Friday, October 9, 2015

ইসলামের প্রথম দিকের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা





এই জায়গাটা হল শিয়াবে আবু তালিব, বিস্তারিত ঘটনা নিম্নে বর্নিত হল।পবিত্র কাবা শরিফের পাসে অবস্থিত ইসলাম গ্রহনের কয়েক দিন পরে ওমার ফারুক(রা:) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি সত্যের উপরে নই? তদুত্তোরে তিনি বললেন কেন নয়, নিশ্চয় আমরা সত্যের মধ্যে। ওমর বললেন তাহলে এত গোপনীয়তা কি জন্যে। তখন আরকাম(রা:) বাড়ীতে সমাবেত মুসলিমদেরকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং তাদেরকে দুদলে বিভক্ত করে দেন। হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব(রা:) নেতৃত্বে একদল এবং ওমার বিন খাত্তাব(রা:) নেতৃত্বে আর একদলের নব সঞ্চারিত শক্তির ঈঙ্গিত দেয়ার জন্যে মক্কার বিভিন্ন অলি-গলি প্রদক্ষিণ করে।

উমারের (রা) ইসলাম গ্রহণের পর মুসলিমরা কাবার চত্বরে প্রকাশ্যভাবে ছালাত আদায় করতে শুরু করে। এতে বেশ হাংগামা হয়। কিন্তু মুশরিকরা মুসলিমদেরকে ছালাত আদায় করার সুযোগ দিতে বাধ্য হয়। এতে কুরাইশ সরদারদের রাগ চরমে উঠে। তারা ভাবলো, বানু হাশিমের সহযোগিতাই মুহাম্মাদ (সা) এর শক্তির উৎস।তাই বানু হাশিমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কুরাইশরা দাওয়াত দমন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। শাস্তি, নির্যাতন, নিপীড়ন, প্রলোভন ও হুমকি প্রদর্শনের মতো সর্ব প্রকার পন্থা গ্রহণ করে। কিন্তু এসব কুপরিকল্পিত ব্যবস্থাসমূহ মুসলমানদের ঈমান বৃদ্ধি ও দ্বীন ইসলামকে অধিকতর আঁকড়ে ধরা ছাড়া আর কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি।

এক নতুন দুরভিসন্ধি ও মন্দ অভিপ্রায় তাদের অন্তরে জন্ম নিল। আর তা হচ্ছে মুসলমান ও বনী হাশেমকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন ও একঘরে করে রাখার এক চুক্তিনামা লিখে, যাতে সবাই সাক্ষর করবে, কাবা শরিফের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে দেবে। চুক্তি অনুসারে তাদের সাথে বেচা- কেনা, বিয়ে শাদি, সাহায্য সহযোগিতা, ও লেন-দেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। এ চুক্তির ফলে আবু তালিব বানু হাশিমের লোকদেরকে নিয়ে বাধ্য হয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে শিয়াবে আবু তালিব নামক গিরি সংকটে আশ্রয় নেন।

আবু লাহাব ছাড়া বানু হাশিমের মুসলিম-অমুসলিম সকল সদস্যই মুহাম্মাদ (সা) এর সঙ্গী হন।
তাঁরা অবর্ণনীয় ক্লেশ ও দুঃখের শিকার হন সেখানে। ক্ষুধা ও অর্ধাহারের বিষাক্ত ছবোল থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। স্বচ্ছল ও সামর্থবান ব্যক্তিরা নিজেদের সমস্ত ধন-সম্পদ ব্যয় করে ফেলেন। খাদীজা তাঁর সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করেন। খাদ্যাভাবে অনেক সময় গাছের পাতা ও ছাল খেতে হয়েছে। শুকনো চামড়া চিবিয়ে চিবিয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণের চেষ্টা করতে হয়েছে। পানির অভাবে অবর্ণনীয় কষ্ট পেতে হয়েছে। বিভিন্ন রোগ ছাড়িয়ে পড়লো। অধিকাংশ লোকই মৃত্যূর প্রায়-দ্বার প্রান্তে এসে দাড়ালেন। কিন্ত তাঁরা ধৈর্য অবিচলতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। তাঁদের মধ্যে একজনও পশ্চাদপদ হননি। অবরোধ একাধারে তিন বছর স্থায়ী রইল। অতঃপর বনী হাশেমের সাথে আত্মীয়তা আছে এমন কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি জনসমাবেশে চুক্তি ভঙ্গ করার কথা ঘোষনা করে। চুক্তির কাগজ বের করা হলে দেখা যায় যে সেটা খেয়ে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র কাগজের এক কোণ যেখানে “বিসমিকা আল্লাহুম্মা” লেখাছিল সেটাই অক্ষত রয়েছে। সংকটের অবসান হল। আর মুসলিম ও বনী হাশেম মক্কায় ফিরে আসেন। কিন্তু কুরাইশরা মুসলিমদের দমন ও মুকাবিলায় সেই রকম রুঢ়তা ও কঠোরতা ক্ষনিকের তরেও পরিহার করেনি। এটা ছিলো নবুয়াতের নবম সনের ঘনটা।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: