Monday, August 24, 2020

সোসিয়াল মিডিয়াতে ছবি আপলোড না দিলে কি সম্মান চলে যাবে?

সুপরিচিত এক ছোট বোন কে একবার নসীহা স্বরুপ বলেছিলাম ফেইসবুকে এত ছবি দাও কেন ? সে জবাবে বললো, আপু আজকাল যুগটাই এমন । ছবি না দিলে আত্মীয়-স্বজন কানাঘুষা করে বলে, আমরা মনে হয় ভালো নাই । আর্থিকভাবে কষ্টে আছি । তাছাড়া প্রেম করে বিয়ে করেছি বলে ফ্যামিলির অনেকে কটু কথা বলে পিছনে পিছনে । তাই যে কোন অকেশানে বা জামাই নিয়ে বেড়াতে গেলে দু-চারটা ছবি তুলে ফেইসবুকে না দিলে লোকজনের মুখ বন্ধ করা যায়না । মনে করে আমরা বিবাহিত জীবনে অসুখী, কোন ঝামেলা হচ্ছে আমাদের মাঝে । লোকজনকে দেখানোর জন্য হলেও তাই ছবি দিতে হয় ।

সোসিয়াল মিডিয়াতে ছবি আপলোড না দিলে কি সম্মান চলে যাবে?


আরেক পরিচিত বোন সেও প্রচুর ছবি দেয় । জানলাম কাজিনরা সামাজিকভাবে অনেক ভালো পজিশনে আছে । এছাড়া হাসব্যান্ডের বন্ধুর বৌ-রাও নানান সময়ে এখানে সেখানে ঘুরতে গেলে চেক ইন দিয়ে ছবি আপলোড দিয়ে সবাইকে জানায় । তাদের সাথে কম্পিটিশন দিতে গিয়ে সেও প্রচুর চেকইন আর ছবি দেয় । সোশ্যাল স্ট্যাটাসটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে জাহির না করলে লোকজন কু-ধারণা করে । ভিতরটা যেমন তেমন হোক বাহির টা চোখ ধাঁধানো হওয়া চাই ।

আরেক বোন বললো, হাসব্যান্ড খুব ভালো ইনকাম করে । সেও উচ্চ শিক্ষিত এবং জব করে । বললাম তোমার তো প্রয়োজন নাই তাহলে শুধু শুধু জব করো কেনো । সে বললো তার বাবার দিকে ও মায়ের দিকের সব মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত । সবাই জব করে । জব ছেড়ে দিলে সবাই কটু কথা শোনায়, ছি ছি করে । তাই জব করাটা তার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু না হলেও সামাজিক মর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও করতে হচ্ছে ।

এই যে এত এত উদাহরণ আমাদের চারপাশে সবকিছু একটা কনসেপ্টের উপর ভর করে আছে -

‘ লোকে কি বলবে ‘

শুধু মাত্র এই একটি ব্যপারে অতিমাত্রায় ফেকাস থাকার কারণে আমরা অনেক সময় গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ি । অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে নিজের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে দেই । অথচ আজ যাদের সুধারণা ও কুধারণা নিয়ে আমাদের এত মাথা ব্যথা তারাই একদিন আমাদের মৃত্যু সংবাদ পেলে বলে উঠে -


ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ....


কি অদ্ভুত না ! সারা জীবন যারা আপনাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার বিধান মানতে বাঁধা দেয়, বারবার সামাজিক মর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে গুনাহে লিপ্ত হতে উৎসাহ দেয় এই তারাই কিনা সেদিন আপনার দুনিয়া ত্যাগের কথা শুনে শেষ পর্যন্ত এক আল্লাহ-কেই স্মরণ করে এবং জান্নাতে আপনার উচ্চ মর্যাদা নসীবের দুআ করে ।


কি বৈপরীত্য ! কতটা না আফসোসের !


অথচ মায়ের গর্ভে তিন স্তর বিশিষ্ট অন্ধকারে যিনি আপনাকে লালন পালন করেছেন, দুনিয়ার আলো বাতাসে যিনি আপনাকে অবিরত প্রতিপালন করেছেন এবং মৃত্যুর সাথে যে জীবনের সমাপ্তির মাধ্যমে আপনি পরজীবনে তাঁর সাক্ষাতে একাকী দাঁড়াবেন - আপনি সে পুরো জীবনেই তাঁকেই এড়িয়ে গিয়েছেন দ্বিধাহীন ভাবে ।

দুনিয়ার জীবনে শুধু ইন্না লিল্লাহ পড়ে বিদায় জানানো লোকদের পরওয়া না করে যদি লড়ে যেতে পারেন তো নিশ্চিত জানুন, আখিরাতের অনন্ত জীবনে দয়াময় সে প্রতিপালক আপনাকে স্বাগতম জানিয়ে বলবে -


“ হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে । অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে ...”

[ সুরা আল-ফযর, ২৭-৩০ ]


ছোট্ট একটা জীবন আমাদের ! এ জীবনটা পরম ভালোবাসায় এই আহবান শোনার জন্য একটু কষ্ট করে কি কাটিয়ে দেওয়া যায়না ? যায় কি ?

লেখাঃ নুসরাত জাহান


ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: