অনেক সুন্নি মুসলমান ভাই বলেন যে , রাসুল (সাঃ) তাঁর ইন্তেকাল পরবর্তী নেতা , খলীফা বা ইমামের নাম নির্দিষ্ট করে বলে যান নি । অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) তাঁর পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত উত্তরসূরী কে হবেন সেটা বলে যান নি । তাহলে রাসুল (সাঃ) তাঁর উম্মতকে এতিম বিহীন অবস্থায় রেখে গেলেন !
প্রতিজন নবী রাসুলগন তাঁদের পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত উত্তরসূরী সুনির্ধারিত করে নাম পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন । এমনকি মহান আল্লাহর হুকুম মোতাবেক হযরত মূসা (আঃ) বারজন ইমাম নিয়োগ দিয়েছিলেন । মুসা আঃ এর ১২ ইমাম তথ্যসুত্র সুরা মায়িদা আয়াত ১২।
সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী প্রতি নবী রাসুলগন তাঁদের পরবর্তী উত্তরসূরী নিযুক্ত করে গেছেন । আর আল্লাহর বিধানে কখনই কোন পরিবর্তন হয় না ।
আসুন , দেখে নেওয়া যাক - এই বিষয় সুন্নি রেফারেন্স কি বলে ---
প্রসিদ্ব আহলে সুন্নাত এর পন্ডিত শায়খ সুলাইমান কান্দুজী হানাফী তুর্কি কতৃক রচিত তার প্রসিদ্ব গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত নামক গ্রন্থে বর্ননা করেছেন যে ,
নাছাল নামক একজন হিহুদী মহানবী (সাঃ) এর নিকট আরজ করলেন যে ,
ইয়া রাসুল (সাঃ) , আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই যা কিছুদিন ধরে আমার মনকে অশান্ত রাখছে। কথা দিচ্ছি , আপনার জবাব যদি সঠিক হয় তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করব ।
নবী (সাঃ) বললেন , হে আবু অাম্মারা , তুমি প্রশ্ন করে যাও , কোন সমস্যা নেই । অনুমতি পেয়ে ঐ ব্যক্তি প্রশ্ন শুরু করল ।
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সে খুবই সন্তষ্ট হল এবং বলল যে , আপনি খুবই সঠিক জবাব দিয়েছেন ।
প্রশ্নের এক পর্যায় সে জিজ্ঞাসা করল যে , আমাকে বলে দিন , আপনার পরে কে আপনার উত্তরাধিকারী হবে ? কেননা আজ পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরীর নাম পরিচয় না বলে এই পৃথিবী ত্যাগ করেন নি । যেমন আমাদের নবী হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন যে , তাঁর অবর্তমানে হযরত ইউসা বিন নুন হলেন তাঁর উত্তরসূর বা স্থলাভিষিক্ত ।
মহানবী (সাঃ) বললেন যে , " আমার পরে আমার উত্তরসূরী বা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আমার ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং তাঁর পর আমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন , অতঃপর কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট নয়জন ইমাম হোসাইন এর বংশ থেকে আগমন করবেন ।
লোকটি বলল , " ইয়া মুহাম্মাদ (সাঃ) , দয়া করে অবশিষ্ট নয়জনের নাম বলে দিন " ।
নবীজী (সাঃ) বললেন যে ,
" হোসাইনের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদীন হবে ,
জয়নুল আবেদীনের অন্তধানের পর তাঁর স্বীয় পুত্র মোহাম্মাদ বাকের হবে ,
মোহাম্মাদ বাকেরের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক হবে ,
জাফর সাদিকের তিরোধানের পর তাঁর পুত্র মুসা কাজেম হবে ,
মুসা কাজেমের ইহলোক ত্যাগের পর তাঁর পুত্র আলী রেজা হবে ,
আলী রেজার ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র মুহাম্মাদ তাক্বী হবে ,
মুহাম্মাদ তাক্বীর তিরোধানের পর তাঁর পূত্র আল নাক্বী হবে ,
আল নাক্বীর ইহলোক ত্যাগের পরে তাঁর পূত্র হাসান আসকারী হবে ,
হাসান আসকারীর ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র ইমাম মাহদী হবে সর্বশেষ বারতম ইমাম ।
তাঁরা আল্লাহর হুজ্জাত বা জমিনের বুকে অকাট্য দলিল । "
এই জবাব পেয়ে পরক্ষনেই ঐ ইহুদী লোকটি মহানবী (সাঃ) এর নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ।
সূত্র - ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৪১ (বৌরুত) / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৬৯১-৬৯৪ ( লাহোর,উর্দু) / ফারায়েদ নি , খন্ড-২ , পৃ- ১৩৩ , ৩১২ / সিয়ারানীও আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওয়াহীর , খন্ড- ৩ পৃ- ৩২৭ ।
সু্প্রিয় পাঠক ,
দয়া করে খেয়াল করুন যে , একজন ইহুদী হয়েও লোকটি এই বিষয় নিশ্চিত ছিল যে , আল্লাহর বিধানে কখনই সমগ্র সৃষ্টিজগত এক মুহূর্তের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিনা হুজ্জাতে থাকতে পারে না । অর্থাৎ রেসালতের সমাপ্তির পর আল্লাহ কতৃক মনোনীত ইমামত পদ্বতি কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে বহাল আছে বা থাকবে । এবং সেই ইমামদের সংখ্যা হবে বারজন । এই বারজনের নাম পরিচয় সহ সকল কিছুই স্বয়ং মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন ।
হজ্ব ফেরৎ সোয়ালক্ষ হাজী সাহাবাদের সম্মুখে গাদীর এ খুমের প্রান্তরে ইমামত ধারার প্রথম ইমাম ও নবীজী (সাঃ) এর পরবর্তী সর্বপ্রথম উত্তরাধিকার ও স্থলাভিষিক্ত হিসাবে হযরত আলী (আঃ) কে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলে গেলেন ।
আরো পড়ুনঃ নবী বংশের লোকদের নামের সাথে কেন আঃ বলা হয়।
নবীজী (সাঃ) এর এই রকম প্রকাশ্য সুষ্পষ্ট ঘোষনার পরেও যে সকল মুসলমান বলেন যে , রাসুল (সাঃ) কাউকেই মনোনীত করে যান নি -- তারা দয়া করে ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন ।
আজ এই পর্যন্ত,
সকলে সুস্থ ও হাসি খুশী থাকুন।
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
Download 12 Imam Android App.
ReplyDelete