" কারবালা বিপ্লব: পয়লা মহররম থেকে ৫ ই মহররমের ঘটনা "
ওরে বাংলার মুসলিম তোরা কাঁদ্।..
তখতের লোভে এসেছে এজিদ কমবখতের বেশে !
এসেছে সীমার, এসেছে কুফা'র বিশ্বসঘাতকতা,
ত্যাগের ধর্মে এসেছে লোভের প্রবল নির্মমতা !
মুসলিমে মুসলিমে আনিয়াছে বিদ্বেষের বিষাদ,
...কাঁদে আসমান জমিন, কাঁদিছে মোহর্রমের চাঁদ।
একদিকে মাতা ফাতেমার বীর দুলাল হোসেনী সেনা,
আর দিকে যত তখত-বিলাসী লোভী এজিদের কেনা।..
এই ধুর্ত্ত ও ভোগীরাই তলোয়ারে বেঁধে কোরআন,
আলী'র সেনারে করেছে সদাই বিব্রত পেরেশান !
এই এজিদের সেনাদল শয়তানের প্ররোচনায়
হাসানে হোসেনে গালি দিতে যেত মক্কা ও মদিনায়।..
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র নেতৃত্বে কারবালার মহাবিপ্লব খোদাদ্রোহী ও মুনাফিক চরিত্রের অধিকারী উমাইয়া শাসকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিল। ইসলামের নামে ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসবাদ চালু করেছিল ইয়াজিদি শাসক গোষ্ঠী। উমাইয়াদের রাজতান্ত্রিক ইসলামে বসেছিল দরবারি আলেমদের মেলা। লাখ লাখ জাল হাদিস প্রচার করে ইসলাম সম্পর্কে ধুম্রজাল ও বিভ্রান্তি জোরদার করা হয়েছিল সে সময়। ইসলামের খাঁটি নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ও ভন্ড প্রকৃতির নেতাদের মাহাত্ম্য প্রচার করা ছিল তাদের স্বভাব। উমাইয়া রাজশক্তি পক্ষ থেকে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর মহান সঙ্গীদেরকে ‘ইসলামী হুকুমাতের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বলে প্রচার করা হয়েছিল।
তাই ঐতিহাসিক বর্ণনায় দেখা গেছে, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য উদ্যত সেনাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল নামাজি। তারা বলছিল: তাড়াতাড়ি হুসাইনের মাথা কাট, নামাজ বা জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় পার হয়ে যাচ্ছে!
এরা একবারও হয়তো চিন্তা করেনি যে, রাসূল (সা.)’র আহলে বাইতের একজন মহান সদস্যকে তারা হত্যা করতে এসেছে! আর আহলে বাইত (আ.)’র ওপর দরুদ পেশ করা ছাড়া নামাজ আদায় হয় না।
৬১ হিজরির চতুর্থ মহররম কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের নরপিচাশ গভর্নর ইবনে জিয়াদ ‘শুরাইহ কাজি’ নামক দরবারি আলেমের কাছ থেকে নেয়া ফতোয়ার ভিত্তিতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উস্কানি দিয়েছেন। কুফার মসজিদে ওই ফতোয়া শুনিয়ে তিনি একদল মানুষকে ইমামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। ইবনে জিয়াদের নির্দেশে তৈরি করা ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ততকালীন মুসলিম বিশ্বের খলিফা ইয়াজিদের আনুগত্য করেননি তাই তাকে দমন করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব।
কুফার ১৩ হাজার বিভ্রান্ত মুসলমান ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর সাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এদের মধ্যে শিমার বিন জিল জুশান ছিল ওই ১৩ হাজার সেনার চার জন গ্রুপ-লিডারের অন্যতম।
কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ইমাম হুসাইন (আ.) যেদিন কারবালায় পৌছেন সে দিনটি ছিল দোসরা মহররম। তিনি সেখানে পৌছেই জানতে পারেন ওই এলাকার নাম কারবালা। তখনই তিনি জানান যে, সেখানে তাঁর ও সঙ্গীদের শাহাদত ঘটবে এবং তাঁদের নারী ও শিশুদের বন্দী করবে ইয়াজিদ বাহিনী। এ দিনেই তিনি কাইস বিন মাসহারকে দূত হিসেবে কুফায় পাঠান। ইমাম তার কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কুফায় তাঁর সমর্থক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইয়াজিদের সেনারা কাইসকে পথে গ্রেফতার করে। কাইস ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শহীদ করা হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.) তেসরা মহররম কারাবালায় তাবু স্থাপন করেন। আর ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ তার সেনাদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে। আগে নানা জায়গায় ইমামের কাফেলার তাবুগুলো কিছুটা উঁচু বা টিলার মত স্থানে বসানো হয়েছিল। কিন্তু এবার ইমাম (আ.) সমতল বা কিছুটা গর্তময় স্থানে তাবু বসানোর নির্দেশ দেন। সম্ভবত এর কারণ ছিল শিশু ও নারীরা যাতে যুদ্ধের দৃশ্য দেখে ভয় না পান।
হোর ইবনে ইয়াজিদ (রা.) নামের একজন সেনা কর্মকর্তা সর্ব প্রথম কারবালায় ইমাম শিবিরের বিপরীতে তাবু গাঁড়েন। তিনিই ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে প্রথম খবর দেন যে ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় এসেছেন।
ইমাম জানতেন কারবালায় কি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি তেসরা মহররমই কারবালার জমি স্থানীয় নেইনাভাবাসীদের কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি তাদের এ শর্ত দেন যে ভবিষ্যতে যারা এখানে নবীসা. পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করতে আসবেন তাদের জন্য আপ্যায়ন করা হয় ও পথ দেখিয়ে দেয়া হয়।
ইবনে জিয়াদ দোসরা মহররম ইমামের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সে জানায়,তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদের প্রতি বায়আত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এর অন্যথা হলে তাঁদেরকে হত্যা করতে বলেছেন ইয়াজিদ। ইমাম এ চিঠির জবাব না দিয়ে বললেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
ইবনে জিয়াদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ওমর বিন সাদকে পাঠান। তাকে ইরানের রেই শহরের শাসনভার দেয়ার লোভ দেখানো হয়। (এই শহরটি বর্তমান বা আধুনিক তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত)। সাদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু একদল সঙ্গীর নিষেধ সত্ত্বেও সে শেষ পর্যন্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয়। তেসরা মহররম কুফার চার হাজার সেনা নিয়ে ওমর বিন সাদ কারবালায় প্রবেশ করে। সে প্রথমে ইমামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একজন দূতের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ইমাম বলেছেন, কুফার জনগণই তাঁকে দাওয়াত করেছে ও প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিল তাঁর কাছে যাতে তিনি এই শহরে আসেন। তারা (কুফাবাসী)যদি তাঁর আগমনে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তিনি ফিরে যাবেন বলে জানান। ওমর বিন সাদ এই তথ্য ইবনে জিয়াদের কাছে পাঠালে ইবনে জিয়াদ ধারণা করে যে ইমাম (আ.) যুদ্ধের ফাঁদে পড়েও মুক্তির আশা করছেন, কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। তিনি সাদকে এক চিঠিতে জানান, তোমার চিঠি পেয়ে সব কিছু জেনেছি। হোসাইনআ. ও তাঁর সঙ্গীদের বল ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে। যদি তারা তা করে তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। সাদ বুঝতে পারে যে জিয়াদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। তাই সে জিয়াদের চিঠি ইমামের আ. কাছে পাঠায়নি। কারণ, সে জানত ইমাম হুসাইন (আ.) কখনও ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করবেন না।
এদিকে জিয়াদ বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশের চিন্তা করতে থাকে। কুফাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোক পাঠিয়ে সেনা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে এবং ইমামের প্রতি সহযোগিতার কঠোর পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এ সময় আমের বিন আবি সালামাহ নামক ইমামেরআ. এক সমর্থক ইবনে জিয়াদের এক সেনা-নিবাস বা সেনা-উদ্যানে জিয়াদকে হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হননি। ইনি পরে কারবালায় ইমাম (আ.)’র পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন।
৫ ই মহররম ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে হাছিইন বিন নুমাইর চার হাজার (মতান্তরে ৩৮০০) অশ্বারোহী সেনা নিয়ে কারবালায় আসে। এ দিনে জিয়াদ শাবাশ বিন রবি নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার সেনাসহ কারবালায় পাঠায়। এ ছাড়াও সে এক ব্যক্তিকে ৫০০ সেনাসহ কারবালা ময়দানে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করে যে কেউ যদি ইমাম হুসাইন (আ.)’র পক্ষে যুদ্ধ করতে কারবালায় প্রবেশ করে তাকে সে হত্যা করবে। কিন্তু এত প্রহরা সত্ত্বেও আমের বিন আবি সালামাহ ৫ ই মহররম ইমাম-শিবিরে যোগ দেন এবং আশুরার দিনে শাহাদত বরণ করেন।
উল্লেখ্য জাহেলি যুগেও আরব মুশরিক ও কাফিররা যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না। কিন্তু উমাইয়া শাসনামলে মুসলমান নামধারী শাসকরা এতটাই হীন ও নীচ হয়ে পড়েছিল যে তারা রাসূলের(সা.) নাতি ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে শহীদ করতে কুণ্ঠিত হয়নি।
ওরে বাংলার মুসলিম তোরা কাঁদ্।..
তখতের লোভে এসেছে এজিদ কমবখতের বেশে !
এসেছে সীমার, এসেছে কুফা'র বিশ্বসঘাতকতা,
ত্যাগের ধর্মে এসেছে লোভের প্রবল নির্মমতা !
মুসলিমে মুসলিমে আনিয়াছে বিদ্বেষের বিষাদ,
...কাঁদে আসমান জমিন, কাঁদিছে মোহর্রমের চাঁদ।
একদিকে মাতা ফাতেমার বীর দুলাল হোসেনী সেনা,
আর দিকে যত তখত-বিলাসী লোভী এজিদের কেনা।..
এই ধুর্ত্ত ও ভোগীরাই তলোয়ারে বেঁধে কোরআন,
আলী'র সেনারে করেছে সদাই বিব্রত পেরেশান !
এই এজিদের সেনাদল শয়তানের প্ররোচনায়
হাসানে হোসেনে গালি দিতে যেত মক্কা ও মদিনায়।..
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র নেতৃত্বে কারবালার মহাবিপ্লব খোদাদ্রোহী ও মুনাফিক চরিত্রের অধিকারী উমাইয়া শাসকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিল। ইসলামের নামে ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসবাদ চালু করেছিল ইয়াজিদি শাসক গোষ্ঠী। উমাইয়াদের রাজতান্ত্রিক ইসলামে বসেছিল দরবারি আলেমদের মেলা। লাখ লাখ জাল হাদিস প্রচার করে ইসলাম সম্পর্কে ধুম্রজাল ও বিভ্রান্তি জোরদার করা হয়েছিল সে সময়। ইসলামের খাঁটি নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ও ভন্ড প্রকৃতির নেতাদের মাহাত্ম্য প্রচার করা ছিল তাদের স্বভাব। উমাইয়া রাজশক্তি পক্ষ থেকে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর মহান সঙ্গীদেরকে ‘ইসলামী হুকুমাতের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বলে প্রচার করা হয়েছিল।
তাই ঐতিহাসিক বর্ণনায় দেখা গেছে, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য উদ্যত সেনাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল নামাজি। তারা বলছিল: তাড়াতাড়ি হুসাইনের মাথা কাট, নামাজ বা জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় পার হয়ে যাচ্ছে!
এরা একবারও হয়তো চিন্তা করেনি যে, রাসূল (সা.)’র আহলে বাইতের একজন মহান সদস্যকে তারা হত্যা করতে এসেছে! আর আহলে বাইত (আ.)’র ওপর দরুদ পেশ করা ছাড়া নামাজ আদায় হয় না।
৬১ হিজরির চতুর্থ মহররম কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের নরপিচাশ গভর্নর ইবনে জিয়াদ ‘শুরাইহ কাজি’ নামক দরবারি আলেমের কাছ থেকে নেয়া ফতোয়ার ভিত্তিতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উস্কানি দিয়েছেন। কুফার মসজিদে ওই ফতোয়া শুনিয়ে তিনি একদল মানুষকে ইমামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। ইবনে জিয়াদের নির্দেশে তৈরি করা ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ততকালীন মুসলিম বিশ্বের খলিফা ইয়াজিদের আনুগত্য করেননি তাই তাকে দমন করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব।
কুফার ১৩ হাজার বিভ্রান্ত মুসলমান ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর সাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এদের মধ্যে শিমার বিন জিল জুশান ছিল ওই ১৩ হাজার সেনার চার জন গ্রুপ-লিডারের অন্যতম।
কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ইমাম হুসাইন (আ.) যেদিন কারবালায় পৌছেন সে দিনটি ছিল দোসরা মহররম। তিনি সেখানে পৌছেই জানতে পারেন ওই এলাকার নাম কারবালা। তখনই তিনি জানান যে, সেখানে তাঁর ও সঙ্গীদের শাহাদত ঘটবে এবং তাঁদের নারী ও শিশুদের বন্দী করবে ইয়াজিদ বাহিনী। এ দিনেই তিনি কাইস বিন মাসহারকে দূত হিসেবে কুফায় পাঠান। ইমাম তার কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কুফায় তাঁর সমর্থক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইয়াজিদের সেনারা কাইসকে পথে গ্রেফতার করে। কাইস ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শহীদ করা হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.) তেসরা মহররম কারাবালায় তাবু স্থাপন করেন। আর ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ তার সেনাদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে। আগে নানা জায়গায় ইমামের কাফেলার তাবুগুলো কিছুটা উঁচু বা টিলার মত স্থানে বসানো হয়েছিল। কিন্তু এবার ইমাম (আ.) সমতল বা কিছুটা গর্তময় স্থানে তাবু বসানোর নির্দেশ দেন। সম্ভবত এর কারণ ছিল শিশু ও নারীরা যাতে যুদ্ধের দৃশ্য দেখে ভয় না পান।
হোর ইবনে ইয়াজিদ (রা.) নামের একজন সেনা কর্মকর্তা সর্ব প্রথম কারবালায় ইমাম শিবিরের বিপরীতে তাবু গাঁড়েন। তিনিই ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে প্রথম খবর দেন যে ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় এসেছেন।
ইমাম জানতেন কারবালায় কি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি তেসরা মহররমই কারবালার জমি স্থানীয় নেইনাভাবাসীদের কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি তাদের এ শর্ত দেন যে ভবিষ্যতে যারা এখানে নবীসা. পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করতে আসবেন তাদের জন্য আপ্যায়ন করা হয় ও পথ দেখিয়ে দেয়া হয়।
ইবনে জিয়াদ দোসরা মহররম ইমামের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সে জানায়,তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদের প্রতি বায়আত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এর অন্যথা হলে তাঁদেরকে হত্যা করতে বলেছেন ইয়াজিদ। ইমাম এ চিঠির জবাব না দিয়ে বললেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
ইবনে জিয়াদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ওমর বিন সাদকে পাঠান। তাকে ইরানের রেই শহরের শাসনভার দেয়ার লোভ দেখানো হয়। (এই শহরটি বর্তমান বা আধুনিক তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত)। সাদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু একদল সঙ্গীর নিষেধ সত্ত্বেও সে শেষ পর্যন্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয়। তেসরা মহররম কুফার চার হাজার সেনা নিয়ে ওমর বিন সাদ কারবালায় প্রবেশ করে। সে প্রথমে ইমামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একজন দূতের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ইমাম বলেছেন, কুফার জনগণই তাঁকে দাওয়াত করেছে ও প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিল তাঁর কাছে যাতে তিনি এই শহরে আসেন। তারা (কুফাবাসী)যদি তাঁর আগমনে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তিনি ফিরে যাবেন বলে জানান। ওমর বিন সাদ এই তথ্য ইবনে জিয়াদের কাছে পাঠালে ইবনে জিয়াদ ধারণা করে যে ইমাম (আ.) যুদ্ধের ফাঁদে পড়েও মুক্তির আশা করছেন, কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। তিনি সাদকে এক চিঠিতে জানান, তোমার চিঠি পেয়ে সব কিছু জেনেছি। হোসাইনআ. ও তাঁর সঙ্গীদের বল ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে। যদি তারা তা করে তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। সাদ বুঝতে পারে যে জিয়াদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। তাই সে জিয়াদের চিঠি ইমামের আ. কাছে পাঠায়নি। কারণ, সে জানত ইমাম হুসাইন (আ.) কখনও ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করবেন না।
এদিকে জিয়াদ বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশের চিন্তা করতে থাকে। কুফাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোক পাঠিয়ে সেনা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে এবং ইমামের প্রতি সহযোগিতার কঠোর পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এ সময় আমের বিন আবি সালামাহ নামক ইমামেরআ. এক সমর্থক ইবনে জিয়াদের এক সেনা-নিবাস বা সেনা-উদ্যানে জিয়াদকে হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হননি। ইনি পরে কারবালায় ইমাম (আ.)’র পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন।
৫ ই মহররম ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে হাছিইন বিন নুমাইর চার হাজার (মতান্তরে ৩৮০০) অশ্বারোহী সেনা নিয়ে কারবালায় আসে। এ দিনে জিয়াদ শাবাশ বিন রবি নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার সেনাসহ কারবালায় পাঠায়। এ ছাড়াও সে এক ব্যক্তিকে ৫০০ সেনাসহ কারবালা ময়দানে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করে যে কেউ যদি ইমাম হুসাইন (আ.)’র পক্ষে যুদ্ধ করতে কারবালায় প্রবেশ করে তাকে সে হত্যা করবে। কিন্তু এত প্রহরা সত্ত্বেও আমের বিন আবি সালামাহ ৫ ই মহররম ইমাম-শিবিরে যোগ দেন এবং আশুরার দিনে শাহাদত বরণ করেন।
উল্লেখ্য জাহেলি যুগেও আরব মুশরিক ও কাফিররা যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না। কিন্তু উমাইয়া শাসনামলে মুসলমান নামধারী শাসকরা এতটাই হীন ও নীচ হয়ে পড়েছিল যে তারা রাসূলের(সা.) নাতি ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে শহীদ করতে কুণ্ঠিত হয়নি।
ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি
0 comments: