Monday, October 26, 2015

দেওলিয়া হওয়ার পথে সৌদি আরব

সৌদি ইরান,সিরিয়া,ইয়েমেন কে শায়েস্তা করতে যেয়ে নিজেই শায়েস্তা হয়ে গেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরব দেউলিয়া হতে পারে। এটা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তেলের মূল্য হ্রাস করায় গত কয়েক মাসে দেশটি ১০ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়া আঞ্চলিক সংঘাত এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে সৌদি আরবে চলতি বছর বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২১.৬ শতাংশ। ফলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশটি দেউলিয়া হবে। দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের ৮০% আসে তেল রফতানী খাতে। কিন্তু তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে রাজস্ব আয় কমেছে আশংকাজনকভাবে।


পরিচিতি : এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ সৌদি আরব। ওহাবী মতাদর্শে বিশ্বাসী আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে হিজাজের নাম পরিবর্তন করে নিজ বংশের নাম অনুযায়ী এই বিশাল আরব ভূখণ্ডের নাম রাখে সৌদি আরব। রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ শাসিত হয়। তাই রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড কিংবা নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা নেই দেশটিতে। আয়তন ২১ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা দুই কোটি ৮০ লাখ। দেশটির উত্তরে জর্ডান ও ইরাক, উত্তর-পূর্বে কুয়েত, পূর্বে কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান, দক্ষিণ-পূর্বে ইয়েমেন অবিস্থত। দেশের অধিকাংশ এলাকা মরুভূমি। মাথাপিছু আয় ১৬ হাজার ৭৮০ ডলার। রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশটি পরিচালিত হয়। রাজ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় দেশের জনগণ কিছুই জানতে পারে না। দেশের আয়-ব্যয় সবকিছু অন্ধকারে থেকে যায়।অর্থনৈতিক মন্দার কারণ: সৌদি আরবের রাজস্ব ঘাটতির বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। রাজপরিবারের সকল সদস্যের যাবতীয় খরচাপাতি রাজকোষ থেকে দেয়া হয়। সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের হিসাব জনসাধারণ কখনো জানতে পারে না। সৌদি যুবরাজদের রাজকীয় বিদেশ সফরের ব্যয়ভার রাষ্ট্রভাণ্ডার বহন করে থাকে। দেশের অভ্যন্তরে এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প রয়েছে যেগুলোর জন্য প্রতিবছর সরকারকে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়। সৌদি আরব রক্ষার নামে দেশটিতে কয়েকটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এগুলোর ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হয়। গত পাঁচ বছর সৌদি আরব পশ্চিমা দেশ থেকে অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলারের যুদ্ধ সামগ্রী ক্রয় করে এবং তিন হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের ফরমায়েশ দেয়া আছে। সিরিয়া যুদ্ধে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় এবং তাদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোকে শত শত কোটি ডলার দিয়ে আসছে দেশটি। মিশরের প্রথম নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য সৌদি আরব দেশটির সামরিক জান্তা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ সিসিকে কয়েকশ কোটি ডলার প্রদান করে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসির পতনের পর বখশিশ হিসেবে সিসি সরকারকে নগদ তিনশ কোটি ডলার এবং চারশ কোটি ডলারের তেল সরবরাহ করে। এছাড়া আগামী তিন বছর আরো ১২শ কোটি ডলার সাহায্য প্রদানের অঙ্গীকার প্রদান করা হয়। ইয়েমেনে একতরফা যুদ্ধে জড়িয়ে সৌদি আরব এখন অর্থনৈতিকভাবে দিশেহারা। যুদ্ধে সৌদি বাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ, বোমারু বিমান, অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ধ্বংস হওয়া ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কয়েকজন সামরিক অফিসার ও কয়েক শতাধিক সেনা নিহত হয়েছে। অপরদিকে সৌদি সামরিক জোটের মাধ্যমে যেসব দেশ ইয়েমেনে যুদ্ধ করছে সেসব দেশকে শত শত কোটি ডলার প্রদান করতে হচ্ছে। সর্বশেষ পশ্চিমাদের ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব একতরফাভাবে তেলের মূল্য হ্রাস করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।


উল্লেখ্য, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইরানকে তার প্রধান শত্রু মনে করে। ইরানকে উদ্দেশ করে সৌদি আরব গত পাঁচ বছর কয়েক হাজার কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয় করে। ইয়েমেন যুদ্ধে আনসারুল্লাহ গণবিপ্লবী বাহিনীসহ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ইরান সহায়তা প্রদান করছে। সিরিয়ায় বাসার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান। অপরদিকে সৌদি আরব ইয়েমেনের পলাতক সাবেক প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি এবং সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করছে। এছাড়া, রাশিয়া ও ইরানের বৈদেশিক নীতিকে অর্থাৎ ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাবাহিনী এবং সিরিয়ার বাসার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে। এতে সৌদি সরকার ও তার পশ্চিমা কয়েকটি মিত্র ইরান ও রাশিয়ার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। তেল-গ্যাস রফতানীনির্ভর ইরান ও রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য অবশেষে সৌদি আরব অপ্রত্যাশিতভাবে তেলের মূল্য হ্রাস করে নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খেয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীর পেছনে সৌদি আরব প্রতিমাসে কমপক্ষে পাঁচশ কোটি ডলার ব্যয় করছে। এরমধ্যে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র, খাকা, খাওয়া, বেতন প্রদান ছাড়াও বাশার বিরোধী তুরস্ক, ইসরাইল ও জর্ডানকে অর্থ সরবরাহ করে আসছে। ইয়েমেন যুদ্ধে প্রতিদিন সৌদি আরবের বিপূল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ অন্য দেশে অযথা হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে সৌদি আরব এখন নিজেই অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হবার পথে।অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে সৌদি সরকারকে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে :

১. সৌদি আরবের উচিত হবে ইয়েমেনে একতরফা যুদ্ধ বন্ধ করে দেশটির ভাগ্য সে দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়া। এতে দেশটির বিপুল অর্থের সাশ্রয় ঘটবে।


২. ইরানের ভয়ে ভীত না হয়ে বন্ধুত্বসূলভ আচরণের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। এতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় বন্ধ হবার পাশাপাশি মার্কিন ঘাঁটির ব্যয়বহন রোধ করা যাবে।


৩. সিরিয়া ইস্যুতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পেছনে অহেতুক অর্থ ব্যয় না করে ওআইসি কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সিরিয়া সংকট রাজনৈতিকভাবে সূরাহা করা হলে একদিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে অপরদিকে সৌদি আরবের বিপুল অর্থের অপচয় রোধ হবে।

ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি

Share This
Previous Post
Next Post

0 comments: