Sunday, October 18, 2015

এক খেয়ানতকারী ও ইমাম হোসাইন -এর বিচারকার্য

কাফেলা রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তত । উটের চিৎকার এরই জানান দিচ্ছিল। শহরের অধিবাসীরা এই শব্দের অর্থ জানে। মদিনার আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও অনেকে সফরের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে কাফেলার উদ্দেশ্য রওনা হল। কেউ ঘোড়ায় চড়ে, কেউ উটের পিঠে, আবার কেউ পায়ে হেটে। যার যেটা ছিল সেটা নিয়েই তারা বেরিয়ে পড়লো, উদ্দেশ্য একটাই; কাফেলার সাথী হওয়া। তাদের সবারই জানা যে, একটি লম্বা সফর তাদের সামনে রয়েছে।
নতুন যাত্রীরা সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কাফেলার রূপ বৃহদাকার ধারণ করতে লাগলো এবং মদিনাকে পিছনে ফেলে কাফেলা প্রাণহীন মরুর বুক চিরে গন্তব্যের দিকে এগুতে থাকলো।
হুসাইন (আঃ)ও উক্ত কাফেলায় যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর সাথে একটি ঘোড়া থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘোড়ার লাগাম ধরে পায়ে হাঁটছিলেন।
কাফেলা আল্লাহর ঘর যেয়ারত করার উদ্দেশ্যে শহর ত্যাগ করেছিল। কয়েকদিন আরবের মরু রাস্তা অতিক্রম করার পর অবশেষে মক্কার নিকটাবর্তী হল। কোনরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় যাত্রীরা খুবই খুশি। কাফেলার যাত্রীরা কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর যেয়ারাতের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তত করলেন। তারা একই রঙ্গের “ইহরামের” পোশাক পরিধান করলেন যাতে করে সাতবার আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করতে পারেন।
কা’বা মাসজিদুল হারামের উঠানে অবস্থিত এবং মসজিদুল হারামের চতুর্দিক ছোট ছোট টিলা দ্বারা ঘেরা। বেশ কিছু আশ্চার্য জনক জিনিস সেখানে ছিল। “যমযম” কূপ যা ঐ লবনাক্ত মরুর মাঝেও বছর বছর ধরে যেয়ারতকারীদের মিষ্টি পানি দান করে আসছে এবং একটি পাথর যার উপর ইব্রাহীমের (আঃ) পায়ের ছাপ এখনো পরিলক্ষিত হয়। পুরুষেরা একদিকে এবং মহিলারা অপরদিকে, প্রজাপতির মত কা’বার চারপাশে তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় এক মহিলা অনুভব করলো যে, একজন অপরিচিত পুরুষ তার হাতে চাপ প্রয়োগ করছে। সে আল্লাহর ঘরের নিকট এই ধরনের নোংরা কাজে খুবই রাগান্বিত হল এবং সেই খেয়ানতকারী ব্যক্তিটিকে বললঃ কেন আল্লাহর ঘরের সম্মান নষ্ট করছো এবং একজন মুসলমানের সম্ভ্রমে খেয়ানত করছো। লোকটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চাইল নিজের হাতটি টেনে নিতে কিন্তু কোন লাভ হল না কেননা, লোকটির হাত মহিলার হাতের সাথে জোড়া লেগে গিয়েছিল। তারা উভয়েই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হল না। যেসব যিয়ারতকারীদের তাওয়াফ শেষ হয়ে গিয়েছিল তারা এই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। ঐ খেয়ানতকারী লোকটিকে গ্রেফতার করে তৎকালীন শাসকের নিকট নিয়ে যাওয়া হল। কেউ কেউ বলছিল লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত। আবার কেউ কেউ বলছিল তার হাত কেটে ফেলা হোক। সবাই কিছু না কিছু বলছিল। শাসক সকল বিচারকদেরকে রাজপ্রাসাদে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ঘোষণাকারী সমস্ত অঞ্চলে শাসনকর্তার নির্দেশ ঘোষণা করে দিল। কিছুক্ষণ পরেই শাসনকর্তার প্রাসাদে সবাই প্রবেশ করল। শাসনকর্তা বিচারকদের উদ্দেশ্যে বললেন ঐ খেয়ানতকারী ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে হুকুমজারী করতে। শহরের বিচারকগণ অনেক চিন্তা ভাবনা শলা পরামর্শের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, খেয়ানতকারী লোকটির হাত কেটে ফেলা হোক। বিচারকদের রায়ে শাসনকর্তা তুষ্ট হলেন না এবং গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। হঠাৎ কিছু একটা তার মাথায় আসল এবং রক্ষীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ হোসাইন কি এই শহরেই আছেন?
রক্ষীগণ বললঃ জ্বি! তিনি গতরাতে শহরে প্রবেশ করেছেন।
শাসনকর্তা বললেনঃ তিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তি যিনি এই বিষয়ের বিচার করতে সমাধান দিতে পারবেন। সাথে সাথে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানার জন্য একজন লোককে প্রেরণ করা হল।
হোসাইন (আঃ) যখন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন, আল্লাহর ঘরে গেলেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন তারপর শাসকের প্রাসাদে গেলেন। তিনি কি বিচার করেন এটা দেখার জন্য তখনও সবাই অপেক্ষা করছিল
হোসাইন (আঃ) উক্ত পুরুষ এবং মহিলার দিকে একবার দৃষ্টি দিলেন এবং অতি নিম্নস্বরে ঠোঁটের কোণে কিছু একটা বললেন এবং হঠাৎ করে লোকটির হাত মহিলার হাত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
শাসনকর্তা খুশী হয়ে হোসাইন (আঃ) কে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেনঃ এখন যে শাস্তিই আপনি এই লোকটির জন্য ধার্য্য করবেন আমি নির্দেশ দেব সেটা পালন করার জন্য। তিনি বললেনঃ কোন শাস্তি দেবার প্রয়োজন নেই। তাকে ছেড়ে দাও সে যেখানে খুশি চলে যাক। তার জন্য শাস্তি এটাই যথেষ্ট যে তার সম্মান মানুষের সামনে নষ্ট হয়েছে। হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পায়ে হেটে যিয়ারতে আসে আল্লাহও তার দোয়া এভাবেই কবুল করেন।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: