Sunday, July 4, 2021

বিবাহ পরবর্তী মুমিনদের প্রেম পর্ব ১

আমার স্বামী আমার থেকে বয়সে বেশ বড়। নিজেকে আমি তার সাথে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পারিনি। বোরিং একটা মানুষ। মিষ্টি করে কথা বলতে জানে না। ভালোবাসা বোঝে না। একজন আনরোমান্টিক মানুষের মধ্যে যে যে গুন থাকা দরকার তার সবই আছে তার মধ্যে।

বিয়ের পর থেকে এখনো কোথাও তার সাথে আমার ঘুরতে যাওয়া হয়নি। রাত বেরাতে জ্যোৎস্নার আলোতে কখনো হাত ধরে হাঁটা হয়নি।

আমার খুব ইচ্ছা করতো দুজন মিলে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো, কিন্তু তার নাকি ঠান্ডা লাগে। জোসনা হলে যদি বলি চলো ছাদে যেয়ে একটু জোসনা দেখে আসি, সে বলে জানালা দিয়ে দেখো। এতো রাতে ছাদে ভুত আছে। ঠ্যাং ধরে আকাশে নিয়ে নিচে ফেলে দেবে।

কখনো কক্সবাজার যাইনি আমি। যদি বলি এবার অফিস এর চাপ কমলে ছুটি নিয়ে চলোনা একটু কক্সবাজার ঘুরে আসি। সে বলে, পুকুরে গিয়ে ডুব দিয়ে আসলেই তো হয়। জিনিষ তো একই, ওখানেও পানি এখানেও পানি।

শাড়ি পরলে আমাকে সুন্দর লাগে, অন্তত সবাই তাই বলে। অথচ বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত সে আমার প্রসংসা করা তো দুরে থাক, শাড়ি পরলে আমার দিক ২ বার ফিরেও তাকায় না।

মুখভর্তি দাড়ি, আকর্ষনহীন একজন মানুষ। না বোঝো রোমান্টিকতা, না আছে কথায় মিষ্টতা। আমার বড় আশা ছিল, কোন হ্যান্ডসাম যুবক আমার জীবনে আসবে। কিন্তু তখন লজ্জায় মাথা নুয়ে যায় যখন আমার বান্ধবীরা আমাকে বলে হুজুরের বউ।

আমি সাজগোজ খুব পছন্দ করতাম। দামি পারফিউম ইউজ করতাম। কিন্তু এখন আমার এসব সখ মাটি হয়ে গেছে।

আমার ক্লাসমেট লায়লা, আমার অন্তরঙ্গ বান্ধবী। তার বিয়ে হয়েছে এক কোটি পতির ছেলের সাথে। বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, ইন্ডাস্ট্রি আছে। কোন কিছুর তার অভাব নেই। প্রায়ই যখন তার সাথে আমার কথা হয়, আমাকে খোঁটা দেয়।

বিয়ের আগে আমিও স্বপ্ন দেখতাম, কোট প্যান্ট পরা এক হ্যান্ডসাম সুপুরুষ আমার স্বামী। অঢেল সম্পদের মালিক। নিজের গাড়ি আছে। উত্তরায় পাঁচতলা বাড়ি আছে। যে ঘরে আমি থাকি, রাজকীয় এক খাট। 52 ইঞ্চি থ্রিডি এলইডি টিভি আমার রুমে। শুধু আমার কাপড়চোপড় রাখা এবং সাজগোজের জিনিস এর জন্য আলাদা একটা রুম রয়েছে। যত দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম রয়েছে সব আমার সংগ্রহে আছে। উষ্ণ গরম পানিতে বাথটবের ফেনায় আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি। যখন বাহিরে বের হই, জামা কোনটা রেখে কোনটা পরবো, ম্যাচিং করে জুতো আর কানের দুল, কালার মিল রেখে মেকআপ- এগুলো নির্বাচন করতেই আমার ঘণ্টা পার হয়ে যায়।

ও ড্রাইভ করছে। আমি ওর পাশে বসা। আমি জানালাটা খুলে দিলাম। আমার চুলগুলো বাতাসে উড়ে ওর মুখে আছড়ে পড়ছে। ও চোখ বন্ধ করে আমার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে। আর বলছে, তোমার চুলের ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে দেয়। তার কথা যেন আমার কানেই পড়েনি, সে ভাব নিয়ে আমি বাইরের সবুজ ধান ক্ষেতের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কোন পার্টিতে গেলে তার বন্ধুরা আমার রূপের প্রশংসা করে। তার বন্ধুর স্ত্রীরা আমাকে ঘিরে ধরে- ভাবি! শাড়ীটা অনেক সুন্দর। কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, ভাবি! কোন পার্লার থেকে সেজেছেন, আমি আপনার মত এমন হিল কোথায় পাবো! আরো কত কী! তখন গর্বে আমার বুকটা ফুলে উঠতো। বিয়ের পূর্বে প্রতিরাতে এমন স্বপ্ন দেখতে দেখতেই আমি ঘুমোতাম।

বিয়ের পরও অনেক রাতে আমি আমার অতীত স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ করতাম। কিন্তু বেসুরে মোটা কন্ঠের ডাকে আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হতো, সাবিহার মা! ওঠো, ফজরের আযান দিয়েছে। এভাবে কত রাতের মিষ্টি স্বপ্ন তিনি আমার ভঙ্গ করেছেন তার হিসেব নেই।

এর মধ্যে এক সকালে অনুভব করলাম আমার গর্বে তৃতীয় সন্তানের অস্তিত্ব। আমি ভেবেছিলাম সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরবে বা কিছু একটা তো করবেই। কিন্তু ও কোনো রিয়াকশনই দেখালো না। খুশি হয়েছে, না রাগ হয়েছে, না অন্য কিছ- কিছুই বুঝলাম না। শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলেই শেষ।

মেজাজ তো চরম খারাপ। মনে মনে সারাদিন নিজের কপালকে গালি দিয়েছি। আল্লাহ্‌ এই ছিলো আমার কপালে! তোমার দুনিয়াতে কি আর কোনো রোমান্টিক ছেলে ছিলো না! যে তুমি এই বুড়োর সাথেই আমার বিয়ে দিলে।

রাতে দেখলাম এক বস্তা ভরে ফলমূল নিয়ে এসেছে। আমিও দেখে মুখ ঝামটি দিলাম, হুহ!

এভাবেই দিন যাচ্ছিলো। আমার বার বার মনে হতো, বাচ্চা হওয়ার সময় যদি আমি মরে যাই! মাঝে মাঝে রাতে ওর বুকে মাথা রেখে বলতাম, আচ্ছা! বাবু হওয়ার সময় যদি আমি মরে যাই তাহলে কি তুমি আরেকটা বিয়ে করবে? ভাবতাম ও হয়তো গল্পের নায়কদের মতো আমার কপালে চুমু খেয়ে বলবে, আরে নাহ্ পাগলি। তুমি মরে গেলে আমিও মরে যাব। আর যদি বেঁচে থাকি, তাহলে সারা জীবন তোমার স্মৃতি নিয়ে থাকবো।

কিন্তু দেখা যেতো তার কোনো রিয়াকশনই নেই। চুপ করে থাকতো। যখন বুঝতাম চুপ করে থেকে ও মৌন সম্মতি দিচ্ছে তখন লাফ মেরে উঠে বলতাম, বুঝেছি তুমি তো এটাই চাও যে আমি মরে যাই। যেন আরেকটা বিয়ে করতে পারো। এই বলে তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে বাকি রাতটা পার করে দিতাম।

দেখতে দেখতে ৫ মাস হয়ে গেলো। একদিন রুমে আমি একা ছিলাম। বাথরুমে গিয়েছি, হঠাৎ পা পিছলে কমডের উপর উপুর হয়ে পড়লাম। পেটে এক জোরে বাড়ি খেলাম। মনে হল অনেক উঁচু থেকে কোন এক বড় পাথর এসে আমার পেটে পড়েছে। এখনি মনে হয় আমার জানটা বের হয়ে যাবে। তারপর কিছু সময় অচেতন হয়ে সেখানেই পড়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ পর যখন হুঁশ ফিরল। শরীরটা খুব হালকা লাগছিল। কিন্তু ওঠার শক্তি পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে এটা সেটা ধরে রুমে এসে আবার পড়ে গেলাম। চোখে সব ঝাপসা দেখছি। শাশুড়ি ছিলো অন্য রুমে, ডাকতে যাচ্ছি কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।

সাবিহা আর মালিহা ওদের দাদির সাথে ছিল। হঠাৎ মালিহা রুমে ঢুকে আমাকে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠল। বাড়ির সবাই দৌড়ে এলো আমার কাছে। দেখলাম আমার শাশুড়ি বাথরুম থেকে দলা পাকানো একটি রক্তখন্ড টাওয়েলে পেঁচিয়ে নিয়ে আসলেন। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। ঝাপসা চোখে দেখলাম, লম্বা লম্বা হাত পা একদম ওর মতো। চোখ, ঠোঁট ,কান , সব কিছুই ছিলো। আমার ছেলেটা তখনও কাঁপছিলো। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাঁপা থেমে গেলো। আমি আবার বেহুঁশ হয়ে পড়লাম।

আমার হুশ আসে ৪ দিন পর খুলনা আড়াইশ’বেড এর আইসিইউ তে। তখন আমার হাত পা ও পুরো শরীর বেডের সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথার পাশে সদ্য খোলা ভেন্টিলেশনের মোটা পাইপ ছিল। আমি চোখ মেলে তাকানোর পর একটা নার্স এসে আমকে নিরীক্ষণ করল, তারপর আমার বাঁধনগুলো খুলে দিল।

আমি সারাদিন অপেক্ষা করি, কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে আসেনা। ভাবি, তাহলে সবাই কি আমাকে ভুলে গেল! একটা মানুষও আসলো না হাসপাতালে আমাকে দেখতা! দুঃখে কস্টে কান্না চলে আসলো। হয়তো এখন ওদের বাড়িতে নতুন বউ আনার আলোচনা চলছে। হয়তো সে পাত্রী তালাশে ব্যস্ত। আরও বিভিন্ন আজেবাজে চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।

তারপর দিন কেটে যায়, কেউ আসেনা। রাতে ডিউটি নার্স চেইঞ্জ হয়ে একজন বয়স্ক মহিলা আসেন। এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন মা” আপনি ভালো আছেন? আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

উনি বললেন আপনাকে নিয়ে তো সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। ডাক্তাররা আপনাকে এডমিট করতে চায়নি। সবাই বলছিলো আপনি বড়জোর আর ২ ঘন্টার মতো বাঁচতে পারেন, তার বেশি না।

আমি বললাম কেনো? উনি বললেন, আমার ডায়াবেটিস আর প্রেসার দু’টোই নাকি অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিলো। অনেক বেশি রক্তক্ষরণে আমি রক্তশূন্য হয়ে পড়েছিলাম। পালস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে ওর কাছ থেকে বন্ড সই নিয়ে তারপর আমাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

তিনি আমাকে বললেন, ওই লম্বা হুজুরটা মনে হয় আপনার স্বামী! লোকটা আপনার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আজ চারদিন দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা হাসপাতালে পড়ে আছে। আইসিইউর বারান্দায় সারাক্ষণ বসে থাকে। একবারের জন্যেও বাসায় যায়নি।

নার্সের কথা শুনতে শুনতে আমার গলা ভারী হয়ে আসছিল। প্রচণ্ড এক আবেগ যেন আমার গলা চেপে ধরছিল।

তিনি বলতে লাগলেন, আমরা তো সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি একবারের জন্যেও হাল ছাড়েনি। যখন এখানে আপনাকে এনেছিলো উনি খুব কান্নাকাটি করছিল। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, এই লোকটি সত্যিই কি আমার জন্য কাঁদতে পারে!

তিনি বলছিলেন, আমরা তো সবায় উনার কান্না দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি একপাশে মুখ ফিরিয়ে বললাম, তাওতো আমাকে একবার দেখতে এলো না!

তখন সেই নার্স আমার বামপাশের জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ওই যে দেখেন!

দেখলাম, বাইরে ও উস্কোখুস্কো চুলে জানালার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পর্দা সরতে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে নার্সকে শুকরিয়া জানালো।

নার্স বললেন, আইসিইউতে বাইরের কেউ আসা নিষেধ। এভাবে রুগী দেখানোও নিষেধ। কিন্তু আপনার স্বামীর অনুরধে আমার খুব মায়া হলো। আপনার তো হুঁশ ছিলো না এই চারদিন‌। তিনি আমাকে খুব অনুরোধ করে বলেছিলেন যেন অন্ততঃ আমি একবার জানালার পর্দা সরিয়ে তাকে আপনাকে দেখার সুযোগ করে দেই। আমি বলেছিলাম, পর্দা সরালেওতো দূর থেকে চেহারা দেখতে পাবেন না। তিনি বলেছিলেন, অবয়বটা দেখতে পেলেই তিনি শান্তি পাবেন। তাই প্রতিদিন আমার শিফটে আমি আসার পর কিছুক্ষণের জন্য জানালার পর্দাটি সরিয়ে দেই। তখন দেখতে পাই তিনি অপেক্ষায় আছেন। তিনি হাত নেড়ে আমাকে শুকরিয়া জানান।

নার্সের কথা শুনতে শুনতে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল। আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। তিনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন!

বাম দিকে কাঁত হয়ে ওর দিকে তাকালাম। দূর থেকে মনে হল ও চোখ মুছছে।

আর একদিন পর আমাকে রিলিজ দেয়া হলো। কি এক অজানা অনুশোচনায় আমি তার চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারছিলাম না। বাসায় ফেরার পর সারাক্ষণ ও আমার পাশে বসে রইল। ও আমাকে খাইয়ে দিত, আমার সব কাজ করে দিত।

আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমি একটি নতুন জীবন পেয়েছি। আর এই লোকটাকে প্রথমবারের মত অনুভব করছি। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল, তখনো ও আমার পাশে শুয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আমি বললাম, আমি মরে গেলেই ভালো হতো, আর একটা বউ পেতেন। ও আমার ঠোঁটের উপর হাত রেখে মুখ চেপে ধরে বলল, আর কখনো এমনটা বলবে না। তারপর আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। মনে হচ্ছিল আমার শুকনো বুকটা সিঞ্চিত হচ্ছে ওর চোখের পানিতে। এক পরম শীতলতায় আমার দেহমন আন্দোলিত হয়ে উঠছিল। আমার মনে হচ্ছিল, তার চোখের অশ্রুগুলো আমার জীবনটা নতুন করে ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে।

আমি বাসায় ফেরার দু’দিন পর হঠাৎ লায়লা ফোন দিল। ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে তার কান্নার আওয়াজ পেলাম। বললাম, কিরে এতদিন পর! আর তুই কাঁদছিস কেন? সে বলল, দু’মাস হয় তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাকে ডিভোর্স দিয়ে তার শিল্পপতি স্বামী তার অফিসের সুন্দরী পিএসকে বিবাহ করেছে।

আসলে ভালোবাসাটা বড় অদ্ভুত! যেটাকে আমরা ভালোবাসা বলি সেটা আসলে ভালোবাসা নয়। আর যেটা ভালোবাসা সেটা আমরা অনুভব করতে পারি না। আমাদের চারপাশে অসংখ্য ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সেটা আমরা দেখি না।

বিবাহ পরবর্তী মুমিনদের প্রেম পর্ব ১

আমি পূর্ণ সুস্থ হবার পর হঠাৎ তিনি রাতে বললেন, আজ পূর্ণিমা। চলো ছাদে যাই। চাঁদের আলোটা গায়ে মেখে আসি। আমি তার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললাম, আমি কিন্তু সব বুঝি…… তারপর…..


Monday, September 28, 2020

ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়

ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়
ঠিক কয়টা বিয়ে ভেঙে গেছে আমার হিসেবটাও ভুলে গেছি, শেষেতো আর বিয়েই আসেনি, বয়সটাও ত্রিশ পার হয়ে গেছিল।তারপর বাসাতে একটা স্কুল খুলে বসেছিলাম, ছোট মিষ্টি বাচ্চাদের ক্বুরআন তেলাওয়াত শেখাতাম, একা একা আর ভাল লাগতনা।

আমি যে দেখতে অসুন্দর এমটা না আবার খারাপ স্টুডেন্টওনা ছিলাম না। তবুও বিয়ে এসেছে, ভেঙেছে। তখন আমি ঢাবির হোস্টেলে থাকি, পাত্রপক্ষ আসল দেখল পছন্দ করল, দু পক্ষই বেশ রাজি; আম্মু আব্বু বলল থাম একটা ইস্তেখারা করি। পরপর সাতদিন পনেরদিন কোন রেজাল্ট নেই, আমিও করলাম, নো রেজাল্ট। বাবামা নিষেধ করে দিল, বলল এ যাত্রা ধৈর্য্য ধর, এরচেয়েও ভাল কাউকে পাবি।

চোখের সামনে ছোটছোট রুমমেট ক্লাসমেট আত্মীয়া বোনদের বিবাহিত জীবনের গল্প শুনে ধৈর্যের মজবুত শিকলটাও ছিড়ে যায় যায়, সে সময়ে না পারতে চলে যায় নামাজ রুমে, মোনাজাতে হাত তুলে শব্দ করে কাঁদি। বলি মালিক সব কি বলা যায়, জানোইতো এ মনের অবস্থা, শোকরের নেয়ামাতে ধন্য কর, মালিক তুমি তো সবরকারীদের সাথে আছো, অভয় দিয়েছো তাদের যারা না দেখেই তোমাকে এবং কিয়ামাত দিবসকে ভয় করে। বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তাম। খুব বেশি ডিপ্রেশনের সময় শব্দ করে করে তেলাওয়াত করতাম আর অর্থ পড়তাম, দেখতাম ধীরে ধীরে মনে স্বস্তি আসে।

বড় ভাইয়ার বিয়েটাও হল আমার রুমমেট এক ছোট বোনের সাথে। আব্বু আম্মু এসে দেখে পছন্দ করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন খুব কেদেছিলাম, আম্মু বুঝতে পেরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বলেছিল আরেকটু ধৈর্য ধর মা! মালিককে বল আন্নি মাস্সানিয়াদ্দুররু ওআনতা আরহামুর রহিমিন।
একবার একটা ভাইয়ার বায়ো হাতে আসল, উপযুক্ত পাত্রী আমরা দুজন, ক্লাসমেট সমবয়সী। সবশেষে বিয়েটা ওরই হয়ে গেল। এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম, বিয়ের দাওয়াতেও এটেন্ড করিনি।সবাই গেছে আমি বেডে জায়নামাজ বিছিয়ে ওদের সুখিদাম্পত্য জীবনের দোয়া করে রাসুলের কাছে থেকে শিখে আবু সালামার পড়া সেই দোয়াটা পড়েছিলাম! বারবার পড়েছিলাম।

কিন্তু যেতে যেতেও কখনো ধৈর্যচ্যুত হয়ে যাইনি। কারো জন্য বদদোয়াও করিনি, বিনিময় তার কাছেই চেয়েছি, বারবার চেয়েছি, যার কাছে চাইলে নিশ্চিত কোন একদিন পাবো! হ্যাঁ পেয়েছি অবশেষে। একদিন আমার স্কুলের এক ছোট্টবাবুর মামাতো ভাই ওর মুখের ক্বুরআন তেলাওয়াত শুনে, আর সব বায়ো নিয়ে ফ্যামিলি মেম্বারসহ আমার বাসাতে হাজির! ছেলে তাবলীগের মেহনতেযুক্ত। খুব ভাল হাফেজ+ডাক্তার। বাবা মা তো রাজী। আমারও অমত নেই, ইস্তেখারার রেজাল্টও সুসংবাদ বহন করে। কিন্তু মাঝখান বাধ সাধল তার বিদেশের মামাটা। পর্দানশীন মেয়ে চলবেনা।

আবার হতাশার পালা শুরু! একরকম বিয়ের আশা বাদ দিয়ে কুরআন মুখস্থের দিকে ঝুকে পড়লাম
ছেলে অবশ্য আশা দিয়েছিল বাবাকে, আপনার মেয়েকেই ঘরণী করে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!
দেখতে দেখতে আরো দেড়টা বছর কোনদিক দিয়ে চলে গিয়েছিল, বিয়ের টেনশনটা মাথা থেকে ঝেড়েই ফেলেছিলাম। এমনই এক দিনে সেই ছেলেটার বিদেশের মামাটা ত্রিশভরি স্বর্ণের এক গহনা সেট পরিয়ে আমার বিয়েকার্য সমাধা করে আবারো পাড়ি জমাল বিদেশে।
আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি বিবাহিত, দুটো বাচ্চার মা, এবং সেই ডিপ্রেসনের বদলে আজ আমি ত্রিশ পারা কুরআনের হাফেজা!!

Saturday, May 30, 2020

বিয়ে কি ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার পথে বাঁধা?

বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মুখে 'ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করতে হবে' এই বাক্যটি বেশি শোনা যায়। এই ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তারা দুনিয়ার আর কোন চিন্তা করতে পারেনা, বিয়ে সেখানে অনেক দূরের ব্যাপার। গ্রাজুয়েশন শেষ করে জবের জন্য পড়া, পড়া আর পড়া- এটিই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের একমাত্র কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সময় দেখেছি শুধুমাত্র জবের পড়াশোনার জন্য সিনিয়ররা বাড়িতে ফিরতো না।
বিয়ে কি ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার পথে বাঁধা

ঈদের পরে জবের পরীক্ষার দোহাই, বিয়ের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাবে ইত্যাদি পেশারে দ্রত জব পাওয়ার জন্য বাবা মায়ের সাথে ঈদ কাটানো তাদের কাছে খুব অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে যেত।

সকল পেশারের মধ্যে ছেলেদের কাছে সবচেয়ে বড় পেশার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাবে- এই চিন্তা।
এই চিন্তা আসলেই বড় চিন্তা। এই চিন্তা মাথায় আসলে ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পড়াশোনা কিভাবে সম্ভব? তারপরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করা যুবককে এই চিন্তাটা বেশি করতে হয়। রিলাক্সে কোন কাজ করতে পারেনা। গার্লফ্রেন্ড কল করে বলে, বাবা ছেলে দেখেছে, আমি তো আর বিয়ে আটকাতে পারছিনা....!! যুবকের মাথা নষ্ট হয়ে যায়, সব বাদ দিয়ে জিএফকে কনভিন্স করা শুরু করে। জিএফের মা-বাকে জিএফের দিয়ে বিয়ে আটকানোর নানা অযুহাত শিখিয়ে দিতে থাকে... এভাবে সময় নষ্ট হতে থাকে বছরের পর বছর।

কিন্তু এই সময়টা যদি এই যুবক পেশারমুক্ত থাকতো, রিলাক্সে আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারতো, তাহলে জব কি আরও দ্রুত সম্ভবপর হতো না?
বরং বউ পুরুষের জীবনে অন্যতম এক সঙ্গী, যে গার্লফ্রেন্ডের মত পেশার দেয়না বরং পড়াশোনা বেশি করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। স্বামীর দ্রুত জবের জন্য ফজরের নামাজ পড়ে দোয়া করে। জব পাওয়া ও পড়াশোনার জন্য বউয়ের এই অনুপ্রেরণা ও দোয়া পাওয়ার ভাগ্য এই সমাজের ক'জন যুবকের হয়?

এখন আসি আপুদের বিষয়ে। আমাদের আপুদের অধিকাংশের চিন্তাভাবনা যে বিয়ে করলে এই বুঝি ক্যারিয়ার শেষ। কিন্তু আসলেই কি তাই? বিয়ের পরেও ক্যারিয়ার গঠন করেছে এমন অসংখ্য মেয়ে সমাজে আছে। স্বামীর অনুপ্রেরণায় এগিয়ে গেছে বহুদূর। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে স্বামী বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে যাবে, ক্লাস শেষে বউকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ গেটে স্বামী দাঁড়িয়ে থাকবে। এই ভালবাসা আমাদের আপুরা হয়তো বোঝেনা। আমি আমার এমন কয়েকজন বান্ধবীর স্বামীকে দেখেছি বউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘন্টা পর ঘন্টা কলেজ গেটে অপেক্ষা করতে। এটি নির্ভেজাল ভালবাসা। আর এই ভালবাসা শুধুমাত্র বিয়ের করার মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব।

বিয়ে কখনো ক্যারিয়ারের জন্য বাধা হতে পারেনা। বরং বিয়ের পরেও সংসার স্বামী সন্তান সামলিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়াও গৌরব ও চ্যালেঞ্জিংয়ের বিষয়।

◼ লিখছেন : মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন

বিয়ে পূর্ব প্রেম-ভালোবাসা হারাম। নিজে বিয়ে করুন। বন্ধুদেরকে বিয়ে করাতে উৎসাহিত করুন।

বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা : ইসলাম কী বলে?

বিয়ে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই বিয়েকে উৎসাহিত করেছে। বিয়ের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী হিসেবে নারী-পুরুষ পরস্পরকে বেছে নেওয়ার অধিকার লাভ করে। ইসলাম বিয়েকে ঈমানী দাবি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা : ইসলাম কী বলে?

ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্থ, সবল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা আবশ্যক। যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে মানুষ জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে, ইসলামী শরিয়ত বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর সাক্ষাৎকে শুধু বৈধই করেনি বরং তাতে উৎসাহিতও করেছে। যেন দাম্পত্যজীবনে অতৃপ্তি থেকে না যায়।

❑ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

‘তোমরা বিয়ে করো সেই স্ত্রীলোককে, যাদের তোমাদের ভালো লাগে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩)

হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা জন্মাবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩১০৭)

❑ অন্য হাদিসে এসেছে,

এক লোক নবী কারিম (সা.)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনসারি এক মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। রাসূল (সা.) বললেন,

‘তাকে দেখেছ কি? কেননা আনসারদের চোখে দোষ থাকে।’ (সহিহ মুসলিম)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু দেখাই যথেষ্ট নয়; বরং পাত্র বা পাত্রীর কোনো ত্রুটি আছে কি না, তাও জেনে নেওয়ার অধিকার অন্য পক্ষের রয়েছে। তবে

আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার যে রীতি রয়েছে, তার পুরোটা ইসলাম অনুমোদিত নয়। যেমন, পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০-১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ি যাওয়া এবং সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখা, পাত্রীর অহেতুক পরীক্ষা নেয়া ইত্যাদি। পাত্র ব্যতীত তার পরিবারের অন্য পুরুষদের জন্য পাত্রী দেখার অনুমতি ইসলাম দেয় না। আর চুল বের করা ও হাঁটানোর মতো বিব্রতকর কাজ অবশ্যই পরিহারযোগ্য।

অনেকেই বিয়ের সময় পাত্রীর সৌন্দর্য ও সম্পদকে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি চোখে পড়লে মেয়ে ও তার পরিবারের সামনেই মন্তব্য করতে থাকে। যাতে মেয়ের পরিবার কষ্ট পায়, মনঃক্ষুণ্ণ হয়। যেমন, মেয়ে কালো, চোখ সুন্দর না, ঠোঁট মোটা ইত্যাদি। ইসলাম এভাবে মন্তব্য করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

❑ রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে আত্মিক ও ঈমানের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। তিনি বলেন,

‘নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে করো : তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। তবে তুমি দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দেবে। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস : ৫০৯০)

❑ অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন,

‘যখন তোমাদের নিকট কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের যদি পছন্দ হয়, তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করো। অন্যথা জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।’ (সুনানে তিরমিজী, হাদিস : ১০৮৪-৮৫)

❑ বিয়ের আগে আংটি বদলের পর বা আগে বিয়ের পাত্র-পাত্রীদের একান্তে সময় কাটানোর প্রবণতা সমাজের কোনো কোনো শ্রেণিতে দেখা যায়। ইসলাম আকদের আগে পাত্র-পাত্রীর এভাবে একান্তে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে বের হওয়ার অনুমতি দেয় না।

কেননা বিয়ের আকদের আগের পাত্র-পাত্রীর পারস্পরিক বা পারিবারিক সিদ্ধান্তের দালিলিক কোনো মূল্য ইসলামী শরিয়তে নেই। দেশীয় আইনেও এমন সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই। তা ছাড়া বিয়েপূর্ব অবাধ মেলামেশা অনেক সময় বিয়ের সম্ভাবনা নষ্ট করে। কোনো কারণে বিয়ে না হলে এই মেলামেশা ও সাক্ষাৎ পরস্পরের চরিত্র হননের হাতিয়ার হয়। পাপ ও পাপাচারের আশঙ্কা তো আছেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

‘যখন কোনো নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হয়, তখন সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ (সুনানে তিরমিজী, হাদিস : ২১৬৫)

❑ অতএব, প্রচলিত অ্যাংগেজমেন্ট বা আংটি বদলের কোন সিস্টেম ইসলাম সমর্থিত নয়।

বিয়ের আগে পাত্রীর ছবি হস্তান্তরকেও শরিয়ত নিরুৎসাহ করে। কেননা এতে পাত্রীর ছবি পাত্র ছাড়াও অন্য পুরুষদের সামনে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া বিয়ে না হলে সাধারণত এসব ছবি ফেরত দেওয়া হয় না। যা পরবর্তী সময়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ভয় থাকে।

Thursday, May 28, 2020

দ্রুত বিয়ে হওয়া ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল

বিয়ে করার আমল খুজছেন তাহলে  এই লেখাটি আপনার জন্যেই। আজকে আমরা জেনে নিবো কিভাবে আমল করলে দ্রুত বিয়ে করা যাবে। এবং আল্লাহ আমাদের জীবনসঙ্গী দান করবেন।

প্রশ্ন: দ্রুত বিয়ে হওয়া ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল সম্পর্কে বলবেন কী?

উত্তর: আমাদের জীবনে সেটাই ঘটবে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা চাই। আল্লাহ বলেন:


قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَىٰنَاۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ


অর্থ: তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। [সুরা তওবা: ৫১]

তবে বেশি বেশি করে দুআ করবেন। কারণ দুআ অনেক পাওয়ারফুল আমল। আল্লাহ তাআলা আম্বিয়ায়ে কেরামের আমলের মধ্যে দুআর বিষয়টি পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-


لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ


অর্থ: ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দুআ ব্যতীত। [তিরমিযী: ২১৩৯]

অতিদ্রুত হালাল, উত্তম ও সম্মানজনক রুজি এবং উত্তম ও দ্বীনদার স্ত্রী কিংবা স্বামী পাওয়ার জন্য বেশি বেশি করে মুসা আলাইহিস সালাম কৃত দুআটি পড়তে পারেন:


رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ


অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। [সুরা কাসাস: ২৪]

উত্তম জীবনসঙ্গী, নেককার সন্তান-সন্ততির জন্য আল্লাহ তাআলার শিখিয়ে দেয়া কুরআনি এই দুআটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক অর্থপূর্ণ:


رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا.


অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। [সুরা ফুরকান:৭৪]

বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করুন। কারণ এটা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম একটি আমল। আর, আপনার জীবনের প্রতিটি নিয়ামত ও প্রশান্তি আপনার রিজিকেরই অন্তর্ভুক্ত। নফল সাদাকা করুন। বেশি করে সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য চান। কারণ এটা দ্রুত বিয়ে ও দ্বীনদার স্বামী/স্ত্রী পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল।

আর হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ তাআলা আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:


ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ: ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ


অর্থ: তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তাআলার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। [তিরমিযী: ১৬৫৫, নাসায়ী: ৩২১৮]

ধৈর্যধারণ করে এই আমলগুলো করতে থাকুন। আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। শীঘ্রই ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!

দ্রুত বিয়ে হওয়া ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল

[জবাব প্রদান করেছেন মুফতি জিয়াউর রহমান, সিলেট।]

বিয়ে হওয়ার আমল এই পোষ্টটি দ্রুত আপনার ওই বন্ধু বা বান্ধবীর কাছে পৌছে দিন যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক এবং জীবনসঙ্গী খুজছেন।

উসমানি খিলাফাতে বিয়ের চমৎকার আইন

উসমানি (অটোমান) খিলাফায় বিয়ের কিছু চমৎকার আইন ছিল। চলুন যেনে নেয়া যাক সে আইনগুলো যা যানতে পারলে এই সমাজের অনেক চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আসতে পারে।

উসমানি খিলাফাতে বিয়ের চমৎকার আইন

(এক) ঐচ্ছিক বিয়ের বয়েস শুরু হতো আঠার থেকে। শেষ হতো পঁচিশে। এর মধ্যে বিয়ে না করলে, তাকে বাধ্য করে বিয়ে করানো হতো।

(দুই) যদি কেউ অসুস্থতার অজুহাত দেখাতো, তদন্ত করে দেখা হতো, বক্তব্যটা সঠিক কি না। রোগটা নিরাময়যোগ্য হলে, সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় চাপ স্থগিত রাখা হতো। আর দুরারোগ্য ব্যধি হলে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই বিয়ে করতে বাধা দেয়া হতো।

(তিন) পঁচিশ হয়ে যাওয়ার পরও যদি কেউ বিনা কারণে বিয়ে না করে থাকতো, তার আয়/ব্যবসা বা সম্পদের এক চতুর্থাংশ কেটে রাখা হতো। জব্দকৃত অর্থ নিয়ে বিবাহোচ্ছুক গরীবদের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হতো।

(চার) পঁচিশের পরও বিয়ে না করলে, তাকে রাষ্ট্রীয় কোনও চাকুরিতে নেয়া হতো না। কোনও সংগঠনেও ভুক্তি দেয়া হতো না। আর চাকুরিতে থাকলে, ইস্তেফা দেয়া হতো।

(পাঁচ) কোনও ব্যক্তির বয়েস যদি পঞ্চাশ হয়ে যায়, ঘরে বিবি থাকে একটা, কিন্তু তার আর্থিক সংগতি ভালো, তখন তাকে সামাজিক কোন কাজে অর্থ দিয়ে অংশগ্রহণ করতে বলা হতো। গ্রহণযোগ্য কোনও কারণ দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে, সামর্থ্য অনুসারে অন্তত এক থেকে তিনজন এতীমের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বাধ্য করা হতো।

(ছয়) আঠার থেকে পঁচিশের মধ্যে যদি কোনও গরীব যুবা বিয়ে করতো, তাকে হুকুমতের পক্ষ থেকে ১৫৯ থেকে শুরু করে ৩০০ দুনমা পরিমাণের জমির বন্দোবস্তি দেয়া হতো। চেষ্টা করা হতো জমিটা যেন তার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও হয়। এক দুনমা সমান: ৯০০ মিটার।

(সাত) গরীব বর যদি কারিগর বা ব্যবসায়ী হয়, তাকে পূঁজিপাট্টা দেয়া হতো। কোনও বিনিময় ছাড়াই। তিন বছর মেয়াদে।

(আট) ছেলে বিয়ে করার পর, বাবা মায়ের সেবা করার জন্যে আর কোনও ভাই না থাকলে, বরকে বাধ্যতামূলক সেনাকার্যক্রম থেকে রেহাই দেয়া হতো। তদ্রƒপ মেয়ের বিয়ের যদি বাবা মায়ের সেবার জন্যে ঘরে কেউ না থাকে, মেয়ের জামাইকেও বাধ্যতামূলক সেনা কার্যক্রম থেকে রেহাই দেয়া হতো।

(নয়) পঁচিশের আগেই বিয়ে করে তিনসন্তানের বাবা হলে, নৈশস্কুলে বিনামূল্যে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হতো। সন্তান তিনজনের বেশি হলে, তিনজনের লেখাপড়ার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করা হতো। বাকী সন্তানদের জন্যে দশ টাকা করে বরাদ্দ করা হতো। তের বছর বয়েস হওয়া পর্যন্ত।

কোনও মহিলার ঘরে চার বা তার চেয়ে বেশি ছেলে সন্তান থাকতো, তাকে মাথাপিছু ২০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হতো।

(দশ) কোন ছাত্র লেখাপড়ার কাজে ব্যস্ত থাকলে, লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত বিয়ে স্থগিত রাখার অনুমতি দেয়া হতো।

(এগার) কোনও কারণে স্বামীকে অন্য এলাকায় থাকতে হলে, বাধ্য করা হতো সাথে করে স্ত্রীকেও নিয়ে যেতে! যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণে স্ত্রীকে সাথে নিতে না পারলে, স্বামীর যদি আরেক বিয়ে করার সামর্থ থাকতো, তাকে কর্মস্থলে আরেক বিয়ে করতে বাধ্য করা হতো। তারপর চাকুরি শেষে নিজের এলাকায় ফিরলে, দুই স্ত্রীকেই সমান অধিকারে রাখতে বাধ্য করা হতো।

আহ! উসমানি খেলাফত! সমাজে প্রচলিত সব ধরনের অনাচার রোধে, এই আইনগুলো সবচেয়ে কার্যকর বলেই মনে হয়।