Tuesday, March 31, 2020

আযর কি হযরত ইবরাহীমের (আঃ) জন্মদাতা পিতা ছিলেন ?

আযর কি হযরত ইবরাহীমের (আঃ) জন্মদাতা পিতা ছিলেন ?
সূরা তাওবার ১১৫ নং আয়াত এবং সূরা মুমতাহিনার ১৪ নং আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে আযর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পিতৃস্থানীয় ছিল এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাকে পিতা বলে সম্বোধন করতেন ।

কিন্ত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং সকল নবী-রাসূলগনের জন্মদাতা পিতা-মাতা এবং তাদের পূর্বপুরুষগণ তাওহীদবাদী ও এক খোদায় বিশ্বাসী ছিলেন ।
এতৎসংক্রান্ত সকল বার ইমামীয়া শীয়া আলেমের ঐকমত্যের (ইজমা) সাথে মূর্তিপূজক আযরের পক্ষে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা হওয়া মোটেও খাপ খায় না ।

প্রসিদ্ধ আলেম শেখ মুফিদ (রহঃ) তাঁর ‘আওয়ায়েলুল মাকালাত’ নামক গ্রন্থে উপরিউক্ত বিষয়টিতে যে ইমামীয়া শিয়া আলেমদের ইজমা রয়েছে তা লিখেছেন ।
এমনকি অনেক সুন্নী আলেমও এ ব্যাপারে তাঁদের সাথে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন ।

এমতাবস্থায় উপরিউক্ত আয়াতসমূহের বাহ্যিক অর্থের অবস্থাই বা কি হবে এবং কিভাবে এ সমস্যাটি সমাধান করতে হবে ?

সম্মানীয় পাঠক ,
আপনার গভীর মনযোগ আশা করছি ।

অনেক মুফাসসির বলেছেন যে , أب (আব) শব্দটি যদিও সাধারণত আরবী ভাষায় ‘পিতা’র ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় , তবুও এ শব্দটির ব্যবহার কেবল ‘পিতা’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এবং কখনও কখনও আরবী ভাষা ও পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় ‘চাচা’ অর্থেও ব্যবহৃত হয় ।
যেমন নীচের আয়াতে أب শব্দটি ‘চাচা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে -
)إذ قال لبنيه ما تعبدون من بعدي قالوا نعبد إلهك و إله ءابائك إبراهيم و إسماعيل و إسحاق إلها واحدا و نحن له مسلمون(
“ --- যখন ইয়াকুব নিজ সন্তানদেরকে বললেন , আমার পরে তোমরা কার উপাসনা করবে ? তখন তারা বলেছিল , আমরা আপনার ও আপনার পূর্বপুরুষগণ ইবরাহীম , ইসমাঈল ও ইসহাকের এক-অদ্বিতীয় উপাস্যের উপাসনা করব । আর আমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকারী ।”
সূরা - বাকারা / ১৩২ ।

নিঃসন্দেহে হযরত ইসমাঈল (আঃ) হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর চাচা ছিলেন । তাঁর পিতা ছিলেন না । কারণ হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইসহাক (আঃ) এর সন্তান । আর হযরত ইসহাক (আঃ) হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর ভাই ছিলেন ।
এতদসত্ত্বেও হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সন্তানগণ হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর চাচা হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে পিতা বলেছেন ।

অর্থাৎ তারা أب শব্দটি তাঁর (ইসমাঈল) ওপরও প্রয়োগ করেছেন ।
এ দু’ধরনের ব্যবহার সত্ত্বেও এ সম্ভাবনা থেকে যায় যে , আযরকে হেদায়েত করা সংক্রান্ত যে সব আয়াত রয়েছে সেগুলোতে উল্লিখিত أب শব্দটির কাঙ্ক্ষিত অর্থ হচ্ছে চাচা , বিশেষ করে শেখ মুফীদ যে ইজমার কথা বর্ণনা করেছেন তা থেকে ।
আর আযরকে হযরত ইবরাহীম (আঃ) পিতা বলেছিলেন তা সম্ভবত এ কারণে যে , হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর অভিভাবকত্বের দায়িত্ব দীর্ঘদিন আযরের ওপর ছিল ।
এ কারণেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাকে পিতার ন্যায় সম্মান প্রদর্শন করতেন ।

সুপ্রিয় পাঠক ,
এবারে দেখুন --
কোরআন আযরকে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর জন্মদাতা পিতা বলে নাই ----
হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে আযরের আত্মীয়তার সম্পর্ক সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার জন্য নিম্নোক্ত দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যার দিকে আমরা সম্মানীত পাঠকবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করব --
১) -
আরব উপদ্বীপের পরিবেশ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অপার আত্মত্যাগের কারণে ঈমান ও ইসলামের নির্মল আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । অধিকাংশ অধিবাসীই আন্তরিকতার সাথে ঈমান আনয়ন করেছিল এবং বুঝতে পেরেছিল যে , শিরক ও মূর্তিপূজার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে দোযখ এবং শাস্তি ।
তারা যদিও ঈমান আনয়ন করার কারণে আনন্দিত ও প্রফুল্ল ছিল । কিন্ত তাদের পিতা-মাতাদের মূর্তিপূজারী হওয়ার তিক্ত স্মৃতি স্মরণ করে তারা কষ্ট পেত ।
যে সব আয়াতে কিয়ামত দিবসে মুশরিকদের জীবন সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ ও ব্যাখ্যা এসেছে সেগুলো শ্রবণ করা তাদের জন্য ছিল খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক । নিজেদের এ আত্মিক যন্ত্রণা লাঘব ও দূর করার জন্য তারা মহানবী (সাঃ) এর কাছে অনুরোধ জানাত যেন তিনি তাদের প্রয়াত অতি নিকটাত্মীয় যারা কাফির ও মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ।

আর ঠিক এভাবেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর চাচা আযরের জন্যও এ কাজটিই করেছিলেন ।
নিম্নোক্ত আয়াতটি তাদের (আরবের নবদীক্ষিত মুসলমানগণ) অনুরোধের প্রতি উত্তরস্বরূপ অবতীর্ণ হয়েছিল --
)ما كان للنَّبِيِّ وَ الّذين آمنوا أنْ يَسْتَغْفِروا للمشرِكين و لو كانوا أولي قُربى مِن بعدِ ما تبيَّن لهم أنَّهم أصحابُ الجحيم و ما كان استغفارُ إبراهيمَ لأبيه إلّا عن موعدةٍ وعدها إيّاه فلمّا تبيَّن له إنَّه عدوٌّ للهِ تبرَّأ منه إنَّ إبراهيمَ لأوّاهٌ حليم(
“ -- নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য শোভনীয় নয় যে , তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে যদি তারা অতি নিকটাত্মীয়ও হয় , যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে , ঐ সব মুশরিক জাহান্নামের অধিবাসী । আর নিজ পিতার জন্য ইবরাহীমের ক্ষমা প্রার্থনা ছিল ঐ প্রতিজ্ঞার কারণে যা তিনি তাকে (চাচা আযরকে) করেছিলেন । তবে যখন ইবরাহীমের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে , সে (আযর) আল্লাহর শত্রু তখন তিনি তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন । নিশ্চয়ই ইবরাহীম অত্যন্ত দয়ালু ও ধৈর্যশীল ---।”
সূরা - তাওবা / ১১৩-১১৪ ।

অগণিত দলীল-প্রমাণ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , আযরের সাথে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কথোপকথন এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অঙ্গীকার হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর যৌবনেই হয়েছিল ।
অবশেষে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর চাচা আযরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন ।
অর্থাৎ এটি ঐ সময় হয়েছিল যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর জন্মভূমি বাবেল ত্যাগ করে ফিলিস্তিন , মিশর ও হিজাযে গমন করেন নাই ।
এ আয়াত থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে , যখন আযর কুফর ও শিরকের মধ্যে দৃঢ়পদ থেকেছে তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে মোটেও স্মরণ করেন নাই ।

২) -
হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর জীবনের শেষভাগে একটি মহান দায়িত্ব পালন (অর্থাৎ পবিত্র কাবার পুনঃনির্মাণ কার্য সমাপ্ত করার পর) এবং পবিত্র মক্কার শুষ্ক ও মরুপ্রান্তরে নিজ স্ত্রী ও সন্তানকে আনয়ণ করার পর এমন সব ব্যক্তি সম্পর্কে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন যার মধ্যে তাঁর জন্মদাতা পিতা-মাতাও ছিলেন ।
তিনি মহান আল্লাহর কাছে তাঁর প্রার্থনা কবুল হওয়ার জন্য এ ধরনের দোয়াও করেছিলেন ,
)ربَّنا اغْفِرْلي وَلِوالِدَيَّ و للمُؤْمنين يومَ يقومُ الحِساب(
“ -- হে আমার প্রভু ! আমাদেরকে , আমার পিতা-মাতা এবং মুমিনদেরকে যেদিন বিচার (হিসাব-নিকাশ) করা হবে সেদিন ক্ষমা করে দিন --।”
সূরা - ইবরাহীম / ৪১ ।

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , পবিত্র কাবাগৃহ নির্মাণ করার পরই হযরত ইবরাহীম (আঃ) বৃদ্ধাবস্থায় এ প্রার্থনা করেছিলেন ।

যদি উক্ত আয়াতে বর্ণিত والديَّ (আমার পিতা-মাতা) যাঁরা ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর দয়া , ভালবাসা এবং ভক্তিশ্রদ্ধার পাত্র এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছেন তিনিই যদি আযর হন তাহলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , হযরত ইবরাহীম (আঃ) আমৃত্যু এবং তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্ত আযরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন নাই এবং কখনও কখনও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন !
অথচ যে আয়াতটি মুশরিকদের অনুরোধের উত্তরে বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে , হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর যৌবনকালেই আযরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন এবং তার থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিলেন । আর ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ মোটেও সংগতিসম্পন্ন নয় ।

পাঠক ,
এই প্রসঙ্গে আরও কিছু দলীল দেখে নিন ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ থেকে --

নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা মুশরিক ছিলেন না । বরং আযর (উনার চাচা) মুশরিক ছিল । কেননা অকাট্যভাবে প্রমানিত যে , নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা আযর নয। বরং অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারাখ (আঃ) ।
সূত্র - তাফসীরে কবীর , ১৩তম খন্ড , ৩৯ পৃষ্ঠা ।

আযর হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা নয়। বরং নিশ্চয়ই তিনি হলেন তারাখ (আঃ) এর সুযোগ্য সন্তান।"
সূত্র - তাফসীরে মাযহারী , ৩য় খন্ড , ২৫৬ পৃষ্ঠা ।

নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতার নাম আযর নয় । বরং তাঁর পিতার নাম হল হযরত তারাখ (আঃ) ।'
সূত্র - তাফসীরু ইবনে কাছীর . ২য় খন্ড , ২৪০ পৃষ্ঠা ।
প্রকাশনা- দারুল ফিকর, বইরুত লেবানন ।

হযরত আবী হাতিম (রহঃ) তিনি বলেন , আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আবু যুরয়াহ (রহঃ) ।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত মিনজাব (রহঃ) । তিনি বলেন , আমাদের কাছে হযরত বিশর বিন আম্মারাহ (রহঃ) হযরত আবূ রাওক্ব (রহঃ) থেকে । তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে খবর দিয়েছেন ।
তিনি বলেন, হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতার নাম কখনই আযর ছিল না । নিশ্চয়ই তাঁর পিতার নাম ছিল হযরত তারাহ (আঃ) ।"
সূত্র - তাফসীরু ইবনে আবী হাতিম ৪র্থ খন্ড ১৩২৫ পৃষ্ঠা ।
প্রকাশনা - মাকতাবাহ নাযার মুছতফা বায, মক্কাতুল মুকাররামা, রিয়াদ, সৌদি আরব ।

হযরত ইবনে আবী শয়বা (রহঃ) , হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ (রহঃ) , হযরত ইবনু জারীর (রহঃ) , হযরত ইবনে মুনজির (রহঃ) ও ইবনে আবী হাতিম (রহঃ) ওনারা সকলেই হযরত মুজাহিদগন (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন । তিনি বলেন , আযর হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা ছিল না। বরং আযর ছিল একটি মূর্তির ( বা মূর্তিপুজকের ) নাম ।"
সূত্র - আদ দুররুল মানছুর লিল জালাসুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৩য় খন্ড ২৩ পৃষ্ঠা ।

হযরত ফাররা ও জুজাজ (রহঃ) বলেন, হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতার নাম ছিল হযরত তারাখ (আঃ) ।
এ বিষয়ে সকল বংশতত্ববিদ ঐতিহাসিকগণ ইজমা করেছেন।"
সূত্র - তাফসীরুল কুরআন লিস সাময়ানী ২য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা ।
প্রকাশনা- দারুল ওয়াতান, রিয়াদ , সৌদী আরব ।

এই প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেন যে , মহান আল্লাহ সমগ্র কিছু সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত করেছেন । এরপর তাদের দুই ভাগে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এবং সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরন করেছেন । সূতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ।"
সূত্র - তিরমীযি শরীফ ২য় খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা । হাদীস শরীফ ৩৬০৮ / মুসনাদে আহমদ ১ম খন্ড ২২০ পৃষ্ঠা । হাদীস শরীফ ১৭৯১ ।

এসকল হাদীস শরীফ ওনার ব্যাখায় বলা হয়েছে--

হযরত মুহাম্মাদের (সাঃ) পূর্ব-পুরুষদের সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির-মুশরিক হওয়া সম্ভব নয়। "
সূত্র - তাফসীরে মাজাহারি ৪/৩০৮ ।

সম্মানীয় পাঠক ,
যে ব্যক্তি যৌবনকালে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) ঘৃণার পাত্র হয়েছিল এবং যার সাথে তিনি সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন সেই ব্যক্তিটি ঐ ব্যক্তি থেকে ভিন্ন যাঁকে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সর্বদা স্মরণ করেছিলেন এবং যাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন ।

উপরে বর্নিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , পৃথিবীতে আগত কোন নবী-রাসুলগনের সম্মানীয় জন্মদাতা পিতা-মাতা কখনই কাফির-মুশরিক বা মূর্তিপূজারী ছিলেন না ।

এই নীতিমালাটিই হচ্ছে বার ইমামীয়া শীয়াদের গুরুত্বপূর্ন একটি যৌক্তিক বিশ্বাস । সকলেই ভাল ও সুস্থ থাকুন ।

সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

Saturday, December 22, 2018

কাফেরদেরকে রক্ত দেওয়া যাবে ?

কাফেরদেরকে রক্ত দেওয়া যাবে ?
ইসলামে রক্ত দেওয়ার বিধানঃ

রক্ত মানুষের শরীরের অংশ। সুস্থ শরীরের অন্যতম অনুষঙ্গ। শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তা নাপাক। স্বাভাবিক অবস্থায় এক জনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা হারাম। দুই কারণে-

(১) মানুষের প্রত্যেক অঙ্গ সম্মানিত। যা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে স্বতন্ত্র করে। এ সম্মানআল্লাহ্‌ প্রদত্ত। রক্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত। সুতরাং এ সম্মানিত ও সংরক্ষিত মানবীয় অংশ বিশেষ দেহ থেকে পৃথক করে অন্যত্র সংযোজন মানবীয় সম্মানের পরিপন্থি।

(২) রক্ত নাজাসাতে গালীজা (গভীর নাপাক)। আর নাপাক বস্তুর ব্যবহার বৈধ নয়। এবিধান স্বাভাবিক সময়ে অবশ্য পালনীয়। তবে ইসলামের বিশেষ সময়ের বিশেষ বিধান হিসেবে (অনন্যোপায় অবস্থায়) যে সব অনুমতি (জায়েয নীতি) প্রদান করা হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে, সে প্রেক্ষাপটে বিশেষ জরুরতের ক্ষেত্রে বিদগ্ধ ফকীহগণ রক্ত ব্যবহারের যে সব পর্যালোচনা পেশ করেছেন তা হলো :

(ক) তা নারীর দুধের ন্যায়। যে দুধ কোনোরূপ বিকৃতি ও কাটা ছেঁড়া ছাড়াই একজনের শরীর থেকে বের হয়ে অন্যের শরীরের অংশে পরিণত হয়। রক্ত ও দুধের মতো কোনোরূপ কাটা-ছেঁড়া বা বিকৃতি ছাড়া একজনের শরীর থেকে বের করে অন্যের শরীরে স্থাপন করা হয়। ইসলামী শরীয়ত নারীর দুধকে শিশুর প্রধান খাবার নির্ধারণ করেছে। আর শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো শুধু জায়েযই নয়, বরং মায়ের স্বাভাবিক ওয়াজিব (অপরিহার্য) করা হয়েছে।
ফুকাহায়ে কেরাম নারীর দুধ বড়দের ওষুধের জন্য জায়েয সাব্যস্ত করেছে। ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ রয়েছে, ওষুধ হিসাবে স্ত্রীলোকের দুধ পুরুষের নাকে প্রবেশ করানো কিংবা পান করায় কোন দোষ নেই।
উল্লেখ্য, রক্ত মানুষের শরীরের অংশ। আর দুধ ও মানুষের শরীরের অংশ। এ হিসাবে রক্তকে দুধের সঙ্গে তুলনা করা, দূরবর্তী তুলনা হবে না। ইসলামী শরীয়ত দুধ এক মানুষের শরীরের অংশ হওয়া সত্ত্বেও অপর মানুষের (শিশুর জন্য) প্রয়োজনের ভিত্তিতে তার গ্রহণ জায়েয সাব্যস্ত করেছে এই হুকুমের আলোকেই। সুতরাং প্রয়োজনের ভিত্তিতে একজনের রক্ত অপরের শরীরে পুশ করা বৈধ।

(খ) রক্ত যদিও নাজাসাতে গালীজা (গভীর নাপাক), তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নাপাক জিনিস দ্বারা চিকিৎসার কাজ চালানো বৈধ। অনন্যোপায় অবস্থাকালে হারাম বা নাপাক জিনিস ব্যবহারের মূলনীতি কুরআন কারীমও সমর্থন করে। যে ব্যক্তি ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, শরীয়ত তার জন্য হারাম জিনিস ব্যবহার করে জীবন বাঁচানো শুধু জায়েয নয়, বরং অত্যাবশ্যক সাব্যস্ত করেছে। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় যথা পরিমান, রক্ত, শুকরের গোশত, মৃত প্রাণীর গোশত আহার করে হলেও জীবন বাঁচানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যেমন ইরশাদ হয়েছে," তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত, এবং সেসব জীব যা মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে ব্যক্তি অনন্যোপায় হয়ে পড়ে, এবং অপরাধপ্রবন ও সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য (উপযুক্ত নিষিদ্ধ দ্রবাদী আহারে) কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।"
[সূরা বাকারা: ১৭৩]
পবিত্র কুরআনের উপযুক্ত আয়াতে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে হারাম দ্রব্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে শর্ত হলো অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিমানের বেশি আহার করা যাবে না।
হারাম বস্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফতওয়ায়ে আলমগিরীতে বলা হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তির ওষুধের জন্য হারামের ব্যবহার জায়েয আছে। যখন অভিজ্ঞ ডাক্তার বলবে, নিশ্চয়ই এ রোগের চিকিৎসা ঐ হারাম দ্রব্য ছাড়া সম্ভব নয়, হ্যাঁ, যখন হালাল দ্রব্য দ্বারা চিকিৎসা না হওয়া চূড়ান্ত ভাবে সাব্যস্ত হয়, তখন হারাম দ্রব্য স্থলাভিষিক্ত হবে। [ফতওয়ায়ে আলমগিরী,৫/৩৫৫]

অপরের রক্ত গ্রহণ অত্যাবশ্যক এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিচে লিখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবেঃ
(১) যখন কোন অসুস্থ ব্যাক্তির জীবননাশের আশংকা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত প্রবেশ করানো ব্যতীত বাঁচানোর কোন পন্থা না থাকে।
(২) যখন রক্ত দেওয়া প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশংকা নেই বটে, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়, এসব অবস্থায় রক্ত দেওয়া জরুরী।
(৩) যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে, তখন রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
(৪) যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশংকা না হয়, বরং শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্য হয়, সে অবস্থায় ইসলামী শরীয়তে রক্তদান জায়েয নয়।

রক্ত ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান:

রক্ত বিক্রি জায়েয নয়। কিন্তু যে শর্তের ভিত্তিতে প্রথম সূরতে রক্ত দেয়া জায়েয সাব্যস্ত হয়েছে, ঐ অবস্থায় যদি যথা রক্ত বিনা মূল্যে না পাওয়া যায়, তখন তার জন্য মূল্যে দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েয। তবে যে রক্ত দিবে তার জন্য রক্তের মূল্য নেয়া জায়েয নয়।
[জাওয়াহেরুল ফিক্বহ : ২/৩৮]

অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তরের বিধান: অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েয। মুসলিম আর অমুসলিমের রক্তে প্রভেদ নাই।
কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, কাফের ও ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে। অমুসলিমের মন্দ স্বভাব, মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার সমূহ আশংকা আছে। এজন্য শিশুর জন্য পাপাচারী মহিলার দুধ পানকে অপছন্দ কার হয়েছে। সুতরাং এসব ক্ষতির দিকে লক্ষ্য করে, অমুসলিমের রক্ত গ্রহণ থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকা উচিত। [জাওয়াহেরুল ফিক্বহ: ২/৪০]

স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে রক্ত দানের বিধান:

অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মতো স্বামীর রক্ত স্ত্রীর শরীরে, স্ত্রীর রক্ত স্বামীর শরীরে প্রবেশ করানো জায়েয। এর মাধ্যমে বিয়ের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। বৈবাহিক সম্পর্ক যথারীতি বহাল থাকবে। কেননা, মাহরামের সম্পর্ক দুধ পানের মাধ্যমে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন। আর দুধ পানের দ্বারা মাহরামের সম্পর্ক স্থাপনের বয়স আড়াই বছর। সুতরাং আড়াই বৎসর পর কোনো মহিলার দুধ পান করার দ্বারা যেমন মাহরাম সাব্যস্ত হয় না, তেমনি রক্ত গ্রহণ ও প্রদানের দ্বারাও স্বামী স্ত্রীর মাঝে মাহরামের সম্পর্ক কায়েম হয় না। [জাওয়াহেরুল ফিক্বহ: ২/৪০]

এসকল মাসয়ালা ও বিধান খেয়াল রেখে রক্ত প্রদান করা উত্তম কাজ। কেননা জাল্লা শানূহু বলেন-

‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির
জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’-(সূরা মায়েদা : ৩২)

Tuesday, January 16, 2018

ইমামত পদ্বতির বারজন ইমামগন কারা

ইমামত পদ্ধতির যে ১২ জন ইমাম এর কথা বলা হয় এরা কারা? আসুন যেনে নিন বার ইমাম এর পরিচয়। সম্পুর্ণ লেখাটি মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত বই এর সংকলনে মুহাম্মাদ নাজির হোসাইন পৃষ্ঠা - ৪৯ অবলম্বনে ।
ইমামত পদ্বতির বারজন ইমামগন কারা

অনেক সুন্নি মুসলমান ভাই বলেন যে , রাসুল (সাঃ) তাঁর ইন্তেকাল পরবর্তী নেতা , খলীফা বা ইমামের নাম নির্দিষ্ট করে বলে যান নি । অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) তাঁর পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত উত্তরসূরী কে হবেন সেটা বলে যান নি । তাহলে রাসুল (সাঃ) তাঁর উম্মতকে এতিম বিহীন অবস্থায় রেখে গেলেন !

প্রতিজন নবী রাসুলগন তাঁদের পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত উত্তরসূরী সুনির্ধারিত করে নাম পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন । এমনকি মহান আল্লাহর হুকুম মোতাবেক হযরত মূসা (আঃ) বারজন ইমাম নিয়োগ দিয়েছিলেন । মুসা আঃ এর ১২ ইমাম তথ্যসুত্র সুরা মায়িদা আয়াত ১২।

সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী প্রতি নবী রাসুলগন তাঁদের পরবর্তী উত্তরসূরী নিযুক্ত করে গেছেন । আর আল্লাহর বিধানে কখনই কোন পরিবর্তন হয় না ।

আসুন , দেখে নেওয়া যাক - এই বিষয় সুন্নি রেফারেন্স কি বলে ---

প্রসিদ্ব আহলে সুন্নাত এর পন্ডিত শায়খ সুলাইমান কান্দুজী হানাফী তুর্কি কতৃক রচিত তার প্রসিদ্ব গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত নামক গ্রন্থে বর্ননা করেছেন যে ,

নাছাল নামক একজন হিহুদী মহানবী (সাঃ) এর নিকট আরজ করলেন যে ,

ইয়া রাসুল (সাঃ) , আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই যা কিছুদিন ধরে আমার মনকে অশান্ত রাখছে। কথা দিচ্ছি , আপনার জবাব যদি সঠিক হয় তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করব ।

নবী (সাঃ) বললেন , হে আবু অাম্মারা , তুমি প্রশ্ন করে যাও , কোন সমস্যা নেই । অনুমতি পেয়ে ঐ ব্যক্তি প্রশ্ন শুরু করল ।

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সে খুবই সন্তষ্ট হল এবং বলল যে , আপনি খুবই সঠিক জবাব দিয়েছেন ।

প্রশ্নের এক পর্যায় সে জিজ্ঞাসা করল যে , আমাকে বলে দিন , আপনার পরে কে আপনার উত্তরাধিকারী হবে ? কেননা আজ পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরীর নাম পরিচয় না বলে এই পৃথিবী ত্যাগ করেন নি । যেমন আমাদের নবী হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন যে , তাঁর অবর্তমানে হযরত ইউসা বিন নুন হলেন তাঁর উত্তরসূর বা স্থলাভিষিক্ত ।

মহানবী (সাঃ) বললেন যে , " আমার পরে আমার উত্তরসূরী বা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আমার ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং তাঁর পর আমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন , অতঃপর কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট নয়জন ইমাম হোসাইন এর বংশ থেকে আগমন করবেন ।

লোকটি বলল , " ইয়া মুহাম্মাদ (সাঃ) , দয়া করে অবশিষ্ট নয়জনের নাম বলে দিন " ।
নবীজী (সাঃ) বললেন যে ,
" হোসাইনের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদীন হবে ,
জয়নুল আবেদীনের অন্তধানের পর তাঁর স্বীয় পুত্র মোহাম্মাদ বাকের হবে ,
মোহাম্মাদ বাকেরের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক হবে ,
জাফর সাদিকের তিরোধানের পর তাঁর পুত্র মুসা কাজেম হবে ,
মুসা কাজেমের ইহলোক ত্যাগের পর তাঁর পুত্র আলী রেজা হবে ,
আলী রেজার ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র মুহাম্মাদ তাক্বী হবে ,
মুহাম্মাদ তাক্বীর তিরোধানের পর তাঁর পূত্র আল নাক্বী হবে ,
আল নাক্বীর ইহলোক ত্যাগের পরে তাঁর পূত্র হাসান আসকারী হবে ,
হাসান আসকারীর ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র ইমাম মাহদী হবে সর্বশেষ বারতম ইমাম ।
তাঁরা আল্লাহর হুজ্জাত বা জমিনের বুকে অকাট্য দলিল । "

এই জবাব পেয়ে পরক্ষনেই ঐ ইহুদী লোকটি মহানবী (সাঃ) এর নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ।
সূত্র - ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৪১ (বৌরুত) / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৬৯১-৬৯৪ ( লাহোর,উর্দু) / ফারায়েদ নি , খন্ড-২ , পৃ- ১৩৩ , ৩১২ / সিয়ারানীও আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওয়াহীর , খন্ড- ৩ পৃ- ৩২৭ ।

সু্প্রিয় পাঠক ,
দয়া করে খেয়াল করুন যে , একজন ইহুদী হয়েও লোকটি এই বিষয় নিশ্চিত ছিল যে , আল্লাহর বিধানে কখনই সমগ্র সৃষ্টিজগত এক মুহূর্তের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিনা হুজ্জাতে থাকতে পারে না । অর্থাৎ রেসালতের সমাপ্তির পর আল্লাহ কতৃক মনোনীত ইমামত পদ্বতি কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে বহাল আছে বা থাকবে । এবং সেই ইমামদের সংখ্যা হবে বারজন । এই বারজনের নাম পরিচয় সহ সকল কিছুই স্বয়ং মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন ।

হজ্ব ফেরৎ সোয়ালক্ষ হাজী সাহাবাদের সম্মুখে গাদীর এ খুমের প্রান্তরে ইমামত ধারার প্রথম ইমাম ও নবীজী (সাঃ) এর পরবর্তী সর্বপ্রথম উত্তরাধিকার ও স্থলাভিষিক্ত হিসাবে হযরত আলী (আঃ) কে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলে গেলেন ।

আরো পড়ুনঃ নবী বংশের লোকদের নামের সাথে কেন আঃ বলা হয়।

নবীজী (সাঃ) এর এই রকম প্রকাশ্য সুষ্পষ্ট ঘোষনার পরেও যে সকল মুসলমান বলেন যে , রাসুল (সাঃ) কাউকেই মনোনীত করে যান নি -- তারা দয়া করে ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন ।

আজ এই পর্যন্ত,
সকলে সুস্থ ও হাসি খুশী থাকুন।
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ।

Thursday, December 17, 2015

মুসলমানরা কেন সন্ত্রাস করে

মুসলমানরা কেন সন্ত্রাস করে

জার্মানির এক টিভি লাইভশোতে একজন জার্মান মুসলিম স্কলারকে যখন উপস্থাপক প্রশ্ন করেছিলেন, মুসলমানরা কেন সন্ত্রাস করে ? তখন তিনি উক্ত প্রশ্নের জবাব এভাবে উল্টো প্রশ্ন করে দেন :-
☑️ ১. যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ? 
☑️ ২. যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল? ☑️ ৩.যারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল? 
☑️ ৪.যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ???
☑️ ৫.যারা আমেরিকা আবিষ্কারের পর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উত্তর আমেরিকা বর্তমান যুক্তরাষ্ট ১০০ মিলিয়ন এবং দক্ষিন আমেরিকাতে ৫০ মিলিয়ন রেড- ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ? 
☑️ ৬. যারা ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে কৃতদাস বানিয়ে আমেরিকা নিয়ে গিয়েছিল। যাদের ৮৮ ভাগ সমুদ্রেই মারা গিয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহকে আটলান্টিক মহাসাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তারা কি মুসলিম ? উত্তর হবে, এসব মহাসন্ত্রাসী ও অমানবিক কার্যকলাপের সাথে মুসলিমরা কখনো জড়িত ছিলনা। 
☑️ ইরাক , আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম তেল , গ্যাস লুন্ঠন কি মুসলমানরা করেছিল ? আপনাকে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা সঠিকভাবে করতে হবে। যখন কোন অমুসলিম কোন খারাপ কাজ করে,খুন খারাপি করে তখন এটাকে বলা হয় আত্মরক্ষা আর যখন কোন মুসলিম আত্মরক্ষার্থে কিছু করে, তখন এটাকে বলা হয় জঙ্গীবাদ ???
☑️ ইসরাইলি ইহুদিরা অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী , পুরুষদের উপর হামলা করলে হয় আত্মরক্ষা এবং ফিলিস্তিনের জনগণ উহ: আহ : শব্দ করলে হয় মৌলবাদী বা জঙ্গি ???
 
মুসলমানের শত্রুরা এখন মুসলমানদের নাম ও চিহ্ন ব্যবহার করে সন্ত্রাস করছে , নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে , নিজেরা ( ইউরোপ-আমেরিকানরা ) নিজেদের দেশের জনগনের কাছে সাধু সেজে মুসলমানদের উপর তথাকথিত জঙ্গি - সন্ত্রাস দমনের নামে মূলত মুসলমানদের তেল, গ্যাস , ভূমি , দেশ লুটপাট করছে ... আল-কায়েদা , বোকো হারাম , ইসলামী এস্টেট বা ‪#‎ISI‬S শুনতে ইসলামী নাম হলেও এগুলোর কার্যক্রম থেকে পরিস্কার বোঝা যায় এগুলো ইউরোপ - আমেরিকানদের তৈরী , ঐসব কপাল-পোড়া সংগঠনের সাথে ইসলাম-মুসলমানদের দূরতম সম্পর্ক নেই ইনশা আল্লাহ, একটা সময় ছিল যখন ক্ষমতা লোভী , সাম্রাজ্যবাদীরা অন্য দেশ ,অন্য ধর্মের জনগনের উপর - সরাসরি আক্রমন ও তাদের সম্পদ লুট করত I এখন আধুনিক যুগ , যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে I কেউ কোনো অন্যায় করলে তা ছবি ও ভিডিও সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে , এছাড়া দেশে দেশে গনত্রান্তিক ব্যবস্থা বিরাজমান | 
 
কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট মারাত্মক ভুল করলে তাকে বা তাদেরকে অনেক বেগ পোহাতে হয় , এখন আর কেউই জবাবদিহিতার উর্ধে নয়‬ , তাই কেউ রাস্ট ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অন্য দেশের উপর সরাসরি আক্রমন করে না বরঞ্চ অন্য নামে করে থাকে‬ | " তাতে সাপও মরে আর লাঠিও ভাঙ্গে না " আর এরা এ থেকে ফায়দা লুটার ফন্দি করে | 
 
"ইসলামী জঙ্গি " নামে কেউ সন্ত্রাস করলে বুঝতে হবে এসব ইসরাইলি - আমেরিকানদের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা || 
আমাদের সকল মুসলমানদেরকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে ৷

Thursday, November 12, 2015

পৃথীবি সেরা শহীদ পরিবার

পৃথীবি সেরা শহীদ পরিবার
বলতে পারবেন পৃথিবির শ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবার কোনটি ? ইমাম অালীর পরিবার । হায় ভাবতেও অবাক হয় রাসুলের মৃত্যুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তার কন্যা মা ফাতিমা যাহরা আঃ কে শহীদ করা হলো, এরপর একে এক মুমিনদের নেতা ইমাম আলী আঃ কে মসজিদে নামাজরত অবস্হায় আঘাত হানা হলো তাকেও শহীদ করা হলো ইমাম আলীর দুই পুত্র মুমিনদের নেতা ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন কেও শহীদ করা হলো এরপর ইমাম হুসাইনের বংশের প্রত্যেক ইমাম আঃ দের শহীদ করা হলো।

আজকে আমরা নবী বংশের ইমামদের হত্যাকারীদের কে চিনবো, জানার জন্য ইমামদের নামের নিচে তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

এগারজন ইমামের হত্যাকারী কারা ছিল ?

 ১- ইমাম হযরত আলী (আঃ)
>> হত্যাকারী আব্দুল রহমান ইবনে মুলজিম

 ২- ইমাম হযরত হাসান (আঃ)
>> হত্যাকারী জোদা বিনতে আসহাস

৩- ইমাম হযরত হোসেন (আঃ)
>> হত্যাকারী সিমরে লাইন

৪- ইমাম হযরত যায়নুল আবেদিন (আঃ)
>> হত্যাকারী ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক

৫- ইমাম হযরত বাকের (আঃ)
>> হত্যাকারী হাসাম বিন আব্দুল মালেক

৬- ইমাম হযরত জাফর সাদিক (আঃ)
>> হত্যাকারী মানসুর দুয়ানকি

৭- ইমাম হযরত মূসা কাজিম (আঃ)
>> হত্যাকারী হারুন রাশিদ

৮- ইমাম হযরত আলী রেজা (আঃ)
>> হত্যাকারী মামুন রাশিদ

৯- ইমাম হযরত তাকী (আঃ)
>> হত্যাকারী মোতাসিম বিল্লাহ

১০- ইমাম হযরত নকী (আঃ)
>> হত্যাকারী মোতাজ বিল্লাহ

১১- ইমাম হযরত হাসান আসকারী (আঃ)
>> হত্যাকারী আহমেদ মোতমাদ বিল্লাহ

এইসব হত্যাকারীদের উপর লানাত বেসুমার ।

Sunday, October 25, 2015

ইহুদিদের হাতে বন্দী হযরত সালমান (রা.) যেভাবে বিশ্বনবী (সা.)-কে চিনেছিলেন

ইহুদিদের হাতে বন্দী হযরত সালমান (রা.) যেভাবে বিশ্বনবী (সা.)-কে চিনেছিলেন
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র অতি প্রিয় ও অনুগত সাহাবি হযরত সালমান ফার্সি (রা.) ১৩৯৯ বছর আগে ৩৫ হিজরির ৮ ই সফর ইরাকের মাদায়েন শহরে ইন্তেকাল করেছিলেন। সেখানে আজও তাঁর মাজার জিয়ারত করেন উতসুক, ধর্মপ্রাণ, ঐতিহ্য-প্রিয় ও শেকড়-সন্ধানী মুসলমানরা। হযরত সালমান ফার্সি (রা.)’র অতি উচ্চ মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছিলেন: “সালমান মিন্না আহলি বাইত” । এর অর্থ সালমান আমাদের আহলে বাইতের (পবিত্র নবী বংশের) অংশ। রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয় না হওয়া সত্ত্বেও তিনিই একমাত্র সাহাবি যাকে রাসূল (সা.) নিজ পবিত্র পরিবারের সদস্য বলে অভিহিত করেছেন।

হযরত সালমান (রা.) ছিলেন অনারব ও ইরানের শিরাজ অঞ্চলের অধিবাসী। তাঁর আরেকটি নাম ছিল রুজবেহ। জরথুস্ত ধর্মের অদ্ভুত প্রথায় বিতৃষ্ণ সালমান মাতৃভূমি শিরাজ ত্যাগ করে সত্য ধর্মের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। নেস্তোরিয়ান খ্রিস্টানদের সঙ্গে পরিচয় ঘটার পর সত্য-সন্ধানের এই ভ্রমণ শুরু করেন তিনি। ব্যাপক ভ্রমণের পর তিনি সিরিয়ায় কয়েকজন সন্ন্যাসীর কাছে একত্ববাদের শিক্ষা পান। এই সন্ন্যাসীরা হযরত ঈসা (আ.)’র খাঁটি একত্ববাদী ধর্মের ওপর অটল থাকার জন্য লোকালয় ছেড়ে নির্জন মরুভূমিতে বসবাস করছিলেন। কারণ, খ্রিস্ট ধর্মের নেতা সেজে বসা পল ( মূলত ইহুদি ) একত্ববাদী খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলকে বিকৃত করে এতে অযৌক্তিক ত্রিত্ববাদ চালু করেন। খাঁটি খ্রিস্ট ধর্মে (একত্ববাদী) বিশ্বাসী ওই সন্ন্যাসীরা যখন একে একে মারা যাচ্ছিলেন তখন তাদের মধ্যে বেঁচে থাকা সর্বশেষ সদস্য মৃত্যু বরণের মুখে সালমান (রা.)-কে আরব দেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সালমান (রা.) যেন শেষ নবী(সা.)’র আবির্ভাবের সময় পর্যন্ত আরব দেশে থেকে যান সেই পরামর্শ দিতেও ভুল করেননি সেই সন্ন্যাসী। সালমান (রা.) আরব দেশে আসলে ইহুদিরা তাঁকে অপহরণ করে এবং তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রি করে।

বহু বছর ধরে তিনি ইহুদি মালিকের জন্য খেজুর বাগান গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিশ্রম করেছিলেন। একদিন তিনি খেজুর বাগানে দেখলেন নুরানি চেহারার এক ব্যক্তি একত্ববাদ ও ঐশী ন্যায়বিচারের কথা বলছেন। সালমান (রা.)’র হৃদয়ে জ্বলে উঠলো আলোর স্ফুলিঙ্গ। আগন্তুক ব্যক্তিকে পরীক্ষার জন্য সদকা বা দান হিসেবে কিছু খেজুর দিতে চাইলেন তিনি। কারণ, তিনি ধর্মগ্রন্থে পড়েছিলেন যে শেষ নবী (সা.)’র অন্যতম নিদর্শন হল তিনি এবং তার বংশধরদের জন্য দান-খয়রাত ও সদকা নেয়া নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) দান করা খেজুরগুলো তাঁর সাহাবিদের দিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি নিজে এবং সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই ও জামাতা হযরত আলী বিনম্রভাবে জানান যে তাঁরা দানের খেজুর নেবেন না। সালমান (রা.)’র মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বেহেশতী আনন্দে! আরে! একেই তো আমি খুঁজছি এতদিন! এবার তিনি কিছু খেজুর নিয়ে সেগুলো রাসূল (সা.) ও হযরত আলী-কে উপহার হিসেবে পেশ করলে তাঁরা তা গ্রহণ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হযরত সালমান (রা.) উচ্চারণ করলেন দুটি বাক্য- আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু বা মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল

মহানবী (সা.) ওই কৃপণ ও অর্থপিশাচ ইহুদিদের হাত থেকে নও-মুসলমান সালমান (রা.)-কে মুক্ত করার জন্য বিপুল অর্থ শোধ করেন এবং তাদের আরো কিছু কঠোর শর্ত পূরণ করলেন।

মক্কার দশ হাজারেরও বেশি মূর্তি পূজারী মুশরিক ও ইহুদিরা একজোট হয়ে যখন ইসলামকে নির্মূলের লক্ষ্যে মদীনা আক্রমণের উদ্যোগ নেয় তখন পবিত্র এই শহরের চারদিকে সবচেয়ে অরক্ষিত দিকগুলোয় খন্দক বা পরিখা খননের পরামর্শ দিয়েছিলেন এই বিখ্যাত সাহাবী। রাসূল (সা.) তাঁর ওই পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসে এই যুদ্ধ খন্দকের যুদ্ধ নামে খ্যাত। যুদ্ধক্ষেত্রে খন্দকের ব্যবহার আরব অঞ্চলে ছিল অপ্রচলিত। এমন অপ্রত্যাশিত প্রতিরক্ষা-ব্যব
স্থা দেখে শত্রুরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিল।

বিশ্বনবী (সা.)’র ইন্তেকালের পর হযরত সালমান ফার্সি (রা.) সব সময় আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী’র অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন ইসলামের গৌরবময় ইতিহাসে। সালমান মাদায়েন প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন। এই প্রদেশ ছিল ইসলাম-পূর্ব যুগে প্রাচীন ইরানের সাসানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী।