Thursday, March 7, 2013

কুকুর পালন করা সম্পর্কে জেনে নিন

ইসলামে কুকুর পোষা নিষিদ্ধ (সম্পুর্ণ রুপে হারাম) নয়। এটা ঠিক ইসলাম শখ করে কুকুর পুষতে নিষেধ করেছে। তবে প্রয়োজনে আপনি কুকুর পুষতে পারবেন। নিচের রেফারেন্স টি দেখুন
--শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে,
পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ।
(ফতোয়াতে মাহমুদিয়া : খ. ১৮, পৃ. ২৬৪/ ফতোয়ায়ে আলমগিরি : খ. ৪, পৃ. ২৪২)...

এটা নিয়ে রাসুল (সাঃ) বলছেন" যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়। ’ (মুসলিম : হাদিস ১৫৭৫; তিরমিজি : হাদিস ১৪৮৭)

অর্থাৎ ইসলাম কুকুর পোষাকে নিষিদ্ধ করেনি,জাস্ট সেটারর কিছু গাইড লাইন করে দিয়েছে। অনেকে মনে করেন কুকুর এর সাথে শরীর স্পর্শ হলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়,কাপড় নাপাক হয়ে যায়, তারা ইমাম আবু হানিফার মতামত দেখতে পারেন...
"হানাফি মাজহাব মতে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তাই কুকুর কারো শরীর বা কাপড় স্পর্শ করলে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। কুকুর মুখ দিয়ে কারো জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায়, তবে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে; অন্যথায় নাপাক হবে না।
(আল-বাহরুর রায়েক : ১/১০১; ফতোয়াতে হিন্দিয়া : ১/৪৮;আদ্দুররুল মুখতার : ১/২০৮)"

এখন আসেন কারো পোষা কুকুর (প্রয়োজনে পোষা, শখ করে নয়) এর ক্ষতি সাধন করলে বা তাকে হত্যা করলে আপনার কি শাস্তি হতে পারে....
"শিকারির জন্য রাখা কুকুর, পাহারার জন্য রাখা কুকুর মেরে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম বা অবৈধ। পাগলা কুকুর, কষ্টদায়ক কুকুর মেরে ফেলা সব আলেমের মতে বৈধ।

সাধারণ অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা, মেরে ফেলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। (সূত্র : কুয়েতভিত্তিক ইসলামী বিশ্বকোষ ‘আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল- কুয়েতিয়্যা : খ. ৩৫, পৃ. ১৩২-১৩৩)"

এখন আসেন আসল কথায়, অন্যান্য জীবের মত কুকুরের প্রতি ও দয়া মায়া দেখাতে হবে আপনাকে। আপনি কোন কুকুরের সাথে নিষ্ঠুর আচরন করতে পারেননা। দেখুন হাদিস বুখারি শরিফ থেকে,
একবার এক পিপাসাকাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে নিজের পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ’ -বুখারি : ৩৪৬৭

অনেক ধার্মিক ব্যাক্তিকেও দেখি এমন মনোভাব পোষন করেন যে, বাড়ির ভেতরেই কুকুর ঢুকতে দেয়া যাবেনা। কোন অসহায় কুকুর কেও আশ্রয় দেয়া যাবেনা (হোক সেটা অসুস্থ,আহত বা গর্ভবতী মা কুকুর) আর সেবা শ্রুসুশ্যার তো প্রশ্নই আসেনা) বাড়ির দরজায় কুকুর থাকলে নাকি রহমতের ফেরেশতাই বাড়ির ভেতরে ঢুকবেনা!!!

চলুন যে হাদিস দিয়ে কুকুর নিষদ্ধ বলে মনে করা হয় সেটাই একটু দেখে নেই,
যে ঘরে কুকুর আছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। ’ (বুখারি শরিফ : হা. ৫৫২৫)
কুকুর নিয়ে হাদিস টি কিন্তু স্পস্ট। সেখানে ঘরের কথা বলা হয়েছে। সম্পুর্ন বাড়ির কথা নয়।
আর হ্যা! আরেকটা কথা,রহমতের ফেরেশতা যে আপনার দরজা ব্যাবহার করেই বাড়ির ভেতর ঢুকে এটাই বা তাদের মাথায় কোত্থেকে আসল। তারা চাইলে কি অন্য কোন পথে আসেনা?
ইসলামে তো আরো অনেক হারাম করে দেয়া হয়েছে।

আপনি কি জানেন গোসলের জায়গায় প্রসাব পায়খানা করা হারাম। হুমায়দ আল হিম্ইয়ারী (রহঃ) থেকে বর্নীত, গোসলের জায়গায় প্রসাব করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।
সহীহ : আহমাদ ১৬৫৬৪, সহীহুত্ তারগীব ১৫৪।

কিন্তু এটাচড বাথরুম কে ফ্যাশন হিসেবে মেনে নিয়েছেন। আর বাথরুম কাম টয়লেট একই স্থানে রেখেছেন নিজের আরাম আর স্বাচ্ছন্দের কথা ভেবে। তাহলে কুকুর টা কি দোষ করল।

"তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর আর কিছু অংশকে কর অবিশ্বাস? তাহলে তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অপমান এবং কেয়ামতের দিন তাদের তাড়িয়ে নেয়া হবে কঠিনতম শাস্তির দিকে। আর তারা যা করে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে বেখবর নন। সুরাঃবাকারা আয়াতঃ৮৫.

আশা করি এই পোষ্ট টি পড়ার পর কুকুর নিয়ে আপনাদের ধারনা কিছুটা হলেও পরিস্কার হবে।
আর হ্যা! যে কেউ চাইলে এই লেখায় দেয়া যে কোন রেফারেন্স ক্রস চেক করে মিলিয়ে নিতে পারেন।
আবার ও বলে যাই, কুকুর হারাম নয়। তবে শখ করে পোষা হারাম। আর হানাফি মাজহাব মতে শুকনো কুকুরের স্পর্শ ও নাপাক নয়। তবে কুকুরের লালা নাপাক। আসুন, সব সৃস্টির প্রতি সদয় হই কেননা রাসুল(সাঃ) বলেছেন,
"তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, আশা
করা যায়, যিনি আসমানে আছে, তিনি তোমাদের প্রতি
দয়া করবেন।" . [তিরমিযি, কিতাবুল বির ওয়াস সিলা
১৯২৪,সুনানে আবু দাউদ কিতাবুল আদব: ৪৯৪১] :

শীতে কিংবা বর্ষায় বাড়ির পাশে বৃষ্টি অথবা শীথ থেকে বাচতে যদি কোন মা কুকুর অসহায় বাচ্চা গুলো নিয়ে আশ্রয় নেয়, প্লিজ! তাড়িয়ে দিবেন না। যদি পারেন পথে ঘাটে অসহায় অসুস্থ কুকুর দের যতটুকু পারেন সেবা করুন। জীবনে এত এত পাপ করেছি,কে জানে! হয়ত এমন ছোট্ট উসিলায়
সকল পাপ ক্ষমা করে দিতে পারেন দয়াময়।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: