Saturday, October 3, 2015

জন্মগত মুসলিম

আমরা বাঙ্গালিরা আরবি বুঝিনা। একারনে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই কুর’আন পড়ি কিছুই না বুঝে। ছোটবেলা থেকে আমাদেরকে হুজুরের কাছে তাজঊইদ সহকারে কুর’আন রীডিং পড়তে শিখানো হয়। বেশিরভাগ মুসলিমের কুর’আন শিক্ষা সারাজীবন এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অনেকেই বড় হয়ে চর্চার অভাবে তাজঊইদ ও তিলাওয়াত ভুলে যায়, তখন তারা আর কুর’আন ছুয়েও দেখে না। সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর পাঠানো এই পথপ্রদর্শক বইটির স্থান হয় বসার ঘরের শো-কেসে বা বইয়ের তাকে ধূলার মাঝে।
অনেকেই মূল আরবির পাশাপাশি বাংলা বা ইংরেজি অনুবাদ পড়েন কুর’আন বোঝার জন্য। আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে কুর’আনের অনুবাদ কখনোই “কুর’আন” নয়। কুর’আনের ভাষা শুধুমাত্র আরবি। কোন অনুবাদই কুর’আনের সম্পূর্ন মেসেজ ও অসাধারন ভাষাগত সৌন্দর্যকে ১০০ ভাগ প্রকাশ করতে পারেনা। আপনি অনুবাদের ততটুকুই বুঝবেন যতটুকু অনুবাদক নিজে বুঝেছেন। প্রত্যেকটি ভাষার আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে। আমি একটা উদাহরন দেই। “তোমার কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। তুমি কি মামাবাড়ির আবদার পেয়েছ? “ – এই লাইনটির ভাষাগত সৌন্দর্য একমাত্র একজন বাংলাভাষী মানুষের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। যতই চেষ্টা করা হোক, আর কোন ভাষাতেই এটার ভাব পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব না। এটাই অনুবাদের সীমাবদ্ধতা।
আমাদের চোখে যেটা খুব সাধারন একটা আয়াত, সেটার আড়ালে যে আল্লাহর কি পরিমান অসাধারন জ্ঞান ও সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই আর্টিকেল এ ২২ নম্বর সূরা আল-হাজ্জ এর ৭৫ ও ৭৮ নম্বর আয়াতের কিছু ভাষাগত সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।
আয়াত ৭৫ঃ
ٱللَّهُ يَصۡطَفِى مِنَ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕڪَةِ رُسُلاً۬ وَمِنَ ٱلنَّاسِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ۬ (٧٥)
ইংরেজিঃ Allah chooses messengers from angels and from men. Verily, Allah is All-Hearer, All-Seer
বাংলাঃ আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষদের মধ্যে থেকে রাসূলদের বেছে নেন। নিশ্চয়ই অবশ্যই আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।
এখানে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন- ইয়াস্‌তাফি/ Yastafee. এটা একটা ক্রিয়াপদ, মূল শব্দটি এসেছে "ইস্‌তিফা/Istifa" থেকে। এটার অর্থগুলো এরকম দাঁড়ায়- বেছে নেওয়া, মনোনীত করা, To Choose, To Select. এই বাক্যে শব্দটি 3rd Person Present Tense এ আছে। Yastafee= He Selects।
"ইস্‌তিফা" মানে নিজের খেয়ালখুশি ইচ্ছামতন কোন কিছু বেছে নেওয়া। ধরুন আপনি একটা ব্যুফে রেস্টুরেন্টে গেছেন। ৩০-৪০ রকমের খাবার সাজানো আছে। এক পাশে পুডিং, মিষ্টি, ফল, পায়েস, কেক রাখা। আপনি পুডিং তুলে নিলেন। কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেশ করে- “কেন তুমি আর সব রেখে পুডিং নিলে?” আপনি হয়ত বলবেন- “আমার ইচ্ছা তাই। এটা আমার ভাল লাগে”। কেন পুডিং আপনার বেশি ভাল লাগে বা অন্যগুলো কম ভাল তাঁর কোন বৈজ্ঞানিক বা গানিতিক কারন নেই। ভাল লাগে, ব্যস, এটাই হচ্ছে কারন। সবকিছুর ব্যাখ্যা হয়না, সবকিছুর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করতে যাওয়াটা একধরনের নির্বুদ্ধিতা।
আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাঁর রাসূল মনোনীত করার ব্যাপারে "ইস্‌তিফা" করেন। আল্লাহ কাকে তাঁর রাসূল হিসেবে বেছে নিবেন সেটা তাঁর সম্পূর্ন একার ইচ্ছা। ইহুদীরা দাবি করে, তাদের বংশে নাবি মূসা(আ) এর মতন এত বড় একজন নাবি এসেছিলেন। তাহলে কুর’আন কেন তাদের জাতির উপর নাযিল না হয়ে একজন আরব মানুষের উপর নাযিল হল? তারা আরো প্রশ্ন করত- “কেন জীবরাঈল(আ) কেই আল্লাহ বেছে নিলেন কুর’আন নাযিল করার জন্য? অন্য ফেরেশতারা কি দোষ করেছিল?” কুরাইশ বংশের কাফেররা প্রশ্ন করত- “কেন আল্লাহ মুহাম্মাদের মতন একজন এতিম নিরক্ষর লোকের উপর কুর’আন নাযিল করল? কেন আমাদের সমাজের বড় বড় ধনীদের উপর কুর’আন নাযিল করল না?"
আল্লাহ কাকে নাবি-রাসূল হিসেবে বেছে নিবেন সেটার জন্য তাঁর অন্য কারোর উপদেশের কোন প্রয়োজন নেই। মানুষের কি কি যোগ্যতা থাকলে সে আল্লাহর রাসূল হতে পারে আল্লাহ কারো কাছে সেটার কারন ব্যাখ্যা করতে বাধ্য নন। আল্লাহ হচ্ছেন আল-আলীম, সর্বজ্ঞানী। মহাবিশ্বের এমন কোথাও কোন অনু পরমানু নেই যেটা তাঁর জ্ঞানের বাইরে। নয়। আল্লাহ হচ্ছেন সামীউল বাসির (সর্ব-শ্রোতা ও সর্ব-দ্রষ্টা)। এই মহাবিশ্বের অতীত বর্তমান ভবিষ্যত একই সাথে পুরোটা তিনি অনেক আগে থেকেই জানেন। সময় আমাদের জন্য যেভাবে প্রযোজ্য, সেভাবে সেটা আল্লাহর সাথে প্রযোজ্য নয়। কোন কাজের ফলাফল আমরা আগে থেকেই জানিনা, সেকারনে "সহজ/কঠিন/ অনিশ্চিত/ভুল/সঠিক" এই ব্যাপারগুলো মানুষের মধ্যে কাজ করে, যেগুলো আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নয়। যেহেতু তিনি আগে থেকেই সব কিছুর ফলাফল জানেন, কাজেই তাঁর কোন কিছুতেই কোন "ভুল" বা "অনিশ্চয়তা"-র কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি নিজের ইচ্ছায় যে ঘটনাই ঘটান বা যা সিদ্ধান্তই নেন, সবকিছুই নিখুঁত। তাঁর ইচ্ছায় কোন খামখেয়ালিপনা বা উদাসীনতা থাকতে পারেনা, কারন এই গুনাবলীগুলো স্রষ্টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই নয়।
কাজেই কুরাইশদের বা ইহুদীদের করা এই ভিত্তিহীন প্রশ্নগুলোর কোন মূল্য নেই। আজকের দিনেও অনেক মুসলিমদের দেখবেন প্রশ্ন করতে- "আল্লাহ কেন এটা করলেন?" , "এটা এভাবে না হয়ে ওভাবে হলে ভাল হত" , "ইশ ঐদিন অমুক কাজটা না করলেই আর দূর্ঘটনাটা হোত না"...ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের ঈমানের একটি মৌলিক অংশ হচ্ছে "তাকদীর" বা আল্লাহ আমাদের জন্য আগে থেকেই যা কিছু প্রোগ্রাম করে রেখেছেন সেটার উপর শক্ত বিশ্বাস স্থাপন করা। কি করলে কি হবে সেটা আল্লাহ আমাদের চেয়ে অনেক ভাল করে জানেন। দ্বিতীয় কথা হল, আল্লাহ যদি কুর'আন ইউরোপে নাযিল করতেন বা নাবি মূসা(আ) এর উপর কুর'আন নাযিল করতেন, তাহলেই কি মানুষের প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে যেত?! আল্লাহর সিদ্ধান্ত নিয়ে এইসব আলতু ফালতু প্রশ্ন করে নিজের ঈমানের ক্ষতি করার মতন দুঃসাহস আমরা যেন কখনো না দেখাই। আল্লাহর "ইস্‌তিফা" -কে যেন আমরা শতভাগ পজিটিভলি হাসিমুখে মেনে নেই। এটাই সত্যিকারের বিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য।
এবার আমরা ৭৮ নম্বর আয়াতটি দেখি।
আয়াত ৭৮-
وَجَـٰهِدُواْ فِى ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦ‌ۚ هُوَ ٱجۡتَبَٮٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِى ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٍ۬‌ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٲهِيمَ‌ۚ هُوَ سَمَّٮٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ وَفِى هَـٰذَا لِيَكُونَ ٱلرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيۡكُمۡ وَتَكُونُواْ شُہَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ‌ۚ فَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱعۡتَصِمُواْ بِٱللَّهِ هُوَ مَوۡلَٮٰكُمۡ‌ۖ فَنِعۡمَ ٱلۡمَوۡلَىٰ وَنِعۡمَ ٱلنَّصِيرُ
ইংরেজী-
And strive for Allah with the striving due to Him. He has chosen you and has not placed upon you in the religion any difficulty. [It is] the religion of your father, Abraham. Allah named you "Muslims" before [in former scriptures] and in this [revelation] that the Messenger may be a witness over you and you may be witnesses over the people. So establish prayer and give zakah and hold fast to Allah . He is your protector; and excellent is the protector, and excellent is the helper.
বাংলা (আংশিক)-
" আর আল্লাহর পথে এমনভাবে সংগ্রাম কর যেমনটা তাঁর জন্য করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বেছে নিয়েছেন আর তোমাদের ধর্মের উপর কোন বোঝা চাপিয়ে দেননি। এটা তোমাদের পূর্বপুরুষ ইবরাহীম এর ধর্ম। "
ইজতিবাঃ-
এখানে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন- ইজতাবা ( هُوَ ٱجۡتَبَٮٰكُمۡ)। ইজতিবা অর্থও বেছে নেওয়া, পছন্দ করা, To Choose. কিন্তু এটা নিজের ইচ্ছামতন কোন কিছু বেছে নেওয়া নয়। আমি কয়েকটা উদাহরন দেই।
আপনি একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কর্মচারী নিয়োগ পদে (Officer Recruitment) কর্মরত আছেন। আপনাদের অফিসে ২ জন কর্মচারী নেওয়া হবে। নির্ধারিত দিনে আপনি ১০ জনের ভাইভা নিলেন। প্রত্যেককে খুঁটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করলেন। শেষে ৭ আর ১০ নম্বর ক্যান্ডিডেটকে চাকরির জন্য মনোনয়ন দিলেন।পরেরদিন আপনার অফিসের এম.ডি. সাহেব যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করেন যে, কি কি যোগ্যতা দেখে আপনি ঐ দুইজনকে বেছে নিলেন, তাহলে আপনি কখনোই বলবেন না- “ স্যার, আমি তাদেরকে বেছে নিলাম কারন , ৭ নম্বর সংখ্যাটা আমার খুব প্রিয়, আর ১০ নম্বর ক্যান্ডিডেটের প্রিয় খাবার পুডিং। “
আপনি আপনার খেয়ালখুশি মনের ইচ্ছামতন র‍্যান্ডমলী কাউকে বেছে নেননি। ইজতিবা শব্দের পূর্ন অর্থ হল- সঠিক কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, To make the right decision for the right task. আপনি চাকরিপ্রার্থীদের সাথে "ইজতিবা" করেছেন। আপনি অনেককে পরীক্ষা করেছেন, সেখান থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ দুইজনকে বাছাই করেছেন। কেন আপনি এই দুইজনকেই বেছে নিয়েছেন এর পিছনে অবশ্যই আপনি গ্রহনযোগ্য ব্যখ্যা দিতে পারবেন ।
ধরুন আপনার গাড়ির একটা চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছে। সেটা খোলার জন্য ২০ নম্বর সাইজের একটা স্ক্রু-ড্রাইভার লাগবে। আপনি আপনার টুলবক্স খুলে খুজে খুজে ২০ নম্বর স্ক্রু-ডাইভার বের করলেন। আপনি যেভাবে সঠিক সাইজের স্ক্রু-ডাইভারটা বেছে বের করেছেন এটার নামই হচ্ছে ইজতিবা। তাই ইজতিবা শব্দের পূর্ন অর্থ হচ্ছে- To Pick the right thing for the right task. You have a reason for your choice.
আগের আয়াতে আল্লাহ বলেছিলেন, তিনি নাবি-রাসুলদের বেছে নেন “ইসতিফা”-র মাধ্যমে। এখানে আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন, তিনি আমাদেরকে অর্থাৎ মুসলিমদেরকে বেছে নিয়েছেন “ইজতিবা”-র মাধ্যমে। দুইটি শব্দের অনুবাদেই Choose শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই দুইটি শব্দের মূল অর্থ মোটেও একরকম নয়।
আমরা যারা জন্মসূত্রে মুসলিম হবার অকল্পনীয় সোভাগ্য নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি তারা অনেকেই হয়ত এরকম ধারনা পোষণ করি যে, এমনিই আমরা মুসলিম। আমাদের বাপ-দাদা মুসলিম, তাই আমরাও মুসলিম। আল্লাহ এখানে উত্তরটা দিয়েছেন এক শব্দেই। বিষয়টা মোটেও তা নয়। আমরা কেউই “এমনিই” মুসলিম নই। জন্মগত মুসলিম হোক আর রিভার্ট মুসলিম হোক, কে কে ইসলাম নামক নিয়ামতটি পাবে তা আল্লাহ নিজে তাঁর অসীম জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মুসলিম কারন আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার লক্ষ কোটি বছর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আমাকে তিনি মুসলিম পরিবারে পাঠাবেন। একই কথা আপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫০ কোটি মানুষের মধ্যে আমরা একজন যারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার অকল্পনীয় সৌভাগ্য পেয়েছি। সবাই মুসলিম হবার সৌভাগ্য পায় না এ জীবনে।আমরা বুঝি আর না বুঝি, আল্লাহ আমাদের মধ্যে কোন না কোন যোগ্যতা দেখেছেন যে কারনে তিনি আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে পাঠিয়েছেন।আমাদের সৌভাগ্য যেমন বড়, তেমনি আমাদের প্রত্যেকের উপর রয়েছে একজন মুসলিম হিসেবে অনেক বড় দায়িত্ব।
বাংলাদেশের প্রায় তিনদিক ঘিরে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিন্দু দেশ। এমন সম্ভাবনা খুবই প্রবল যে কয়েকশ বছর আগে আমাদের পুর্বপুরুষরা হিন্দু ছিলেন। তাদেরই মধ্যে কেউ একজন হয়ত “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছিলেন, যার বংশধর হিসেবে আজকে আমরা ইসলাম ধর্ম পেয়েছি। আপনি মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার দূরে ইন্ডিয়াতে একজন হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে সারাজীবন মূর্তিপূজা করে কাটিয়ে দিতে পারতেন। আপনি এই দেশেই একজন গারো, সাওতাল, মারমা পরিবারে জন্ম নিতে পারতেন, আপনার কাছে কেউ কোনদিনো ইসলামের বাণী নিয়ে যেতনা। কিন্তু আল্লাহ এর কোনটাই চাননি। আল্লাহ চেয়েছেন আপনি মুসলিম হবেন।
আপনি সমাজে অনেক মুসলিম দেখবেন ইসলাম মেনে চলতে যাদের খুব কষ্ট হয় ।এদের কাছে ইসলাম পালন করা মানেই একটা আতংক। এদের চিন্তাধারনাগুলো অনেকটা এরকম- ইসলাম মানেই রেস্ট্রিকশান।ইসলাম মানেই অগনিত নিয়ম।আমাকে নামাজ পড়তে হবে। প্রত্যেকদিন। ৫ বার। তাও মসজিদে যেয়ে। এই শীতের মধ্যে ভোরবেলায় ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করা কি যা-তা কথা? বাপরে বাপ! ইসলাম মানেই এটা হারাম, ওটা হারাম, সবকিছু হারাম। গান-বাজনা হারাম। আরে গান শুনলে ক্ষতিটা কি শুনি? বয়ফ্রেন্ড নিষেধ, গার্লফ্রেন্ড নিষেধ। আমাকে দাঁড়ি রাখতে হবে, হিজাব করতে হবে। আরে এত কম বয়সে কেউ এসব করে নাকি? এখন যদি আমি দাঁড়ি রেখে মোল্লা হয়ে যাই, কালকে থেকে আমি বন্ধুদের মধ্যে মুখ দেখাব কেমনে?বাজারে কত লেইটেস্ট ডিজাইনের ড্রেস চলছে, এখন সব বাদ দিয়ে আমাকে একটা ম্যাটম্যাটে বোরখা পরে ঘুরতে হবে? সুদ হারাম, ঘুষ হারাম। আরে ভাই ব্যাঙ্ক লোন না নিলে আমি বাড়িটা করব কেমনে? আর সব ঘুষই কি ঘুষ? এগুলাও তো একধরনের “গিফট” তাইনা?
এই ধরনের সাইকোলজির মানুষদের সবার মূল সমস্যা একটাই। এরা সবাই By Born Muslim. এরা একজনও এখনো By Choice Muslim হয়ে উঠতে পারেনি। এদের চিন্তাভাবনা সবই পার্থিব জীবনকে কেন্দ্র করে। কে কি বলবে, কে কি ভাববে এগুলো নিয়ে ভেবে ভেবে এদের চিন্তার কোন অন্ত নেই। পার্থিব জীবনের চিন্তাগুলোকে একটু পাশে সরিয়ে রেখে “কিভাবে আমি আমার স্রষ্টাকে খুশি করতে পারব” বা “যেহেতু আল্লাহ বলেছেন, অতএব তা অবশ্যই আমার ভালর জন্য” জাতীয় চিন্তা করতে এরা এখনো শেখেনি।
ইসলাম পালন করতে যদি কারোর খুব কষ্ট হয়, নিয়মের চাপে দম বন্ধ হয়ে আসে, মনে হয় যে “আমার দ্বারা এইসব সম্ভব নয়, মাপ চাই” তাহলে আল্লাহ এই আয়াতে প্রথমে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি আমাদের মধ্যে ইসলাম পালন করার যোগ্যতা দেখেছেন। তিনি আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি জানেন আমরা পারব। আমরা না বুঝতে পারি, কিন্তু আমাদেরকে পূর্ন বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমাদের চেয়ে লক্ষ কোটিগুন বেশি জ্ঞানী। তাঁর হিসাবে কোন ভুল হয়না, তাঁর পরিকল্পনায় কোন খুঁত থাকেনা।
"তিনি তোমাদেরকে বেছে নিয়েছেন আর তোমাদের ধর্মের উপর কোন বোঝা চাপিয়ে দেননি। এটা তোমাদের পূর্বপুরুষ ইবরাহীম এর ধর্ম। "
এটুকু বলে আল্লাহ থামেননি। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে , তিনি আমাদের দ্বীন ইসলামের ভেতর কোন কষ্ট আমাদের উপর চাপিয়ে দেননি।তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে সহজ করে দিয়েছেন। এখানেও আল্লাহ শেষ করেননি। উদাহরন হিসেবে তিনি আমাদেরকে আমাদের আদি পিতা ইবরাহীম (আ) এর কথা বলেছেন। এত মানুষ থাকতে ইবরাহীম(আ) কেন !!! আসুন ইবরাহীম(আ) এর জীবনের কয়েকটা “সহজ” ঘটনা দেখি।
বালক ইবরাহীমের গোষ্ঠী মূর্তিপূজা করত। তাঁর নিজের বাবা মূর্তি বানিয়ে বানিয়ে বিক্রি করত। পাথরের তৈরী মূর্তির কোন ক্ষমতা আছে এটা ইবরাহীম কখনোই মেনে নিতে পারেননি। নিজ ধর্ম না মানার ফলে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। আকাশের চাঁদ তারা সূর্য দেখে ইবরাহীম বুঝে যান, এগুলো সবই সৃষ্টি। এগুলোর কোন ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা রয়েছে শুধু তারই যিনি এগুলো সৃষ্টি করে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রোগ্রাম করে রেখেছেন। আরেকটু বড় হলে ইবরাহীম(আ) কে আগুনের মধ্যে ফেলা হয়। ইবরাহীম(আ) এর শিশু হলে তাঁকে ও তাঁর মাকে জনমানবহীন মরূভুমিতে ফেলে আসতে হয় আল্লাহর ইচ্ছায়। সেই ছেলে বড় হলে তাঁকে আল্লাহর হুকুমে কুরবানী করার জন্য নিয়ে যেতে হয়।
কোথায় ইবরাহীম(আ) এর ঈমান, আর কোথায় আমাদের ঈমান ! ফেলে আসা তো অনেক দূরের কথা, আমরা আমাদের স্ত্রী ও নবজাতক শিশুকে নিয়ে এসি গাড়িতে করেও মরুভূমি দেখাতে নিয়ে যেতাম না !!আল্লাহ আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে সহজ করে দিয়েছেন। এরপরো যদি আমাদের ইসলাম মানতে কষ্টে বুক ফেটে যায়, তাহলে যেন আমরা একবার ইবরাহীম (আ) এর কথা চিন্তা করি। যে অকল্পনীয় পরীক্ষা, সংগ্রাম ও ত্যাগ তিনি আল্লাহর জন্য করেছিলেন তাঁর একশ ভাগের এক ভাগও আমাদেরকে আল্লাহর জন্য করতে হয়না। ইবরাহীম(আ) যদি কোন কমপ্লেইন না করেন, তাহলে আমাদের কিসের এত কমপ্লেইন??? কেন আমরা আল্লাহর উপর পূর্ন অবিচল আস্থা রেখে ইসলাম মেনে চলি না? যদি আল্লাহ ইবরাহীম(আ) এর পরীক্ষাগুলোকে পর্যন্ত সহজ করে দিতে পারেন, তাহলে আমাদেরকে কেন তিনি সাহায্য করবেন না যদি আমরা একটু চেষ্টা করি?
আমরা আল্লাহর পাঠানো শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারি(উম্মাহ)। আপনি, আমি, আমরা প্রত্যেকেই এর একটি অংশ। নবী মুহাম্মাদ সারা পৃথিবীতে শান্তির বানী ও স্রষ্টার পাঠানো একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের যে মিশন শুরু করেছিলেন, তার বাহক এখন আমরা প্রত্যেকে। নবি ইবরাহীম(আ), নবী মুহাম্মাদ(স) যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আমরা সেই একই পথের পথিক। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এই মিশনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নবী মুহাম্মাদ(সঃ) মুসলিম উম্মাহর পুরো দায়িত্বভার নিজ কাঁধে একা বহন করে গেছেন, যেটা আজকে আমরা দেড়শ কোটি মুসলিম মিলেও পারিনা। নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড় ও কঠিন দায়িত্ব। কিন্তু সবচেয়ে আনন্দের ও সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আল্লাহ এই দায়িত্ব পালন করার মতন যোগ্যতা দেখেছেন বলেই তিনি আমাদেরকে বেছে নিয়েছেন।
ঐতিহাসিক কারন, ভৌগোলিক কারন, পারিবারিক কারন, বংশপরম্পরা ইত্যাদি কোনটাই আমাদের মুসলিম হবার পিছে আসন কারন নয়। আসল কারন হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ চেয়েছেন তাই আমরা এই সৌভাগ্য পেয়েছি। যদি কেউ একটা বড় চাকরি পায় কিন্তু ঠিকমতন তার দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে তার চাকরি চলে যায়।আমাদের সবাইকে খুব পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে যে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে আমরা কেউ জান্নাতের টিকেট অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখিনি। আল্লাহর সাথে আমাদের কোন চুক্তি হয়নি যে আমরা জীবনের ৪০-৫০ বছর ফূর্তি করব, আর শেষ ১০ বছর একটূ নামাজ-কালাম-ওযিফা-টুপি-দাড়ি নিয়ে একটা মুসল্লী ভাব ধরে মৃত্যুর পর হাসতে হাসতে জান্নাতে চলে যাব। পরম ন্যায়বিচারক স্রষ্টার সাথে এইধরনের সস্তা প্রতারনা চলেনা।
আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করেছেন, ইসলাম দিয়েছেন না চাইতেই। আমরা যদি ঠিকমতন সেটা পালন না করি তাহলে আমাদেরকে ইসলামের কোন প্রয়োজন নেই। নিজের হাতে সুবর্ন সুযোগ থাকার পরও স্বেচ্ছায় দিনের পর দিন ইসলামকে উপেক্ষা করতে থাকলে আমরা সেটার গন্ডী থেকে বের হয়ে যাব। আল্লাহ আমাদেরকে যেই সুযোগ দিয়েছিলেন সেটা অন্য কাউকে দিয়ে দিবেন যে আমাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা রাখে। ইসলাম একটি সম্মান, সবাই সেটার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনা। কয়েকজন নামধারী মুসলিম ইসলাম থেকে বের হয়ে গেলে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না। সবসময়ই অন্য কেউ না কেউ থাকবে যে ইসলামকে আরো সুন্দর করে ব্যবহার করবে। দুইটি ঘটনা দেখি-
শুভ-র ভাল নাম মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম। তার নামটা একটি চমৎকার মুসলিম নাম, কিন্তু ইসলাম ধর্ম তার কাছে একফোটাও ভাল লাগত না। তার বাবা-মা তাকে নামাযের কথা বলতেন, কিন্তু সে নামাজ পড়ত না। তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে আনন্দ ফূর্তি বিনোদন করা যায়। প্রথমে সে শুরু করল ভিডিও গেইম দিয়ে। সনি প্লে-স্টেশন, এক্স-বক্স, নিনটেন্ডো, কম্পিউটার গেইম ইত্যাদি সে খেলল ২০ বছর পর্যন্ত। ইউনিভার্সিটিতে উঠে সে শুরু করল গান-বাজনা, সিগারেট, গাজা, গার্ল-ফ্রেন্ড, ডিজে পার্টি । গোটা দশেক প্রেম করার পর ৩২ বছর বয়সে সে একটা বিয়ে করে। বিয়ের পরও তার এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার চলতেই থাকে। আরেকটু বয়সে সে ক্লাবে যাওয়া আর মদ খাওয়া শুরু করে। তার বন্ধুবান্ধবের কোন অভাব ছিলনা, সে টাকা উড়াত পানির মতন। আল্লাহ শুভ ওরফে শফিক সাহেবকে সারাজীবন সুযোগ দিয়েছিলেন। সে নিজেই নিজের ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছিল। শফিক সাহেবের মৃত্যু হয় ফুসফুস ক্যান্সারে। দীর্ঘ দুই বছর অসহ্য যন্ত্রনায় ভুগে ভুগে তিনি হাসপাতালেই মারা যান। তার চিকিৎসক মৃত্যুর সময় তার পাশেই ছিলেন। তিনি অনেক চেষ্টা করলেন রোগীকে দিয়ে একবার হলেও “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলাতে। বিস্মিত হয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন, তার রোগী এই কথাটি বলতেই পারছেনা।
সজীব দে হিন্দু পরিবারের একটি ছেলে। সে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন থেকে তার ধর্ম নিয়ে অদম্য কৌতুহল।হিন্দু ধর্ম নিয়ে তার সবসময়েই খটকা ছিল। স্রষ্টার পাঠানো সত্য ধর্ম খুজতে খুজতে একদিন সে এক মিশনারির কাছে যেয়ে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়ে এল। কিছুদিন পর একই সমস্যা, খ্রীষ্টান ধর্মেও প্রচুর অসংগতি। একই ধর্মের নানারকম ভার্সন। কি করা যায়? একদিন একটা বই পড়ল সজীব। বইয়ের নাম “ The Bible, The Qur'an and Science” । লিখেছেন একজন ফরাসী রিভার্ট মুসলিম, নাম “ ড. মরিস বুকাইলি ”। বই পড়ে ও বইয়ের তথ্যগুলো যাচাই করে সজীব নিশ্চিত হল যে ১৪০০ বছর আগে পাঠানো কুর’আন মানবরচিত কোন বই হতে পারেনা, এবং ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সত্য ধর্ম। তার ইসলাম গ্রহনের কথা শুনে তার বাবা তাকে মারধোর করলেন, বড় ভাই ঘরে তালাবন্ধ করে রাখলেন, এবং মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন- “পাগলামি করিস না”।
সজীব দে কে ত্যাজ্যপূত্র হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়। পৃথিবীতে আপন কেউ নেই তাঁর, শুধু একজন বাদে। এমন একজন, যিনি থাকলে আর কোনকিছুরই কোন দরকার হয়না। শুরু হয় ইসলামের পথে সজীবের যাত্রা। সজীব সত্যের অনুসন্ধানে বেরিয়েছিল, আল্লাহ তাকে ইসলাম দিয়েছেন। সজীবের এই ঘটনা একটি নিখাদ সত্যি ঘটনা। সে এই শহরেই আছে কোন এক জায়গায়। আল্লাহ তাকে ভাল রাখুন এবং যেভাবে তাকে পথ দেখিয়েছেন সেভাবে আমাদেরকে সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
আপনি হয়ত রবার্ট ডাভিলার গল্প জানেন। যদি না জানেন আপনার উচিত হবে জেনে নেওয়া কারন এরকম ঘটনা আপনি আপনার জীবনে খুব বেশি পাবেন না।

রবার্ট একজন প্যারালাইজড মানুষ। সে ইসলাম খুজে পেয়েছিল স্বপ্নের মধ্যে। নবী মুহাম্মাদ(স) স্বপ্নের মধ্যে এসে তাঁর সাথে কথা বলে গেছেন। রবার্টের মধ্যে আল্লাহ কি দেখেছিলেন সেটা আমরা জানিনা, একমাত্র তিনিই জানেন। রবার্ট আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় একজন বান্দা যে আল্লাহ তাকে ইসলাম উপহার দিয়েছেন অকল্পনীয় এক উপায়ে।
নিচের এই কথাগুলো একজন জন্মগত মুসলিমের। শুনুন তাঁর মুখ থেকেই-
" একজন মুসলিম হওয়া কোন সুবিধাও না, অসুবিধাও না। আমি বলব এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আপনাকে এই বিশাল উপহারটা দেওয়া হয়েছে, এবং আপনাকে এটা নিতে হবে। আপনাকে এই গিফট ব্যবহার করতে হবে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত। কাজেই এটাকে হালকাভাবে নিবেন না। আমার বাবা একজন রিভার্ট মুসলিম ছিলেন। কনভার্টরা যা কিছুর মধ্যে দিয়ে যায় তাঁর সাথে সবই হয়েছিল। তাঁর পরিবার তাকে রিজেক্ট করেছিল। তিনি বাসায় গেলে দাদি শূকরের মাংস রাঁধতেন। দাদি বুঝতে পারতেন না কেন কেউ তার ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলবে। আমার বাবাকে প্রথমদিকে কেউ মেনে নেয়নি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি, তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন। পরিবর্তন এসেছিল খুব আস্তে আস্তে। আস্তে আস্তে তিনি তাঁর মাকে ও পরিবারকে বুঝাতে পেরেছিলেন। আমি আমার বাবাকে ও প্রত্যেক কনভার্টকে তাদের সাহসের জন্য শ্রদ্ধা ও সম্মান করি।
আমি কনভার্ট করার কথা কল্পনাও করতে পারিনা। কারন আমি তো সবচেয়ে সত্যি ধর্ম নিয়েই জন্মেছি। আমার কাছে বর্ন মুসলিমদেরকে মনে হয় যেন তারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে। কেউ যদি জন্ম থেকেই কোটিপতি থাকে, তাহলে সে কখনো উপলব্ধি করতে পারবেনা দারিদ্র কি জিনিস। কাজেই একজন মানুষ যখন সত্য ধর্ম খুজতে খুজতে দিশেহারা হয়ে যায় তখন তার কেমন লাগে সেটা আমি আসলে কখনো বুঝতে পারবনা । আমি সবসময় আল্লাহকে ধন্যবাদ দেই যে তিনি আমাকে এই বিশাল উপহার দিয়েছেন। "
[https://www.youtube.com/watch?v=6MLyQv2hR0g]
একজন মুসলিম যে আল্লাহর সম্পর্কে সঠিক ধারনা পেয়েছে, সে কখনোই ইসলাম নিয়ে হাবিজাবি তর্ক বা কমপ্লেইন করেনা। একজন মুসলিম তার চিন্তার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোটা তৈরী করে আল্লাহকে নিয়ে। সে এভাবে চিন্তা করে- “আল্লাহ আমাকে এই এই কাজগুলো করতে মানা করেছেন। কিন্তু এই কাজগুলো করতে মজা বেশি, আনন্দ বেশি। কিন্তু তারপরো আমি এই কাজগুলো করব না কারন এটাই আল্লাহর পরীক্ষা। আল্লাহ আমাকে দিনে ৫বার নামাজ পড়তে বলেছেন। হ্যা, হয়ত এই ঠান্ডার মধ্যে ভোরে অজু করে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর, কিন্তু তারপরো আমি যাব। কারন যেহেতু এটা আল্লাহ আমাকে করতে বলেছেন, কাজেই এটাই আমার জন্য ভাল। তাছাড়া খুব কম মানুষই ফজরের নামাজ মসজিদে যেয়ে পড়ে। আমি খুব কম মানুষদেরই একজন হতে চাই। আমি চেষ্টা করি পৃথিবীতে যত বেশি সম্ভব বিনিয়োগ করে যেতে, যাতে আমি আখিরাতে আল্লাহর কাছ থেকে সেটার জন্য অকল্পনীয় পুরস্কার পাই। যেহেতু আল্লাহ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি আমার উপর কষ্ট চাপিয়ে দেননি, কাজেই আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করব। যদি আমার কষ্ট হয়ও বা আমি অধৈর্যও হয়ে যাই, সেটা আমার সমস্যা, সেটা ইসলামের সমস্যা না। আমাকে চেষ্টা করতে হবে আমার সমস্যাগুলো দূর করার। ”

আপনি যদি আমার মতন জন্মগত মুসলিম হন তাহলে আমি আপনাকে অনুরোধ করব আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন- Am I Muslim by Born or Muslim By Choice? আপনি কি অনেকদিনের চর্চার অভাবে ইসলাম থেকে অনেক দূরে আছেন?আপনি কি নতুন করে মুসলিম হতে চান? আপনি আজকে থেকে নামাজ পড়া শুরু করুন। এটাই সমাধান। নামাজ মানেই আল্লাহর সাথে কানেকশন। আপনি নামাজ ঠিক করেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা সবাই নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করি- "কেন আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? কেন আমি মুসলিম? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি? জীবন মানে কি শুধুই আয়- রোজগার, পানাহার, আনন্দ-বিনোদন আর প্রজননের মতন নিছক জৈবিক চাহিদা পূরন? জীবন মানেই কি ভাল ভাল রেস্টুরেন্টে চেক-ইন করা আর সেলফি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করা? নাকি আমাকে কে সৃষ্টি করেছেন, কেন আমাকে একটি অস্তিত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, তিনি আমার কাছে কি চান...এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজে বের করা?
ছোটবেলায় বাংলা বইয়ে একটা গল্প ছিল। দাদা তাঁর ছোট নাতিকে বলছেন- দাদু দোয়া করি তুমি মানুষের মতন মানুষ হও। নাতি প্রশ্ন করেছে- মানুষের মতন মানুষ হয় কেমন করে দাদু?
আমরা যেন মুসলিমের মতন মুসলিম হই। প্রতিদিন যেন আমরা এই পৃথিবীর মাত্র ৬ ভাগের ১ ভাগ মুসলিম হবার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কুর'আন থেকে শিক্ষাগুলো উপলব্ধি করে যেন আমরা আমাদের জীবনে কাজে লাগাই। পৃথিবীতে কত সামান্য কষ্ট ও বিনিয়োগের জন্য আল্লাহ আমাদেরকে যে অনন্তকালের শান্তির জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা যেন আমরা প্রতিমূহুর্তে মনে রাখি।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: