আপনার সেই বন্ধুর এখনো Religious Awakening হয়নি। সে টুকটাক মাঝেসাঝে নামাজ পড়ে, এর বেশি না। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন- "কেন তুমি জান্নাতে যেতে চাও? কি আছে সেখানে? " আপনার বন্ধু একটু থতমত খেয়ে গেল। একটু চিন্তা করে মাথা চুলকে সে বলল- "মমম...কারন সেটা খুব সুন্দর জায়গা, যা ইচ্ছা তাই করা যায়। অনেক সুন্দর সুন্দর হূরপরী আছে। জাহান্নামে অনেক কষ্ট। এইতো। "
আপনার বন্ধু আসলে জান্নাত সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনা। তার কাছে এটা একটা সুন্দর জায়গা, ব্যস এটুকুই। একজন জন্মগত মুসলিম হিসেবে আর দশজনের মতই সে ছোটবেলা থেকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছে। তার স্বভাবজাত প্রবৃত্তিগুলো (Basic Instinct) খাটিয়ে সে এতটুকু বুঝে যে, যেতে হলে তাকে জান্নাতেই যেতে হবে। কেন যেতে হবে তা পুরোপুরি না জানলেও তাকে যেতে হবে। কারন সবাই স্বর্গে যেতে চায়। এটাই স্বাভাবিক।
আপনার বন্ধুর খুব দোষ নেই। আমাদের বহু মুসলিমের এই একই অবস্থা। জান্নাতের কথা শুনলে আমরা বলি- ও আচ্ছা। জাহান্নামের কথা শুনলেও আমরা বলি- ও আচ্ছা। জান্নাতের স্বপ্ন আমাদেরকে শিহরিত করেনা, জাহান্নামের ভয়াবহতা আমাদেরকে আতঙ্কিত করেনা। যতটা না আমরা "ব্যক্তিগত" মুসলিম, তারচেয়ে অনেক বেশি আমরা "জন্ম ও উত্তরাধিকার সূত্রে" মুসলিম। খুব বেশি মানুষ আমরা ইসলামকে জেনে বুঝে একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে নিশ্চিত হয়ে গ্রহন করিনি। আমরা মুসলিম, কিন্তু আমরা নামাজ পড়িনা । যদি আমরা নামাজ নাই পড়ি তাহলে আমরা কিভাবে মুসলিম হলাম, কারন মুসলিম তো সে-ই যে কিনা ৫বার নামাজ পড়ে ?!? কি অদ্ভূত, আপনিই বলেন? বর্ন মুসলিমদের সবাই প্র্যাকটিসিং মুসলিম না। শুধু মুসলিম নামের উপাধি কাউকে কখনো জান্নাতে নিয়ে যাবেনা। "মুসলিম ঘরে যখন জন্মেছি একদিন তো জান্নাতে যাবই"- এ ধরনের ভয়ঙ্কর বিশ্বাস কারোর মনে ঢুকে থাকলে সেটার পরিণতি ভয়ঙ্কর। মুসলিম ঘরে জন্মালেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না। ইসলাম আল্লাহর সাথে মুসলিমদের একটি কন্ট্র্যাক্ট পেপার এ আজীবন সই করার মত। আপনি যদি চুক্তির আবশ্যক কাজগুলো ঠিকঠাকমতন করেন(ফরয) , লীগ্যাল কাজগুলো করেন(হালাল), ইল্লীগ্যাল কাজগুলো(হারাম) না করেন, তাহলে আপনি নিজেকে একজন মুসলিম দাবি করতে পারবেন। As Simple as that . বর্ন মুসলিম হিসেবে জন্ম নেওয়া মানুষরা একদিক দিয়ে সৌভাগ্যবান। কোন চেষ্টা না করেই পিতৃসূত্রে তারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"-র কন্ট্র্যাক্ট পেপারটা পেয়ে যায়। এটা আল্লাহর কত অসীম একটা রহমত ও নেয়ামত সেটা অনেক মুসলিমই সারাজীবন ধরেও বুঝেনা। যেহেতু তার বাপ-দাদা এটায় সই করেছিল, তাই বেশিরভাগ সময়েই বুঝে বা না বুঝে সে-ও এটায় একটা সই করে "মুসলিম" হয়ে যায়, তারপর দেখা যায় তার ইসলাম ধর্ম দুই ঈদ আর সাপ্তাহিক জুম্মাহর সালাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত একা একা বসে নিজেকে জিজ্ঞেস করা-
- আমি কি বিশ্বাস করি স্রষ্টা আছেন? আমি কি বিশ্বাস করি তিনি একজন-ই? আমি কি নিশ্চিত যে তাঁর নাম শুধুই "আল্লাহ্" ? আমি কি নিশ্চিত যে আমি কোন "মহাজাগতিক দূর্ঘটনার" কারনে তৈরী হইনি, আমাকে তৈরী করার পেছনে তাঁর কোন উদ্দেশ্য আছে ? যদি থাকে তাহলে কি সেটা আমি জানতে চাই? আমি কি নিশ্চিত যে এই জীবনটাই শেষ না, এবং এরপরে আমাকে আরেকবার জীবিত করা হবে, এবং আমি যা যা করেছি তার হিসাব আমাকে দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমার ভাগ্য নির্ধারন হবে এবং সেটাই হবে আমার আসল জীবন? আমি কি নিশ্চিত যে আল্লাহ্ আমার স্রষ্টা ও প্রভু এবং আমি তাঁর দাস হিসেবে নিজেকে স্বীকার করি? আমি কি নিশ্চিত যে এটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য?
- আমি কি নিশ্চিত যে আমার ধর্মই সত্য ধর্ম এবং ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মই সঠিক পথে নিয়ে যাবে না আমাকে ? আমি কি নিশ্চিত আল্লাহ্ আমাদেরকে মেসেঞ্জার পাঠিয়েছেন সব নাবি-রাসূলেরা ( Adam, Ibrahim, Moosa, Eesa, Muhammad , peace be upon all of them) একই ধর্মের বানী নিয়ে এসেছিলেন? আমি কি নিশ্চিত যে কুর'আন আল্লাহর কথা এবং এটা মেনে চললেই আমি সঠিক পথে থাকব?
- যদি আমি এই সবগুলো যুক্তি মন থেকে বিশ্বাস করি তাহলে আমি নিজেকে আবার জিজ্ঞেশ করছি, আমি কেন এগুলো বিশ্বাস করি? আমার বাবা মা মুসলিম, এই কারনে? আমি ছোটবেলা থেকে এইগুলো শুনেছি , এই কারনে? নাকি আমার মন,হৃদয়, বুদ্ধিমত্তা, বিবেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এটাই বিশ্বাস করবে, আর কোন কিছু নয়?
এই আর্টিকেল টি আমি ঈদের দিন পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম। কারন ঈদ মানে আনন্দ, আর একজন মুসলিমের জন্য জান্নাতের চেয়ে বড় কোন আনন্দের খবর নেই। রমজান মাসের ৩-৪ দিন বাকি থাকতেই আমি এটা পোষ্ট করলাম যাতে আপনি এটা পড়ে এই পবিত্র মাসে আল্লাহর কাছে আরো বেশি করে জান্নাত চাইতে পারেন। বান্দা চাইলে আল্লাহ্ কখনো ফিরিয়ে দেন না। আমি আগেই বলে নিচ্ছি যে এখানে আমি কিছু কল্পনাশক্তি ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র লেখাটিকে একটি ভিজুয়াল রূপ দেওয়ার জন্য। হয়ত আসল দৃশ্যগুলো এরকম হবে, কিন্তু "কতটা" এরকম তা আমরা আমাদের সীমিত কল্পনা শক্তির কারনে আমরা জানিনা। একমাত্র আল্লাহর আয়াতের ব্যাখ্যা ছাড়া কোন কিছু সিরিয়াসলী না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।
জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে মুসলিমদের ভুল ধারনাঃ
বহু মুসলিমের ভুল ধারনা আছে জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে। তারা জাহান্নামের বর্ননা পড়ে, মাসজিদে ইমাম সাহেবের দেওয়া খুতবায় জাহান্নামের রগরগে বর্ননা শুনে হতাশ হয়ে যান, আল্লাহর দয়া সম্পর্কে নিরাশ হয়ে ভাবেন- " কোন আশাই নেই আর । আল্লাহ্ যদি এতই দয়ালু হন তাহলে তিনি এতবার জাহান্নামের আগুন, গরম পানি, অনন্তকালের শাস্তির কথা কেন বলেছেন?"
আল্লাহর সাথে কোনকিছুর তুলনা হয়না। তারপরো আমি একটা ছোট উদাহরণ দেই। আপনার বাবা-মা কি আপনাকে মারেন নি ছোটবেলায় কখনো? তারা কি আপনাকে শিখাননি, "এই কাজটা ভাল, এগুলো করবে আর এই খারাপ কাজগুলো করলে তোমাকে শাস্তি দিব?" তারমানে কি এই যে উনারা আপনাকে ভালবাসেন না? আছে এই পৃথিবীতে কেউ যে আপনাকে তাদের চেয়ে বেশি ভালবাসেন? বাবা-মা সবসময় সন্তানকে ভালবাসেন, তার ভাল চান, এমনকি সন্তান কুপথে গেলেও। বাবা-মার ভালবাসাও আল্লাহর কোটি কোটি গুন বেশি অসীম ভালবাসার ধারেকাছেও না।
ভয়ঙ্কর জাহান্নাম আছে সেটা সত্যি, কিন্তু আল্লাহ্ আপনাকে সেখানে ঢুকানোর জন্য সেটার কথা বলেননি। তিনি আপনাকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে সেখানে ঢোকার কথা আপনি স্বপ্নেও চিন্তা না করেন। তিনি আপনাকে দুইটি দরজার পেছনের দৃশ্যই দেখিয়ে দিয়েছেন, এরপরে আপনি কি করবেন এটা আপনার ইচ্ছা। যদি তিনি আপনাকে জাহান্নামের কথা না বলতেন, তাহলে আপনি কি করে জানতেন জাহান্নামের কথা? আপনি পছন্দ করেন আর না করেন, আপনি চান আর না চান , তাতে করে জাহান্নাম মিথ্যা হয়ে যেত না, তাতে বাস্তবতা পরিবর্তন হয়ে যেতনা। যদি আমাদেরকে আল্লাহ্ আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়ে থাকেন, সেটা কি করে আল্লাহর দোষ হল ??? আপনি কি সেখানে ঢুকে দেখতে চান সেটা কতটা ভয়ঙ্কর নাকি সেটা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে সেখান না ঢোকার জন্য প্রানপন চেষ্টা করতে চান? Whether you know about hell-fire or not, it doesn't change the fact that its there, it doesn't change the reality. Its Allah's mercy and favor that He has warned us long long ago.
এরপর দেখুন আল্লাহ্ কি বলেছেন আমাদেরকে-
"তোমাদের শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কোন লাভ আছে কি ? যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও কেন তিনি তোমাদের শাস্তি দিবেন?? ... " [http://quran.com/4/147]
" তারা বাদে যাকে তোমার রব দয়া দেখিয়েছেন। আর দয়া দেখানোর জন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন..." [http://quran.com/11/119]
আমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কোন লাভ নেই। আল্লাহ্ নিজেই বলে দিচ্ছেন যে আমাদেরকে বানানোর পিছে তাঁর উদ্দেশ্য হল যাতে তিনি আমাদেরকে দয়া দেখাতে পারেন ! তিনি চাননা আমরা জাহান্নামে যাই। কুর'আন শুরুই হয়েছে আল্লাহর আর-রাহমান ( অকল্পনীয় দয়ালু) নাম দিয়ে !! মানবজাতির কাছে তিনি তাঁর প্রথম নামটি দিয়েছেন আর-রাহমান । আল্লাহর আরেকটি নাম হচ্ছে আল-ওয়াদুদ( Extremely, Unimaginably Loving) . এরপর কোন সন্দেহ আছে কি তাঁর দয়া সম্পর্কে?
জান্নাত পার্থিব জীবনের-ই একটি উন্নততম রূপঃ
জান্নাত ও জাহান্নাম কুর'আনের একটি অত্যন্ত মূল বিষয় (Central Theme)। জান্নাত ও জাহান্নাম দুইটি শব্দই কুর'আনে আছে ৭৭ বার করে।
কুর'আনে আল্লাহ্ বহু জায়গায় জান্নাতের বর্ননা দিয়েছেন। অনেকবার তিনি বলেছেন সেখানে পায়ের নিচ দিয়ে নদী বয়ে যাবে, ঝর্না বয়ে যাবে, গাছে সবধরনের ফল থাকবে। অন্য অনেক জায়গায় আল্লাহ্ জান্নাতের কথা বলার সময় পানীয়ের কথা বলেছেন, টেবিলে সাজানো গ্লাসের কথা বলেছেন, আনন্দ আরাম আয়েশের কথা বলেছেন। কিন্তু কেন?
কারন ঠিক হুবহু একই জিনিসগুলো মানুষ পৃথিবীতেও চায়। দামী কোন পার্টিতে গেলে আপনি দেখবেন দামি দামি গ্লাসে পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছে। দামী কোন হোটেলের লবিতে গেলে আপনি দেখবেন কৃত্রিম ঝর্না বয়ে যাচ্ছে। মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে হাওয়াই, মালদ্বীপ এ যায় শত কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে একটু ছুটি কাটাতে। খোলা আকাশের নিচে সী বীচে আরামকেদারায় হেলান দিয়ে হাতে পানীয়ের গ্লাস নিয়ে হাসিঠাট্টা গল্পগুজব করতে করতে মানুষ বলে- আহ জীবন কত সুখের। Life is so peaceful and relaxing right now.
কিন্তু মানুষের জীবন সবসময় রিল্যাক্সিং থাকেনা। আমরা "খারাপের" সাথে "ভাল" কে তুলনা করি। সী বিচের আনন্দ থেকে আবার বাস্তব জগতে যেতে হয় মানুষকে। প্রত্যেকটি মানুষ স্বপ্ন দেখে নিজের একটা বাড়ির, সামনে খোলা বাগান, একটু পানি। কেউ ভাড়াটিয়া হবার যন্ত্রনা সহ্য করতে চায়না, কেউ না। আল্লাহ্ মানুষকে বাড়ির কথা বলেছেন, বাগানের কথা বলেছেন। প্রত্যেকটী মানুষ প্রকৃতি ভালবাসে, এটা মানুষের In-built. আল্লাহ্ জান্নাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাই বলেছেন। আল্লাহ্ মানুষকে বাস্তব জীবনের উদাহরন গুলোই দিয়েছেন যাতে একজন মানুষ পার্থিব সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে চিন্তা করতে পারে- "ওয়াও ! তাহলে জান্নাত কত সুন্দর? সুবহানআল্লাহ !"
জান্নাতের ঢোকার দরজাঃ
আল্লাহ্ এখন আমাদেরকে তাঁর আতিথেয়তা ও অভ্যর্থনার কয়েকটা দৃশ্য দেখাবেন। এটা সূরা সাদ, সূরা নম্বর ৩৮, আয়াত নম্বর ৫০. আল্লাহ্ বলেছেন-
(جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْأَبْوَابُ)
" আদ্ন (Edn) জান্নাতের দরজাগুলো তাদের জন্য খুলে রাখা থাকবে" [http://quran.com/38/50]
আরবিতে Aftahu= To Open. কিন্তু আল্লাহ্ এখানে বলেছেন Mufattaha= To keep something(a door) open really widely . আল্লাহ্ আমাদেরকে বলেছেন যে জান্নাতের দরজাগুলো তিনি খুলে রেখেছেন । একটি দরজা নয়, প্রত্যেকটি। এমনো না যে দরজাগুলো বিচার দিনের পর খোলা হবে। দরজাগুলো প্রশস্তভাবে খোলা আছে। আজকে, এখনই, এই মূহুর্তেও দরজাগুলো খোলা। প্রশ্ন হল, কেন ???
আপনি একটা বাসায় দাওয়াতে গেছেন। যেয়ে দেখলেন দরজা বন্ধ। আপনি কলিংবেল চাপলেন, একটু অপেক্ষা করলেন । গৃহকর্তা দরজা খুলে স্বাগতম জানিয়ে আপনাকে নিয়ে গেলেন। সাধারন দৃশ্য। সাধারন আতিথেয়তা।
একই দাওয়াত। ২য় দৃশ্য। আপনি গিয়ে দেখলেন তাদের বাসার দরজা খোলা, কিন্তু দরজায় কেউ নেই। স্বাভাবিকভাবেই আপনি ভাববেন যেহেতু আপনি গেস্ট, আপনার জন্যই খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু আপনি সেই দরজা দিয়ে কখনোই ঢুকবেন না, কারন বেল না বাজিয়ে/অনুমতি না নিয়ে আমরা কারোর বাসায় ঢুকি না, এটাই সামাজিক রীতি। দরজা যদিও খোলা, তারপরো আপনি বেল বাজালেন।গৃহকর্তা দরজা খুলে আপনাকে নিয়ে গেলেন।
একই দাওয়াত। ৩য় দৃশ্য। আপনি তাদের বাসায় যেতেই দেখলেন, বাসার গেট পুরোটা খোলা। গেট ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ফুটফুটে ২টি শিশু। আপনি যেতেই তারা আপনাকে সালাম দিল, তারপর আপনার হাত ধরে আপনাকে তাদের বসার ঘরে নিয়ে গেল। চমৎকার আতিথেয়তায় আপনার পুরো মনটা ভরে গেল।
ঠিক এই কাজটাই আল্লাহ্ করে রেখেছেন আমাদের জন্য। জান্নাত আমাদের সবার বাড়ি। সেখান থেকেই আমরা এসেছি অল্প কয়েকদিনের জন্য এখানে। আমরা সবাই দিনের শেষে কাজের শেষে আমাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চাই। আল্লাহ্ আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে আমাদের আসল বাড়ির দরজাগুলো পর্যন্ত খুলে রেখেছেন এবং সেটা আমাদেরকে এখানে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ জান্নাতের দরজাগুলো খুলে রেখে আমাদের সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছেন। আল্লাহ্ চান, আমরা ক্ষনিকের এই জীবনটা এখানে কাটিয়ে সেই চিরশান্তির ঘরগুলোতে ফেরত যাই। তিনি আমাদেরকে এতই ভালবাসেন ,এতই দয়া করেন যে তিনি আমাদের জন্য সেই দরজাগুলো বন্ধ পর্যন্ত করেন না। এরপরো আমরা আর কোন অজুহাত খুঁজব আল্লাহর দিকে ফিরে না আসার জন্য???
এটা ঠিক তার পরের সূরা। সুরা নম্বর ৩৯, সূরা যুমার। আয়াত ৭১ এর প্রথমাংশে আল্লাহ্ বলছেন-
[وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ...]
"আর যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যতক্ষন না তারা সেখানে পৌঁছায়। যখন তারা সেখানে পৌঁছাবে, তখন সেটার দরজাগুলো খোলা হবে আর এটার প্রহরীরা বলবে, "তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্যে থেকে নাবিরা আসেননি?...... "
এখানে আল্লাহ্ বিচার দিনের একটা দৃশ্য তুলে ধরেছেন আমাদের জন্য। বিচার শেষ। আল্লাহ্ এখানে বলেছেন "সীক্বা" [سِيقَ= To push somebody forwards quickly ] জাহান্নামের বাসিন্দাদেরকে ফেরেশতারা ছোট ছোট দলে খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জাহান্নামের দিকে। জাহান্নামের গর্জন এত ভয়ঙ্কর যে সেটা অনেক দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে । যতই সামনের দিকে যাওয়া হচ্ছে গর্জন ততই জোরালো ও ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত ও ভীত অপরাধীরা কেউ সেদিকে যেতে চাচ্ছে না। পেছন থেকে ফেরেশতারা তাদেরকে দ্রুতগতিতে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিণতির দিকে। আপনি দেখবেন যে ছাগলকে দড়ি ধরে টানলে সে মাঝে মাঝে চার পা গেড়ে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন তাকে পিছন থেকে একটু ধাক্কা দিতে হয়। এই দৃশ্যটাও অনেকটা সেরকম। এরপর আল্লাহ্ বলেছেন "হাত্তা" [حَتَّىٰ= Until ]. অর্থাৎ যতক্ষন অপরাধীরা জাহান্নামে না পৌঁছায় ততক্ষন তাদেরকে এভাবে ধাক্কিয়ে খেদিয়ে সেদিকে নেওয়া হবে।
এরপর আল্লাহ্ বলেছেন "যখন তারা সেখানে পৌঁছাবে, তখন সেটার দরজাগুলো খোলা হবে। " এটাকে বলা হয় "When & Then statement", অর্থাৎ ২য় ঘটনাটা তখনি ঘটবে যখন ১ম ঘটনাটা ঘটবে , যেমন- যখন বৃষ্টি থামবে, তখন আমরা যাব। আল্লাহ্ এখানে বলছেন যে জাহান্নামের দরজাগুলো আসলে বন্ধ ছিল, অপরাধীরা যাওয়ার পর সেটা খুলে তাদেরকে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে। পৃথিবীতেও এটাই হয়, কারাগারের দরজা সবসময় খোলা থাকেনা, কেনই বা থাকবে? ঠিক আগের সূরায় আল্লাহ্ বলেছিলেন, তিনি আমাদের জন্য জান্নাতের দরজা সবসময় খুলে রেখেছেন বিশাল প্রশস্থ করে, যাতে আমরা সেটায় একদিন ঢুকতে পারব এই চিন্তা করে আনন্দ পাই, আশা পাই। কেউ জাহান্নামে যেতে যায়না। আল্লাহও আমাদেরকে জাহান্নামে ঢুকিয়ে কষ্ট দিতে চাননা, আল্লাহ্ চাননা আমরা জাহান্নামে যাই। সেজন্য তিনি এর দরজাগুলো দরকার ছাড়া কখনোই খুলেন না। এটা আল্লাহর কত বড় দয়া আমরা কখনো চিন্তা করতে পারি?
একই সূরা, আয়াত ৭৩, আল্লাহ্ বলছেন-
"কিন্তু যারা তাদের প্রভুর প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে ( Taqwa= Continuous consciousness about God) , তাদেরকে দলে দলে তাড়া দিয়ে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে যতক্ষন না তারা সেখানে পৌছায়। আর তারা সেখানে পৌছানোর আগেই সেটার দরজাগুলো খুলে রাখা থাকবে। আর সেটার প্রহরীরা বলবে- সালামুন আলাইকুম ! তোমাদের সবার উপর সালাম ! তোমরা কতই না চমৎকার কাজ করেছে ( Tibtum= Well done..what an excellent job you have done !) [http://quran.com/39/73-75 ]
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহ্ এখানেও বলেছেন "সীক্বা" [سِيقَ= To push somebody forwards quickly ] । জান্নাতের অধিবাসীদেরকেও ফেরেশতারা তাড়া দিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু কেন !!? মনে করুন আপনি সউদি আরবে গেছেন ওমরাহ করতে। এয়ারপোর্ট এ ইমিগ্রেশন এর বিশাল লাইন দেখে আপনার বুক শুকিয়ে গেল, কমপক্ষে ১ ঘন্টা লাগবে কাউন্টার পর্যন্ত যেতে। আপনার পরনে ইহরাম এর কাপড়। দূর থেকে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার কাছে এলেন। আপনাকে হাসিমুখে বললেন- "সালাম ! আপনাকে লাইনে দাড়াতে হবে না স্যার। আপনি আমার সাথে আসুন, এক্ষনি আপনার কাজ হয়ে যাবে। " এই বলে তিনি আপনাকে খুব দ্রুতগতিতে কাউন্টার এ নিয়ে গেলেন ও আপনার কাজ করে দিলেন।
বিচার দিবস শেষ। দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষ। রিপোর্ট কার্ড চলে এসেছে। একদলের মুখ উজ্জ্বল, আনন্দিত, পবিত্র। এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন তারা আজীবন। সারা জীবন তারা চিন্তা করেছেন কবে তারা জান্নাতে যেতে পারবেন। জীবনের মোহ থেকে নিজেরদের বাঁচিয়ে চলেছেন আজীবন, রাতের পর রাত সালাতে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন, নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর জন্য, দুঃখকষ্টের মাঝেও ধৈর্য ধরেছেন, আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছেন। কুর'আন কে আঁকড়ে ধরেছেন বস্তূবাদের নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। আজকে প্রতিদানের দিন। আল্লাহ্ তাঁর এই প্রিয় বান্দাগুলোকে তাড়াতাড়ি ইমিগ্রেশন পার করে দিচ্ছেন এখানে। তিনি চাননা তারা বিচার দিবসের আতঙ্কের বিষয়গুলো বেশিক্ষন দেখুক। তাই বিচার শেষ হওয়ামাত্র বিন্দুমাত্র দেরি না করে ফেরেশতারা তাদেরকে তাড়া দিয়ে নিয়ে যাবেন তাদের আজীবন কাঙ্খিত স্বপ্নের দিকে।
[] আগের আয়াতে আল্লাহ্ বলেছিলেন- "যখন তারা জাহান্নামে পৌছাবে, তখন এর দরজাগুলো খোলা হবে..." ( There was a "when & then" statement here)
[] কিন্তু এখানে আল্লাহ্ বলছেন- "যখন তারা জান্নাতে পৌছাবে, আর সেটার দরজাগুলো ইতিমধ্যেই খোলা রাখা থাকবে। " ( There is NO "when & then" statement here, the doors are always opened, already opened for us...Subhan'Allah ! )
এখানেই শেষ না। আপনি জান্নাতে ঢুকছেন। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সম্মানিত ফেরেশতারা। সম্মানিত পবিত্র সত্ত্বারা আপনাকে সম্মান জানালেন । তারা আপনাকে দেখে বললেন-
সালামুন আলাইকুম ! তোমাদের সবার উপর সালাম ! তোমরা কতই না চমৎকার কাজ করেছে ( Tibtum= Well done..what an excellent job you have done !) এখানে ঢুকো তোমরা, আর এখানে তোমরা আজীবন থাকতে পারবে। " [http://quran.com/39/73-75 ]
আপনি ঢুকলেন। আপনি জান্নাতে ।এই সেই জান্নাত। বুক ভরে একটা বড় শ্বাস নিলেন আপনি।
প্রথম বাক্যটি আপনি বললেন-
" ALHAMDU-LILLAH"
[ আর তারা বলবে- সকল প্রশংসা আর কৃতজ্ঞতা শুধুই আল্লাহর, যিনি আমাদের জন্য তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ন করেছেন আর আমাদেরকে এখানে থাকতে দিয়েছেন। এখানে আমরা যেখান ইচ্ছা থাকতে পারি; আর ভাল কাজের জন্য এরচে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার হতেই পারে না ! How excellent a reward for the pious good workers !] [http://quran.com/39/73-75 ]
প্রতিদিন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি। কিন্তু সেইদিনের সেই "আলহামদুলিল্লাহ" টা বলাটা কি আপনি কখনো কল্পনা করতে পারেন ?? আর কোন ভয় নেই, প্রেশার নেই, টেনশন নেই। আমি পারিনা। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কল্পনা করতে, কিন্তু আমি পারিনা। আমি একটি সীমাবদ্ধ প্রোগ্রাম, আমাকে যেভাবে প্রোগ্রাম করে দেওয়া হয়েছে এর বাইরে চিন্তা বা কল্পনা করার ক্ষমতা আমার নেই, অন্তত এটুকু আমি জানি ! কিন্তু তাও আমি আপনাকে বলব প্রতিবার আলহামদুলিল্লাহ বলার সময় এই কথাটা চিন্তা করে নিতে যে একদিন জান্নাতে ঢুকে আপনি প্রথম এই শব্দটিই উচ্চারন করবেন।
জান্নাতের ড্রিঙ্কস এর কথা বলছেন আল্লাহঃ
পানীয়/ড্রিঙ্কস/বেভারেজ/মদ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, পানীয় জিনিসটা সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। প্রযুক্তিগত ভাবে আমরা যতই উন্নত হই না কেন, এখনো আমরা ঠিক একইভাবে সেই লক্ষ লক্ষ বছর আগের মত করেই পানীয় পান করি, সেটা দিয়ে সামাজিকতা করি,আনন্দ করি। মুসলিমরা মদ খায়না। সাধারন মানুষ কোক পেপসি জুস বোরহানি লাচ্ছি খায়, বড়লোকেরা আরো দামি দামি হোটেলে যেয়ে আরো উচ্চমূল্যের পানীয় খায়। পশ্চিমা বিশ্বে মদ ছাড়া জীবন চলে না। মদ তাদের খাবারের অংশ, মদ তাদের সংস্কৃতি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি একটা মদের নাম Tequila Ley 925. প্লাটিনাম আর হীরার কাজ করা এই এক বোতল মদের দাম ৩.৫ মিলিয়ন ডলার বা ২৮ কোটি টাকা।
পানীয়ের প্রতি মানুষের এই ভালবাসা আল্লাহ্ খুব ভাল করেই জানেন। তিনি আমাদের ডিজাইন করেছেন, আমাদের সাইকোলজি তাঁরই তৈরী করা। আমরা মানুষ, আমরা সৌন্দর্য ভালবাসি। পানীয় শুধু খেলেই হয় না, সেখানে পরিবেশনের একটা বড় ভূমিকা আছে। আপনি যখন রাস্তার পাশে আখের রস খান, সেটা একটা খুব সাধারন গ্লাসে করে আপনাকে দেয়, সেটার মধ্যে তেমন কোন সৌন্দর্য নেই। কিন্তু আপনি যখন খুব দামী কোন রেস্টুরেন্টে যেয়ে একটা কমলার জুস অর্ডার করেন ৩০০ টাকা দামের, তখন একটু পর সেটা আসে একটা লম্বা চিকন ঝকঝকে ক্রিস্টালের গ্লাসে, সেটার উপর বরফ কুঁচি আর আইসক্রীম দেওয়া, উপরে একটা কমলার টুকরা লাগানো। সেটা আপনি এক চুমুক করে খান আর একবার করে তৃপ্তির হাসি হাসেন !
একইভাবে কুর'আনে আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন কিভাবে আমাদেরকে পানীয় পরিবেশন করা হবে। আল্লাহর বলা এই অসাধারন দৃশ্যগুলো নেয়া হয়েছে ৭৬ নম্বর সূরা, সুরা ইনসান থেকে। আয়াত ৫, আল্লাহ্ বলেছেন-
" অবশ্যই আবরার-রা ( পূন্যবান, যারা আল্লাহকে ভয় করেছে) কাপ থেকে পানীয় পান করবে। সেটার মধ্যে "কাফুর" নামের জান্নাতের ঝর্নার পানি মেশান থাকবে। " [http://quran.com/76/5]
আপনার বন্ধু আপনাকে ফোন করে বলল- "দোস্ত, শুক্রবার রাতে আমার বাসার ছাদে আসিস, বারবিকিউ করব। " আপনি গেলেন। গিয়ে দেখলেন, অনেক লোক এসেছে। ছাদে টেবিল পাতা হয়েছে, প্লাস্টিকের ডিসপোজেবল গ্লাস প্লেট রাখা আছে। একপাশে অনেকগুলো পেপসির বোতল রাখা আছে। গেস্টরা যে যার মতন ড্রিঙ্কস ঢেলে ঢেলে খাচ্ছে। এটা আমাদের মতন মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত দাওয়াতগুলোর একটা খুব সাধারন দৃশ্য। এটাকে আমরা বলি সেলফ-সার্ভিস।
আল্লাহ্ এখানে আমাদেরকে সেরকম একটা দৃশ্য দেখাচ্ছেন। আল্লাহ্ এখানে বলেছেন, আবরার-রা পান করবে, অর্থাৎ তারা নিজেরা নিয়ে নিয়ে পান করবে। মনে করুন আপনি জান্নাতে গেছেন ইনশাআ আল্লাহ্ ও আলহামদুলিল্লাহ। আমি দু'আ করি আমরা সবাই যাতে যেতে পারি। আপনি সেখানে বাগানে বসে আছেন। প্রান ভরে আপনি অপরিসীম সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। একটু পাশেই টেবিলে সোনার কাপ প্লেট রাখা আছে, অগনিত পানীয় রাখা আছে। আপনি হেটে হেটে সেখানে যাচ্ছেন। যা ইচ্ছা তুলে নিচ্ছেন, পান করছেন। এটা হল প্রথম লেভেলের পরিবেশনা। সেলফ-সার্ভিস।
১১ আয়াত থেকে আল্লাহ্ আবার জান্নাতের বর্ননা দিয়ে যাচ্ছেন- যারা আল্লাহকে ভয় করেছিল আল্লাহ্ তাদেরকে সেদিন রক্ষা করবেন আর তাদেরকে সুখ ও আনন্দ দান করবেন। তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দিবেন, আরো দিবেন রেশমের পোষাক, কারন তারা ধৈর্যশীল ছিল। সেখানে তারা বাগানের মধ্যে উচু কারুকার্য করা আসনে(Throne) বসবে। সেখানে তাদের গরম বা ঠান্ডা কিছুই লাগবে না। তাদের উপর বাগানের ছায়া থাকবে, তাদের হাতের নাগালের মধ্যেই ঝুলবে থোকায় থোকায় সব ফল। তাদের হাতে হাতে ঘুরবে রূপার তৈরি প্লেট আর গ্লাস, ক্রিষ্টালের মতন ঝকঝক করছে সেগুলো।
আয়াত ১৭-১৯ এ আল্লাহ্ বলছেন-
"তাদেরকে পেয়ালাতে করে পান করতে দেওয়া হবে যেটার মধ্যে আদার মিশ্রন থাকবে,যেটা জান্নাতের সালসাবিল ঝর্না থেকে নেওয়া। তাদেরকে পরিবেশন করবে চিরতরুন( everlasting) শিশু কিশোররা। তারা এতই সুন্দর যে, তুমি যখন তাদের দেখবে, তোমার মনে হবে যেন তারা ছড়ানো মুক্তা। " [http://quran.com/76/17-19 ]
প্রথমে আল্লাহ্ বলেছিলেন আবরার-রা নিজে নিজে পান করবে। এরপর আল্লাহ্ বলছেন, তারা তাদের রাজকীয় আসনে বসে থাকবে, শিশু কিশোররা দৌড়ে দৌড়ে তাদেরকে পরিবেশন করবে। আপনি আপনার বন্ধুর বাসায় দাওয়াতের পরেরদিন গেছেন হোটেল সোনারগায় একজন শিল্পপতির মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে। সেখানে আপনি চেয়ারে বসামাত্রই একজন ওয়েইটার চলে আসল । টেবিলে উলটিয়ে রাখা দামী কৃষ্টালের গ্লাসটা সোজা করে দিল। হাসিমুখে আপনাকে জিজ্ঞেস করল- "কি ড্রিঙ্কস আনতে পারি আপনার জন্য স্যার? "
একটা কথা আছে- In Life, You get what you pay for. যেহেতু আপনি একটা ফাইভ স্টার হোটেলে গেছেন, তাই আপনার এই বাড়তি খাতির। আপনাকে এখন আর প্লাস্টিকের গ্লাসে ঢেলে ড্রিঙ্কস খেতে হচ্ছেনা। একই দৃশ্য জান্নাতেও আল্লাহ্ তৈরী করে রেখেছেন। এটা হচ্ছে দ্বিতীয় লেভেলের পরিবেশনা।
পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানজনক আতিথেয়তা কি হতে পারে আমাদের জন্য? আমি আপনাকে একটা উদাহরন দেই। আপনি একটা সরকারি অফিসে সাধারন একটা চাকরি করেন। দেশে লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা আছে, আপনি তাদের মতই একজন। আপনি কখনো আশাও করেন না যে, প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট আপনাকে চিনবেন। আপনি একজন সৎ কর্মকর্তা, আপনার সাধ্যমত ভাল কাজ করেন। একদিন আপনার কাছে একটা চিঠি এল যে প্রেসিডেন্ট আপনার সাথে তাঁর নিজ বাসায় দেখা করতে চান। আপনি আনন্দে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। যথাদিনে গাড়ি এসে আপনাকে নিয়ে এল। আপনি দুরুদুরু বুকে প্রেসিডেন্ট এর ঘরে ঢুকতেই প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন হাত মেলানোর জন্য। আপনার মনে হল আপনার জীবনে এর চেয়ে বড় কোন সম্মান আপনি পাননি।
২০ আর ২১ নম্বর আয়াতে এবার আল্লাহ্ বলছেন-
"আর যখন তুমি জান্নাতের ভেতর দেখবে, তুমি এমন আনন্দ সেখানে দেখবে যা কল্পনা করা যায়না। তাদের পোষাক হবে মিহি সবুজ রেশমের, সেখানে সোনার কারুকাজ করা থাকবে। তাদেরকে সাজিয়ে দেওয়া হবে রূপার ব্রেসলেট দিয়ে। আর তাদের প্রভু তাদেরকে পান করতে দিবেন শরাবান তাহুরা, একটি পবিত্র পানীয়। " [http://quran.com/76/20-21 ]
সত্যি কথা কি, আপনি যদি এই আর্টিকেল টা এই পর্যন্ত পড়েন, আপনার আসলে আর এক লাইন না পড়লেও হবে। আর কোন কিছুই আপনার জানার কোন দরকার নেই। এটা নিয়েই আপনি সারাজীবন চিন্তা করে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এখানে আল্লাহ্ আমাদেরকে বলেছেন, সর্বোচ্চ লেভেলের পরিবেশনা করবেন আল্লাহ্ নিজে। এটা দেশের প্রেসিডেন্ট নয়। এটা হচ্ছেন আল্লাহ্, মহাজগতের স্রষ্টা । শরাবান তাহুরা খেতে কেমন আমরা জানিনা। আদার মিশ্রন, কাফুর ও সালসাবিলের পানি কেমন আমরা জানিনা। আল্লাহ্ দেখতে কেমন আমরা জানিনা। আমরা শুধু জানি, তাঁর কথা সত্যি। তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্যি। তাঁর ভালবাসা ও মমতা অকল্পনীয়। তাঁর কোন দরকার নেই আমাদেরকে এভাবে পানীয় পরিবেশন করার। কিন্তু তিনি দিবেন । কিভাবে এই মহান ঘটনাটি ঘটবে এটা আসলে আমাদের কল্পনার বাইরে, আমরা যতই চেষ্টা করিনা কেন সেটা কখনো আমরা কল্পনা করতে পারব না। এই অকল্পনীয় সুন্দর মূহুর্তটি আপনার জীবনে ঘটতে পারে, আমার জীবনে ঘটতে পারে। আমরা সেটার জন্য চেষ্টা করতে পারি আমাদের সাধ্যমত। আমরা কি কখনো সেই সম্মান কল্পনাও করতে পারি যে আল্লাহ্ নিজে আমাদেরকে পানীয় পরিবেশন করছেন? এর বেশি কি কিছু চাওয়ার আছে আমাদের?? এর বেশি কি কি চাইতে পারে কেউ ???
আর ঠিক এইজন্যেই এই ২২ নম্বর আয়াতে পুরো বর্ননাটা আল্লাহ্ শেষ করছেন এইভাবে-
" অবশ্যই এটা তোমার জন্য একটা পুরস্কার। আর তোমার চেষ্টাগুলো কবুল করা হয়েছে ও এপ্রিশিয়েট করা হয়েছে( আল্লাহর কাছে)। " [http://quran.com/76/22]
আপনি ও আপনার পুরো পরিবারঃ
সূরা রাদ, সূরা নম্বর ১৩. আয়াত ২০-২২ পর্যন্ত আল্লাহ্ বলেছেন জান্নাতে যাওয়ার ক্রাইটেরিয়া কি কি, কে কে জান্নাতে যেতে পারবে। সেগুলো আমি বলছি না। আপনি চাইলে দেখে নিতে পারেন [http://quran.com/13/20-24]
২৩-২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন,
" আদ্ন জান্নাত (Everlasting garderns of Eden) ; যেখানে তারা ঢুকবে, আর তাদের পূর্বপুরুষ, স্ত্রী, সন্তানদের মধ্যে থেকে যারা যারা ভাল কাজ করেছে ( Salaha= Righteous), তারাও তাদের সাথে সাথে ঢুকবে। আর সবগুলো গেট থেকে ফেরেশতারা ঢুকবে। ঢুকে তাদের বলবে- সালামুন আলাইকুম ! তোমরা যে ধৈর্যশীল ছিলে সেটার জন্য তোমাদের উপর সালাম জানাই। আর অবশ্যই এই শেষ ঠিকানাটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ...Excellent indeed is the final home !
আদ্ন জান্নাতের একটি উপরের দিকের স্তর। আপনি ও আপনার পরিবার সবাই জান্নাতে গেছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনি সেখানে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আল্লাহর দয়ায় আপনি আদ্ন জান্নাতে গেছেন, কিন্তু আপনার পরিবার হয়ত অন্য কোন স্তরে আছে, কারন আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজ নিজ কর্মফল অনুযায়ী প্রতিদান পাব। বিষয়টা পৃথিবীর মতন না যে আপনি লিফট এ করে লেভেল ১০ এ উঠে গেলেন। জান্নাতের স্তরগুলো এতই দূরে অবস্থিত যেভাবে আমরা পৃথিবী থেকে আকাশের নক্ষত্র দেখি। আল্লাহ্ আমাদেরকে এখানে যেই দয়া ও পুরস্কারের কথা বলছেন তাঁর কোন তুলনা হয় না। আল্লাহ বলছেন, শুধু আপনার ভাল কাজের জন্য, শুধু আপনার একার কারনে তিনি আপনার পরিবারের সবাইকে অন্যান্য স্তর থেকে এনে আপনার সাথে দিয়ে দিবেন !!! উলটা টাও হতে পারে। আপনি সর্বোচ্চ জান্নাতে চলে যেতে পারেন আপনার সু-সন্তানের কারনে। আপনার সন্তানকে আপনি ইসলাম শিখিয়ে গিয়েছিলেন পৃথিবীতে যে পৃথিবীতে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে গিয়েছিল। শুধু তাঁর কারনেই খুব সাধারন একজন মুসলিম হয়েও আপনি চলে যেতে পারেন সর্বোচ্চ জান্নাতে। এরচেয়ে সুসংবাদ আর কি হতে পারে? ইসলাম কোন ব্যক্তিগত ধর্ম নয়। আমরা কেউ আমাদের একার কর্মফল দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবনা। আমরা প্রত্যেকে আমাদের পরিবারকে কি কি শিখিয়ে গিয়েছি তাঁর জন্য দায়ী থাকব।
জান্নাতে মানুষের একটা অকল্পনীয় রি-ইউনিয়ন হবে। আমি জানিনা আমার বংশে কত শত বছর আগে প্রথম কোন মানুষটি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। হয়ত আমি আজকে হিন্দু হতে পারতাম। কিন্তু আমার কোন একজন সাহসী পূর্বপুরুষের নেওয়া একটা সিদ্ধান্তের কারনে আজকে আমি মুসলিম হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমি তাঁর সাথে দেখা করতে চাই, তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটাও সম্ভব হবে জান্নাতে। আপনার সাথে ফেরেশতাদের দেখা হবে জান্নাতে।সারাজীবন ধরে আপনি তাদের কথা শুনেছেন, সেখানে আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এই সুসংবাদগুলো দিয়েছেন আমাদেরকে এখানে আল্লাহ্।
মানুষের মধ্যে নেগেটিভ অনূভূতি আছে। আল্লাহ্ মানুষের ভেতর থেকে সব খারাপ অনুভূতি বের করে নেবেন জান্নাতে। কোন রাগ নেই সেখানে, কোন হিংসা ঈর্ষা মনোমালিন্য নেই। চারদিকে শুধু আনন্দ, ভালবাসা, শান্তি, পবিত্রতা।
যা ইচ্ছা, যতক্ষন ইচ্ছাঃ
সূরা ফুসসিলাত, সুরা নম্বর ৪১. আয়াত ৩১ এ আল্লাহ্ বলেছেন-
"...সেখানে তোমার আত্মা, তোমার মন, তোমার স্বত্বা যত কিছু ইচ্ছা করে তুমি সবকিছু পাবে। আর সেখানে যা কিছু চাইবে সবকিছু পাবে।" [http://quran.com/41/31-33]
আমাদের কল্পনাশক্তি সীমিত, এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। আমরা যা কিছুই চাই না কেন, একটা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে আমরা চাইলেও যেতে পারবনা। ধরুন আজকে আমাকে বলা হল, আমি যা চাইব তাই ঘটবে, যতই আজব হোক না কেন। আমি এরকম চাইতাম-
- প্রথমে একটা বোয়িং প্লেন চালাব, প্লেন ক্র্যাশ করতে পারবেনা। একা একা আকাশে উড়ব, কোন প্যারাশুট, গ্লাইডার কিচ্ছু থাকবেনা, একদম পাখির মতন।সমুদ্রের পানির নিচে সাঁতার কাটব, শ্বাসকষ্ট হতে পারবেনা। কিছুক্ষনের জন্য চাঁদে আর মঙ্গলগ্রহে যেয়ে ঘুরে আসব। একটা নীলতিমির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াব...
চাইতে চাইতে একসময় আমি টায়ার্ড হয়ে যেতাম। কোন জিনিস, সেটা যতই ভাল হোক না কেন, আমরা একসময় বোর্ড হয়ে যাই। কারন এটা পৃথিবী। কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের বলছেন, জান্নাতে আপনি যা ইচ্ছা চাইবেন সেটা সাথে সাথে পূরন করা হবে। আপনাকে শতভাগ সন্তুষ্ট করা হবে সেখানে। আপনার মনের মধ্যে এক অনু পরিমাণও ইচ্ছা থাকবেনা যেটা পূর্ন হবেনা। আপনাকে একবারো বলা হবে না যে কোন লিমিটের বেশি কিছু চাওয়া যাবেনা। কোন লিমিট নেই সেখানে। জিনিসটা আমাদের কল্পনার বাইরে, কিন্তু এটাই সত্য। হয়ত সেখানে আপনার একদিন মনে হল, আপনার বাড়িটা এরকম না হয়ে ওরকম হলে ভাল হত। ব্যস, সাথে সাথেই সেটা হয়ে যাবে। এটা আমার কথা না, এই গ্যারান্টি আল্লাহ্ দিচ্ছেন।
এবার দেখুন আল্লাহ্ আয়াত ৩২ এ আল্লাহ্ বলছেন-
"আর পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নু্যুল হিসেবে। [http://quran.com/41/31-33]
আল্লাহ এখানে বলেছেন- নুযুল। আরবিতে নুযুল এর একটা অর্থ হচ্ছে- Initial Hospitality. বাসায় মেহমান আসলে প্রথমে আমরা চা-নাস্তা খেতে দেই, তারপরে খাবার টেবিলে ডাকি আসল খাবারের জন্য। চা-নাস্তা হচ্ছে নুযুল। আল্লাহ্ বলেছেন যে, আপনি সম্ভাব্য-অসম্ভাব্য উপায়ে যা কিছু চাইতে পারেন সবকিছু আল্লাহ্ আপনাকে দিবেন। এবং এটা হচ্ছে কেবল শুরু। এটা হচ্ছে কেবলমাত্র চা-নাস্তা, এপেটাইজার। আপনার আসল পুরস্কার এখনো আল্লাহ্ শুরুই করেননি !!! সেটা কি আমরা জানিনা, আমরা কল্পনা করতেও পারিনা। আমরা যা কিছু কল্পনা করব সবকিছু হচ্ছে কেবল জান্নাতের "Introduction". ALL you can desire and dream and wish from Allah...IS JUST THE BEGINNING !
আপনি ও আপনার বন্ধুরাঃ
সূরা নম্বর ৩৭, সূরা সাফফাত। এই সূরার ৪২ থেকে ৬০ আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ্ জান্নাতের আরেকটা বর্ননা দিয়েছেন। তিনি অসাধারন শক্তিশালী একটা দৃশ্য তুলে ধরেছেন যেটা আমাদের চোখ খুলে দেবার জন্য যথেষ্ঠ যদি আমরা এই শিক্ষাটা জীবনে কাজে লাগাই। সরাসরি আয়াতগুলো না দিয়ে আমি আপনাকে মূল ভাবটা বলে যাচ্ছি। ব্র্যাকেটের লিঙ্ক থেকে আপনি আরবি বা ইংরেজি অনুবাদ দেখে নিতে পারবেন।
আল্লাহ্ এখানে বলছেন, "জান্নাতবাসীদেরকে সেখানে সম্মান করা হবে। চির আনন্দের সেই বাগানে তাদের জন্য থাকবে এমন সব ফল( fawaakihu) যেটায় কামড় দিতেই তাদের মন গভীর আনন্দে ভরে উঠবে । তারা রাজকীয় আসনে একে অপরের মুখোমুখি বসবে আরাম করে। তাদের হাতে হাতে দেওয়া হবে পবিত্র পানীয়ের পেয়ালা। সাদা রঙের অত্যন্ত সুস্বাদু পবিত্র পানীয়। সেটার কোন খারাপ দিক নেই, সেটা খেলে কারো নেশাও হয়না (Ghoul= any kind of hurt, abdominal pain, headache, sin etc) । তাদের সাথে থাকবে অত্যন্ত সুন্দর চোখবিশিষ্ট পবিত্র জীবনসঙ্গিনীরা, যারা লজ্জায় মাথা নত করে রাখবেন। যাদেরকে আল্লাহ নিখুঁত ও কোমলভাবে সুরক্ষিত করে রেখেছিলেন জান্নাতবাসীদের জন্য। আল্লাহ্ এখানে তাদের উপমা করেছেন ডিমের সাথে। ডিম কেন !? দৃশ্যটা এরকম- দূর্গম সুউচ্চ পাহাড়ের উপর আছে দূর্লভ ঈগল পাখির ডিম।একজন মানুষ বহু কষ্ট করে সেই পাহাড় বেয়ে বেয়ে উঠছে ডিমের আশায়। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ভয়ঙ্কর দূর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে সে যখন ডিমটা দেখল, সে যেন নিজেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না । নিজের সঙ্গীকে প্রথমবার দেখে তাঁর তেমন একটা অনুভূতি হবে জান্নাতে। জান্নাতবাসীরা সেখানে একে অন্যকে তাদের ফেলে আসা অতীত নিয়ে জিজ্ঞেস করবে... " [http://quran.com/37/42-50]
বাকি ঘটনাটুকু আমি "আপনাকে" ব্যবহার করে বলব। বিচার দিবস শেষ। হিসাব-নিকাশ, মীজান, পুলসিরাত সবকিছু শেষ। আল্লাহ্ আপনাকে জান্নাত দান করেছেন (ইনশাআ আল্লাহ্) . সকল আতঙ্ক শেষ। আপনি সফল। এটাই আপনি চেয়েছিলেন সারাজীবন। আর কোন ভয় নেই, টেনশন নেই। আর কোন মৃত্যু নেই। আবেগে আনন্দে আপনার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
আপনি জান্নাতে ঢুকলেন । ঢুকেই প্রথম ধাক্কাটা খেলেন। এ কি ! বাগান কিভাবে এত সুন্দর হতে পারে ! আপনি যা দেখছেন সেটা কোনদিন আপনি স্বপ্নেও কল্পনাও করেননি। কিছুদূর গিয়ে আপনি আপনার পৃথিবীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে দেখলেন। সে-ও জান্নাত পর্যন্ত আসতে পেরেছে। আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন দুইজনেই। একে অন্যকে আলিঙ্গন করলেন গভীর আনন্দে। আর কোনদিন আপনারা আলাদা হবে না, আর কোনদিন এই বন্ধুত্ব ভাঙ্গবে না। কি অসীম আনন্দ !
হঠাৎ আপনার মনে পড়ল, "আরে, শুভ কই? ওকে তো দেখছি না।ও কই আছে এখন, ওর কি অবস্থা? "
আপনাদের ৩জনের একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল পৃথিবীতে। ৩ জনই জীবনের একটা পর্যায় পর্যন্ত আমোদ ফূর্তি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। একটা সময়ে এসে আপনি ও আপনার বন্ধু নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন, আপনারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান ও সাহায্য চান। আল্লাহ্ আপনাদেরকে পথ দেখান। কিন্তু শুভ কোনদিনও মৃত্যু, পরকাল এইসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। সে আপনাদের নিয়ে হাসি তামাসা করত। সে বলত- "দোস্ত তোরা কি সিরিয়াস নাকি !? এইসব ফ্যান্টাসী চিন্তা বাদ দে। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, ব্যস শেষ। এরপর কেউ জীবিত হয় না, পুরস্কারও পায়না, শাস্তিও পায়না। জীবন একটাই, এটাকে এনজয় কর আমার মতন। ধর্মটর্ম এইসব জিনিস মানুষের বানানো ছাড়া আর কিছুই না। "
শুভ আপনাদের ছোটবেলার বন্ধু ছিল। আপনারা দুইজন বহুবার চেষ্টা করেছেন তাকে বোঝানোর জন্য, তাকে নিশ্চিৎ ধ্বংস থেকে বাচানোর জন্য। তার জন্য আপনারা আল্লাহর কাছে অনেকবার দু'আ করেছেন। কিন্তু যে বুঝবে না বলে নিজেই পণ করেছে, তাকে আপনি কি করে বুঝাবেন? যেহেতু আপনাদের পথ সম্পূর্ন আলাদা, আপনারা বাধ্য হয়েছিলেন তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে।
আপনার খুব ইচ্ছা হল শুভকে একবার দেখার। যেহেতু এটা জান্নাত, এখানে কোন ইচ্ছাই অপূর্ন থাকেনা । একটা জানালা খুলে গেল আপনার জন্য। আপনার বন্ধু আপনাকে বলল- "দোস্ত, নিচে তাকিয়ে দেখবি নাকি একবার?"
আপনি তাকালেন। আপনার শিরদাঁড়া দিয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল নিচের দিকে। আপনার সমগ্র অস্তিত্ব ভয়ে হীমশীতল হয়ে গেল। নিচে জাহান্নামের ভয়ঙ্কর আগুনের ভেতর শুভ অমানুষিক জান্তব চিৎকার করছে। সে আপনার বন্ধু ছিল পৃথিবীতে, স্বাভাবিকভাবেই আপনার এখন তার জন্য খারাপ লাগা উচিত। কিন্তু আজকে আপনার একফোটাও খারাপ লাগল না তার এই করুন পরিণতির জন্য। আপনার মনে তার প্রতি একটা গভীর বিদ্বেষ সৃষ্টি হল। আপনি তাকে বললেন- "আল্লাহর শপথ নিয়ে বলছি আমি, তুই আমাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছিলি তোর সাথে সাথে ! আমি যদি তোর দেখানো পথে চলতাম, আজকে আমি আরেকটূ হলেই এই আগুনের মধ্যে থাকতাম। যদি আল্লাহ্ আমাকে তাঁর নিয়ামত না দিতেন, আমিও আজকে তোর মতই জাহান্নামে থাকতাম। "
আপনি আপনার প্রথম বন্ধুর কাছে ফেরত এলেন। আপনার চেহারা মরা মানুষের মতন ফ্যাকাশে। একটু আগে জান্নাতের ঢোকার আনন্দের সকল ছাপ আপনার চেহারা থেকে মুছে গেছে। আপনার বিন্দুমাত্র ধারনা নেই যে একটু আগেই আপনি জান্নাতে ছিলেন, এখানে আর কোন ভয় নেই । আপনি এত মানসিক শকের মধ্যে আছেন যে আপনার এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না যে আপনি আর কখনো মরবেন না। হতবিহ্বল অবস্থায় কেমন একটা ঘোরের কন্ঠে আপনি আপনার বন্ধুকে একটিমাত্র প্রশ্ন করলেন-
"সত্যিই কি আমরা আর কখনো মরব না ? আর সত্যিই কি আমরা আর কখনো কোন শাস্তি পাবনা?? কোন সন্দেহ নেই, এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য ! "
এই মূহুর্তে আপনার কাছে জান্নাতের অসীম আনন্দের চেয়েও অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে যে আপনাকে আর কখনো শাস্তি পেতে হবে না, আপনাকে আর কখনো মরতে হবেনা ! কারন এই মাত্রই আপনি নিজের চোখে দেখে এসেছেন সেটা। এক মূহুর্তের সেই দৃশ্য আপনার সকল আনন্দ মুছে দিয়েছে।
এই ভয়ঙ্কর তীব্র আর বাস্তব দৃশ্যটাই আল্লাহ তুলে ধরেছেন ৫১ থেকে ৬০ আয়াতে। হয়ত এই ঘটনাটি কোন একদিন আমাদের সাথে ঘটবে। আমার কথা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবেনা । আপনি আল্লাহর কথা নিজে পড়ে বিশ্বাস করেন। আপনি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন সেদিন আপনি নিজেকে কার জায়গায় দেখতে চান। [http://quran.com/37/51-60 ]
আল্লাহ্ এখানে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের "সত্যিকার" বন্ধু কারা। আমাদের প্রত্যেকের ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। আমরা বন্ধুদের সাথেই সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ট সময় কাটাই। নাবি(স) বলেছিলেন, মানুষ বন্ধুর বিশ্বাসে প্রভাবিত হয় তাই আমরা যেন সাবধানে বন্ধু নির্বাচন করি। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য মিলিয়ে আপনার অবশ্যই একাধিক ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। আপনি নিয়মিত তাদের সাথে দেখা করেন, আড্ডা মারেন, হ্যাং-আউট করেন, লাইফকে এনজয় করেন, কৈশোর-তারুন্য-যৌবনকে এনজয় করেন।আপনি মনে করেন আপনার বন্ধুরাই হচ্ছে বেস্ট, মজার ব্যাপার হচ্ছে সবাই নিজের বন্ধুদের ব্যাপারে ঠিক এটাই মনে করে ! আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলগুলোতে সব বন্ধুরা একত্র হলে কি হয় আমি আপনাকে বলে দেই, যদিও আপনি খুব ভাল করেই জানেন-
- রাস্তায়/মোড়ের দোকানে চা-সিগারেট খেতে খেতে চরম আড্ডা। একটু পর পর হোহো করে হাসাহাসি। মনের আনন্দে অনুপস্থিত কাউকে নিয়ে পরনিন্দা করা। একে অন্যকে গালি দেওয়া/ খারাপ নামে ডাকা/ অত্যন্ত নিষ্ঠুর রসিকতা করা। কোন বন্ধুর জীবনে মেয়েঘটিত কি ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা করা। সে সামনে থাকলে তাকে পচানো, যতক্ষন পর্যন্ত না সে সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে যায়।
- সম্ভাব্য যত খেলা আছে সব নিয়ে আলাপ করা। কেন আপনার টীম/ক্লাব/প্লেয়ার শ্রেষ্ঠ সেটা প্রমান করার চেষ্টা করা । সেখান থেকে ঝগড়া, গালাগালি, হাতাহাতিও বিচিত্র নয়। লেইটেস্ট সিনেমা, টিভি সিরিয়াল, ভিডিও গেইম, নায়ক-নায়িকাদের স্ক্যান্ডাল, ফ্যাশন, প্রযুক্তি, মোবাইল সহ পৃথিবীর সম্ভাব্য-অসম্ভাব্য সকল বিষয় নিয়ে আলাপ করা শুধু একটি বাদে। ধর্ম, মৃত্যু ও পরকাল।
- জীবনেও ধর্ম নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারন না করা। ধর্মের টপিক উঠে আসলে তাড়াতাড়ি অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়া। কুর'আন বা হাদিস নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করা। জীবনেও সবাই মিলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ না পড়া। দেশ ও পৃথিবীর কল্যান নিয়ে "মূল্যবান মতামত" দেওয়া। অথচ আসরের আযান শেষ হয়ে মাগরিব চলে আসে, আল্লাহ্ ডাকেন- "এস সালাতের জন্য, এস কল্যানের জন্য" . বন্ধুরা বড় ব্যস্ত তখন দেশ ও দশের কল্যান নিয়ে।
আপনার বন্ধুরাই আপনাকে ধ্বংস করবে। আপনার হাতে তুলে দিবে বিশেষ কোন সিডি বা সিগারেট। আপনাকে শিখাবে যে অপরাধ করা হচ্ছে স্মার্টনেস, অপরাধ করলে মানুষ আপনাকে বলবে- Boss, Cool Guy. বন্ধুরাই আপনাকে আমোদ-ফূর্তি, পার্টি ও পৃথিবীর যাবতীয় ভোগ বিলাসের আমন্ত্রন জানাবে। আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন যে আপনার কয়টি বন্ধু আছে যারা আপনাকে ইসলামের কথা বলে, আল্লাহর কথা স্মরন করিয়ে দেয়, আপনার জীবনের উদ্দেশ্যের কথা স্মরন করিয়ে দেয়?
আল্লাহ্ আমাদেরকে ভয়ঙ্কর সাবধান করেছেন এখানে-
" আর সেই দিনের কথা মনে কর, যখন জালিমরা হতাশায় নিজের হাত কামড়াতে কামড়াতে বলবে- হায় আফসোস ! আমি যদি রাসূলের দেখানো পথে চলতাম ! হায়, কি দূর্ভাগ্য আমার ! আমি যদি অমুক অমুকের সাথে বন্ধুত্ব না করতাম ! অবশ্যই সে আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল আমার কাছে এই রিমাইন্ডার(কুর'আন) আসার পরেও। আর শয়তান তো আজীবনই মানুষকে ধোঁকা দেয়। " [http://quran.com/25/27-29]
আপনি কখনো নিজের হাত নিজে কামড়েছেন তীব্র হতাশা , দুঃখ ও অনুতাপে? হতাশার কোন্ স্তরে পৌছালে মানুষ নিজে হাত নিজে কামড়ায় বলতে পারেন?? আমরা কি সেই পরিমান হতাশ হতে চাই কেউ কোনদিনও???
রাসূল(স) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- "কে বেস্ট ফ্রেন্ড ?" তিনি বলেছিলেন- " যে তোমাকে আল্লাহর কথা মনে করতে সাহায্য করে, আর তুমি ভুলে গেলে তোমাকে মনে করিয়ে দেয়। " তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- "মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?" তিনি বলেছিলেন- " যার দিকে তাকালে তোমার আল্লাহর কথা মনে পড়ে, সে "।
হয়ত আপনি চান আপনার এরকম বন্ধু থাকবে, কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলে এরকম কেউ নেই। এখন আপনি কি করবেন? আপনার বন্ধুদের ছেড়ে দিবেন? না, সেটা না। আল্লাহ্ আমাদের সাধ্যের বাইরে কোন বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দেন না কখনোই। তাহলে আপনি কি করবেন? সমাধান আপনার হাতেই ! আপনি নিজেই সেইরকম একজন মানুষ হয়ে যান যেরকম একজন বন্ধু আপনি খুজঁছেন !! আপনি নিজেই হন আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলের রাসূলের(স) বলে দেওয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি আপনার বন্ধুদের নিজ হাতে সরিয়ে আনুন ধংসের রাস্তা থেকে।হয়ত আপনার বাড়ানো হাত ধরেই আপনারা সবাই যেতে পারবেন জান্নাতে আর সেখানে আজীবন সবাই মিলে পার্টি করতে পারবেন !! তাদেরকে আপনি নামাজের কথা বলুন। হয়ত সবাই হাসবে প্রথমবার, দ্বিতীয়বার... বহুবার। কিন্তু পরিবর্তন আসবেই, কারন আপনাকে সাহায্য করবেন স্বয়ং আল্লাহ্। নাবি-রাসূলরা শান্তিপূর্ন চমৎকার কোন সমাজে আসতেন না। আল্লাহ্ তাঁদেরকে তখনি পাঠাতেন যখন সমাজের অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ হয়ে যেত। নাবিরা আর আসবেন না। ইসলামের শান্তির বানী, ভালবাসার বানী, দয়ার বানী নিয়ে আপনাকে আমাকেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাই আমাদের বন্ধুদের ভালবাসি।। আমরা সবাই আমাদের প্রিয় বন্ধুদের সাথে থাকতে চাই, তাদের সাথে সময় কাটাতে চাই। আমরা যদি আজীবন ধরে বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে পারি জান্নাতে গিয়ে, কেন আমরা সেই সুযোগটা কাজে লাগাব না???
শেষ কথাঃ
জান্নাতের অসীম সৌন্দর্যের অণু পরিমান ও আমি বলিনি আপনাকে, কারন আমি নিজেই জানিনা। আল্লাহর অসাধারন কথাগুলোর থেকে কয়েকটি দিলাম মাত্র। আমি একজন যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক প্র্যাকটিকাল মানুষ। আল্লাহ্ আমাকে এভারেজ বুদ্ধিমত্তা দিয়েছেন, আমি খুব বুদ্ধিমানও না, খুব নির্বোধ-ও না। অবশ্য কোন নির্বোধই নিজেকে নির্বোধ মনে করে না ! আমার বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে মূলত ২টি কারনে আমি জান্নাতে যেতে চাই। পার্থিব আর অপার্থিব। দুটি কারণই আমার কাছে যৌক্তিক।
[] পার্থিব-
আমার বয়স ২৬, আমি একজন ডাক্তার। কিন্তু আমি হতে চেয়েছিলাম আরো অনেককিছু- বৈমানিক, ফুটবলার, ডুবুরি, প্রাণীবিজ্ঞানী । আমাকে পড়াশুনা/কাজ করতে হয়, জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, নয়ত আমার চলবে না। আস্তে আস্তে আমার জীবন জটিল হচ্ছে, আমার দায়িত্ব বাড়ছে। হয়ত একদিন আমার সন্তান হবে, তাদেরকে নিয়ে আমার চিন্তা বাড়বে। হয়ত আমার আগে আমার বাবা মা মারা যাবেন, তখন আমি আরো একা হয়ে যাব। আমার ছোট একটা বোন আছে ৩ বছরের। আমি চাইনা সে বড় হয়ে যাক, আমি তাঁকে ৩ বছরেরই দেখতে চাই, কিন্তু সেটা সম্ভব না। আমি আমার প্রিয়জন বন্ধুবান্ধবকে কাছে চাই সবসময়, কিন্তু জীবনের স্রোত সবাইকে আলাদা করে দেয়। আমার ইচ্ছা আমার একটা শক্তিশালী কালো ঘোড়া, একটা ম্যাকাও পাখি সহ আরো অনেক পোষা জীব থাকবে, সেটাও সম্ভব না। আমাকে আল্লাহ্ যা যা সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আমাকে টেনশনে থাকতে হয়। আমি পৃথিবীর কয়েকটা দেশ দেখেছি, আরো দেখতে চাই, হয়ত সেটাও সম্ভব না। হয়ত ঢাকায়ই আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমি শপিং মলে গিয়ে অনেক জিনিসের দাম দেখে আবার রেখে দেই, আমার কাছে টাকা থাকেনা। আমাকে গ্যাস-পানি-কারেন্ট বিল দিতে হয়। কিছু খেতে হলে আমাকে সেটা কিনে কেটে রান্না করতে হয়, দশবার চিন্তা করতে হয় কি খাচ্ছি। আমার বেশিরভাগ ইচ্ছাই অপূর্ন, সেগুলো এখানে পূর্ন করার খুব ইচ্ছাও আমার নাই । আমি এইসব থেকে মুক্তি চাই। আমি এটার চেয়ে এমন একটা উন্নত ও স্থায়ী জীবনে যেতে চাই যেখানে এসব পার্থিব কোন টেনশন নেই, বিন্দুমাত্রও নেই।
[] অপার্থিব-
আমি আকাশে অগণিত নক্ষত্র দেখি। আমি হাজার হাজার ফীট উপর থেকে প্লেনে বসে মহাসাগরে সূর্যাস্ত দেখেছি। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে এত তীব্র সৌন্দর্য আমি সহ্য করতে পারবনা। আমি সৃষ্টিকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, আমি তাদের স্রষ্টাকে দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই তিনি দেখতে কেমন। আমি দেখতে চাই সেই স্রষ্টাকে যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, যার আহার নেই, নিদ্রা নেই। আমি একটি সসীম সৃষ্টি, "অসীম" শব্দটাই আমার সীমিত ধারনার মধ্যে নেই। আমি অসীম স্রষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে "অসীম" দেখতে চাই। তিনি আমাদের ভালবাসেন, কতটুকু সেটা আমার কল্পনার বাইরে। আমি তাঁকে ভালবাসি। এমন কোন শক্তি নেই যা আমাকে আমার যুক্তি ও বিশ্বাসের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। আমি তাঁর সাথে কথা বলতে চাই। আমি তাঁকে সালাম দিতে চাই। আমি তাঁকে বলতে চাই- "আপনার উপর আপনার সালাম বর্ষিত হোক, আল্লাহ্ ।" কি অদ্ভূত একটা কথা ! কৌতূহল, ভালবাসা, আশা ও ভয় নিয়ে আমি অপেক্ষা করি সেই দিনের জন্য। তীব্র কৌতূহল। ভয়ঙ্কর তীব্র।
এত তীব্র কৌতূহল যে আমি আমার বাকি জীবন পার করে দিতে পারব এটা নিয়ে।
আপনি যদি ধৈর্য ধরে এই আর্টিকেল পড়ে এই পর্যন্ত আসেন, তাহলে আপনার ইচ্ছা আছে জান্নাতে যাওয়ার। আপনাকে আমি বলব, আপনি চেষ্টা করতে থাকেন আপনার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমরা সবাই একই পথের পথিক, একই গন্তব্য আমাদের সবার। আল্লাহ্ যেন বিচার দিবসে আমাদের সবার চেহারা উজ্জ্বল করেন। আমরা যেন সেদিন হতাশায় হাত না কামড়াই। সেদিন যেন আমরা প্রথমবারের মতন বুঝতে না পারি যে পৃথিবীতে আমরা একটি ভুল জীবন কাটিয়ে গিয়েছিলাম। Let that day be not the first day in our life to realize that the way we had lived our lives, was wrong.
ঈদ মুবারাক সবাইকে। May The Most-loving Allah open His doors of Mercy for all of us.
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: