Thursday, April 22, 2021

হতাশ হয়োনা নিরাশ হয়োনা

প্রতি বছর একটা ছেলে গ্রীষ্মের ছুটিতে  বাবা মায়ের সাথে ট্রেনে করে নানা বাড়ি যায়। ছুটি শেষ হলে সেই ট্রেনে করে ফিরে আসে। এবারও গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে। এ বছর ছেলেটি  বাবা-মাকে বলে-আমি এখন অনেক বড়  হয়েছি। আমাকে এবার একাই নানাবাড়ি যেতে দাও।

অনেকে আলোচনার পর অবশেষে বাবা মা রাজি হন।  ছেলে ট্রেনে বসে আছে। বাবা মা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে।  আদর দিচ্ছেন, সাহস দিচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ট্রেনে ছাড়ার হুইসেল বেজে গেছে।  ঠিক এমন মুহুর্তে বাবা ছেলের কানে কানে বলেন-যখনই তোমার মনে  কোনো ভয়, শংকা আসে তবে এটা তোমার জন্য। এটা তুমি  সযতনে রাখো।

ট্রেন চলতে শুরু করেছে। সাঁ সাঁ করে ছুটছে। সব কিছু মুহুর্তেই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। জীবনে এই প্রথম ছেলেটি একেবারে একা। সবচেয়ে প্রিয়জন বাবা-মা কেউ  তার সাথে নেই। একেকটা নতুন স্টেশান আসে। কেউ নামে, কেউ ওঠে। কত রকমের ছুটোছুটি। নানা রকমের মানুষের নানা রকমের ব্যস্ততা। 

ছেলেটি এবার  খুব নিঃসঙ্গতা  অনুভব করতে থাকে। কেউ একজন এমনভাবে তার দিকে তাকায়- সে আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। ট্রেন যত ছুটছে- জানালার বাইরে যত অন্ধকার নেমে আসছে। তার একাকীত্ব আর ভয় দুটোও বাড়ছে। 

সে চুপচাপ বসে রইলো। বুঝতে পারছেনা কি করবে। ঠিক তখনই তার মনে হলো- বাবা তার পকেটে কি একটা রেখে বলেছিলেন- যদি মনে কোনো ভয় আসে। তখন সে যেন- তার পকেটে রাখা জিনিসটা দেখে।

কাঁপা কাঁপা হাতে সে পকেটে হাত রেখে  বুঝতে পারে পকেটে একটা ছোট কাগজ। সেখানে বাবার হাতে লেখাঃ

কোনো দুঃশ্চিন্তা করোনা, ভয় পেয়োনা। বাবা তোমার পাশেই আছেন। বাবা তোমার অতি নিকটে- তোমার পাশের  কম্পার্টমেন্টেই আছেন। 

এটাই মানবজীবন। 

যখনই কোনো ভয়,কোনো দুঃশ্চিন্তায় গ্রাস করে, কোনো শঙকা- কোনো দ্বিধায় মনকে বিচলিত করে, ঠিক  তখন সাহস আর ভরসা  পাওয়ার জন্য   রাব্বুল আলামীনও আমাদের কাছে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে অভয় দিয়েছেন।

 সেখানে লিখাঃ 

"লা তাহজান ইন্নাল্লাহা মা'আনা" (সুরা:আত-তাওবাহ আয়াত-৪০)

হতাশ হয়োনা। নিরাশ হয়োনা। ভয় পেয়োনা। তোমাদের রব তোমাদের সাথে আছেন। 

কোনো বিপদে , মুসিবতে  খুব একা হয়ে গেলে-  আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।  তাকে ডাকো। তিনি তোমাদের খুব নিকটেই আছেন। তিনি  মানুষকে জীবন দিয়েছেন। এই জীবনের যাত্রাপথে  তিনি তোমাদের সাথেও  আছেন।

লিখেছেনঃ আরিফ মাহমুদ


ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: