Monday, September 2, 2019

মুসলিমদের বিবাহ বিষয়ক আলোচনা

আল্লাহতায়ালার অসম্ভব সুন্দর এক নেয়ামতের কথা আজকে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিব। আপনার হাতের আঙুলগুলোর দিকে তাকান। এর মধ্যে দেখবেন ৪ টি সুন্দর সুন্দর আঙ্গুল একরকম, কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুলি অন্যরকম, তাই না? ৪ টি আঙ্গুলের পজিশন একই সাথে, তাদের একের সাথে অপরের কোন দ্বন্দ্ব নেই। অপরদিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি একটু ভিন্নতর দূরত্বে থেকে ৪ জনকে শক্তিদান করে যাচ্ছে। যারা এনাটমি পড়েছেন তারা জানেন।

হাতের আঙুল

আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন, আপনার হাতের শক্তিগুলোর সিংহভাগ কোন আঙ্গুল থেকে আসে? যেটিকে মনে হয় সবচেয়ে অকর্মণ্য, সেই বৃদ্ধাঙ্গুলি কিন্তু আপনার হাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গুল। হাতের পাতার গোড়ার দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলির নীচে যে উঁচু মাংসপিন্ড দেখেন সেটিকে বলে থিনার মাসল। এর কারনেই বৃদ্ধাঙ্গুলির শক্তি বেশি। আবার বৃদ্ধাঙ্গুলিকে আপনি সবদিকে মুভমেন্ট করাতে পারবেন। যা অন্য আঙ্গুলে পারবেন না। অন্য আঙুলগুলোর নীচে হাতের পাতায় দেখবেন মাংশপেশীগুলো দুর্ব্বল। এগুলোকে বলে হাইপোথিনার মাসলস। বৃদ্ধাঙ্গুলি যখন কাজ করে তখনই অন্য আঙ্গুলগুলো পুরো শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারে।

মনে করুন, দুর্ঘটনাবশত বা অন্য কোন কারণে যদি কারো বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কেটে ফেলা হয় তবে দেখবেন হাতের অন্য আঙ্গুলগুলো প্রায় শক্তিহীন হয়ে গেছে। কিন্তু অন্য আঙ্গুল যদি কেটে যায় তাহলে কিন্তু হাতের মুভমেন্ট এতো ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, যদি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ঠিক থাকে। তবে হাত দেখতে খারাপ দেখা যায়। বৃদ্ধাঙ্গুলির সাথে যখন বাকী ৪ টি আঙ্গুল ক্রিয়াশীল থাকে তবেই হাত সবচেয়ে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে। দেখতেও সবচেয়ে সুন্দর লাগে।

দেখবেন কেউ কিন্তু আজ পর্যন্ত বলে নাই, বৃদ্ধাঙ্গুলির সাথে হাতের ৪ টি আঙ্গুল দিয়ে কি কাজ? ৪ টি আঙ্গুলের বদলে ১ টি আঙ্গুলি কি যথেষ্ট ছিল না?

আল্লাহতায়ালা আসলে সবরকমের দৃষ্টান্তই দিয়ে রেখেছেন। হাতের তালুতে আল্লাহ একটি সুন্দর পরিবারের ছবি এঁকে দিয়েছেন। তবু আমরা শিক্ষা নেই না।

"বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই ,তিন আথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে (মাত্র) একটি (বিবাহ কর)…."

(সুরা নিসা ০৩:০৩)

এই আয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে কোনো মুসলমান ইচ্ছা করলে একের অধিক বিয়ে (চারের বেশি নয়) করতে পারে। কিন্তু তাতে শর্ত হলো তাকে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার অর্থাৎ একাই রকম ভালবাসা, খাদ্য, বস্ত্র দিতে হবে এবং তাদের একের উপর অপরকে প্রাধান্য দেওয়া চলবে না। আর যে একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিন্তু তার মনে হচ্ছে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার বা সমতা রাখতে পারবে না তাহলে তাকে একটি বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হচ্ছে। স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করা নিশ্চয় কঠিন কাজ। আল্লহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন,

"তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না……”

(সুরা নিসা ০৪:১২৭)

উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,

“….তোমরা এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পর না ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না …”

( সুরা নিসা ০৩:১২৭)

এ ব্যপারে নবী মুহাম্মদ (স:) বলেন,

"যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।"

(আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯)

বলা হয়ে থাকে যে, ইসলাম বহু বিবাহ বৈধ করেছে। আসলে ইসলাম বহু বিবাহের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যে কেউ চারটির বেশি বিবাহ করতে পারবে না। কারণ সে যুগে এমনকি আজ থেকে এক দেড়শ বছর আগে এই ভারতেই অনেক মানুষ ৩০-৫০-৮০ এমনকি ১০০ আরো বেশি বিবাহ করত! বিশ্বাস না হলে ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বহু বিবাহ’ ও 'বাল্য বিবাহ’ বই দুটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনি যদি রোম সাম্রাজ্যের, গ্রীক সাম্রাজ্যের অথবা পৃথিবীর যে কোনো ইতিহাস পড়েন তাহলে দেখবেন যে সে যুগে মানুষ অনেক স্ত্রী রাখত।

সকল ধর্মেই বহু বিবাহ বৈধ। কিন্তু কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ইসলাম চারটি বিবাহকে বৈধ বলেছে এবং একটি বিবাহ করতে উপদেশ দিয়েছে। 

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: