীন আতঙ্কের একটা অনূভুতি, অসম্ভব রকমের শূন্য একটা অনূভুতি। জাগতিক কোন অনূভুতির সাথে এই অবাস্তব অনূভুতির কোন মিল নাই। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি ঘুম ভেঙ্গে উঠে যাই। অনেকক্ষণ লাগে আমার বুঝতে, যে আমি যা দেখছিলাম তা আসলে সত্য না। আমি যে খাটে শুয়ে আছি, এটাই সত্য। এটাই আমার জীবন। মৃত্যুর হাত থেকে বাচার জন্য আমি বেচে উঠলাম। কি অদ্ভুত সেই অনূভুতি।
আমি দুইটি জিনিস বুঝতে পেরেছি সেদিন-
১- ঠিক এইভাবে একদিন আমি মরে যাব। সবাই ভাব্‌বে , আহারে লোকটা মারা গেছে। কিন্তু এই আমি, আমি আবার জীবিত হব ঠিক মৃত্যুর সাথে সাথেই। অন্য আরেকটা জগতে। যেখানে গেলে পার্থিব মানুষের কাছে আমি মৃত, কিন্তু আমার কাছে আমি জীবিত।
২- এই স্বপ্নটা দেখলে আমার প্রচন্ড অদ্ভুত একটা অনূভুতি হয়। এমন অনূভুতি যেটা আমি বাস্তব জীবনে ফীল করতে পারি না। কারন আমি যদি উচু কোন দালান থেকে লাফ দেই, আমি জানি মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে আমি চিৎকার করে জেগে উঠতে পারবনা। এই অদ্ভুত অনূভুতি থেকে আমার কাছে মনে হয়েছিল- আল্লাহ আমাদের যেই অনুভুতি গুলো দিয়েছেন এর বাইরে খুব সামান্য একটু আমরা স্বপ্নের মধ্যে ফীল করতে পারি। কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্ব কে বোঝার জন্য আমাদের হতে হবে অসীম। সেটা যেহেতু আমরা না, সেটা আমরা কোনদিনো বুঝতে পারব না।
আমরা চাইলে আমাদের ছোট বাচ্চা/ ভাই-বোন দের অনেক সুন্দর করে আল্লাহর পরিচয় দিতে পারি। আপনার ৬ বছরের ছেলেটিকে ডাকুন। ডেকে জিজ্ঞেস করুন - আচ্চা বাবা, আল্লাহ সম্পর্কে তুমি কি মনে কর ? তিনি আসলে কেমন? তিনি কি আমাদের ভালবাসেন? দেখুন তার শিশুতোষ মন কিভাবে চিন্তা করে।

ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে অন্ধ বিশ্বাসের কোন জায়গা নেই। আল্লাহ কু’রআনে মানুষকে বার বার চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁর বাণী নিয়ে চিন্তা করতে, বোঝার চেষ্টা করতে, বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করতে, গবেষণা করতে।
আল্লাহ তাদেরকে কলুষিত করে দেন যারা তাদের বুদ্ধি-যুক্তি ব্যবহার করে না। (১০:১০০)
তারা কি কু’রআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, তাদের অন্তর কি তালাবন্ধ? (৪৭:২৪)
আর তারা (জাহান্নামিরা) বলবে, আমরা যদি শুনতাম বা বুদ্ধি খাটাতাম তাহলে আমরা জাহান্নামিদের মধ্যে থাকতাম না। (৬৭:১০)

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: