আয় রোজগারে বরকত চাইলে করণীয়

কি কাজ করলে ফেরেশতাদের দু'আ পাবেন চলুন জেনে নিই। আসুন, এরকম (৫) টি সময়ের কথা জানি যখন আমরা ফেরেশতাদের দুআয় শামিল হতে পারব।
(১) দান সদকার সময়
দান সদকার সময় ফেরেশতাগণ দাতার জন্য দুআ করেন। নবীজি (সাঃ) বলেছেন,
'প্রত্যহ সকালে বান্দা যখন উঠে, দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়। একজন দুআ করে ও আল্লাহ, যে দান করে আপনি তাকে দান করুন", দ্বিতীয় জন বলে যে (দান হতে হাত) গুঁটিয়ে রাখে, তাকে ধ্বংস করুন।
[সহীহ মুসলিম-(২৩৮৩)]
(২) মসজিদে সালাতের পর কিছুক্ষণ বসা অবস্থায়।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন, সালাত আদায়ের পর ব্যক্তি যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, ফেরেশতাগণ তার জন্য এ বলে দুআ করতে থাকেন ও আল্লাহ, আপনি তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।
[সহীহ বুখারী-(৬৪৭)]
(৩) মানুষকে উত্তম বিষয় শিক্ষা দেয়া
আবু উমামাহ আল-বাহিলি (রাযি.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজির সামনে দুজন ব্যক্তির কথা বলা হলো, যাদের একজন আবেদ, আরেকজন আলেম। (তাদের মাঝে কে উত্তম?) নবীজি বললেন,তোমাদের সর্বশেষ জনের ওপর আমার যেমন শ্রেষ্ঠত্ব, আবেদের ওপর আলিমের অনুরূপ শ্রেষ্ঠত্ব।এরপর তিনি বললেন,আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফেরেশতাগণ এবং আসমান ও জমিনের অধিবাসী থেকে শুরু করে, পিঁপড়া থেকে পাথর, (জলের) মাছেরা পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দু'আ করে, যে শিক্ষক মানুষকে উত্তম বিষয় শেখায়।
[জামি আত-তিরমিযী-(২৬৮৫)]
(৪) অসুস্থকে দেখতে যাওয়া
অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার সময় ফেরেশতাগণ দুআ করেন। নবীজি বলেন,যে ব্যক্তি অসুস্থকে দেখতে যায়, কিংবা আল্লাহর জন্য ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন,তোমার মঙ্গল হোক, তোমার জীবন সুন্দর হোক, জান্নাতের একটি মনজিল তোমার হোক।
[তিরমিযী (২১৩৯)]
(৫) অন্যের জন্য দুআ করা
নবীজি (সাঃ) বলেন, একজন মুসলিম যখন তার ভাইয়ের অনুপস্থিতে দুআ করে, সেই দুআ কবুল করা হয়। সে সময় তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা অবস্থান করেন। ব্যক্তি যখন তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দুআ করে ফেরেশতা বলেন আমিন তোমার জন্য ও অনুরুপ।
[মুসলিম (২৭৩৩)]
দোয়া করার সুযোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে আল্লাহর এক অশেষ রহমত। আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিয়েছেন নিজেদের চাওয়া গুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করার। কিন্তু কোনোদিন কি আমরা নিজেদের দোয়ার ভাষা গুলো নিয়ে ভেবেছি?? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আজকে দোয়া করার ধরন সম্পর্কে কিছুটা লিখছি।
আমরা যখন কোনো কিছুর জন্য আবেদন করে কোনো দরখাস্ত লিখি তখন অবশ্যই আমরা চেষ্টা করি নিজেদের চাওয়া টাকে সর্বাত্মকভাবে তুলে ধরতে। তখন দরখাস্ত টা অনুমোদন করার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। ঠিক তেমনি আল্লাহর কাছে যখন আমরা কোনো দোয়া করি তখন আমাদের এমনভাবে নিজেদের দোয়া পেশ করতে হবে যাতে সেই দোয়া কবুল হওয়া আমাদের জন্য কতটা জরুরি তা বলতে পারি।
দোয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এটাও দেখতে হবে যে আমরা কি চাচ্ছি আর কিভাবে চাচ্ছি। কারন দোয়া কবুলের জন্য সেটা অবশ্যই নেক উদ্দেশ্যে হতে হবে। আর দোয়া করলে আমাদের এই মাইন্ডসেট থাকতে হবে যে আমাদের দোয়া কবুল হবেই ইন শা আল্লাহ।
আজকে আমাদের প্রত্যহ করা কিছু দোয়া আমরা সুন্দরভাবে যেভাবে আল্লাহর দরবারে পেশ করতে পারি তা আমি নিজের ধারণা থেকে বলছি।
১.
❌ আল্লাহ অমুক ব্যাক্তিকে আমার জীবনসঙ্গী করে দিন।
✔ আল্লাহ যদি অমুক ব্যাক্তি আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর হয় তবেই তাকে আমার জীবনসঙ্গী করে দিন নতুবা তার থেকে আমার মন ঘুরিয়ে দিন।
২.
❌ আল্লাহ আমাকে শীঘ্রই একটি চাকরি জুটিয়ে দিন।
✔ আল্লাহ আমাকে শীঘ্রই একটি হালাল আর সম্মানজনক চাকরি জুটিয়ে দিন।
৩.
❌ আল্লাহ আমাকে মৃত্যু দিন( এই দোয়া অনেকেই করেন কোনো কষ্টে পড়লে। এটা অবশ্যই অনুচিত।)
✔ আল্লাহ আমাকে সবর করার তৌফিক দিন। আমাকে নেক হায়াত দিন। আর আমার সব গুনাহ মাফ হওয়া ছাড়া আমাকে এই দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়েন না।
৪.
❌ আল্লাহ অমুক আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তার উপর গজব নাজিল করুন।( অনেকেই এরকম চাইতে দেখেছি। এটাও খুবই অনুচিত)
✔আল্লাহ অমুককে হেদায়েত দিন। তাকে মন থেকে মাফ করে দেয়ার তৌফিক দিয়েন। আর আমি যদি তাকে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে তাকে আমাকে মন থেকে মাফ করে দেয়ার তৌফিক দান করুন। এবং তার সাথে আমার সম্পর্ক পূর্বের চেয়ে ঘনিষ্ঠ করে দিন।
৫.
❌আল্লাহ তাড়াতাড়ি আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।
✔ আল্লাহ আমাকে একজন দ্বীনদার আর নেককার জীবনসঙ্গী প্রদান করুন। এমন জীবনসঙ্গী দিন যে আমার চক্ষু শীতল করবে, আপনাকে ভালোবেসে আমাকে ভালোবাসবে, আমার ইলম অর্জনের সহযোগী হবে, আর যে আমার জান্নাতের সঙী হবে। (অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, বংশগত মর্যাদা ও নিজেদের মতো উল্লেখ করতে পারেন। তবে অবশ্যই আগে দ্বীনকে প্রাদান্য দিবেন।)
৬.
❌আল্লাহ আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।
✔আল্লাহ আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন। আমাকে পর্যাপ্ত ইলম দান করুন, ইলম অনুযায়ী আমল করার আর তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার তৌফিক দান করুন।
৭.
❌আল্লাহ আমাকে সন্তান দান করুন।
✔ আল্লাহ আমাকে নেককার সন্তান দান করুন। এমন সন্তান দান করুন যে দুনিয়া ও আখিরাতে আমার জন্য কল্যাণকর হবে।
৮.
❌ আল্লাহ আমি অমুক গুনাহ করে ফেলেছি।।আমাকে মাফ করুন।
✔ আল্লাহ আমি অমুক গুনাহ মাফ করুন। আর আমাকে এমনভাবে হেদায়েত দিন যাতে আমি পুনরায় এই গুনাহ না করি। সেই গুনাহ আর আমার মাঝে একটি দেয়াল করে দিন।
আরো অনেক দোয়াই লিখা যায় এরকম। আজকে কমন কয়টা নিয়ে লিখলাম। আর দোয়া করার সময় আল্লাহর গুনবাচক নামগুলো দিয়ে দোয়া করার চেষ্টা করবেন। যেমনঃ চাকরির জন্য চাওয়ার সময় আর- রজ্জাক( আল্লাহ রিযিকদাতা), ক্ষমা চাওয়ার সময় আল- গফফার (আল্লাহ ক্ষমাশীল)। এভাবে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর অবশ্যই দোয়া কিংবা মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা আদায় করবেন, তারপর নবীজী (স) এর উপর দুরুদ শরিফ পাঠ করবেন। দোয়া শেষ করার আগেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন। ইন শা আল্লাহ দোয়া কবুল হবেই।
নিজের সীমিত জ্ঞান থেকে লিখেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
বিপদ-আপদে পড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমরা বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ি। তখন আমাদের মনে রাখতে হবে কিছু বিষয় চলুন জেনে নেয়া যাক।
❖ আল্লাহ্ তা‘আলা প্রধানত মানুষের উপর বিপদ-মুসিবত পাঠান দুটো কারণে।
(১) গুনাহের শাস্তিস্বরূপ, যাতে তারা এই শাস্তির মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো (পাপ) কাজের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে।’’ [সুরা আর-রুম, আয়াত: ৪১]
(২) আল্লাহ্ তা‘আলা এই বিপদের মাধ্যমে মানুষের অনেক গুনাহ ক্ষমা করতে চান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর, তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’’ [সুরা শুরা, আয়াত: ৩০]
❖ এমতাবস্থায় অধিকাংশ মানুষ কী করে?
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘মানুষকে যখন দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর, আমি যখন তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে, যেন সে আপতিত দুঃখ-কষ্টের জন্য কখনোই আমাকে ডাকেনি।’’ [সুরা ইউনুস, আয়াত: ১২]
❖ বিপদে আল্লাহর দিকে ফিরে আসলে লজ্জার কিছু নেই; বরং প্রশংসনীয় ব্যাপার।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘অতঃপর যখন তাদের কাছে আমার (পক্ষ হতে) শাস্তি আপতিত হলো, তখন তারা কেনো বিনীত হলো না?’’ [সুরা আন‘আম, আয়াত: ৪৩]
আল্লাহ্ নিজেই বলছেন, বিপদে পড়ার পর যাতে আমরা আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দু‘আ-কান্নাকাটি করি, নিজ ভুলের স্বীকৃতি দিই। এটি আল্লাহ চান যে, মুসিবতে পড়লে আমরা তাঁর কাছে ফিরে যাই। অথচ, যখন কিছু মানুষ অসুস্থতায়, মৃত্যুভয়ে, বিপদ-মুসিবতে, ডিপ্রেশনে, রিলেশন ব্রেক-আপের কষ্টে, পারিবারিক ঝামেলায় বা অন্য কোনো বিপদে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাদের নিয়ে অনেতে ট্রল করা শুরু করেন! এমন নোংরা কাজের জন্য আল্লাহ কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন। এমনকি পূর্বসূরি অনেক আলিম বলেছেন, কোনো মন্দ কাজ থেকে তাওবাহকারী ব্যক্তিকে যদি কেউ সেই কাজের জন্য লজ্জা দেয়, তবে সেই ব্যক্তির মৃত্যু ততদিন আসবে না, যতদিন না সে নিজেও এই কাজে জড়াবে। [তাফসিরে কুরতুবি]
এখন আপনি বলবেন, অনেকে তো শো-অফ করার জন্য বাহ্যত ধার্মিক সাজে। এরপর বিপদ কেটে গেলে আগের মতো হয়ে যায়। এ ব্যাপারে স্পষ্ট কথা হলো, কে কোন্ ইনটেনশন (নিয়ত) থেকে ধর্মে ফিরে আসেন, তার বিচার করার দায়িত্ব আল্লাহ আমার-আপনার উপর ন্যস্ত করেননি। মানুষের অন্তর ফেঁড়ে দেখাও আমাদের দায়িত্ব নয়। যিনি অন্তর্যামী, এই কাজটা তাঁরই। সুতরাং এতটা জাজমেন্টাল হবেন না। তাদের ফিরে আসাকে এপ্রিশিয়েট করুন, উৎসাহ দিন, তাদের জন্য দু‘আ করুন; নিজের হিদায়াতের জন্যও দু‘আ করুন। আমরা প্রত্যেকেই হিদায়াতের কাঙাল।
নিজ স্ত্রী ব্যাতিত অন্য কারো সাথে প্রেম করার পরিণাম কি হবে জেনে নিন। যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে কুমতলবের ইচ্ছা নিয়ে স্পর্শ করবে, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে আসবে যে তার হাত তার ঘাড়ের সাথে যুক্ত থাকবে। সে যদি কোনো নারীকে চুমু দিয়ে থাকে, তাহলে তার ঠোঁট দুটিকে আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হবে। আর যদি তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তাহলে তার দুই উরু সাক্ষী দিবে, আমি অবৈধ কাজের জন্য আরোহণ করেছিলাম।
তখন আল্লাহ তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবেন এবং এতে সে অপমান বোধ করে গোয়ার্তুমি করে বলবে ; আমি এ কাজ করিনি। তখন তার জিহ্বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে বলবে, ‘আমি অবৈধ বিষয়ে কথা বলেছিলাম’। তার হাত সাক্ষী দিবে, ‘আমি অবৈধ বস্তু ধরেছিলাম’। এরপর চক্ষু বলবে, ‘ আমি অবৈধ বস্তুর দিকে তাকাতাম’। তার দুখানা পা বলবে, ‘ আমি ব্যভিচার করেছি’। প্রহরী ফেরেশতারা বলবে, ‘ আমি শুনেছি’। অন্য ফেরেশতা বলবে, ‘আর আমি লিখে রেখেছি’। আর আল্লাহ বলবেন, ‘আমি জেনেছি এবং লুকিয়ে রেখেছি’।
এরপর আল্লাহ বলবেন, ‘হে ফেরেশতাগণ! একে পাকড়াও করে আমার আযাব ভোগ করাও। কেননা যে ব্যক্তির লজ্জা কমে যায় তার উপর আমার ক্রোধের অন্ত নাই""
এ হাদীসের সমর্থন নিম্নের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়ঃ “যেদিন তাদের কৃতকর্মের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষী দিবে”। [সূরা আন নূর-২৪]
অন্য আয়াতে আছে, ".. যারা ব্যভিচার (বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা) করবে, তারা দ্বিগুণ শাস্তি ভোগ করবে, এবং অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে.." (সূরা আল ফুরকান : ৬৮- ৬৯)
“কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে,এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযালঃ৭-৮)
এসব হারাম সম্পর্কগুলো সৃষ্টি হয় দৃষ্টির মাধ্যমে। এজন্য হাদীসে দৃষ্টিকে শয়তানের তীর বলা হয়েছে। বেগানা নারীর সৌন্দর্য উপভোগ করাকে চোখের জিনা বলা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টির হেফাজত করতে আদেশ করেছেন (সূরা নূর: আয়াত ৩০-৩১)।
রাসূল্লাহ (স:) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোন বেগানা নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে , কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে॥" (ফাতহুল কাদীর)
আল্লাহর ভয়ে মেয়েদের সৌন্দর্য উপভোগ করা, কুদৃষ্টি ও কামনার দৃষ্টি ত্যাগ করুন,আর অন্তরের মধ্য ইমানের মাধুরতা উপভোগ করুন। এটা পরীক্ষিত সত্য। আল্লাহ আমাদের দৃষ্টির হেফাজত করার তৌফিক দান করুন। প্রেম, পরকীয়া সহ সব ধরণের হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
প্রতি বছর একটা ছেলে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবা মায়ের সাথে ট্রেনে করে নানা বাড়ি যায়। ছুটি শেষ হলে সেই ট্রেনে করে ফিরে আসে। এবারও গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে। এ বছর ছেলেটি বাবা-মাকে বলে-আমি এখন অনেক বড় হয়েছি। আমাকে এবার একাই নানাবাড়ি যেতে দাও।
অনেকে আলোচনার পর অবশেষে বাবা মা রাজি হন। ছেলে ট্রেনে বসে আছে। বাবা মা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। আদর দিচ্ছেন, সাহস দিচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ট্রেনে ছাড়ার হুইসেল বেজে গেছে। ঠিক এমন মুহুর্তে বাবা ছেলের কানে কানে বলেন-যখনই তোমার মনে কোনো ভয়, শংকা আসে তবে এটা তোমার জন্য। এটা তুমি সযতনে রাখো।
ট্রেন চলতে শুরু করেছে। সাঁ সাঁ করে ছুটছে। সব কিছু মুহুর্তেই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। জীবনে এই প্রথম ছেলেটি একেবারে একা। সবচেয়ে প্রিয়জন বাবা-মা কেউ তার সাথে নেই। একেকটা নতুন স্টেশান আসে। কেউ নামে, কেউ ওঠে। কত রকমের ছুটোছুটি। নানা রকমের মানুষের নানা রকমের ব্যস্ততা।
ছেলেটি এবার খুব নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে থাকে। কেউ একজন এমনভাবে তার দিকে তাকায়- সে আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। ট্রেন যত ছুটছে- জানালার বাইরে যত অন্ধকার নেমে আসছে। তার একাকীত্ব আর ভয় দুটোও বাড়ছে।
সে চুপচাপ বসে রইলো। বুঝতে পারছেনা কি করবে। ঠিক তখনই তার মনে হলো- বাবা তার পকেটে কি একটা রেখে বলেছিলেন- যদি মনে কোনো ভয় আসে। তখন সে যেন- তার পকেটে রাখা জিনিসটা দেখে।
কাঁপা কাঁপা হাতে সে পকেটে হাত রেখে বুঝতে পারে পকেটে একটা ছোট কাগজ। সেখানে বাবার হাতে লেখাঃ
কোনো দুঃশ্চিন্তা করোনা, ভয় পেয়োনা। বাবা তোমার পাশেই আছেন। বাবা তোমার অতি নিকটে- তোমার পাশের কম্পার্টমেন্টেই আছেন।
এটাই মানবজীবন।
যখনই কোনো ভয়,কোনো দুঃশ্চিন্তায় গ্রাস করে, কোনো শঙকা- কোনো দ্বিধায় মনকে বিচলিত করে, ঠিক তখন সাহস আর ভরসা পাওয়ার জন্য রাব্বুল আলামীনও আমাদের কাছে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে অভয় দিয়েছেন।
সেখানে লিখাঃ
"লা তাহজান ইন্নাল্লাহা মা'আনা" (সুরা:আত-তাওবাহ আয়াত-৪০)
হতাশ হয়োনা। নিরাশ হয়োনা। ভয় পেয়োনা। তোমাদের রব তোমাদের সাথে আছেন।
কোনো বিপদে , মুসিবতে খুব একা হয়ে গেলে- আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তাকে ডাকো। তিনি তোমাদের খুব নিকটেই আছেন। তিনি মানুষকে জীবন দিয়েছেন। এই জীবনের যাত্রাপথে তিনি তোমাদের সাথেও আছেন।
লিখেছেনঃ আরিফ মাহমুদ