ঠিক কয়টা বিয়ে ভেঙে গেছে আমার হিসেবটাও ভুলে গেছি, শেষেতো আর বিয়েই আসেনি, বয়সটাও ত্রিশ পার হয়ে গেছিল।তারপর বাসাতে একটা স্কুল খুলে বসেছিলাম, ছোট মিষ্টি বাচ্চাদের ক্বুরআন তেলাওয়াত শেখাতাম, একা একা আর ভাল লাগতনা।
আমি যে দেখতে অসুন্দর এমটা না আবার খারাপ স্টুডেন্টওনা ছিলাম না। তবুও বিয়ে এসেছে, ভেঙেছে। তখন আমি ঢাবির হোস্টেলে থাকি, পাত্রপক্ষ আসল দেখল পছন্দ করল, দু পক্ষই বেশ রাজি; আম্মু আব্বু বলল থাম একটা ইস্তেখারা করি। পরপর সাতদিন পনেরদিন কোন রেজাল্ট নেই, আমিও করলাম, নো রেজাল্ট। বাবামা নিষেধ করে দিল, বলল এ যাত্রা ধৈর্য্য ধর, এরচেয়েও ভাল কাউকে পাবি।
চোখের সামনে ছোটছোট রুমমেট ক্লাসমেট আত্মীয়া বোনদের বিবাহিত জীবনের গল্প শুনে ধৈর্যের মজবুত শিকলটাও ছিড়ে যায় যায়, সে সময়ে না পারতে চলে যায় নামাজ রুমে, মোনাজাতে হাত তুলে শব্দ করে কাঁদি। বলি মালিক সব কি বলা যায়, জানোইতো এ মনের অবস্থা, শোকরের নেয়ামাতে ধন্য কর, মালিক তুমি তো সবরকারীদের সাথে আছো, অভয় দিয়েছো তাদের যারা না দেখেই তোমাকে এবং কিয়ামাত দিবসকে ভয় করে। বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তাম। খুব বেশি ডিপ্রেশনের সময় শব্দ করে করে তেলাওয়াত করতাম আর অর্থ পড়তাম, দেখতাম ধীরে ধীরে মনে স্বস্তি আসে।
বড় ভাইয়ার বিয়েটাও হল আমার রুমমেট এক ছোট বোনের সাথে। আব্বু আম্মু এসে দেখে পছন্দ করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন খুব কেদেছিলাম, আম্মু বুঝতে পেরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বলেছিল আরেকটু ধৈর্য ধর মা! মালিককে বল আন্নি মাস্সানিয়াদ্দুররু ওআনতা আরহামুর রহিমিন।
একবার একটা ভাইয়ার বায়ো হাতে আসল, উপযুক্ত পাত্রী আমরা দুজন, ক্লাসমেট সমবয়সী। সবশেষে বিয়েটা ওরই হয়ে গেল। এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম, বিয়ের দাওয়াতেও এটেন্ড করিনি।সবাই গেছে আমি বেডে জায়নামাজ বিছিয়ে ওদের সুখিদাম্পত্য জীবনের দোয়া করে রাসুলের কাছে থেকে শিখে আবু সালামার পড়া সেই দোয়াটা পড়েছিলাম! বারবার পড়েছিলাম।
কিন্তু যেতে যেতেও কখনো ধৈর্যচ্যুত হয়ে যাইনি। কারো জন্য বদদোয়াও করিনি, বিনিময় তার কাছেই চেয়েছি, বারবার চেয়েছি, যার কাছে চাইলে নিশ্চিত কোন একদিন পাবো! হ্যাঁ পেয়েছি অবশেষে। একদিন আমার স্কুলের এক ছোট্টবাবুর মামাতো ভাই ওর মুখের ক্বুরআন তেলাওয়াত শুনে, আর সব বায়ো নিয়ে ফ্যামিলি মেম্বারসহ আমার বাসাতে হাজির! ছেলে তাবলীগের মেহনতেযুক্ত। খুব ভাল হাফেজ+ডাক্তার। বাবা মা তো রাজী। আমারও অমত নেই, ইস্তেখারার রেজাল্টও সুসংবাদ বহন করে। কিন্তু মাঝখান বাধ সাধল তার বিদেশের মামাটা। পর্দানশীন মেয়ে চলবেনা।
আবার হতাশার পালা শুরু! একরকম বিয়ের আশা বাদ দিয়ে কুরআন মুখস্থের দিকে ঝুকে পড়লাম
ছেলে অবশ্য আশা দিয়েছিল বাবাকে, আপনার মেয়েকেই ঘরণী করে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!
দেখতে দেখতে আরো দেড়টা বছর কোনদিক দিয়ে চলে গিয়েছিল, বিয়ের টেনশনটা মাথা থেকে ঝেড়েই ফেলেছিলাম। এমনই এক দিনে সেই ছেলেটার বিদেশের মামাটা ত্রিশভরি স্বর্ণের এক গহনা সেট পরিয়ে আমার বিয়েকার্য সমাধা করে আবারো পাড়ি জমাল বিদেশে।
আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি বিবাহিত, দুটো বাচ্চার মা, এবং সেই ডিপ্রেসনের বদলে আজ আমি ত্রিশ পারা কুরআনের হাফেজা!!
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: