ইবনে সাআদের দল যেন অপেক্ষা করতে পারছে না ৷ তারা যতো দ্রুত সম্ভব ঘটনা ঘটিয়ে পুরস্কার গ্রহণের চিন্তায় ব্যস্ত ৷ কিন্তু শত্রুপক্ষীয় মহাবীর হুর ইবনে ইয়াযিদ রিয়াহি হঠাত্ অদ্ভুত এক আচরণ শুরু করে দেয় ৷ সে অবিশ্বাস্যরকমভা
হুর ইবনে ইয়াযিদ রিয়াহি বললো-দোযখ এবং বেহেশতের মধ্য থেকে কোনো একটিকে নির্বাচন করা উচিত ৷ সেই নির্বাচনের মোক্ষম সময় এখন ৷ এই বলেই চিত্কাের করে উঠলো সে-খোদার শপথ ! আমাকে টুকরো টুকরো করে ফেললেও বেহেশত ছাড়া অন্য কিছুই আমি বেছে নেবো না ৷
কিছুক্ষণ পর কুফার এই মহাবীর কাঁপতে কাঁপতে ধীরে ধীরে ইমাম হোসাইন ( আ ) এর শিবিরের দিকে যায় ৷ অশ্রুসজল চোখে নম্রকণ্ঠে বলে-হে খোদা ! তোমার পথে ফিরে এসেছি ৷ আশা করি তুমি আমার তওবা কবুল করবে ৷ হে খোদা ! তোমার বন্ধু এবং রাসূলের সন্তানের অন্তরকে আমি সন্ত্রস্ত করেছি, আমার এই মহাপাপ তুমি ক্ষমা করে দিও ৷ এরপর ইমামের সামনে গিয়ে বললো-'হে রাসূলে খোদার সন্তান ! তোমার জন্যে আমার জীবন উত্সার্গ হোক ৷ আমি হুর , আমি সেই হুর যে তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল ৷ খোদার কসম , বিশ্বাস করতে পারি নি তোমার সাথে এরকম আচরণ করা হবে ৷ আমি এখন আমার কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত ৷ সেইসাথে আমি এখন তোমার পথে আমার জীবন উত্সির্গ করার জন্যে প্রস্তুত৷ আল্লাহ কি আমার তওবা কবুল করবেন ?
ইমাম অত্যন্ত দয়ার্দ্র কণ্ঠে বললেন,'হ্যাঁ, আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ৷ আল্লাহর রহমত তোমার ওপর বর্ষিত হোক ৷
হুর বললো , যুদ্ধের ময়দানে সর্বপ্রথম আমাকে যাবার অনুমতি দিন ৷
ইমাম তাকে তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলেন৷ ওমর ইবনে সাআদ ইমামের শিবির লক্ষ্য করে প্রথম তীর নিক্ষেপ করে ৷ তার একাজের সাক্ষীও সে রেখে দেয়৷ হুর বীরবিক্রমে ইয়াযিদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকেন ৷ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে অবশেষে হুর শাহাদাত লাভ করেন ৷
কারবালায় এরকম আরো কটি চিত্র আমরা লক্ষ্য করবো ৷ যেমন আবেস ইবনে শাবিব শাকেরী ৷ তিনি ইমামের কাছে এসে বলেন , বর্তমান পৃথিবীতে তুমিই আমার কাছে সবচে প্রিয়তম ব্যক্তি ৷ হে পুন্যকারীদের সন্তান ! তুমি স্বাক্ষী থাকো , আমি তোমার এবং তোমার নানা মহানবী ( সা ) এর পথে আন্তরিকতার সাথে আপন প্রাণ উতসর্গ করলাম ৷ এই বলে অনুমতি নিয়ে তিনি যুদ্ধে যান ৷ আবেসকে চিনতে পেরে ওমর ইবনে সাআদের পক্ষের একজন বলে উঠলো-আমি যুদ্ধের ময়দানে আবেসের যুদ্ধ কৌশল দেখেছি ৷ সে অত্যন্ত সাহসী এক বীরযোদ্ধা ৷ একথা শুনে ওমর ইবনে সাদ অসংখ্য সেনাকে তার সাথে লড়বার আদেশ দেয়৷ অবশেষে একাকী সবার সাথে লড়ে শেষ পর্যন্ত তিনিও শাহাদাতবরণ করেন ৷
ওমর ইবনে সাআদের চাচাতো ভাই হাশেম ইবনে উতবা ইমামের খেদমতে এসে বললেন ,
আমি আপনার সহযোগিতায় আমার প্রাণ বাজি রেখে এসেছি ৷ ইমাম তাঁর জন্যে দোয়া করলেন ৷ হাশেম যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে হাঁক ছাড়লো-আমি আমার চাচাতো ভাই ওমর ইবনে সাআদ ছাড়া অন্য কারো সাথে লড়তে আসি নি ৷ হে ওমর ! তুই কীভাবে দ্বীনের ইমামকে হত্যা করার জন্যে কোমর বেঁধে লেগেছিস ? ইমাম নবীজীর সন্তান ৷ কী অদ্ভুত কথা, ফোরাতের পানি রাসূলে খোদার খান্দান ব্যতীত সবার জন্যে উন্মুক্ত করেছিস !
ওমর ইবনে সাআদ চাচাতো ভাই হাশেমের সাথে লড়তে পারবে না জেনে কৌশলে তার মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজে বিরত থেকে তার সেনাদেরকে সামনে ঠেলে দেয়৷ সেনারা চারদিক থেকে হাশেমকে ঘিরে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে ৷
ওহাব ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে কারবালায় আসে ৷ তার মা তাকে যুদ্ধে যাবার জন্যে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে বল্লেন-বাবা! কিসের অপেক্ষায় আছো ৷ ওঠো , রাসূলে খোদার পরিবারের সমর্থনে এগিয়ে যাও ৷ ওহাব যুদ্ধ করতে করতে দু'হাত হারায় ৷ মা তা দেখে বলে উঠে দাঁড়াও! রাসূলে খোদার হেরেম রক্ষা করো ৷
ইমাম হোসাইন ( আ ) কাছে এসে বললেন-হে মা ! তোমার তাঁবুতে ফিরে যাও৷ আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবেন ৷
এভাবে ইসলাম রক্ষার্থে , নবীজীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে , সত্ কাজের আদেশ এবং অসত্ কাজের নিষেধের দায়িত্ব পালনে নির্মমভাবে শাহাদাত্ব রণ করেন ইমাম হোসাইন ( আ ) সহ তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ ৷ তাঁদের এই ঐতিহাসিক আত্মদানের মধ্য দিয়ে রচিত হয় ইতিহাসের সবচে নির্মমতম ও বেদনাঘন মহান আদর্শ ৷ যে মহা আদর্শের নায়ক হলেন নবীজীর প্রিয় সন্তান ইমাম হোসাইন ( আ ) ৷ আর প্রতিপক্ষে ছিল ইসলামের ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট চরিত্র ও কাপুরুষ ইয়াযিদ ৷
এটি এমন একটি অভিশপ্ত নাম যে নামটির উচ্চারণে মুসলমানমাত্রই দ্বিধাগ্রস্ত ৷ পক্ষান্তরে ইমাম হোসাইনের নামের সাথে মিল রেখে মুসলমানরা তাদের সন্তানদের নাম রাখছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে৷ এখানেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় সত্য-মিথ্যা ৷ এখানেই সূচিত হয় মুহররম বিপ্লবের বিজয় ৷
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: