Friday, October 16, 2015

মাশহাদ শহরের মতোও হতে পারলো না রাজধানী ঢাকা!

সমপ্রতি তেহরান থেকে মাশহাদ শহরে গিয়েছিলাম। মূল উদ্দেশ্য- নবী বংশের অষ্টম পুরুষ ইমাম রেজার মাজার জিয়ারত করা। অফিস থেকেই যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। মাশহাদ শহরে থাকার জন্য ইরানের জাতীয় সমপ্রচার সংস্থার পক্ষ থেকে পরিপাটি এবং মানসম্মত হোটেল রয়েছে। রাতের বেলায় রওয়ানা দিলাম। পাহাড়, মরুভূমি আর নির্জন রাস্তা পেরিয়ে পরদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছালাম মাশহাদ শহরে। অফিসের নির্ধারিত হোটেল কম্পাউন্ডে গিয়ে বাস থামল। নেমে দ্রুত হোটেল কক্ষের চাবি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বুঝে নিলাম। হোটেলের ছিমছাম পরিবেশ বেশ ভাল লাগল। ১,২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ির ক্লান্তি ছিল তবে রাতেই গেলাম বহু প্রত্যাশিত মাজারে। মাজার দেখে বিস্ময়ে আমি হতবাক! আমার ধারণাতে মোটেই ছিল না, মাযার ও মসজিদ কমপ্লেক্স এতবড়! পরে জানলাম পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববীর চেয়েও বড় মাজার ও মসজিদ কমপ্লেক্স এটি যার আয়তন ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৬৭ বর্গমিটার। এর মধ্যে শুধু মাজার এলাকা রয়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯ বর্গমিটার জুড়ে। ভেবেছিলাম রাতের বেলা; কতইবা লোকজন থাকবে। আমার এ ধারণাও ভুল প্রমাণিত হলো। হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি সেই রাতেও। মাজার ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা সবার। তবে এত ভিড় যে, প্রথম রাতে সে চেষ্টা ব্যর্থ হলো। পরদিন বিকালে গেলাম। লোকজনের উপস্থিতি একইরকম। মাজারের কাছেও সেই ভিড়। তবে আজকের পণ ছিল জোরালো। অবশেষে মাজার ছুঁয়ে দেখার সাধ মিটল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- বাংলাদেশের মাজার এলাকায় যেসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলে তার কিছুই ছিল না এখানে। কেউ কুরআন তেলাওয়াত করছে, কেউ হাদিস গ্রন্থ কিংবা ইসলামি বই পড়ছে, কেউ হয়তো নামাজ ও দোয়ায় মশগুল। কেউবা নিজের খাবার খেয়ে নিচ্ছে। কোথাও বিজ্ঞ আলেমের ইসলামি আলোচনা শুনছে শত শত মানুষ। মাশহাদ শহরে তিনদিনের সফর ছিল। স্বল্প সময়ে যা ঘুরে দেখলাম তা অতুলনীয়। কোথাও নেই ময়লা-দুর্গন্ধ, কোথাও নেই ভিক্ষুক, নেই যানজট, গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নও নেই। নেই ছিনতাই-রাহাজানির দুশ্চিন্তা। অসম্ভব ছিমছাম শহর। রাস্তাগুলোর পাশ দিয়ে নানা রঙের ফুল যেন শহরের শোভা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে সেখানে পার্ক, ফোয়ারা, গাছপালার সমারোহ- যেন সবুজে ঘেরা শহর। পথুরে মাটি সে কারণে প্রতিদিন পানি দিয়ে এসব গাছপালা আর ঘাস বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ট্রাফিক সিস্টেম সচল রাখতে কোথাও কোথাও ফ্লাইওভার রয়েছে; সিগন্যাল বাতির দেখা খুব কম মিলবে। গাড়ি কিংবা হোটেল লবি থেকে তাকালেই চোখে পড়বে পাহাড়। এই পরিপাটি মাশহাদ শহরের রাস্তায় বের হলেই শুধু মনে পড়ছিল রাজধানী ঢাকার কথা। মনে হচ্ছিল রাজধানী শহর ঢাকা এই মফস্বল শহর মাশহাদের মতোও ছিমছাম হতে পারল না! প্রতিবছর শুনতে হয় বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে আমার ঢাকা!

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: