Sunday, October 6, 2019

কুর্দিস্তান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কুর্দিস্তান - চেষ্টা করবো যতটা সহজভাবে পরিস্থিতটা ব্যাখা করা সম্ভব।

আরব এবং পারস্য-দের মতো, কুর্দিরাও একটা জাতিগোষ্ঠী। কুর্দিরা ছড়িয়ে আছে বিশাল এলাকা জুড়ে। সব ধরণের মানুষই আছে তাদের মাঝে। ধর্মের দিক দিয়ে কুর্দিদের মধ্যে মেজরিটি হলো সুন্নি মুসলিম। বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম যোদ্ধা সালাউদ্দিন আইউবি ছিলেন কুর্দি। এছাড়া শিয়া এবং সুফি ছাড়াও অন্য ধর্মীয় মতাদর্শী মানুষও আছে।
কুর্দিস্তান
কুর্দিস্তান

প্রশ্নঃ স্বাধীন কুর্দিস্থানের বিরোধি কারা?
উত্তরঃ অনেকেই। প্রকাশ্যে আছে- ইরাক, ইরান, তুরস্ক এবং সিরিয়া...

কারণ মানচিত্র দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কুর্দিস্থান ছড়িয়ে আছে ইরাকে, আছে ইরানে, সিরিয়াতে এবং তুরস্কে।

ইরাকি কুর্দিস্থান, ভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছে। আজ ইরাকি কুর্দিরা স্বাধীন হলে, স্বাভাবিক-ভাবেই নিকট ভবিষ্যতে সিরিয়ান কুর্দিরাও আলাদা হয়ে তাঁদের সাথে যোগ দিবে। সুতরাং ভবিষ্যতে কি হবে সহজেই অনুমেয়। সম্ভবত একটি দেশ হবে। এরপর সেখান থেকে তুরস্কে এবং ইরানে থাকা কুর্দি এলাকা গুলোতে সেপারেটিস্ট মুভমেন্ট সাপোর্ট করা হবে এবং একদিন হয়তো সফলও হবে, চারটি অংশ এক করে গ্রেটার কুর্দিস্থান গড়ার। কিন্তু এটা হলে- ইরাক, ইরান, সিরিয়া এবং তুরস্ক এই চারটি দেশই স্ব-স্ব টেরিটোরি হারাবে।

ইরাক সরকার শিয়া ডমিনেটেড। ইরাক স্বাভাবিক-ভাবেই চাইবে না, ভূখন্ড হারাতে। সিরিয়া এবং ইরানও সেই ভয়ে আছে। সেই একই ভয় সবচেয়ে বেশি হলো তুরস্কের।

সুতরাং কুর্দিদের স্বাধীনতা প্রশ্নে- ইরাক, ইরান, তুরস্ক সিরিয়া -এই চার দেশের অবস্থানই এক। তারা কেউই স্বাধীন কুর্দিস্থান চাইবে না।

এইদিকে কুর্দিরা, দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছে তাদের আলাদা দেশের জন্য। আইসিসের বিরুদ্ধে কুর্দিরা শক্ত প্রতিরোধ তৈরি করেছে এবং আইসিস বিরোধী যুদ্ধে কুর্দিরাই ছিলো সম্মুখে। তবে আমেরিকানরাও কুর্দিদের সাপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু তা ছিলো, শুধু মাত্রই মার্কিনীদের আর্থিক প্রয়োজনে।

সিরিয়াতে আসাদ টিকে রয়েছে ফুল-স্কেল রাশিয়ান এবং ইরানিয়ান সাপোর্টে। এই দিকে ইরাকেও, শিয়া নিয়ন্ত্রিত সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। সুতরাং পরিস্থিতি ইরানের জন্য আপাতত বেশ সুখকর। কিন্তু হুট করে ঘরের পাশে কুর্দিস্থান তৈরি হওয়াটা- তাঁদের জন্য বরং ঝামেলার এবং ঝুঁকির।

ইসরাইল মনেপ্রাণে চাচ্ছে- স্বাধীণ কুর্দিস্থান। কুর্দিদের প্রতি কোনো ভালোবাসা থেকে নয়। বরং ইরাক আর সিরিয়ার কথা চিন্তা করে। অর্থাৎ সিরিয়া এবং ইরাক মিলিয়ে ইরানের যে প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে, সেটার ঠিক পেটের মাঝখানে আলাদা একটা দেশ তৈরি করা- তাঁর জন্য খুব লাভজনক। সুন্নি আরব নিয়ন্ত্রিত মুসলিম দেশ গুলো নিয়ে ইসরাইলের ভয় নেই। ভয় আছে, ইরানকে নিয়ে। এই জন্যই ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু প্রায়ই স্বাধীন কুর্দিস্থানের পক্ষে ইহুদি স্বার্থে কথাবার্তা বলেন। মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যতে সুইজারল্যান্ডের মতো একটা দেশ হবে কুর্দিস্থান- এমন আশা নিয়ে পরিকল্পিত কাজও ইসরাইলিরা করছে।

ইরাকের সরকার- আমেরিকান আর ইউরোপীয়ানদের জন্য ব্যবসা বান্ধব। মার্কিনীদের কাছ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, তারা ক্রয় করে। সেই সাথে ইরাকের মূল তেলের ভান্ডার গুলো শিয়া নিয়ন্ত্রিত দক্ষিনাঞ্চলে। সুতরাং, শিয়া সরকার ইরাকে ক্ষমতায় থাকলেও আমেরিকা বা ইউরোপের কোন সমস্যা নেই... যতক্ষন না পর্যন্ত তাদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বার্থে, কোন রকমের আঘাত না আসে।

ইরাকি কুর্দিস্থানের (তেল ভান্ডার) শহর, ইরবিল এবং কিরকুক মার্কিনীদের বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট। কুর্দিদের সাথে আমেরিকানদের আর্থিক সম্পর্ক ভালো। কিন্তু টাকার অংকে বাকীদের মতো এতোটা ভালো নয় যে, ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার আর ন্যাটো ভুক্ত তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে- কুর্দিদের পক্ষে কিছু করবে।

যার ফলে এখন ইরাকের সরকারি আর্মি এবং বিদ্রোহী কুর্দি আর্মির মধ্যে ফুল স্কেল-যুদ্ধ শুরু হলে আমেরিকা শুধু নিরবই থাকবে না। উল্টো দুই পক্ষকেই অস্ত্র দেবে। অস্ত্র বিক্রির আর্থিক লোকসান তো নেই... কোনো সমাধান না হলেই বরং ভালো। ঝুলে থাকুক। মারামারি করুক। যেমনই আছে, তেমনই চলুক। মাঝখান দিয়ে অস্ত্র ব্যবসা হোক। কোনো রকম সমস্যার সমাধান দিতে গেলেই, বাণিজ্যে বাধবে ঝামেলা। কারন এতো গুলো দেশের মুখ রক্ষা করে তো আর ব্যবসা করা সম্ভব না।

আইসিস যদি বাশারকে হটাতে পারতো, ইসরাইল নিজের নিরাপত্তার কথা বলে বা আইসিস হটানোর নাম করে, সিরিয়াতে ঢুকতো। এরপর সিরিয়াতে পিস-মিশনের নামে, আমেরিকানদের ডেকে আনতো। এক ঢিলে, দুই পাখি মরতো। লেবাননের, হিজবুল্লাহকে আর সিরিয়া সাপোর্ট দিতে পারতো না। গোলান হাইট এলাকার পুরোটাও ইসরাইল, সরাসরি নিজেদের করে নিতো।

কিন্তু সেটা হয়নি। এই জন্যই ইদানীং ইসরাইলি বিমান বাহিনী সুযোগ পেলে, প্রায়ই সিরিয়াতে ঢুকে সিরিয়ান আর্মির উপরে হামলা চালায়। এমনটা করতেছে পরিস্থিতি এক্সেলারেট করার জন্য। সামর্থ্যবান সিরিয়া যদি পালটা ইসরাইলী আর্মির উপর আঘাত করে বা যদি ইসরাইলি বিমান ভুপাতিত করে- তাহলে ইসরাইল আবারও সুযোগ পেয়ে, নতুন করে অন্য দেশ গুলোর মতো সিরিয়াতে একটা ঝামেলা বাধিয়ে দিবে। রাশিয়াও ঝামেলায় পড়ে যাবে। তবে রাশিয়া চাইবে না অন্তত ইসরাইলের সাথে কোনো ঝামেলা করতে। কারন ইসরাইলি লবিং খোদ রাশিয়াতেও- আমেরিকার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। পুতিনের, কান-ভাঙ্গানীর জন্য এক ব্যারেল ইজরাইলি, লেজার অস্ত্রই যথেষ্ট। তাছাড়া আব্রাহামোভিচ তো আছেই।

অন্যদিকে সৌদি-আরব এতোকাল পরে রাশিয়ার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শুরু করেছে। এটাও একটা নতুন ডাইমেনশন। আর সব কথার শেষ কথা হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট- ডোনাল্ড ট্রাম্প। উনার কোনো ফরেন-পলিসি নেই। বাংলাদেশ সহ পশ্চিমা দেশ গুলো যেখানে বড়-বড় ইস্যুতে, আমেরিকান লিডার শিপের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে ট্রাম্প এসে একটা শূন্যতা তৈরি করেছে। দুনিয়া সম্পর্কে তার ধারণা খুব একটা নেই, ইহা পরিস্কার। পোত্রো রিকো- যে উনার দেশেরই অংশ বা ভার্জিন আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট- যে উনি নিজেই, উনি সেটাই জানে না। উনি জানেই না, উনার নিজের দেশের আগা-মাথা নিয়ে। উনি করবে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধান। থাক... তাও ভালো। উনি বলে নি- ''Let's Make Middle East Great Again...''

লেখক, মোহাম্মদ ফয়সাল শোভন।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: